রহস্য-১ম পর্ব

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

রাত আটটা বাজবার সঙ্গে সঙ্গে পাশের গলি দিয়ে বীরেন গাঙ্গুলি রোডে এসে দাঁড়াল লোকটা। বেশি বয়স নয়, অথচ হাতে রয়েছে একটা বেতের ছড়ি। হাতলটা রুপোর, গোল বলের মতো।
বাড়ি ফেরার হিড়িক শুরু হয়েছে আশপাশের দোকানে। জিনিস গুছোচ্ছে ফুটপাতের ফেরিওয়ালারা।
চৈত্র মাস। বেশ গরম পড়েছে।

লোকটা তাই কলারওয়ালা নীল রঙের বাহারি গেঞ্জিটার গলা খুলে রেখেছে। ঝুলিয়ে পড়েছে ব্লু জিন্স এর প্যান্টের ওপর। মোজা ছাড়াই পড়েছে সাদা ফোম-রাবারের জুতো। হাঁটছে হনহনিয়ে।

মাঝে মাঝে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে দু’পাশের দোকানের কাচের শোকেচ কিন্তু থামছে না। থামল নিউ রোড বীরের গাঙ্গুলির রোডের মোড়ে। জহরতের দোকানের সামনে ডায়মন্ড এক্সচেঞ্জ। হিরে কেনাবেচার একবড় দোকান কলকাতায় আর দুটি নেই।

লোকটা দাঁড়িয়েছে কাচের শোকেসের ঠিক সামনে। ঝট করে দেখে নিল আশপাশে, তারপরেই হাতের ছড়ির গোল হাতল দিয়ে ধাঁই করে  মারল কাচের শোকেসে।

ঝনঝন শব্দে কাচ যখন খানখান হচ্ছে, একই সঙ্গে বিপদ সংকেতের ঘন্টাও বেজে উঠছে। এদিকে-ওদিকে লোক দাঁড়িয়ে গেছে। তারা থ। লোকটা কিন্তু হাত গলিয়ে দিয়েছে ভাঙা শোকেসের মধ্যে। পেছন ফিরে পালাতে গিয়েই পেল বাধা।

মোড় ফিরে পালাতে গিয়েই পেল বাধা।

মোড় ঘুরে তেড়ে আসছে ট্রাফিক সার্জেন্ট। কোমরের খাপ থেকে টেনে বের করেছে রিভলভার। চেঁচিয়ে উঠেছে পেছনে এসেই। ঘুরে দাঁড়াল হিরেচোর। সার্জেন্টের মাথা টিপ করে চালাল ছড়ির হাতল।

গরমের মধ্যে হেলমেট খুলে রেখেছিল সার্জেন্ট। ভারী হাতলটা পড়ল রগের ওপর। চোখের সামনে দেখলো আলোর ঝলকানি।চোট লেগেছে ব্রেনে। লুটিয়ে পড়ল ফুটপাথে।

দোকানের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে মস্ত চেহারার এক পুরুষমূর্তি। পরনে সাদা কুর্তা আর পায়জামা। চেঁচাচ্ছে গলার শির তুলে, “চোর! চোর!”

হিরেচোর ততক্ষনে পাশের গলিতে ঢুকে পড়েছে। দৌড়াচ্ছে পাকা দৌড়বাজের মতো, এখনই উধাও হয়ে যাবে গলিঘুঁজির মধ্যে। এই গলির মুখেই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল একদল লোক।

এদের মধ্যে থেকে ছিটকে গেল একটি ছেলে। বয়স বড়জোর পঁচিশ। গায়ে জিন্স-এর জ্যাকেট ও প্যান্ট। এর পায়ে যেন ডানা লাগানো আছে। নাহাল ধরে ফেলল হিরেচোরের। দু’জনেই গড়িয়ে গেল রাস্তার ওপর।

এই সময়ে ছড়ির হাতল নেমে এসেছিল ছেলেটার মাথা টিপ করে। বজ্র-আলিঙ্গন একটু শিথিল হয়েছিল এই কারনই। সড়াত করে পিছলে গিয়ে ফের টেনে দৌড় লাগিয়েছিল হিরেচোর। ততক্ষণে হইহই করে তেড়ে এসেছে আর অনেকে। সকলের আগে দু’জন ট্রাফিক পুলিশ।

একটাই কথা বলেছিল হিরেচোর, “হিরে নেই আমার কাছে।” না, হিরে পাওয়া যায়নি তার পকেটে। ভাঙা শোকেসের প্রায় সব হিরেই সে হাতিয়েছিল, চারটে হিরের আংটি আর দুটো ছোট-ছোট হিরে ছাড়া।

হিরে নিয়েই তো সে দৌড়েছিল অত লোকের সামনে দিয়ে। তবে কি ঝটপাটি করার সময়ে হিরে চালান করেছে ছেলেটার পকেটে?কে না জানে, দোসর নিয়ে ঘোরে ছিনতাইবাজরা।

বিপদ দেখলেই চোরাই জিনিসপত্র চালান করে সঙ্গীদের কাছে। কিন্তু ছেলেটাকেও সার্চ
করে পাওয়া গেল না হিরে, একই সঙ্গে দু’জনকে আনা হয়েছিল থানায়।

রুপোর হাতলওলা ছাড়ির মধ্যে নেই তো? না, সেখানেও নাই। একেবারেই নিরেট ছড়ি। রুপোর হাতলও নিরেট। তবে কি রাস্তায় ঠিকড়ে পড়েছে? জনতা কুড়িয়ে নিয়েছে? অসম্ভব।

ট্রফিক পুলিশ দু’জন সকলের আগে দৌড়েছিল। রাস্তায় ছড়ানো হিরে লুট শুরু হলে হট্টগোলে তাদের টনক নড়ত। রাস্তাতেও পড়ে নেই হিরে। তন্নতন্ন করে দেখার পরেও পাওয়া যায়নি।

দোকানের দরজায় দাঁড়িয়ে যিনি ‘চোর চোর’ বলে চেঁচিয়েছিলেন, তিনিই দোকানটার খোদ মালিক। সেই রাতে থানায় তিনিও গিয়েছিলেন।

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

দুঃখিত!