বিকেল বেলা আকাশটা খুব পরিস্কার ছিল। আকাশে ছিটে ফোটা মেঘও ভাসতে দেখিনি। লা হতে হতে সূর্যটা যখনবিদায় নিলো তখনো ছিল মুক্ত স্বচ্ছ আকাশ। আমার ঘরে বিদুৎ নেই মাস খ যাবৎ। বিদুৎ অফিসের লোকজন মিটার খুলে নিয়ে গিয়েছে। তাদের দাবী আমি নাকি গ পাঁচ মাস বিদুৎ বিল দিচ্ছি না। তাদের এতো করে বললাম যে আমার কাজের ছেলে হানিফ মিয়া প্রতি মাসে বিলদিয়েছে, তারা আমার কথা বিশ্বাস করলো না। বাধ্য হয়ে হানিফ কে ডাকলাম। অবাক কান্ড হানিফকে কোথাও খুজে পেলাম না। অথচ গত চার বছর সে আমার কাছে ছিল। হানিফের বিস্থতা প্রশ্নাতিত ছিল। সে কি শুধু বিল মেরেছে নাকি আরোকিছু করেছে? ডজন খানেক মোমবাতি কিনে ছিলাম। সাথে হারিকেন আর কেরোসিন তেল। মোমবাতি শ তাই হারিকেনের লাল আবছা আলোয় বসে তিন দি বাসি পেপার পড়ছি। অজপাড়া গা না হলেও এই গ্রামটা থানা সদর থেকে অনেক দুরে। রাস্তা ঘাট তেমন সুবিধের ন কাচা মাটির রাস্তার উপর ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়ে ছিল। তবে সেই ইট এখন আ তেমন একটা নেই, আছে কেবল মাটি। আমার বাবা কবি ছিলেন। তিনি শেষ জীবনটা গ্রামে কাটাবেন বলে এই সেমিপাকা বাড়িটা করে ছিলেন। কিন্তু তিনি জীবনটা কাটাতে পারেন নাই। কারন বাড়ির ক শেষ হবার আগেই তিনি এই বাড়িতে আসার পথে দুঃর্ঘটনায় মারা যায়। তখন আমি স্কুলে দশম শ্রেনীতে পড়তাম। বাবার সরকারী চাকুরি ছিল মা পেনশন আর জমানো টাকা দিয়ে আমাদের বড় করেন। আমরা তিন ভাই।সবাই ভাল চাকুরি করছ ছোট দু’ভাই শহরে বেশ ভাল রোজগার করছে। তবে বাবার ইচ্ছে পুরন করার জন্য আমি এই গ্রামে পড়ে আছি। আমার শহরের বন্ধুরা আমাকে পাগল ভাবছে। ওদের ধারনা আম মাথার স্কু ঢিলা আছে। তবে আমি স্কু নিয়ে ভাবছি না। আমারমায়ের ধারনা বাবার সব কিছু আমি পেয়েছি। সে আমাকে নিয়ে বেশ বিচল তবে আমার খুব ভাল লাগছে এখানে থাকতে। আমি স্থানীয় কলেজের বাংলায় অধ্যাপনা করছি প্রতিদিন পুরো পত্রিকা পড়া আমার নেশা কিন্তু দুঃখের ব্যাপার এখানে সঠিক সময় পত্রিকা পৌছায়না। পিয়নটাও বজ্জাত কখনো কখনো তিন চার দিনের পত্রিকা এক সাথে দিয়ে যায়। দু’দিন পর আজ বিকেলে পিওন পত্রিকা দিয়ে গে বাসি পত্রিকাই মনোযোগ দিয়ে পড়তে ছিলাম, হ করেই ঝড়ো হাওয়া বইতেশুরু করলো। ধপাস করে জানালার কবাট আছড়ে পড়ল। বিকট শব্দ হল খোলা জানালা দিয়ে প্রবল বাতাস ঘরে ঢুকে সব উড়িয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে যেন। আমি দ্রুত জানালা বন্ধ করে ফেললাম। আশে পাশে কোথাও ব্যাপক শব্দে বাজ পড়ল। বিদুৎ চমকাচ্ছে খুব। বাইরে নিকষ কালো অন্ধকার। আকাশে মেঘ জমা ফলে অন্ধকার এত গভির। আধার আমার ভাল লাগে গভির রাতে আমি জানালা খুলে আধার দেখি। হা অবশ্য আধার খুব ভয় পায়। ওর ধারনা এ বাড়িতে একটা মেয়ে ভুত আছে। যে সাদা শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়ায়। ভুতটার বয়স বেশি না। উনিষ কুড়ি বছর হবে। তবে সে ভয়ান সুন্দরী। পুকুর ঘাটে প্রায়ই রাতে তাকে দেখা য হানিফ ভুতের ভয়ে অস্থির! আমি ছোট বেলায় মায়েরমুখে অনেক ভুতের গল্প শুনেছি। তাই হানিফের গল্প বেশ পরিচিত মনে হয়েছে। আমি জানিভুত বলতে কিছু নেই। সবি দূর্বল চিত্তের মানুষের কল্পনা ।
হটাৎ করে কেউ একজন আমার কাধে হাত রাখলো ভয় পেয়ে আতকে উঠে বললাম, কে কে আপনি?। বেশ গম্ভীর স্বরে এক নারী কন্ বলল ভয় পেওনা আমি সুরভি। এই নাও তোমার দিয়াসলাই। ম্যাচ দিয়ে দ্রƒত হারিকেন জ্বালালাম। আমার সামনের চেয়ারে সাদা সালোয়ার পড়া এক নারী বসে আছে। তার মুখটা মায়াবী। চোখের নিচে কালি জমেছে, তার ঠোট কাঁপছে। তার এই আচমকা ঘরে প্রবেশ দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে ছিলাম তবে এখন কিছুটা সাহষ পাচ্ছি। আমি সুরভির দিকে তাকিয়ে বললাম আপনী কি করে ঘরে ঢুকলেন? আমিতো ঝড়ের রাতে আপনাকে এভাবে আচমকা প্রবেশ করতে দেখে ভয় পেয়েছি। ভেবেছি আপনী একটা ভুত! হাঃ হাঃ করে ঘর কাপিয়ে হেসে উঠল সুরভী। র্শ্লেষমাখা কন্ঠে বললো, তুমি ঠিকই ভেবেছো আমি একটা ভুত! কিন্তু আমি একটা ভাল মানুষ ছিলাম। একটা লক্ষি মেয়ে ছিলাম। আমা বুকে কত স্বপ্ন ছিল।কিন্তু আমি জীবনে কিছুই পেলাম না। ডুকরে কেদে উঠে নিজেকে ভুত দাবী করা সুরভী। আমার দিকে তাকিয়ে বলে তোর বাবা একটা খুনি! আমাকে মেরে ফেলেছে তোর বাবা বিখ্যাত কবি রশিদ আহম্মেদ। কথা শেষ করে আমার দিকে ক্রোদ্ধভরা দৃষ্টিতে তাকায় সুরভী। ওর দৃষ্টি আগুনের মত আমার শরীরে বিদ্ধ হয়। হতবিহব্বল হয়ে পড়ি আমি। হৃদয়ে সুনামীর মত তোলপাড় শুরু হয়। কি বলছে এই নারী! পাগলের প্রলাব নয়তো? আমি শুধরে দেবার চেষ্টায় বললাম, দেখুন আমার বাবা ১৬ বছর হল মারা গিয়েছে। কেন তাকে নিয়ে এমন বাজে কথা বলছেন? কেন আমাকে আহত করছেন? আমার বাবা আমার জীবনের সব, তার দেখানো পথে চলছি আমি। সে আমার কাছে চাদেঁর মতই নিস্পাপ। এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে বুকটাকে হালক চেষ্টা করি আমি। সুরভীর কোন ভাবান্তর হয়না সে তাকিয়ে আছে শূন্যে। তার চোখে জ্বল। হারিকেনের লাল আলোতে তার মুখটা ভারি মায়াবী মনে হয়। সুরভী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। আমার দিকে তাকিয়ে বলে তুমি কি তোমাদের বাড়ির পূর্ব দিকের কোনর ঘরটা কোন দিন খুলে দেখেছো? না। ওটাতো বোধহয় ষ্টোর রুম। কোথাও চাবি পাইনী খুজে পাইনী। কেন? শিতল গলায় সুরভী বলে ওখানে আমার কঙ্কাল ঝুলে আছে। ভয়ে আমার শরীরের লোম দাড়িয়ে যায়। গলা শুকিয়ে যায় , কাপা গলায় বলি কি বলছেন? তা হবেকেন? তোমার বাবা আমাকে ঐ রুমে তালাবদ্ধ করে রেখে ছিল। কেন? জানিনা তুমি বিশ্বাস করবে কি না তারপরও বলছি, তোমার বাবা যখন বদলী হয়ে আমাদের চট্রগ্রাম শহরে এল তখন সে আমাদের পাশের বাসা ভাড়া নিয়ে ছিল। একদিন কলেজে যাবার পথে তার সাথে পরিচয় হল। জানলাম সেই আমারপ্রিয় কবি রশিদ আহম্মেদ। তার লেখা রোমান্টিক কবিতা গুলো ছিল অসাধারন! সে আমাকে তার স্বরচিত কবিতা আবৃতি করে শুনাতো। কিছুদিন তার সাথে চলার পর দেখলাম তার কবিতার চেয়েও সে বেশি অসাধারন। আমিই প্রথম তার প্রেমে পড়ে ছিলাম। বড় অসম ছিল সেই প্রেম। তোমার বাবা আমাকে বুঝাতে চেয়েছে অনেক। কিন্তু আমি জানতাম সেও ভালবেসে ফেলেছে আমাকে। কথা থামিয়ে উড়নায় চোখ মুছে সুরভী। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চুপ করে অন্ধকারে তাকিয়ে থাকে। আমার শরীর অব হয়ে আসতে ছিল। মনে হচ্ছে ভয়ানক কোন দুঃস্বপ্ন দেখছি আমি। তারপর কি হল? সে কিছুটা ক্লান্ত যেন। তারপর দায়সরা উত্তর দেয় আর কি হবে? তোমারবাবা এক সময় আমার কাছে স্বিকার করলো যে সেও আমাকে ভালবাসে তারপর সে গ্রামে বাড়ি বানালো। সে জানতো তোমার মা শহরের মেয়ে সে কোনদিন গ্রামে আসবে না। গ্রামে থাকবো আমরা দু’জন। বাড়ি বানানো যখন শেষতখন সে আমার জোড়াজুড়ির কারনে নিয়ে আমাকে এই অভিশপ্ত বাড়িতে নিয়ে আসলো। সারা রাত ট্রেন জার্নি কওে বেশ ক্লান্ত ছিলাম। সে তাই আমাকে বললো তুমি ঘুমাও আমি এখন যাচ্ছি বিকেলের আগেই ফিরবো। তারপর বিকেল গড়িয়ে রাত.. ..। সে আর এলনা। বন্দি আমি না খেয়ে দুশ্চিন্তায় কাটিয়ে দিলা আরো একটা দিন। কেউ এল না। তৃতীয় দিন এত বেশি দূর্বল হলাম যেনড়তে পারলাম না। ভারি অভিমান হল আমার। মনে হল তোমার বাবা আমাকে খুন করারজন্যই এখানে নিয়ে এসেছে। সে আমাকে না খাইয়ে মেরে ফেলার জন্যই আম
াকে রেখে ভেগেছে। তখন চারদিক ছিল জনশূন্য এখনের মত এতবাড়ি ঘর ছিলনা। চিৎকার করে ছিলাম অনেক কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নী। তাই ধুকে ধুকে না মরে অভিমান করে উড়না দিয়ে আতœহত্যা করলাম। সুরভী কথা থামিয়ে আমার দিকে তাকালো। কষ্টে আমার বুক ভেঙেযাচ্ছিল। নিয়তির নির্মমতায় একটি তাজা প্রাণের অপমৃত্য মানতে পারছিলাম না। আমি বললাম আপণী এখন হয়ত জানেন বাবা সেই রাতে বাস এ্যাকসিডেন্টে মারাগিয়ে ছিলেন। সুরভী ফ্যাকাসে হেসে বললো এসব জেনে আর লাভ কি? আমি বোধহয় ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম। যখন উঠলাম তখন সকাল হয়ে গিয়েছে। রাতের ঘটনা মনে পড়ল। ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসলাম। তারমানে আমি স্বপ্ন দেখে ছিলাম? হাফ ছেড়ে বাচলাম! বিছানা থেকে উঠে শাবল দিয়ে পূর্বের রুমের তালা ভেঙে ফেললাম। আতকে উঠে চিৎকার দিলাম! ফ্লোরে পড়ে আছে সুরভীর কংকাল
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।