রহস্য

যারা অনেক ভয়ের কোন গল্প পড়ার জন্য আমার লিখাটি পড়ছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি দয়া করে এই গল্পটি পড়বেননা কারণ গল্পটি তেমন ভয়ঙ্কর নয়, আপনারা হতাশ হবেন।
তবে ভয়ঙ্কর না হলেও নিশ্চয়তা দিতে পারি এটি সত্যি ঘটনা। আমি খুবই সাহসী একটি মেয়ে। কোনদিনই কোন কাজকে আমার কঠিন মনে হয়নি।
কোন মানুষকেই কখনো ভয় পাইনা। উল্টো মানুষজন আমাকে সমঝে চলে ; )। তবে সারাজীবন বিজ্ঞানের ছাত্রী থাকলেও কোন এক বিচিত্র কারনে আমি ভূত ভীষণ ভয় পাই।
ঘটনাটি প্রায় আড়াই বছর আগের। চাকুরী সূত্রে আমি আর আমার বর দুজনেই ময়মনসিংহ শহরে ছিলাম।
আমাদের বাসা ছিল সাহেব কোয়ার্টারের একটি বাংলোতে। বাংলোটি একতলা এবং মোটামুটি একর দুয়েক জায়গা নিয়ে ছিলো।
পুরোনো ডিজাইনের বাংলো, বিশাল বিশাল দরজা চারিদিকে, কোনো জানালা নেই। বাইরেই টানা বারান্দা।
সাঁপ, মশা বা অন্য কোন পোকা-মাঁকড় যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য পুরো বারান্দা নেট দিয়ে ঢাকা।
বারান্দা থেকে তিন ধাঁপ সিঁড়ি নামলেই গাড়ির রাস্তা আর ব্যাডমিন্টন কোর্ট। বাইরে ছিলো একটি ছোট পুকুর আর বিভিন্ন রকমের অনেক গাছ।
একবার কোন একটা কারনে আমার ডাক্তার দেখানো জরুরী ছিল। দিনের বেলায় নানা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি তাই ঠিক করলাম সন্ধ্যের পর বের হব।
আমার ছেলের বয়স তখন পাঁচ। আমাদেরকে বাইরে যেতে দেখলেই তার বাইরে যাওয়া চাইই চাই।
সেদিন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি বলেই আমি চাচ্ছিলামনা ছেলেকে নিয়ে যেতে।
তাই আমার বর আমাকে বললো “আমি বাইরে অপেক্ষা করছি, তুমি ছেলেকে কিছু একটা বুঝিয়ে বাইরে বের হয়ে এসো।”
আমি ছেলেকে ওর প্রিয় টম এন্ড জেরী চালিয়ে দিয়ে কিছুক্ষন পাশে বসে আস্তে আস্তে বাইরে বের হয়ে আসি। তখন প্রায় ৭-৩০টার মত বাজে। চারিদিকে অন্ধকার।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার অংশ হিসেবে সবসময় আমাদের বাসার অপ্রয়োজনীয় সব বাতিই বন্ধ রাখা হয়।
আমরা বাইরে বের হতে চাইলে সবসময় গাড়ী বারান্দার নীচেই রাখা হয় অথবা বাংলোর ডানদিকে বাউন্ডারী ঘেষে যে বিশাল আম গাছ তার নীচে রাখা হয়।
বাংলোর বামদিকে রাস্তা ধরে মিনিট খানেক হাটলে বাড়ীর মূল গেইট।
বারান্দায় এসে দেখলাম সিঁড়ির কাছে গাড়ী নেই।
বাংলোর ডানদিকের আমগাছের নীচে গাড়ী আছে কিনা দেখার জন্য তাকিয়ে দেখি গাড়ী নেই, অল্প আলোতে দেখা গেল আমার বর কার সাথে যেন জোরে জোরে মোবাইল ফোনে কথা বলছে।
সেই চিরাচরিত ভঙ্গি। এক হাতে মোবাইল ফোন কানে ধরা, আরেক হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলা।
আমাকে দেখেই সে হাত নেড়ে ডাকলো “মেরী, এদিকে এস।” আমি তিন ধাপ সিঁড়ি বেয়ে রাস্তায় নেমে ডানদিকে যাচ্ছি, স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তার অবয়ব, শুনতে পাচ্ছি গলার আওয়াজ।
এমন সময় বরের বডিগার্ড ইমরান উল্টোদিকের মূল গেইটের কাছাকাছি থেকে জোরে ডেকে উঠলো “ম্যাডাম, ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন? স্যার গেইটের বাইরে গাড়ীতে বসে আছেন আপনার জন্য!” আমি ঝট করে ডানে তাকাতেই দেখি ওখানে কেউ নেই!
অথচ একটু আগেই সেখানে আমার বরের গলার আওয়াজ স্পষ্ট শুনেছি, আর এত পরিচিত অবয়ব, ভূল হওয়ার কথাই নয়! সাথে সাথে এক দৌড়ে উল্টোদিকে গেইটের কাছে চলে গেলাম।
যেয়ে দেখি গেইটের বাইরে গাড়ী স্টার্ট দেয়া কারন তারা দেখতে পেয়েছিলো আমি বারান্দা থেকে বের হয়েছি। উল্টোদিকে আমাকে যেতে দেখেই তারা আমাকে ডেকেছিলো।
আর আমার ছেলে যাতে গাড়ী স্টার্ট দেয়ার শব্দ শুনতে না পায় এজন্যই তারা দূরে গেইটের বাইরে গাড়ী রেখেছিল। আমি সেদিন প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম। এরপর কখনোই আমি সন্ধ্যের পর আর একা বারান্দায় বেরুতাম না।

লালকন্ঠের স্বপ্নপূরণ

কঙ্কাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *