রক্ত–৩য় পর্ব- জুবায়ের হুসাইন

গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

মৌরি বানু ছেলেকে নিয়ে দারুণ বিপদে পড়লেন। ছেলের জন্যই বাপের বাড়ির সাথে একরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তার। তারপরও ছুটে গেলেন তিনি। বড় ভাই বেশ সহযোগিতাও করলেন। কিন্তু তাতে আর কয়দিন চলে! ফলে পরের বাড়িতে ঝুটা ঝিয়ের কাজে লেগে গেলেন তিনি। একদিন ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে হাজির। তাকে পরিচয় করিয়ে দিল নিজের স্ত্রী হিসেবে। প্রথমে রাজী না হলেও ছেলে-বউকে মেনে নিলেন
মৌরি বানু। হয়তো এবার ছেলে পথে ফিরবে। কিন্তু না, যে পাপ তিনি করেছেন, তার প্রায়শ্চিত্ত তো তাকে করতেই হবে।

সংসারে অভাব বাড়তে লাগল। কিন্তু সেদিকে সলিম আলীর কোনো খেয়াল নেই।

ক্রমে কাহিল হয়ে পড়তে লাগলেন মৌরি বানু সংসারের ঘানি টানতে টানতে। বাঁধিয়ে ফেললেন কঠিন অসুখ।

বছর যেতে না যেতেই ঘরে এলো পুত্র সন্তান। মৌরি বানু ভাবলেন, এইবার হয়তো ছেলে একটু মন দেবে সংসারে। কিন্তু সলিম আলী যেন অন্য ধাতে গড়া। কিছুতেই সে সংসারে মন দিল না। সারাদিন বাইরে বাইরে কাটিয়ে গভীর রাতে বাড়ি ফেরে ছেলে। মৌরি বানু ছেলে-বউকে দিয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। ফল হয়েছে উল্টো, বউকে ধরে পিটিয়েছে সলিম আলী। মৌরি বানু তাই আশা ছেড়েই দিয়েছেন। এখন তার বাঁচার একমাত্র অবলম্বন নাতি ছেলে। ওকে তিনি মানুষের মতো মানুষ করে তুলবেন। ছেলের মতো হতে দেবেন না কিছুতেই। তবে ভেতরে ভেতরে একটা ভয়ও দানা বেঁধে ওঠে তার। শরীরে তো ওরই রক্ত বইছে!

কিন্তু তিনিও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, নাতিকে তিনি মানুষ করবেনই। নিজের ছেলের মতো ভুল তিনি করবেন না। কিছুতেই না।
দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটা বছর কেটে গেল। নাতিটাও বেশ বড় হয়ে উঠেছে। একদিন তার হাতে ইয়া বড় বড় দু’টো পেয়ারা দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন সে পেয়ারা কোথায় পেয়েছে। জবাবে কিছুই বলল না নাতি। যা বোঝার বুঝে নিলেন তিনি। বেদম মারধোর করলেন তাকে। যা আশঙ্কা করেছিলেন তাই-ই হতে যাচ্ছে। সারাদিন ভাবলেন। রাতে ছেলে-বউকে বললেন ছেলে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যেতে। এখানে থাকলে ছেলে মানুষ করা যাবে না। অনেক বলা-কওয়ার পর তাকে বোঝাতে সক্ষম হলেন তিনি। দিন কয়েক পর ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেলেন ছেলে-বউ।

সলিম আলী সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে বউকে আশেপাশে কোথাও দেখল না। এদিকে প্রচণ্ড ক্ষিধেও পেয়েছে। মাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল সে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। ভীষণ রেগে গেলো সলিম আলী। পরদিন সকালে ছুটলো শ্বশুর বাড়ি। কিন্তু বউ ফিরে এলো না।

এরপর কেমন যেন হয়ে গেলো সলিম আলী। ভেতরে ভেতরে কিসের সাথে যেন যুদ্ধ করে গেলো ক্রমাগত। বেশিরভাগ সময় ঘরে শুয়ে থাকে। শরীরটাও কেমন শুকিয়ে যেতে থাকল। মা ভাত বেড়ে ঢেকে রাখেন। ইচ্ছে হলে খায়, না হলে ওভাবেই পড়ে থাকে।

মৌরি বানুর শরীরটা এখন বেশ খারাপ। ভারি কোনো কাজই করতে পারেন না। ফলে প্রায় দিনই না খেয়ে থাকতে হয়। খেয়াল করে সলিম আলী। কিন্তু কিছুই বলে না বা করে না। যেন কিছু বলার বা করার নেই তার।

ধীরে ধীরে বিছানা নিলেন মৌরি বানু। খাটে শুয়ে তাকিয়ে দেখে সলিম আলী। মায়ের ‘খক খক’ কাশি শুনে বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে।

তারপর বেরিয়ে যায় সলিম আলী। সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে। রাতে বাড়ি ফিরে মায়ের একই অবস্থা দেখে। খানিক্ষণ শুয়ে থাকার পর সে
রাতেই বেরিয়ে যায় আবার। সারারাত এদিক ওদিক ঘুরেই কাটিয়ে দেয়। সকালে মহাজনের সাথে দেখা করে। অনেক বলা-কওয়ার পর মহাজন
তাকে রিকসা দিতে রাজি হন।

সলিম আলী তাই এখন রিকসাওয়ালা। মফস্বল শহরে রিকসা চালান তিনি। মহাজনকে ভাড়া দিয়ে যা থাকে তা নিয়ে ফেরেন বাড়িতে।
গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!