রক্ত মাখা মুখ

সেদিন রাতে আমি আর জাহিদ বাড়ি ফিরছিলাম। সকাল সন্ধ্যা হরতাল থাকার কারনে যানবাহনের সংখ্যা ছিল খুবই সিমিত। প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোন গাড়ি পাচ্ছিলাম না। এদিকে রাত বেড়েই চলেছে। খুব চিন্তা হতে লাগলো। একসময় কোন উপায় না দেখে আমি আর জাহিদ হাঁটতে শুরু করলাম। প্রায় তিন চার কিলোমিটার পথ আমাদের হাঁটতে হবে। কিন্তু রাত করে এতখানি রাস্তা হেঁটে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

তারপরও ভাবলাম হেঁটে যতটুকু রাস্তা এগুনো যায় ততটুকুই লাভ। সামনে কোন গাড়ি পেলে না হয় উঠে যাব। আমি আর জাহিদ সামনে এগুতে থাকলাম। প্রায় আধা কিলোমিটারের মত হেঁটে চলে এলাম। কিন্তু কোন গাড়ির দেখা নেই। হঠাৎ পেছনে তাকাতেই দেখি একটা গাড়ি আসছে। হাতের ইশারায় গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করলাম।

কিন্তু গাড়িটি মনে হয় আমাদের ঠিক খেয়াল করতে না পেরে চলে গেল। গাড়িটি আমাদের পাস করে একটু সামনে গিয়ে হঠাৎ করে থেমে গেল। আমরা গাড়িটির কাছে যেতেই দেখি এটা কোন বাস নয়।

এটা একটা লাশ বহনকারী বাস।

ড্রাইভার আমাদের কাছে গাড়ি থামানোর কারন জানতে চাইলে আমরা তাকে বললাম, ভাই আমরা কোন গাড়ি না পাওয়ায় বাসায় যেতে পারছিনা।

দয়া করে যদি আপনি আমাদেরকে একটু পৌঁছে দেন। ড্রাইভার আমাদের বলল, ভেতরে একটা লাশ রাখা আছে। যদি আপনারা ওটার পাশে বসে যেতে পারেন তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই।

আমার পক্ষ থেকে কোন প্রকার আপত্তি ছিল না। কিন্তু জাহিদ লাশের পাশে যেতে কিছুতেই রাজি হল না। আমি ওকে নানান ভাবে বুঝাতে লাগলাম, যে অনেক রাত হয়েছে। আমাদের কোন না কোন ভাবে বাড়ি পৌছাতে হবে। আর তাছাড়া আমরা তো দুই জন, কোন সমস্যাই হবে না। অনেক বুঝানোর পর জাহিদ আর আমি গাড়িতে উঠলাম আর গাড়িতে রাখা সেই লাশের পাশে গিয়ে বসলাম।

গাড়ির ভেতরে ঢোকা মাত্রই কেমন যেন একটা বিদঘুটে পচা গন্ধ নাকে আসল। মনে হচ্ছিল লাশটা কয়েকমাস আগের। কৌতূহল বশত আমি স্ট্রেচারে রাখা লাশের মুখটি দেখার জন্য মুখের কাপর সরাই।

আর মুখের কাপর সরাতেই যা দেখি তাতে আমরা দুজনই ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। দেখি লাশটা সেই ড্রাইভারের ই লাশ। যিনি আমাদেরকে গাড়িতে উঠিয়েছিলেন। আমরা দুজন দুজনের দিকে বারবার তাকাতে লাগলাম। আমি জাহিদকে জিজ্ঞেস করলাম, যে আমি যা দেখছি তুইও কি তাই দেখছিস? ও বলল, হ্যাঁ আমিও তাই দেখতেছি।

আমাদের মনে প্রশ্ন জাগল, তাহলে গাড়ি চালাচ্ছে কে? আমরা দুজন লুকিং গ্লাসে তাকাতেই যেটুকু দেখতে পেলাম তা হলো, একটা রক্ত মাখা মুখ যেন কালো কালো রক্ত তার মুখ দিয়ে গরিয়ে গরিয়ে পরছে। আর তিনি রাস্তার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। বরং তিনি তার মাথা নিচু করে অনেকটা ঝুকে বসে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।

এটা দেখে আমরা ভীষণ ভয় পেয়ে যাই আর বুদ্ধি করি লোকটা কোন কিছু বোঝার আগেই আমরা পেছনের গেইট খুলে লাফ দিয়ে নেমে যাব।

এরপর আমরা বুদ্ধিমত গাড়ির পেছনের গেইট খুলে নিচে লাফিয়ে পরি আর দৌড়ে সেখানে পাশে এক বাসায় চলে যাই। এরপর সেই বাড়ির লোকদের কাছে ঘটনাটি খুলে বলি। পরদিন আমরা আমাদের বাসায় ফিরে আসি।

(সংগৃহীত)

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!