রক্তজবার ঘ্রাণ—— জায়েদ ফরিদ

ঘুম থেকে ঊঠে কাউকে কিছু না বলেই হেঁটে যাই এক মাইল দূরের রেল স্টেশনে। একরাশ ধোঁয়ামেঘ ছড়িয়ে পুরনো একটি কয়লার ইঞ্জিন এসে থামে, প্ল্যাটফর্ম পার হয়ে বেশ খানিকটা দূরে। লাইনের দুপাশে দাঁড়ানো ছাইমাখা কয়েকটি পরিবারের চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে- এখনি গনগনে কয়লা ঝরাবে ইঞ্জিন।

রেলসড়কের ঢালে মজা পুকুর। সেখান থেকে এক বালতি জল তুলে এনে লাইনে দাঁড়ালো হরিদাসী। আমাকে দেখেই মিশিমাখা আয়না-দাঁত বের করে হেসে উঠলো-‘কি গা হৃদ ভাই সাতসকালে ইশটিশান পাড়ায় কী মনে করে?’

-‘তোমাকে দেখতে এলাম হরিদাসী, মুখার্জ্জী বাড়ির কাজ ছেড়ে দেয়ার পর শুনেছি স্টেশনে কয়লা কুড়িয়ে ভালোই চলছে তোমার।’

-‘হ্যাঁ তার আশির্বাদে ভালোই আছি, বলতি পারো।’

ঘটাংঘট আওয়াজ তুলে ট্রেনটা চলে গেলো। কয়লার স্তূপে ঝাঁপিয়ে পড়লো কয়েকটি পরিবার। একটি মাঝারি স্তূপের অঙ্গারে জল ঢেলে দিলো হরিদাসী। পটাপট ঝাঁকায় তুলতে থাকলো পোড়া কয়লার টুকরো। আমিও যোগ দিলাম সাথে। ঝাঁকা নিয়ে এবার সে রওনা হলো স্টেশনের পেছন দিকে চায়ের দোকানে। ছাই-কালো হাতগুলো ধুয়ে নিলো মজা পুকুর থেকে।

জীবিকার জন্য শেষ কাজটি বেশ সহজ মনে হলো আমার। বাবার প্রস্তাবিত চারটি কাজের এটিই সর্বশেষ। এখানেও ফেল হলে নির্ঘাত ফিরে যেতে হবে পড়াশোনার জেলখানায়।

খুব খিদে পেয়েছে। সেই সকাল থেকে এখন পর্যন্ত পেটে দানাপানি পড়েনি। বাড়িতে সবাই হয়তো নাশতার টেবিলে বসে পরোটা-ভাজি অথবা ভুনা খিচুরি খাচ্ছে। পেটের ভেতরটা ব্যথায় মোচড় দিয়ে ওঠে আমার। খাওয়া দাওয়ার ঝামেলা না থাকলে জীবনটা অনেক উপভোগ্য হতো মানুষের।

যেতে যেতে জিজ্ঞেস করি তাকে,-‘আজ সকালে কী দিয়ে নাশতা করেছো হরিদাসী?’

আশ্চর্য হয়ে কোমর থেকে ঝাঁকা নামালো সে,-‘আমার আবার নাশতা, করিচি আপিং দিয়ে।’

-‘আপিং কি হরিদাসী?’

কোমর থেকে সে বের করলো একটি ছোট কৌটো। কালো জেব্রা দাগের চেরিব্লসমের কৌটো। সেখান থেকে দু’আঙুলের মাথায় সামান্য একটু পদার্থ নিয়ে যত্ন করে ঘষে ঘষে সে তৈরি করলো একটি ছোট সরিষা-দানা। হাতের তালুতে রেখে বললো-‘এই আমার নিত্যিকার নাশতা, এর এক দানা খেলি দুপুর তক আর খিদে লাগতি পারে না’।

সরিষার দানার মত আফিম দিয়ে নাশতা করার ব্যাপারটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। কয়লা কুড়িয়ে জীবিকা অর্জন করার প্রস্তাবটা তেমন খারাপ ছিলো না। হাত কালো হলেও তা অনায়াসে ধুয়ে ফেলা যায়-জেলে বউয়ের হাতের রঙ তো নয়! আফিম দানার পুতুল নাশতাটা আমাকে আরো ক্ষুধার্ত করে তোলে।

.

ব্যর্থতার চুনকালি মেখে আমি ভারী পায়ে অগত্যা পুরনো জেল-ঘরের দিকেই হাঁটতে থাকি। কয়েদি হলেও সেখানে খাওয়া-দাওয়ার কোন অসুবিধা নেই। কেবল স্মৃতিশক্তি ধারালো করার জন্যে আয়ূর্বেদের ব্রাহ্মীশাক রসায়নটা নাক টিপে গিলতে হয়। কিন্তু রুই মাছের মুড়ো, ঠ্যাংসহ গলদা চিংড়ি, এসব তো অনায়াসলভ্য।

পাকা এক মাইল পথ হেঁটে যেতে হবে- ততক্ষণ কি বেঁচে থাকবো? পকেট হাতড়ে রাস্তার ধার থেকে ফুলুরি কিনে হতাশভাবে হাঁটতে থাকি বাসার দিকে।

বাসার সামনে বিরাট দুটো দেবদারু গাছ। এত মোটা যে তিনজন লাগে বেড় দিতে। সেই গাছের খদ্দর গায়ে ঘুঁটে দিচ্ছে আমার প্রিয় দুটো ঘুঁটেকুড়োনি মেয়ে। প্রথমে একটি গোল তারপর তার চারদিকে আরো ছয়টি গোল- এভাবেই নক্সা বানিয়ে যায় ওরা। একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম- এই নক্সাটা তারা কোথা থেকে শিখেছে? ওরা বলেছিল, এই নক্সা শিখতে হয় না, ঘুঁটে দিলেই হয়।

একদিন কিউটিকুরা পাউডারের কৌটার মুখে এরকম নক্সা দেখে ভেবেছিলাম- পাউডার কোম্পানির নক্সাকারী আগে নিশ্চয়ই ঘুঁটেকুড়োনি ছিলো। এ ব্যাপারে অনুমানটা মেলেনি তবে এখন বুঝতে পারি গ্রাফিক আর্টস্-এর প্রতি আমার আগ্রহটা সেখান থেকেই।

ঘুঁটেকুড়োনিরা ঘুঁটে দেয়া রেখে আমাকে সমানে প্রশ্ন করে চলেছে- কেন এতদিন তাদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ এবং খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে। তাদের ঔৎসুক্য নিরসনে আমি এ গল্পের বাকি অংশটুকু বলেছিলাম।

সাতদিন আগে নাশতার টেবিলে বাবা আমাকে একটি খাম এগিয়ে দিয়ে বললেন- ‘এর ভেতরে একটি ট্রেনের টিকেট আর কিছু টাকা আছে, এগুলো তোমার। আমরা চিন্তা করে দেখেছি- লেখাপড়া সবাই করতে পারে না, এর জন্যে মনকে তৈরি করতে হয়। অনেক বলা কওয়া আর মারধোর করা সত্বেও যখন তোমার মতিগতি স্থির হয়নি তখন আর কি করা। অভিভাবক হিসেবে তোমার ওপরে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে তাই তোমাকে আমরা স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জনের জন্যে চারটে পথ বাৎলে দিতে চাই। তুমি গভীরভাবে এই পথগুলো সম্পর্কে ভেবে দ্যাখো, হয়তো এর কোন একটিতে তোমার মন স্থির হতে পারে। প্রথমত তুমি গ্রামে গিয়ে তোমার চাচার সঙ্গে হালচাষ করতে পারো। কাজটা তেমন কঠিন নয়। তোমার বয়সের অনেক ছেলেই এ কাজ করছে। কাজটা মনঃপূত না হলে তোমার চাচার বাড়ির পেছনে জেলে পাড়ায় খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে পারো। মৎস্যজীবী হওয়া মন্দ নয়। তুমি সাঁতার জানো, এ বয়সেই দলেবলে খাল-বিল, আত্রাই নদী পার হতে শিখেছো, অতএব আমাদের তেমন দুশ্চিন্তাও থাকবে না। গ্রামের দুটো কাজেই বিফল হলে তুমি শহরের আরো দুটো কাজ করার সুযোগ পেতে পারো। বাসার সামনে বড় মাঠটার কোণে আমগাছের নিচে একটি ছোট মুদির দোকান আছে। এ রকম একটি দোকান তোমাকেও যোগাড় করে দেয়া যাবে, সংসারের একটু খরচ হলেও। বেচাকেনা অনেক ইন্টারেস্টিং ব্যাপার, হয়তো তোমার ভালো লাগতে পারে। আর যদি তাতেও তুমি অপারগ হও তবে শেষমেষ রেলস্টেশনে কয়লা কুড়োতে পারো। শুনেছি, প্রতিবেশী মুখার্জ্জী বাড়ির পাচিকা হরিদাসী রাঁধুনীর কাজ ছেড়ে কয়লা কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ কর‌ছে। আমরা তাকে জানি এবং তুমিও। নিমপাতা আর চিনি ছিট দেয়া শুক্তো রান্না করে সে কয়েকবার আমাদের খাইয়েছেও। দুপুর বারোটায় ট্রেন, এখনো তিনঘন্টা বাকি। রেডি হয়ে নাও, স্টেশনে যাবার জন্যে রিকশা নিতে পারো, তবে হেঁটে গেলে কিছু পয়সা বেঁচে যাবে তোমারই।’

নাশতার টেবিলে গম্ভীরভাবে সবাই আমাকে দেখছে, কেউ কোনো কথা বলছে না। একটা বেতের বাক্সে সামান্য জিনিষপত্র গুছিয়ে নিয়ে কাউকে না বলে যখন রাস্তায় বেরিয়েছি তখন ছোটবোন মিনু এসে বললো, ‘ভাইয়া তোমার ঠাণ্ডা লাগবে, চাদরটা নিয়ে যাও, আর একটা কথা– ভোরবেলা জবা ফুল নিতে এসে জ্যোতি যদি তোমার কথা জিজ্ঞেস করে, তবে কী বলবো?

-‘বলবি, জ্যোতি একটা পাগলী, জবা ফুলে গন্ধ আছে একথা কেবল ওই মানে আর কেউ না।’

ট্রেনের জানালায় মুখ রেখে সেই রাতে আমার মনে হলো কেবল মিনু আর জ্যোতির কথা। কাল সকালেই হিমেল কুয়াশা মেখে সাদা ফ্রক পড়ে জ্যোতি আসবে ফুল নিতে, আমাকে খুঁজবে মগডাল থেকে ফুল পেড়ে দিতে। মিনুর হাত থেকে প্রথম ফুলটি নিয়ে এভাবে সে গন্ধ শুঁকবে যেন বসরাই গোলাপের তীব্র গন্ধে ডুবে যাচ্ছে সে। বিস্তৃত পাঁচ পাপড়ির ফুলটা যখন সে ধরে রাখবে বুকের সামনে, মনে হবে একটি অনন্য সূর্যোদয়। সে সূর্যোদয় আমি দেখতে পাবো না।

ট্রেন থেকে নেমেই ছুট। গ্রামের বাড়ি পৌঁছুতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে গেলো। যাত্রার ক্লান্তি সত্ত্বেও ঘুম এলো না- কাল সকালেই প্রথম প্রস্তাবটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

কুয়াশাঢালা মাঠে সারি সারি লাঙল চলছে। পরিচিত এক চাষীর হাত থেকে প্রায় জোর করেই লাঙলটা নিজের হাতে তুলে নিই আমি। হাতলটা সামান্য উঁচু হলেও ভারসাম্য রক্ষা করাটা তেমন কঠিন নয়। ইস্পাত ফলার ধারে অদ্ভুতভাবে চিরে যাচ্ছে নরম মাটির বুক। উল্টে যাওয়া মাটির ভেতর থেকে বেরিয়ে পড়ছে পোকামাকড়, এমনকি দু-একটি ছোট কচ্ছপও। লাঙলের আলে পেছনে পেছনে হাঁটছে শাদা বক। ঠুকরে ঠুকরে আঁধার গিলছে।

অন্যমনস্কভাবে পেছনে বকের সারি দেখতে গিয়ে ঘটে গেলো বিভ্রাট। হাম্বা শব্দে চিৎকার করে উঠলো একটি বলদ। লাঙলের ফলা লেগে রক্তাক্ত হয়ে গেছে বলদের পেছনের পা। চাষী তেড়ে এলো, আমি এক ছুটে গ্রাম পার।

এরপর আর কখনো লাঙল ধরা হয়নি। লাঙলের ক্ষেতে তবুও হেঁটেছি আমি- কেবলই বক দেখার জন্যে। একদিন বিকেলে রওনা হই পার্শ্ববতী জেলেদের গ্রামে। মৎস্যজীবী হওয়া, অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্যেই ওখানে যাওয়া। গ্রামের মুখে হালকা জঙ্গল পার হতেই দেখি- টকটকে হলুদ এক জেলেবউ। আমগাছের নিচু ডাল থেকে ঝুলছে একটি মাছ ধরা জাল। জালের প্রান্তভাগ সে অনবরত ডুবিয়ে চলেছে একটি মাটির চাড়িতে। চাড়ির ভেতর চকোলেট রঙের পানি। জেলেবউ কাজে ব্যস্ত, আমাকে সে খেয়াল করে না। অনেকক্ষণ তার জাল রং করার কায়দাটা লক্ষ্য করি আমি। জাল ছড়ানোর সময় কখনো কখনো জেলেবউ জালের ওপাশে চলে যায়। মনে হয়, কোন মৎস্যকন্যা জালে আটকে পড়েছে। কিন্তু হাতের তালু দুটো তার কুচকুচে কালো। জেলেবউকে খুব কুৎসিৎ মনে হয় আমার। এমনকি চাচীর রান্নাঘরে কালো রঙের ঢেঁকি পাড় দেয়া মেয়েটির চেয়েও। জেলে বউ হয়তো ইচ্ছে করেই হাত কালো করে, কে জানে কি দিয়ে!

জেলেবউয়ের জাল ছড়ানো শেষ। একবার পড়ন্ত বেলার দিকে আর একবার বাড়ির দিকে তাকায় সে। আমি দৌড়ে যাই তার কাছে। ভূমিকা ছাড়াই জিজ্ঞেস করি –‘ আচ্ছা তোমার গা টা হলুদ, কিন্তু হাতদুটো কালো কেন?’জেলেবউ লজ্জা পায়, তবু বলে- ‘গাবের কষ বাপু, ইহজন্মে এ রং যাবার লয়।’

আবার প্রশ্ন করি তাকে- ‘জেলেরা কি তবে গাবের কষ দিয়ে গোছল করে? সবাই এতো কালো কেন ?’

জেলেবউ হেসে গড়িয়ে পড়ে, উচ্চস্বরে জেলেকে ডাকে- ‘দেখে যাও, শুনে যাও পাগল ছেলেটার কতা।’

ততক্ষণে আমি হাওয়া।

শহরে ফিরে আসি পরদিনই।

বাসার সবাই আমাকে লক্ষ্য করে কিন্তু কিছুই তেমন বলে না। আমার ব্যর্থতার গল্প কাউকে বলি না, এমন কি মিনুকেও।

একসময় মিনু বলে-‘তুমি যাবার পর জ্যোতি একদিনও আসেনি।’

-‘না আসুক।’

আমার মাথায় তখন শহরের শেষ প্রস্তাব দুটো জেঁকে আছে- আজ মুদির দোকানে অবশ্যই যেতে হবে।

দোকানের কাছে পশু চিকিৎসালয়। আমি সারা সকাল হাসপাতালের খোলা বারান্দায় বসে মুদির কাজকর্ম মনোযোগ দিয়ে দেখি। বেচাকেনা মন্দ নয়, কাজটাও কঠিন নয়। কিন্তু মুদির চেহারা-স্বাস্থ্য নিয়ে আমি বিপাকে পড়ি।

দোকানে ক্রেতা না দেখে মুদির কাছে গিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করি- ‘আচ্ছা তোমার পা-গুলো মুলি বাঁশের মতো এত সরু সরু কেন ?’

মুদি বলে- ‘খোকাবাবু, তোমরা হেসে খেলে বেড়াও, ছুটোছুটি করো তাই তোমাদের পায়ের গোছা মোটা। আমার কি আর উপায় আছে? বেচাকেনা না হলি পেট চলবে কি করে। সারাদিন একঠায় বসে থাকি, তাই পা-দুটো শুকোয় গেছে।’

-‘আর একটা কথার উত্তর দেবে ?’-‘কী কথা ?’

-‘তোমার মুখটা অর্ধেক শাদা আর অর্ধেক কালো কেন ?’

মুদি লজ্জা পায়, তবু বলে- ‘সকালে দোকানের ঝাঁপ খোলার পরে বাঁদিক থেকে রোদের আলো পড়ে দুপুর তক, তাই এ পাশটা কালো হয়ে গেছে, কোনো উপায় নেই- ঝাঁপ না খুললি ব্যবসা হবে কি করে?’

গরীব মুদির জন্য আমার খুব দুঃখ হয়।

আমি তাকে পরামর্শ দিই- ‘তুমি সামনের এই হাসপ[তালে শরীরটা দেখাও না কেন?’

মুদি সরু গলায় খনখন করে হেসে ওঠে- ‘চলো দুজনেই না হয় একত্রে গা-মাথা দেখিয়ে আসবো একদিন।’

মুদির বিচিত্র শাদা-কালো কিম্ভূত মুখ আর সরু সরু হাত-পা আমাকে ভূতের মত তাড়া করে ফেরে। মনস্থির করি- কাল সকালে একবার শেষ প্রস্তাবটি পরখ করার জন্যে রেলস্টেশনে যেতে হবে।

স্টেশনের গল্প শেষ হলে ঘুঁটেকুড়োনিরা জানালো- ‘লেখাপড়া করাই সবচে সহজ কাজ, সুযোগ থাকলি আমরাও লেখাপড়া করতাম।’

চোরের মতো গৃহে প্রবেশ করলাম আমি। কাউকে কিছু না বলে পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে পড়ি। ব্যর্থতার গ্লানিতে ঘুম আসে না। একা আমার ছোট ঘরে জানালায় মুখ রেখে অন্ধকারের দিকে চেয়ে থাকি সারারাত।

কুয়াশার কারণে সেদিন সূর্য উঠতে অনেক দেরি। ঘোলা অন্ধকারে একটি শাদা মূর্তি এগিয়ে আসে বাগানের জবা গাছের কোণা থেকে- ঐ তো জ্যোতি এসেছে ফুল কুড়োতে। তার শাদা বুকের জমিনে তখন রক্তজবা সূর্য উঠছে। আমাকে দেখে মিষ্টি হাসলো সে। গভীর করে গন্ধ নিলো জবা ফুলটার, তারপর বললো- ‘খুব ভালো করে শুঁকে দ্যাখো হৃদ্ ভাই- জবা ফুলের কত ঘ্রাণ।’

আমি জবা ফুলটা জানালার শিক গলে হাতে নিই। দুচোখ বন্ধ করে নিবিড়ভাবে ঘ্রাণ নিই জবাটার। নাসারন্ধ্রপথে আমার সমস্ত শরীর-বেলুন ভরে ওঠে অদ্ভুত ঘ্রাণে। জবার গন্ধ আবিষ্কারের আতিশয্যে আমি চোখ খুলে চিৎকার দিতে চাই, কিন্তু জ্যোতিকে দেখতে পাই না কোথাও।

সকালে নাশতার টেবিলে মিনুকে বলি- ‘আজ খুব ভোরে জ্যোতি এসেছিল ফুল কুড়োতে।’ মিনুর চোখ ছলছল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালার দিকে হেঁটে গেলো সে- ‘মিথ্যে বলো না ভাইয়া, তুমি যাবার পরদিন থেকে কেউ আর জ্যোতিকে খুঁজে পায়নি।’

দুঃখিত!