সূর্যটা প্রায় পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সূর্যের অস্ত যাওযার এই দৃশ্যটা প্রতিদিন মুগ্ধ হয়ে দেখে লিন্ডা, আর দেখে সরাইখানার বাইরের উঠানে রাখা রানী তোমানের মূর্তিটাকে।
…
টেক্সাস শহরের অনেকটা বাইরে অবস্থিত ক্রিস আর লিন্ডার অনেক কষ্টে তৈরি করা সরাইখানা “লিন্ডা’স লজ”। লিন্ডার স্বামী ক্রিসের বয়স প্রায় ৭৫ এর কাছাকাছি আর লিন্ডার বয়স ৬৮। কোন ছেলেমেয়ে নেই ওদের। দীর
সেই থেকে আজ পর্যন্ত রেমন্ডের বংশধররা দেবী তোমানের মূর্তিটা সযত্নে সংরক্ষন করে আসছে। লিন্ডা জানে ব্যাপারটা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু কিছু বলেনি ক্রিসকে। থাকনা, যে যার বিশ্বাস নিয়ে।
রাত প্রায় ১২ টা। এখন আর কাস্টোমার আসবেনা বললেই চলে। লিন্ডা রান্নাঘরের সিন্কে এঁটো বাসন মাজছে। ক্রিস ক্যাশের হিসাব নিকাশ নিয়ে ব্যাস্ত। হঠাৎ দরজা খুলে তিনজন মুখোশ পড়া লোক হুড়মুড় করে ভিতরে এসে ঢুকলো। একজন দৌড় দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লো তারপর লিন্ডার মুখ চেপে ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসল। অন্য একজন ক্রিসের মাথা বরাবর একটা শটগান চেপে ধরল। তারপর ফিসফিস করে ক্রিসের কানে কানে বলল,”জলদি, ক্যাশে যা আছে চটপট বের করো, বেশী সময় নেই। না হলে বুড়িটার বুক ঝাঁঝরা করে ফেলবো”। ততক্ষনে লিন্ডাকে যে ধরেছিল তার হাতে বের হয়ে আসলো একটা ছোট পিস্তল। লিন্ডার মাথার উপর পিস্তলটা ধরে কুৎসিত দাঁত বের করে হাসতে লাগলো সে।
শটগানধারী তৃতীয়জনকে উদ্দেশ্য করে বলল, “পল, সামনে রাখা সিন্দুকটার তালা ভেঙ্গে ফেলো, তাড়াতাড়ি।”
ছটফট করে উঠলো ক্রিস। ঐ সিন্দুকে তাদের সারাজীবনের সঞ্চয় রাখা আছে। শটগানধারীকে অনুরোধ করলো, বারবার মিনতি করলো কিন্তু কোন কাজ হলো না। বরং শটগানের বাটের এক বাড়ি খেয়ে ক্যাশের উপর ছিটকে পড়লো সে।
সিন্দুকটা খোলার অনেক চেষ্টা করলো পল, কিন্তু পারলো না। শটগানধারীর দিকে ফিরে বলল, “জ্যাক, কাজ হচ্ছেনা, বুড়োটার কাছে আনলক কোড জিজ্ঞেস করো।”
জ্যাক ক্রিসের কলার চেপে টেনে তুলল।
“কোড বল, বুড়ো, নাহলে বুড়ি খতম”
ক্রিস কিছু বলল না শুধু নিজেকে ছাড়ানোর প্রানপন চেষ্টা করতে লাগলো।
জ্যাক ক্রিসের গালে জোরে একটা চড় মারল। আবার ছিটকে পড়ল ক্রিস। তারপর লিন্ডাকে যে ধরেছিল, তার উদ্দেশ্যে বলল, “কেভিন, বুড়িটার মাথায় ২ রাউন্ড গুলি ঢুকিয়ে দে।”
“নাহ”, চিৎকার করে উঠল ক্রিস, “আমি বলছি। সিন্দুকের কোড হলো ২৩৯৭….”
শেষ করতে পারলো না ক্রিস, তার আগেই কোথা থেকে যেন এক বিশাল জংলী কুকুর এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো পলের গায়ের উপর। চিৎকার করারও সময় পেলনা পল, তার আগেই তার টুঁটি চেপে ধরল কুকুরটা। একটানে ছিড়ে ফেলল পলের কন্ঠনালী। মেঝেতে পড়ে কয়েক সেকেন্ড ছটফট করলো পল। তারপর একেবারে নিথর হয়ে পড়ে থাকলো।
চোখের সামনে এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠল জ্যাক। শটগানটা ক্রিসের মাথার উপর ধরলো আবার, কিন্তু গুলি করতে পারলো না। তার আগেই ক্যাশ টেবিলের উপর মুখ থুবড়ে পড়লো সে। ক্রিস অবাক হয়ে দেখলো, জ্যাকের গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। কেউ যেন অত্যন্ত নিপুন ভাবে, ধীরে সুস্থে জ্যাকের গলার একপাশ থেকে অন্যপাশে ধারালো একটা ছুরির ফলা বুলিয়ে দিয়েছে।
এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো লিন্ডা। দ্রুত ঘুরে দাড়ালো ক্রিস কিন্তু পিছনে কেউ নেই। তাহলে? কে হত্যা করলো শটগানধারীকে?
ততক্ষনে লিন্ডাকে ছেড়ে দিয়েছে কেভিন।
“কে?” চিৎকার করে উঠলো সে। ঘরের চারদিকে কয়েক রাউন্ড গুলি করলো। বোঝাই যাচ্ছে ভয় পেয়েছে। ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে, দরদর করে ঘামছে। পিস্তল ধরা হাতটা খুব জোরে কাঁপছে তার। আস্তে আস্তে পিছু হটতে লাগলো কেভিন। উদ্দেশ্য পরিস্কার, কোনভাবে দরজা পর্যন্ত যেতে পারলেই কোন একদিকে ছুট লাগাবে। হঠাৎ কেভিনের পিছে এসে দাড়ালো এক রেড ইন্ডিয়ান যুবতী। অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো ক্রিস। খুব চেনা মনে হলো যুবতীর মুখখানা। কিন্তু কোনভাবেই মনে করতে পারলোনা মেয়েটা কে? হঠাৎ একটা ভয়ঙ্কর দর্শন ছুরি উঠে আসলো যুবতীর হাতে। বামহাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলো কেভিনকে। মরন ভয়ে চিৎকার করে উঠলো কেভিন। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। কিন্তু যুবতীর হাত যেন শক্ত পাথরে গড়া। একটুও নড়লনা তার হাত। ডানহাতে ধরা ছোরাটা কেভিনের গলার বামদিকে চেপে ধরল। তারপর খুব ধীরে বামদিক থেকে ডানদিকে ঘুরিয়ে আনলো ছোরাটা। ফিনকি দিয়ে টকটকে লাল রক্ত বের হয়ে আসলো কেভিনের গলা দিয়ে। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল কেভিনের। আস্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো কেভিন। রক্তে ভেসে যেতে থাকলো সরাইখানার মেঝে।
বীভৎস এ দৃশ্য দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল লিন্ডা। ক্রিস যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মেয়েটা ক্রিসের দিকে চেয়ে সামান্য মাথা ঝোকালো। তারপর একে একে তিনটা লাশ নিয়ে টানতে টানতে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। যাওয়ার সময় হালকা একটা শিস দিল। লাফ দিয়ে কুকুরটা উঠে দাড়ালো তারপর পিছু নিল রহস্যময়ী রেড ইন্ডিয়ান যুবতীর।
নিজেকে সামলে নিতে কিছুটা সময় নিল ক্রিস। তারপর ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল লিন্ডাকে।
“কে, কে ওটা,” ভীত গলায় প্রশ্ন করলো লিন্ডা।
“আমি জানি না। তবে…….” অনিশ্চিত গলায় বলল ক্রিস।
“তবে কি, বলো?”
“না কিছু না,” একইভাবে অনিশ্চিত গলায় বলল ক্রিস।
সেরাতে আর ঘুম হলোনা ক্রিস আর লিন্ডার। সরাইখানার চারদিকে রক্তে মাখামাখি। পরিস্কার করতে করতে ভোর হয়ে গেল। পূর্ব আকাশে তখন কেবল হালকা লালচে আভা ফুটে উঠেছে। এক কাপ কফি হাতে ক্রিস সরাইখানার বাইরে বের হয়ে আসল। নরম ঠান্ডা একঝলক বাতাস বয়ে গেল ক্রিসের উপর দিয়ে। রানী তোমানের মূর্তি তার জায়গায় নীরবে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু, কিন্তু কি যেন একটা অসামন্জস্যতা চোখে পড়ল ক্রিসের। মূর্তিটার দিকে এগিয়ে গেল সে। হ্যা, এবার বুঝতে পারলো ক্রিস। কুকুরটা রানীর বামদিকে ছিল আগে এখন কিভাবে যেন ডানদিকে চলে এসেছে। আর, আর রানীর ছুরিটা! ছুরিটার কিছু অংশ লালচে হয়ে আছে। রক্ত!!!
রাতে তাদেরকে সাহায্যকারী রেড ইন্ডিয়ান যুবতীর কথা মনে পড়ে গেল ক্রিসের। এখন বুঝতে পারলো, কেন এত চেনা চেনা লাগছিল মেয়েটাকে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।