ইয়ারমুকের প্রান্তর। মুসলিম ও রোমক বাহিনী মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। ২লক্ষ ৪০ হাজার রোমক সৈন্যের নেতৃত্ব করছেন রোম সমপ্রাট হিরাক্লিয়াসের পুত্র স্বয়ং। মুসলিম বাহিনীর অধিনায়কত্ব সরছেন সেনাপতি আবু উবাইদাহ এবং তাঁর অধীনে রয়েছেন খালিদ ইবন ওয়ালিদ। ২লক্ষ ৪০হাজার রোমক সৈন্যের মুকাবিলা করার জন্য খালিদ ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীকে এক অপূর্ব কৌশলে ৩৬টি দলে বিভক্ত করলেন। তারপর মুসলিম বাহিনী তার ঐতিহ্য অনুযায়ী রোমক শিবিরে সত্যেল দিকে আহবান জানিয়ে শান্তির বার্তা প্রেরণ করল। রোমকরা এর জবাব দিল অস্ত্রের মাধ্যমে।
পুনঃপুনঃ পরাজয়ের গ্লানিতে রোমক বাহিনী ক্ষিপ্ত জানোয়ারের মত আপতিত হলো ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীর উপর। কিন্তু আঘাতের পর আঘাত খেয়ে রোমক বাহিনীই অবশেষে পিছু হটল, মুসলিম বাহিনীকে হটাকে পারল না এক ইঞ্চিও।
পরুদিন আবার আক্রমন শুরু হল। রোমক বাহিনীই আবার আক্রমণ করল। কিন্তু সেদিন মুসলিম বাহিনী শুধু আত্মরক্ষা নয়, পাল্টা আক্রমণ চালাল। রোমকরা সেদিন জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ইঠেছে, আর মুসলনামরা তো হয় জয় নয় শাহাদাতের আকাংখা নিয়েই যুদ্ধে নেমেছেন। সুতরাং সেদিন ইয়ারমুক প্রান্তরে যে যুদ্ধ শুরু হল তার বর্ণনা অসম্ভব। শত্রুনিধন ছাড়া কারো কোন বাহ্যিক জ্ঞান পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। অদ্ভুত সে দৃশ্য। ২লক্ষ ৪০ হাজার রোমক সৈন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বলীয়ান, আর ৪০ হাজার মুসলিম সৈন্যের একমাত্র শক্তিই হলো তাদের ঈমান-সত্যের জন্য জীবন দেয়ার অদম্য আকাংখা। এক এক মুসলিম সৈন্য সেদিন একশ’ জনে পরিণত হয়েছিল। অবশেষে রোমক শক্তি নেতিয়ে পড়ল, পরাজিত হলো। কিন্তু মুসলিম বাহিনীর সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। শত্রু হননে তখন মত্ত তারা। সেনাপতি সৈনিকদের মত্ততা দূর করার জন্য যুদ্ধবিরতির বাদ্য ধ্বনি করতে আদেশ দিলেন। সৈনিকদের সম্বিত ফিরে এলো। সম্বিত ফিরে পেয়ে তারা যখন চারদিকে চাইলেন, দেখলেন, চারদিকে রোমক সৈন্যের লাশ ছাড়া আর কিছু নেই। মুসলিম সৈন্যের মত্ততা সম্পর্কে জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছেন, “ইয়ারমুক যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যরা শত্রু নিধনে এমনি একাগ্র ছিল যে, হারারা ইবন কায়েসের একটি পা যে কখন বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, সে টেরই পায়নি। যুদ্ধ শেষে সপ্তোদিতের মত হাসতে হাসতে যুদ্ধ ক্ষেত্রে তিনি পা খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন।”
এই ভয়াবহ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর তিন হাজার মুজাহিদ শহীদ হয়েছিল, আর রোমক পক্ষে মারা গিয়েছিল ১লক্ষ ১৪ হাজার ন্যৈ।
এই শোচনীয় পরাজয় বার্তা শ্রবণ করে রোম সম্রাট এশীয় ভুখন্ড ছেড়ে কনষ্ট্র্যান্টিনোপলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যাবার সময় যুগ যুগ ধরে ভোগ করা সিরিয়ার নয়নাভিরাম দৃশ্যের দিকে চেয়ে বলেছিলেন, “বিদায় হে সিরিয়া, শত্রুদের জন্য তুমি কি সুন্দর দেশ!”
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।