রাজধানী দামেস্ক। খলীফা উমর ইবনে আব্দুল আজিজ তখন খলীফার আসনে সমাসীন। মুসলিম বিশ্বের কয়েকজন খ্যাতনামা কবি এলেন দামেস্কে। তাঁদের ইচ্ছা—অন্যান্য রাজদরবারের মতো উমর ইবনে আব্দুল আজিজের দরবারে গিয়েও খলীফার কিছু স্তুতিগান করে আর্থিক ফায়দা হাসিল করা। তাঁরা অনেক দিন রাজধানীতে থাকলেন। সবাই জানল ব্যাপারটা। কিন্তু খলীফার দরবার থেকে কোনো ডাকসাইটে আহ্বান এলো না। অবশেষে তাঁরা নিজেরাই খলীফার সঙ্গে সাক্ষাতের মনস্থ করলেন।
সব কবি মিলে সবচেয়ে মুখর ও মশহুর কবি জরীরকে দরবারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। জরীর দরবারের দ্বারে এসে সিরিয়ার বিখ্যাত ফকীহ আউস ইবনে আবদুল্লাহ হাযরী’র মাধ্যমে খলীফার সাক্ষাৎ প্রার্থনা করলেন। হযরত আউস গিয়ে জরীরের পরিচয় দিয়ে তাঁর সাক্ষাতের আবেদন জানালেন। খলীফা তাঁকে ডেকে পাঠালেন। কবি জরীর খলীফার সমীপে হাজির হয়ে বললেন, “আমি শুনেছি আপনি প্রশংসা-প্রশস্তি ভালোবাসেন না। জনগণের কল্যাণ কামনায় সর্বক্ষণ উদ্বিগ্ন থাকেন আপনি। আমি এ ধরণের কিছু কবিতা রচনা করেছি—শুনুন।” কবি জরীর হিজাজের ইয়াতীম বালক-বালিকা ও বিধবাদের দুঃখ-দুর্দশা বর্ণনা সম্বলিত কবিতা পাঠ করতে লাগলেন।
উমর ইবনে আবদুল আজিজ মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ কবিতা শুনলেন। তাঁর দৃষ্টি ছিল আনত, মুখে অপরিসীম বেদনার ছায়া। দু’গণ্ড বেয়ে অবিরাম ধারায় গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু। কবিতা পাঠ শেষ হতেই তিনি বাইতুল-মালের প্রধান সচিবকে ডেকে পাঠালেন এবং টাকা-পয়সা, শস্য, কাপড় ইত্যাদি সহ একটি সাহায্য কাফেলাকে তৎক্ষণাৎ হিজাজে যাত্রার নির্দেশ দিলেন।
তারপর তিনি জরীরের দিকে ফিরে বললেন, “আপনি কি মুহাজির?” জরীর বললেন, “না, আমি মুহাজির নই।” আবার খলীফা জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কি অভাবগ্রস্ত আনসার অথবা তাঁদের কোনো প্রিয়জন?” জরীর বললেন, “না।” খলীফা পুনরায় প্রশ্ন করলেন, “যারা ইসলামের বিজয়ে অংশগ্রহণ করেছিল, আপনি কি সেই জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের কোনো আত্মীয়?” জরীর বললেন, “না, আমি তাঁদেরও কেউ নই।”
খলীফা তখন বললেন, “তাহলে আমার ধারণায় বাইতুল-মালে এই মুহূর্তে আপনার কোনো অংশ নেই।” বাকপটু জরীর তৎক্ষণাৎ বললেন, “আমি একজন মুসাফির। বহু দূর থেকে আপনার কাছে এসেছি এবং অনেক দিন ধরে আপনার সাক্ষাতের অপেক্ষায় রয়েছি।” খলীফা একটু হেসে বাইতুল-মালের সচিবকে কানে কানে কিছু বললেন। বাইতুল-মালের সচিব বিশটি দিনার নিয়ে এলেন।
খলীফা সেই বিশটি দিনার কবির হাতে দিয়ে বললেন, “এই দিনার কয়টি-ই আমার এই মুহূর্তে সম্বল। ইচ্ছা হলে এগুলো গ্রহণ করুন এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন, অথবা চাইলে আমার বদনাম করুন।” কবি জরীর বিস্ময়ে বিমূঢ়, কিন্তু তাঁর চোখে আনন্দের নৃত্য। তিনি বললেন, “বদনাম নয়, আমি এর জন্য গৌরবই বোধ করব।” বলে বিশটি দিনার নিয়েই কবি জরীর দরবার ত্যাগ করলেন। বাইরে এসে অপেক্ষমাণ সাথীদের বললেন, “আমি এমন এক রাজদরবার থেকে এসেছি, যার ভাণ্ডার শুধু দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের জন্যই খোলা।”
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।