প্রতিদিনকার মত আজও ঘুম ভাঙল কাজের বুয়ার ‘ভাইজান,নবাবগিরি না রাইখ্যা উইঠ্যালান;৮টা বাইজ্যা গেছে বিছানা গোছাইতে হইব’ কমন ডায়লগে।এবং প্রতিদিনকার মত আজও ইচ্ছা হল কাজের বুয়াকে জোরে একটা ধমক লাগাই।কিন্তু ধমক দেওয়ার আগে মনে পড়ে গেল বোনের হুমকি ‘কাজের বুয়া যদি তোর ধমকের কারণে কাজ ছেড়ে চলে যায় তাহলে থাল-বাসন থেকে শুরু করে বাথরুম পরিষ্কার,ঘর মোছা,কাপড় ধোয়া সব তোকেই করতে হবে’।ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে হাজার হাজার ভিখারিনীর অভাব না থাকলেও কাজের বুয়ার অভাব কেন ভাবতে ভাবতে বিছানা ছেড়ে বাথরুমে গিয়ে দেখি পানি নেই।নদী-সাগরের দেশে পানির অভাব!!প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদনের আশাকে মংগ্রলগ্রহে পাঠিয়ে দিয়ে মুখ ধোয়ার জন্য ভাবীর কাছে এক জগ পানি চাইতেই ভাবী হেসে উঠে বলল, ‘ত্রকটু আগে ওয়াসায় ফোন করেছিলাম ।কিছুক্ষনের মধ্যেই ওয়াসার মিনারেল ওয়াটারের গাড়ি এসে যাবে।একটু অপেক্ষা কর’।ভাবীর কথার প্রতি উওরে কিছু বলার আগেই বুয়া বলল,’ভাবী আমারেও মিনারেল ওয়াটার দিয়া গোসল করতে দিয়েন।ওয়াসার পানি দিয়া গোসল কইরা শরীরের চামড়া কেমন মইরা যাইতাছে।’
ঘুম জড়ানো চোখে-মুখে হেসে উঠে বললাম,তোমাকেও দেব বুয়া;একবার গোসল করলেই দেখবা তোমার শরীরের চামড়া বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মত হয়ে যাবে;ত্রখন একজগ পানি এনে দাও।আমার কথা শুনে ভাবী খিলখিল করে হেসে উঠতেই বললাম,ভাবী যতই খিলখিলিয়ে হাস আর টিপ্পনী দাওনা কেন ওয়াসায় একমাত্র ভরসা।বুড়িগঙ্গা আর শীতলক্ষ্যার কেমিক্যাল মিশ্রিত নোংরা দুর্গন্ধময় পানি নামকাওয়াস্তে পরিশুদ্ধ করেই ওয়াসা আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে রাতে মশার কামড় খাওয়ার জন্য।
কাজের বুয়া পানি এনে দিতেই কোন রকম চোখে মুখে পানি দিয়ে নাস্তার টেবিলে এসে দেখি ৪টা বিস্কুট,একটা কলা আর একগ্লাস পানি।বিস্কুট,কলা আর পানি খেয়ে বুয়ার কাছে এক কাপ চা চাইতেই বুয়া রেগে উঠে বলল,’ ভাইজানের আক্কেল জ্ঞান বাংলা সিনেমার নায়কগো মতই।কোনদিনই হিন্দী সিনেমার নায়কগো লাহান হইবনা।গ্যাস থাকলে কি বিস্কুট আর কলা খাইতে দেই?’
-এত কিছু বুঝিনা আমাকে চা বানিয়ে দাও।
-আমার শরীরে আগুন লাগাইয়া সে আগুনে চা বানায়া খান।
বুয়ার কথা শুনে অবাক নয়নে ভাবীর দিকে তাকাতেই ইশারায় ভাবী যা বোঝাল তার সারমর্ম হচ্ছে এমনিতেই গ্যাস,পানি নাই তার ওপর হিন্দী সিনেমার নায়িকার কথা না বলে বাংলা সিনেমার নায়িকার কথা বলায় বুয়া মাইন্ড খেয়েছে!অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে নিজের রুমে গেলাম বাইরে বেরুতে।
সারারাতের চরম গরমে হা হুতাশ আর বিছানায় মশার অত্যাচারের স্মৃতি ভুলতে ছোট খালার বাসায় যাবার জন্য বাসে উঠলাম।১মিনিট চললে ১০মিনিট দাঁিড়য়ে থাকে বাস।যানজটে পড়ে এমনিতেই গরমে সিদ্ধ হচ্ছি তার ওপর ৩-৪বছরের পিচ্চি একটা ছেলে গরমে অতিষ্ট হয়ে ননস্টপ কেঁেদই যাচ্ছে।পিচ্চিটার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙাতেই কান্না বন্ধ হয়ে গেল।মিনিট দুয়েক পর পিচ্চিটা মায়ের কোল থেকে নেমে আমার কোলে এসে বসল।আরো মিনিট তিনেক পর অনুভব করলাম পিচ্চিটা কোলে বসেই হিসু করে দিয়েছে ।পিচ্চিটাকে কোল থেকে নামাতে যাব এমনি সময় সরকারী দলের ডিজিটাল ছাত্ররা কলেজ থেকে রাস্তায় বেরিয়ে এসেই গাড়ির গ্লাস ভাঙতে শুরু করল।প্রায় ১ঘন্টা চলল ছাত্রদের হল দখলের জন্য রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর আর দাওয়া-পাল্টা দাওয়া।পাশের সিটের সহযাত্রী আনমনেই বলে উঠল,বিদ্যুৎ সংকট আর মশার কামড়ে রাতে ঘুমোতে পারিনা;পানি সংকটে গোসল করতে পারিনা;গ্যাসের অভাবে আধা সিদ্ধ খেয়ে রাস্তায় বেরুলে যানজট তারপর আছে ছাত্রদের অত্যাচার।আরে হল দখল করতে রাস্তা দখল করে মারামারি করতে হবে কেন?হায় সেলুকাস! কি বিচিত্র এ ডিজিটাল বাংলাদেশ।
বাকী পথটুকু সহযাত্রী মেতে উঠল ডিজিটাল দেশের প্রশংসায় আর আমি ভাবতে থাকলাম সামান্য চোখ রাঙানোর অপরাধে পিচ্চিটা কোলে…।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।