যাত্রা – বাসু আচার্য — দ্বিতীয় পর্ব

মহাবোধি সোসাইটির সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে প্রজ্ঞা। ঘন ঘন চোখ চলে যাচ্ছে হাত-ঘড়ির দিকে। কখন যে আসবে লোকটা! এদেশে বিপ্লবটা হবে কী করে? যারা লড়াইয়ের ঠেকা নিয়েছে তাদের কোনও সময়জ্ঞানই নেই। সুরজিৎ-কে ডাকবে একবার? নাহ, লাভ নেই। নির্ঘাৎ ক্যান্টিনে বসে ফিলজফির ওই নতুন মেয়েটার সাথে বকর-বকর করছে। পারেও বটে! ও কী যেন একটা ইয়ার্কি মেরে বলত সুরজিৎ সম্পর্কে? হ্যাঁ, মনে পড়েছে – “he runs after every petticoat.” এইসব ভাবতে ভাবতে প্রজ্ঞা দেখল সামনে অনীকদা এসে দাঁড়িয়েছে।
“কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছ?” রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে জিজ্ঞাসা করল অনীক। প্রজ্ঞা দেখল দুপুরের রোদে অনীকের ফর্সা রঙটা কেমন তামাটে হয়ে গেছে। অনীক আবার প্রশ্ন করল, “কি গো, কতক্ষণ?” “এই তো, মিনিট তিরিশ…” প্রজ্ঞা উত্তর দিল। “হুম…সরি। আসলে ট্রেনটা লেট করল…” “না না, ইটস ওকে…” একটু থেমে অনীকের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রজ্ঞা বলল, “অনীক-দা, ও কোথায় আছে জানেন? মানে, প্রায় দিন দশেক হয়ে গেল কোনও যোগাযোগ করছে না। খুব চিন্তা হচ্ছে।” অনীক কোনও উত্তর না দিয়ে চারপাশটা একবার দেখে নিল। তারপর বলল, “এখানে দাঁড়ানো ঠিক হবে? অন্য কোথাও গিয়ে বসলে হয় না?” “কফি হাউস যাবেন?” প্রজ্ঞা জিজ্ঞ্যেস করল। “না না, কফি হাউসে না…মানে, ওখানেও তো …… তোমার ক্যাম্পাসের ভেতরে গেলে হয় না?” অনীক গলা নামিয়ে প্রশ্ন করল। “ক্যাম্পাসে?” একটু যেন দ্বিধা নিয়ে বলে উঠল প্রজ্ঞা। অনীক একটা বিড়ি বার করে দাঁতে কামড়ে বলল, “তাহলে বরং কলেজ স্কোয়্যারের ভেতরে YMCA’র দিকে চল,” বলেই হাঁটা লাগাল।
  YMCA’র সামনে পৌঁছে অনীক বলল, “দেখো, আমি সত্যিই জানিনা ও কোথায়। পার্টি কি ডিসিশান নিয়েছে সেটা সবসময় জানা সম্ভব হয় না।” প্রজ্ঞা বিরক্ত হল এবার। একটু কড়া গলায় বলল, “সে ঠিক আছে, কিন্তু দিন দশেক কোনও খবর নেই…” “হুমমম…” অনীক চুপ করে গেল। “অনীক-দা, একটা কথা বলবেন? ও কি ঠিক আছে?” অনীক প্রজ্ঞার দিকে তাকাল। চশমার ওপার থেকে প্রজ্ঞা অদ্ভুতভাবে চেয়ে আছে। ঠাণ্ডা দৃষ্টি। মুখে একটা হাসির রেখা টেনে অনীক বলল, “বেঠিক তো কিছু শুনিনি। তুমি অকারণ টেন্স হয়ো না।
ও ঠিকই আছে। তবে এর চেয়ে বেশি কিছু আমি জানিনা। খবর নেবার চেষ্টা করব। যাইহোক, এখন চলি। একটু কাজ আছে। ভাল থেকো।” “আপনিও,” বলে প্রজ্ঞা আলতো হাসল। গল্পের তৃতীয় পরিচ্ছেদ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আরো পড়তে পারেন...

প্রতিজ্ঞা– শিশুতোষ গল্প

সেই ছোট বেলা থেকেই আমি খুব চঞ্চল স্বভাবের ছিলাম। সারাদিন বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতাম। লেখাপড়ার…

ভিক্ষুক

সবুজ গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা। বাংলাদেশের অন্যতম নদীগুলোর মধ্যে মেঘনা একটি বৃহৎ…

জননী —- হাসান আজিজুল হক

কয়েক বছর আগে আমাদের ফ্ল্যাটবাড়িতে যে মেয়েটি কাজ খুঁজতে আসে, তার রূপ দেখে আমি স্তম্ভিত…