ময়ূর সাপ ও ইবলীসের শাস্তি
হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) এর গন্দম খাওয়ার ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা ময়ূর হলেও সাপের এক্ষেত্রে ভূমিকা অগ্রগণ্য ছিল। কেননা, ইবলীসকে তারা দু’জনে সাহায্যে করেছিল। মুলতঃ এরা দু’জন সাহায্য না করলে ইবলীস বেহেশতে প্রবেশ করতে পারত না। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা ময়ূরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ময়ূর!
তোমার অপরাধ খুব মারাত্বক না হলেও তুমি একেবারে নির্দোষ নও। তোমার একথা উত্তমরুপে জানা ছিল যে, আমার অনুমতি ছাড়া কাউকেও বেহেশতে প্রবেশ করতে দেয়া সম্পর্ণ নিষিদ্ধ। তবুও তুমি অপরিচিত এক ব্যক্তিকে বেহেশতে প্রবেশ করতে সাহায্যে করেছ। সুতরাং এ অপরাধের কারণে তোমার জন্য নিম্নোক্ত শাস্তি নির্ধারণ করা হল-
(১) তুমি আর বেহেশতে থাকতে পারবে না। (২) তোমার শরীর অতুলনীয় সৌন্দর্য অনেক কমিয়ে দেয়া হবে। (৩) তোমার ছয়শত ডানার মধ্যে দুইটি ডানা রেখে অবশিষ্ট ডানাসমূহ উপড়িয়ে ফেলা হবে। (৪) তোমার দু’ পায়ের সৌন্দর্য বিনষ্ট করে তা কৎসিৎ করে দেয়া হবে।
অতঃপর আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতারা ময়ূরকে বেহেশতে থেকে বের করে পৃথিবীর বিস্তান’ এলাকায় বর্ণনান্তরে ‘কাবুলে নিক্ষেপ করল।
ময়ূরকে শাস্তি দেওয়ার পর আল্লাহ সাপকে লক্ষ্য করে বলেন-
হে সাপ! আমার সৃষ্ট প্রাণীকূলের মধ্যে তোমাকেই সর্বাধিক সৌন্দর্য দান করেছিলাম এবং বেহেশত স্থান দিয়ে ছিলাম। কিন্তু তুই আমার আদেশ অমান্য করলি। আমার বিনা অনুমতিতে তুই অপরিচিত এক ব্যক্তিকে বেহেশতে প্রবেশ করালি। তোর অপরাধ মারাত্বক। এ অপরাধের ফলস্বরূপ এখন তোকে কতিপয় কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
(১) এখনই তোকে বেহেশত হতে বের করা হবে। (২) তোর অনুপম সৌন্দর্য বিনষ্ট করে তোকে কদাকার কৎসিৎ আকৃতি বিশিষ্ট করা হবে। (৩) পা দিয়ে হেঁটে তুই ইবলীসকে বেহেশতে প্রবেশ করিয়ে ছিল। এজন্য তোর পা সম্পর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করা হবে।
(৪) মুখের ভিতর গোপন করে দুই ইবলীসকে বেহেশতে নিয়েছিলি, সজন্য তোর মুখের সুগন্ধির পরিবর্তে মারাত্বক বিষ রেখে দেয়া হবে। (৫) মানব জাতী তোকে দেখা মাত্র হত্যা করবে অথবা হত্যার চেষ্টা করবে।
অতঃপর আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতারা সাপকে বেহেশত থেকে বের করে দুনিয়াতে ইস্পাহান এলাকায় নিক্ষেপ করল।
সর্বশেষ আল্লাহ মরদুদ ইবলীসকে উদ্দেশ্যে করে বলেন- হে পাপীষ্ট ইবলীস! আমার আদেশ অমান্য করার নিমিত্তে তোকে পূর্বেই বেহেশত থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। পুনরায় আমার বিনা অনুমতিতে তুই বেহেশতে প্রবেশ করে আদম ও হাওয়াকে ধোক দিয়ে তাঁদের গন্দম খাওয়ায়েছিস। এজন্য তোকে নিম্নোক্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে।
(১) তোর জন্য বেহেশতের দুয়ার চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হল। (২) আমার অত্যাধিক প্রিয় বান্দা হিসাবে তোকে সমগ্র দুনিয়াতে যে খেলাফত দান করেছিলাম, সে সম্মান ও মর্যদা ছিনিয়ে নেয়া হল। (৩) তওবার দরজা তোর জন্য চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হল। (৪) তোর অনুপম সৌন্দর্য বিনষ্ট করে তোকে অত্যন্ত কুৎসিৎ ও কদাকার করে দেয়া হল। (৫) তোকে মুয়াল্লিমুল মালাকুত উপাধির পরিবর্তে মালাউন, ইবলীস, শয়তান ও খবীস উপাধিতে ভূষিত করা হল। (৬) কিয়ামত পর্যন্ত তোর উপরে সকলের অভিশাপ বর্ষিত হতে থাকবে।
(৭) সৃষ্টির সূচনা মুহূর্ত থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আদম সন্তানরা যত পাপ করবে, তুই তাহার সমষ্টির দ্বিগুন পাপের অধিকারী হবি। (৮) তোকে জাহান্নামীদের নেতা করে দেয়া হবে। (৯) তোর সমস্ত বংশধরদের ললাটে কাফির চিহ্ন অঙ্কিত থাকবে।
অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা ইবলীসকে বসরা নগরে পাহাড় এলাকায় নিক্ষপ করা হল এবং চিরদিনের জন্য তার আসমানে গমনাগমনের পথ বন্ধ করে দেয়া হল।