মৎস বিলাস— ফারজানা কবীর খান (স্নিগ্ধা)

ছোট বেলায় আমার নানা বাড়িতে সবাই ডাঙ্গা মারতে যেত। যারা গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছে তারা বুঝবে ডাঙ্গা মারা কাকে বলে, আমার মতোশহরে জন্ম আর বসবাসকারী লোকজনের পক্ষে বোঝা একটু কঠিন। (শীতকালে খাল বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির পুরুষেরা নিজেদের জমিতে বাঁধ দিয়ে দিতো। তারপর ছেঁচে ফেলতো পানি। তারপর সবাই মিলে মাছ ধরতো। একেই ওরা ডাঙ্গা মারা বলতো।)
যাই হোক, ডাঙ্গা মেরে মামারা মুড়ির টিনে ভরে সেই মাছ আমাদের ঢাকার বাসায় নিয়ে আসতো। বিভিন্ন ধরনের মাছ : শোল, বোয়াল, কই, টাকি, খোলসা, পুটি টেংরা, শিং, মাগুর আরো কত কি!! মামারা মাছ নিয়ে আসলে আম্মু আমাকে চেয়ারের উপর দাড় করাতো। আর নীচে ১০/১২টা মুড়ির টিনের জীবন্ত মাছ আমার সামনে ঢালা হতো। আম্মু বলতো, ”নে জীবনে কোনদিন বলিস না মাছ খাই নাই। বরের বাড়ি যখন যাবি, বলবি মাছ কাকে বলে আমি জানি”।
( জরুরী বিষয় হলো : আমি অকর্মার ঢেকি এখনো মাছ কাটতে পারিনা, আর জীবন্ত মাছ দেখলে গলা দিয়ে আপনা আপনি জোড়ে একটা চিৎকার কোথা থেকে যেন বের হয়ে আসে।)
আমার দাদা বাড়ি এবং নানা বাড়িতে মাছের চাষ হতো। প্রথম মাছ ধরা হলেই তারা অতি উৎসাহের সাথে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতেন। আমি নিজে একবার গামছা দিয়ে বোয়াল মাছ ধরে রাজ্য উদ্ধার করে ফেলেছিলাম। আমার আব্বু আমাদের ভালো মাছ খাওয়ানো জন্য সিলেট থেকে মাছ কিনে বিমানে চড়ে ঢাকায় আসতেন। নতুবা মাছটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কি অদ্ভুত!!

 
এই বিদেশ বিভুইয়ে লোকজন মাছই খায় না। বলে একতো কাটা আর মাছ রাঁধলে নাকি ঘরে গন্ধ করে। সেই জন্য আমার বেশ অনেকদিন শুকটিও খাওয়া হয় না। এদেশের ছেলে মেয়েরা মাছ দেখলে বমি করার ভাব করে। জানা যায়, যখন ইউরোপের মানুষ মাছ খাওয়া একদম বন্ধ করে দিলো, তখন মাছ বিক্রেতারা গীর্জার পাদ্রীদের উপঢৌকন দিয়ে সপ্তাহে অন্তত একদিন (শুত্রবার) মানুষের জন্য মাছ খাওয়া বাধ্যতামূলক করেছিলো। এখন আর মানুষের মাঝে ধর্মের ঐসব নিয়মের বালাই নাই। মাছ দেখলে সেই টেবিল থেকে অনেকে সরে যায় !!
মাছের এই গল্প বলার কারণ হলো, আমার মায়ের সেই মাছ খাওয়ানোর ট্রিটমেন্ট পদ্ধতি বিফলে গেছে। কারন, আমি এখনও মাছ মিস করি। বাংলাদেশে থাকতে আমার মনে হতো, আমিও আসলে মাছ খেতে তেমন একটা পছন্দ করি না, তবে ইলিশ আর চিংড়ির কথা আলাদা। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আজ বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে বসে আমি জানি, মাছ আমার কত প্রিয় !! মাছ কিনার জন্য আমি ৪০/৫০ কিলোমিটার দূরের পথ পাড়ি দেই, তবুও মাছ কিনে আনি। আমি আসলে মাছে ভাতে বাঙ্গালী।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!