মোহাম্মদ জাকারিয়া
মোহাম্মদ জাকারিয়া (জন্ম ১৯৪২ সালে, ভেনচুরা, ক্যালিফোর্নিয়া):
মোহাম্মদ জাকারিয়া একজন আমেরিকান ইসলামিক ক্যালিগ্রাফির মাস্টার এবং আমেরিকান মুসলিম ধর্মান্তরিত। মোহাম্মদ জাকারিয়া ১৯৪২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ভেনচুরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন আর্ট ডিরেক্টর এমরিচ নিকলসন এবং মা ছিলেন অ্যামি অ্যাপলিন। পরবর্তীতে তিনি তার পরিবারসহ লস অ্যাঞ্জেলেসে স্থানান্তরিত হন। লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি আর্মেনিয় কার্পেট দোকানের জানালায় প্রথমবার ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি দেখে তিনি মুগ্ধ হন। কিশোর বয়সে মরক্কো ভ্রমণে গিয়ে তিনি ইসলাম এবং ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিতে আকৃষ্ট হন। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
ইসলাম গ্রহণ এবং তার পরবর্তী সময়:
মোহাম্মদ জাকারিয়ার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রক্রিয়া কিছুটা বিশেষ এবং আকর্ষণীয়। তিনি প্রথম ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে জানেন লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি আর্মেনিয়ান কার্পেট দোকানের জানালায়। তখনই তাঁর মধ্যে ইসলামের প্রতি আকর্ষণ জন্মে।জাকারিয়া কৈশোরে মরক্কো সফর করেন, যেখানে ইসলাম এবং ইসলামিক ক্যালিগ্রাফির প্রতি তাঁর আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পায়। তিনি মরক্কোতে মুসলিম সংস্কৃতি এবং ধর্মের সঙ্গে পরিচিত হন এবং সেখানে ইসলামের সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত হন।মরক্কো থেকে ফিরে আসার পর, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াটি ছিল আত্ম-অনুসন্ধানের এবং ধর্মীয় অধ্যয়নের ফলস্বরূপ। জাকারিয়া ইসলামকে একটি শান্তির ধর্ম হিসাবে দেখেন এবং এর মধ্যে তিনি একজন সত্যিকার মুসলমান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জাকারিয়া ব্রিটিশ মিউজিয়ামে পাণ্ডুলিপি অধ্যয়ন করেন। পরে তিনি মিসরের ক্যালিগ্রাফার আবদুস সালাম আলি-নূরের কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি ইস্তাম্বুলে যান এবং সেখানে তুর্কি মাস্টার ক্যালিগ্রাফার হাসান চেলেবির ছাত্র হন। ১৯৮৮ সালে তিনি ইস্তাম্বুলের ইসলামিক ইতিহাস, শিল্প এবং সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র থেকে চেলেবির কাছ থেকে তার ডিপ্লোমা অর্জন করেন, যা তিনি অর্জনকারী প্রথম আমেরিকান। ১৯৯৭ সালে তিনি মাস্টার ক্যালিগ্রাফার আলি আলপারসলানের কাছ থেকে তার দ্বিতীয় ডিপ্লোমা, তালি’ক লিপিতে, অর্জন করেন।২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত, জাকারিয়া কাতারে ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ দ্য আর্টসের যৌথ পরামর্শ বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অফ হিউম্যান লেটার্স প্রদান করে।
বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা জাকারিয়ার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে আসে। জাকারিয়ার কাজ ব্যক্তিগত সংগ্রহ এবং কিছু পাবলিক সংগ্রহে সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি ঈদ (ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা) উদযাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পোস্টাল সার্ভিসের জন্য একটি ডাকটিকিট ডিজাইন করেন, যা এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত সব সংস্করণেই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০০৯ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মোহাম্মদ জাকারিয়াকে সৌদি আরবের রাজার জন্য একটি ক্যালিগ্রাফির কাজ তৈরির জন্য কমিশন করেছিলেন। তার এই ধর্মান্তর শুধু একটি ব্যক্তিগত পরিবর্তনই ছিল না, বরং তাঁর শিল্পের জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল, যা পরবর্তীতে তাঁর ক্যালিগ্রাফির কাজের মধ্যে ইসলামিক থিমের প্রতিফলন ঘটায়।
ইসলামিক জীবনে তার অবদান:
মোহাম্মদ জাকারিয়ার ইসলামিক জীবনে অবদান বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকাশ পেয়েছে, যা ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর, জাকারিয়া মুসলিম কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত হন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য তাঁর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান শেয়ার করতে শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে অতিথি শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন, যেখানে তিনি ইসলামিক ক্যালিগ্রাফির গুরুত্ব ও প্রযুক্তি সম্পর্কে শিক্ষাদান করেন। জাকারিয়া ইসলামিক ক্যালিগ্রাফির একজন মাস্টার শিল্পী। তিনি ইসলামিক শিল্পের এই শাখায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন এবং তার কাজের মাধ্যমে ইসলামিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছেন। তিনি আধুনিক প্রযুক্তি এবং ঐতিহ্যগত কৌশল একত্রিত করে ক্যালিগ্রাফিতে নতুন ধারনা নিয়ে আসেন। জাকারিয়ার কাজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয় এবং তাঁর কাজ বিভিন্ন ব্যক্তিগত এবং পাবলিক সংগ্রহে সংরক্ষিত হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পোস্টাল সার্ভিসের জন্য একটি বিশেষ ডাকটিকিট ডিজাইন করেন যা ঈদ উদযাপনের জন্য হয়। জাকারিয়া ইসলামিক ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে মুসলিম সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পোস্টাল সার্ভিসের জন্য বিশেষ ডাকটিকিট ডিজাইন করেন, যা ঈদ উদযাপনকে সম্মানিত করেছে। জাকারিয়া তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী জীবনযাপন করে অন্যদের জন্য একটি আদর্শ তৈরি করেছেন। তিনি সমাজে শান্তি ও সাম্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন, যা ইসলামের মূল শিক্ষা।মোহাম্মদ জাকারিয়া ইসলাম এবং মুসলিম সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর অবদানের মাধ্যমে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন, যা আগামী প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।