সে অনেক দিন আগের কথা। তখন রাজারা শুধু মানুষ নয় পশু-পাখির ও রাজা ছিলেন। পশুপাখিরাও রাজার অনুগত ছিলেন। কয়েক শতাব্দী কি কয়েক হাজার বছর আগেকার কথা। শতাব্দী হোক আর সহস্র হোক সে নিয়ে আমাদের সমস্যা নেই। সমস্যা যদি থাকে সে ইতিহাসবিদদের। সৌভাগ্যের কথা আমরা কেউ ইতিহাসবিদ নই। তখন রাজারা শুধু মানুষ নয় পশু-পাখির ও রাজা ছিলেন। পশুপাশিরাও রাজার অনুগত ছিলেন। আমরা যে রাজার কথা বলব তিনি শুধু রাজা ছিলেন তা নয়, তাঁর অত্যাচার্য এক গুণ ছিল। তিনি মোরগের ভাষাও বুঝতেন। আবার মোরগেরাও মানুষের ভাষা বুঝত। কিন্তু রাজা ভিন্ন আর কেউ উজির, নাজির, আম জনতা, এমন কি অন্যান্য পশু পক্ষীরাও মোরগের ভাষা বুঝত না। সে এক দিক দিয়ে ভালই ছিল। রাজার আইন ছিল কেউ যদি মোরগের ভাষা বুঝে ফেলে তার গর্দান যাবে তৎক্ষণাৎ। কেউ যদি মোরগের ভাষা বুঝে ফেলত ভয়ে তটস্থ থাকত এই বুঝি রাজা জেনে গেল। অবশ্য কেউ মোরগের ভাষা বুঝেছে কিনা সে খবর আমরা পাইনি। আর বুঝলেও স্বীকার করার কথা না।
মোরগেরা ছিল রাজার বন্ধু। উপদেষ্টা,অনুচর এবং চর।রাজ্যের এবং ভিন রাজ্যের সব গোপন খবর রাজা মোরগের মাধ্যমেই পেতেন। রাজ্যে মোরগ নিধন নিবারণ আইন ছিল। মোরগ নিধন আইনে মোরগ নিধন, ভক্ষন ফৌজধারী অপরাধ ছিল। মৃত্যুদন্ডঅই ছিল একমাত্র দন্ড। মোরগ নিধন নিষিদ্ধ হইলেও মুরগী নিধন নিষিদ্ধ ছিল না। সুতরাং মোরগের চাপটা মুরগীর উপরে গেলে রাজ্য মুরগী শুন্য হওয়ার উপক্রম হল। মোরগরা সঙ্গিহীন হয়ে পড়ল, ভবিষ্যৎ মোরগের সাপ্লাই ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। রাতের বেলা মোরগ গিন্নীরা চরমভাবে মোরগের উপর চড়াও হত। মোরগেরা নিজেদের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা করলেও গিন্নীদের দিকে তাদের নজর নাই। অবশেষে মোরগগণ রাজার নিকট এর একটা বিহিত করার আবেদন জানায়। রাজা দেখলেন বিষয়টা জরুরি। অতএব নতুন আইন জারি হল। মোরগ পোষা নিষিদ্ধ হল। রাজ্যের জনবসতিহীন একটা অঞ্চল মোরগ সমাজের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত হল। পারিবারিক মোরগ পালন নিষিদ্ধ হল। মুরগি ভক্ষনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান দেয়া হল। তবে ডিম খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নাগরিকগন অভয়ারণ্যে প্রবেশ করে ডিম সংগ্রহ করতে পারবে।
মোরগদের অভয়ারণ্যও ঠিক অভয়ারণ্য হতে পারল না শিয়ালদের জন্য। বরং শিয়ালরা রাজ্যের সব মোরগ এক জায়গায় পেয়ে মজাকরে ধরে ধরে মোরগ খেতে লাগল। মানুষের জন্য আইন থাকলেও শিয়ালরা ছিল আইনের উর্ধ্বে। তাছাড়া শিয়ালদের ধরবে কে? শিয়ালগণ গভির অরণ্যে লুকিয়ে থাকে আর রাতের বেলা বের হয় মোরগ ভোজনে। আগে বেশ কষ্ট করতে হত গৃহস্থ বাড়ির মোরগ হজমে। এখন গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়ার মত টুপ করে ধর আর খাও। রাজ্যের সব শিয়াল এসে মোরগদের আশে পাশে বাসা করতে লাগল। শেষে রাজা মোরগদের পাহারায় বেশ কিছু প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়োগ করলেন। কুকুর নিয়োগের পর মোরগগণ পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে গিয়েও পারল না। কারন কুকুররা যতই প্রশিক্ষিত হোক শিয়ালের মত চালাক নয়। মোরগ শিকার কমলেও একেবারে নির্মূল হয় নি। নিত্য নতুন অভিনব কায়দায় মোরগ চুরি হতে লাগল। শেষে রাজা এ টুকু ক্ষতি শিকার করে নিলেন। ভাবলেন এটুকু নরমাল লস তো মেনে নিতেই হবে।
মোরগদের প্রতিপালনের জন্য রাজা বিশেষ এক প্লাটুন গঠন করলেন। মোরগের খাওয়া দাওয়া, চিকিৎসা সহ সব ধরনের সেবায় দিয়োজিত এই বাহিনী। গুজব আছে এরা মাঝে মাঝে মোরগরা ঘুমিয়ে পড়লে দু একটা মোরগ ধরে ঝলসিয়ে পরে শেয়ালের উপর দোষ চাপাত। আর একটি বাহিনী নিয়োজিত মোরগদের প্রশিক্ষণে। তারা মোরগদের ক্ষীপ্র দৌড়, লম্পন, উড্ডন শেখাত। আবার মোরগদের মধ্যে একটা টিম ছিল যারা রাজা এবং মোরগ সম্প্রদায়ের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করত। মোরগদের জন্য আলাদা আইন কানুন, নিয়ম শৃংখলা ছিল। এসব বিধি বিধান রাজাই প্রজ্ঞাপিত করতেন আর মোরগদের বিশেষ টিম তা মোরগকূলে পৌঁছে দিত।
—গল্পের দ্বিতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।