মে’রাজের বিবরণ-৪র্থ পর্ব

মে’রাজের বিবরণ-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

বোরাক বাঁধার পর হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি বেহেশতের হুর দেখার জন্য আপনার প্রভূর নিকট দরখাস্ত করেছিলেন কি? রাসূল (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, ঐ দিকে তাকান। তিনি হুরানে জান্নাতের এক জমাতকে দেখতে পেলেন। তাদের নিকট গমন করে জিজ্ঞসে করলেন, আপনারা কিসের জন্য সৃষ্ট হয়েছেন। তাঁরা বলল, আমরা পবিত্র ও অনুপমা। আমরা এমন লোকের সহধর্মীনী যারা পবিত্র। কখনও অপবিত্র হবে না। অতঃপর বায়তুল মোকাদ্দাসের ভিতর গমন করেন। সেখানে সমস্ত নবীগণকে দেখতে পেলেন। আযান দেয়া হল। দু’রাকাত নামাজ জামাতে আদায় করার আদেশ হল। সকলে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াল। কে ইমাম হবেন সে প্রতীক্ষায় আছেন। হযরত জিব্রাইল (আঃ) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হাত ধরে ইমামের মুসল্লায় বাড়িয়ে দেন এবং বললেন, আপনি ইমাম হয়ে নামাজ পড়িয়ে দেন। ঐ জামাতে মোট সাত কাতার হয়। প্রথম তিন কাতার রাসূলগণের এবং অবশিষ্ট কাতারগুলো নবীগণের। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বরাবর পিছনে হযরত ইব্রাহীম (আঃ), ডানদিকে হযরত ইসমাইল (আঃ) এবং বাম দিকে হযরত ইসহাক (আঃ) ছিলেন।

নামাজ শেষান্তে জিব্রাইল (আঃ) বললেন, সমস্ত নবী রাসূলগণ আপনার পিছনে নামাজ পড়েছে। এটা ছাড়া কতিপয় বিশেষ বিশেষ ফেরেশতাও এ জামাতে শরীক হন।

একজন ফেরেশতার দিকে ঈশারা করে হযরত জিব্রাইল (আঃ) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বললেন, ইনি দোযখের দারোগা মালেক। তাঁকে সালাম করুন। তিনি সে দিকে অগ্রসর হলেন। কিন্তু দোযখের দারোগাই হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে প্রথম সালাম করল।

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তার দিকে দৃষ্টি উঠিয়ে দেখতে পেলেন তাঁর ভ্রুযুগল কুঞ্চিত এবং আল্লাহর গজবের নিদর্শন তাঁর চেহারায় প্রস্ফুটিত। তিনি জীবনে কখনও হাসেন নি। যদি হাসতেন তাহলে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাথে হাসতেন। অতঃপর হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) দাজ্জালকেও দেখতে পান। তার এক চক্ষু কানা।

তারপর সমস্ত পয়গম্বরগণ আল্লাহর প্রশংসা করে বক্তৃতা দিলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, যাবতীয় প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে খলিল বানিয়েছেন এবং বিশাল রাজ্য দান করেছেন, আমাকে আদর্শ ও অনুকরণীয় করেছেন। নমরুদের অগ্নি হতে আমাকে নাজাত দিয়েছেন।

হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর প্রশংসার পর বললেন, সমস্ত প্রশংসা ঐ জাতে পাকের যিনি আমার সঙ্গে খাছ কালাম করেছেন, আমাকে বরগুজিদা করেছেন এবং আমার উপর তাওরাত নাজিল করেছেন। আমার হাতে ফেরাউনকে ধ্বংস করেছেন এবং ইসরাইলকে মুক্তি দিয়েছেন।

হযরত দাঊদ (আঃ) আল্লাহর তারীফ করার পর বললেন, সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি আমাকে বিশাল সম্রাজ্য প্রদান করেছেন, আমাকে জাবুর কিতাব দান করেছেন। আমার জন্য লোহাকে নম্র করে দিয়েছেন এবং পর্বতমালা আমার বশীভূত করেছেন, যারা আমার সঙ্গে তাছবীহ পাঠ করত এবং পাখীসমূহকে আমার বাধ্য করেছেন। আমাকে স্পষ্ট ভাষা ও জ্ঞানের কথা এবং মধুর কণ্ঠ দান করেছেন।

তারপর হযরত সোলায়মান (আঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি বায়ু ও জ্বীন জাতিকে আমার বশে দিয়েছেন। তারা আমার ইচ্ছানুযায়ী সুউচ্চ প্রাসাদ এবং বৃহদাকার মূর্তি নির্মাণ করত। আমাকে পাখীদের ভাষাজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। প্রচুর নেয়ামত দান করেছেন। সমগ্র বিশ্বের এমন বাদশাহী দান করেছেন যা অন্য করোও নছীব হয় নি। জ্বীন ও ইনসান এবং পাখির দলকে আমার হুকুমের অধীন করেছেন।

মে’রাজের বিবরণ-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আরো পড়তে পারেন...

ছোটগল্প: কেনাবেচা দরদাম — মাহবুব আলী

১. পোড়া চোখ, সে কিছু দেখেনি। দেখেও কিছু দেখেনি। বুঝেও কিছু বোঝেনি। বুড়ি মানুষ। সবকিছুতে…

রোমান সেনাপতি মাহানের তাঁবুতে খালিদ বিন ওয়ালিদ—আমরা সেই সে জাতি –– আবুল আসাদ

ইয়ারমুকের যুদ্ধ তখনও শুরু হয়নি। সম্রাট হেরাক্লিয়াসের প্রধান সেনাপতি মাহানের অধীনে কয়েক লক্ষ সৈন্য সম্পূর্ণ…

উবাদা ইবনে সামিতের শপথ রক্ষা—আমরা সেই সে জাতি –– আবুল আসাদ

খলীফা উমার (লা) শাসনকাল। মুয়াবিয়া তখন সিরিয়অর শাসনকর্তা। মদীনার খাযরাজ গোত্রের হযরত উবাদা ইবন সামিত…

মে’রাজের বিবরণ-৪র্থ পর্ব

মে’রাজের বিবরণ-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

বোরাক বাঁধার পর হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি বেহেশতের হুর দেখার জন্য আপনার প্রভূর নিকট দরখাস্ত করেছিলেন কি? রাসূল (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, ঐ দিকে তাকান। তিনি হুরানে জান্নাতের এক জমাতকে দেখতে পেলেন। তাদের নিকট গমন করে জিজ্ঞসে করলেন, আপনারা কিসের জন্য সৃষ্ট হয়েছেন। তাঁরা বলল, আমরা পবিত্র ও অনুপমা। আমরা এমন লোকের সহধর্মীনী যারা পবিত্র। কখনও অপবিত্র হবে না। অতঃপর বায়তুল মোকাদ্দাসের ভিতর গমন করেন। সেখানে সমস্ত নবীগণকে দেখতে পেলেন। আযান দেয়া হল। দু’রাকাত নামাজ জামাতে আদায় করার আদেশ হল। সকলে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াল। কে ইমাম হবেন সে প্রতীক্ষায় আছেন। হযরত জিব্রাইল (আঃ) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হাত ধরে ইমামের মুসল্লায় বাড়িয়ে দেন এবং বললেন, আপনি ইমাম হয়ে নামাজ পড়িয়ে দেন। ঐ জামাতে মোট সাত কাতার হয়। প্রথম তিন কাতার রাসূলগণের এবং অবশিষ্ট কাতারগুলো নবীগণের। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বরাবর পিছনে হযরত ইব্রাহীম (আঃ), ডানদিকে হযরত ইসমাইল (আঃ) এবং বাম দিকে হযরত ইসহাক (আঃ) ছিলেন।

নামাজ শেষান্তে জিব্রাইল (আঃ) বললেন, সমস্ত নবী রাসূলগণ আপনার পিছনে নামাজ পড়েছে। এটা ছাড়া কতিপয় বিশেষ বিশেষ ফেরেশতাও এ জামাতে শরীক হন।

একজন ফেরেশতার দিকে ঈশারা করে হযরত জিব্রাইল (আঃ) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বললেন, ইনি দোযখের দারোগা মালেক। তাঁকে সালাম করুন। তিনি সে দিকে অগ্রসর হলেন। কিন্তু দোযখের দারোগাই হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে প্রথম সালাম করল।

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তার দিকে দৃষ্টি উঠিয়ে দেখতে পেলেন তাঁর ভ্রুযুগল কুঞ্চিত এবং আল্লাহর গজবের নিদর্শন তাঁর চেহারায় প্রস্ফুটিত। তিনি জীবনে কখনও হাসেন নি। যদি হাসতেন তাহলে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাথে হাসতেন। অতঃপর হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) দাজ্জালকেও দেখতে পান। তার এক চক্ষু কানা।

তারপর সমস্ত পয়গম্বরগণ আল্লাহর প্রশংসা করে বক্তৃতা দিলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, যাবতীয় প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে খলিল বানিয়েছেন এবং বিশাল রাজ্য দান করেছেন, আমাকে আদর্শ ও অনুকরণীয় করেছেন। নমরুদের অগ্নি হতে আমাকে নাজাত দিয়েছেন।

হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর প্রশংসার পর বললেন, সমস্ত প্রশংসা ঐ জাতে পাকের যিনি আমার সঙ্গে খাছ কালাম করেছেন, আমাকে বরগুজিদা করেছেন এবং আমার উপর তাওরাত নাজিল করেছেন। আমার হাতে ফেরাউনকে ধ্বংস করেছেন এবং ইসরাইলকে মুক্তি দিয়েছেন।

হযরত দাঊদ (আঃ) আল্লাহর তারীফ করার পর বললেন, সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি আমাকে বিশাল সম্রাজ্য প্রদান করেছেন, আমাকে জাবুর কিতাব দান করেছেন। আমার জন্য লোহাকে নম্র করে দিয়েছেন এবং পর্বতমালা আমার বশীভূত করেছেন, যারা আমার সঙ্গে তাছবীহ পাঠ করত এবং পাখীসমূহকে আমার বাধ্য করেছেন। আমাকে স্পষ্ট ভাষা ও জ্ঞানের কথা এবং মধুর কণ্ঠ দান করেছেন।

তারপর হযরত সোলায়মান (আঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি বায়ু ও জ্বীন জাতিকে আমার বশে দিয়েছেন। তারা আমার ইচ্ছানুযায়ী সুউচ্চ প্রাসাদ এবং বৃহদাকার মূর্তি নির্মাণ করত। আমাকে পাখীদের ভাষাজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। প্রচুর নেয়ামত দান করেছেন। সমগ্র বিশ্বের এমন বাদশাহী দান করেছেন যা অন্য করোও নছীব হয় নি। জ্বীন ও ইনসান এবং পাখির দলকে আমার হুকুমের অধীন করেছেন।

মে’রাজের বিবরণ-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আরো পড়তে পারেন...

মুগীরা ইবন শু’বা (রা)

নাম আবু আবদিল্লাহ মুগীরা, পিতা শু’বা ইবন আবী আমের। আবু আবদিল্লাহ ছাড়াও আবু মুহাম্মাদ ও…

সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে…

আবদুল্লাহ ইবন হুজাফাহ আস-সাহমী-(রা)

আবু হুজাফাহ আবদুল্লাহ নাম। পিতার নাম হুজাফাহ। কুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। ইসলামী দাওয়াতের…