মূর্তিপুজার সূচনা
মাহলাইলের মৃত্যুর পর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত দর্শানার্থিরা তাদের নজর নিয়াজ নিয়ে ফেরৎ যেতে থাকে। পাপিষ্ঠ ইবলীস এটাকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করে একদিন জনৈক সুফী-সাধকের বেশ ধরে মাহলাইলের পুত্র ইজদের নিকট উপস্থিত হয়ে বলে! দেশ-বিদেশ থেকে তোমার পিতার উদ্দেশ্যে আগত হাদিয়া উপঢৌকন এভাবে ফেরৎ যাচ্ছে। তোমরা একটা ব্যবস্থা অবলম্বন করলেই তো আগত লোকদের নজর-নিয়াজসমূহ রেখে দিতে পার। মাহলাইলের পুত্র ইজদ বলল, সে ব্যবস্থা কি তা আমাকে বলে দিন।
পাপাত্মা ইবলীস বলল, তোমার মৃত পিতার একটি অবিকল মূর্তি তৈরি কর। তারপর তা তোমাদের ঘরে স্থাপন কর। তাঁকে খুবই ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখাতে থাক। আর লোকদের মাঝে প্রচার করে দাও যে, আমার পিতা মাইলাইন এলহাম যোগে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা আমার একটি অবিকল প্রতিমূর্তি তৈরি করে তার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন কর। তাতেই আমি মনে করব যে, তোমরা এখনও আমার শিক্ষা, উপদেশ এবং শিখানো রীতি-নীতির উপর বহাল রয়েছে তাতে আমি তোমাদের ওপর অত্যন্ত খুশি থাকব এবং এতে আল্লাহ তা’আলাও সন্তুষ্ট হবেন।
এরূপ প্রচারের ফলে লোকদের মাঝে তোমাদের পিতা মাহলাইলের স্মৃতিও অক্ষুণ্ন থাকবে, এবং তোমার পিতার প্রভাব, প্রতিপত্তি এবং গুরুত্ব পূর্বে যেমন ছিল, এখনও তেমনই থাকবে। সঙ্গে সঙ্গে তোমাদের প্রভাব বিস্তার লাভ করবে। আর তোমার পিতা জীবিত থাকা কালে লোকেরা তাঁকে যেমন নজর-নিয়াজ দিত এখনও একইভাবে নজর নিয়াজ দিতে থাকবে। ফলে এর মাধ্যমেই তোমাদের আর্থিক অবস্থার বিরাট উন্নতি হবে। অচিরেই তোমরা বিপুল ঐশ্বর্যশালী হয়ে পড়বে।
ইবলীসের এ শয়তানী বুদ্ধিদিপ্ত কথায় মাহলাইলের পুত্র ইজদ প্রলুব্ধ হল। তখন সে বিনয়ের সাথে বলল, আমি বা আমাদের কারো পক্ষে অবিকল আমার মহান পিতার মূর্তি বানানো সম্ভব হবে না। অনুগ্রহ করে আপনি মূর্তিটি তৈরির ব্যবস্থা করে দিন। চরুত ইবলীস তৎক্ষাণাৎ বলল, সেজন্য তোমার ভাবনার কোন প্রয়োজন নেই। মূর্তি তোমাকেই আমিই তৈরি করে দিতে পারব।
পাপাত্মা ইবলীস শীঘ্রই মাহলাইলের একটা পাথরের মূর্তি তৈরি করে এনে তার পুত্র ইজদের নিকট অর্পণ করল। সে যারপর নেই আনন্দ চিত্তে তা গ্রহণ করে একখানা পৃথক ঘরে স্থাপন করে তার প্রতি বক্তি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে থাকে। ইযদের দেখাদেখি তার ভাইয়েরাও ঐ মূর্তির প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে থাকে। ক্রমে ক্রমে তাদের দেখাদেখি ও তাদের উৎসাহে উৎসাহিত হয়ে দেশ-বিদেশ থেকে আগত লোকেরাও এ মূর্তির চরণে বিভিন্ন নজর-নিয়াজ ও ভক্তি-অর্ঘ প্রদান করে চতুর্দিকে তাওয়াফ করতে থাকে।
এ কাজে লোকদের উদ্বুব্ধ করার উদ্দেশ্যে ইবলীস ও বিভিন্ন কৌশলে দেশ-বিদেশে মাহলাইলের মূর্তি পূজার উপকার ও স্বার্থকতার কথা প্রচার করতে লাগল। সে এভাবে প্রচার করে যে, যারা মাহলাইলের মূর্তি পূজা করবে, মাহলাইল তাদের প্রতি খুশি হয়ে তাদের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য আল্লাহ দরবারে সুপারিশ করবেন, তাছাড়া মাহলাইলের দোয়ার ফলে তাদের ধন-সম্পদ ও জীবনযাত্রার সচ্ছলতা অত্যন্ত বৃদ্ধি হবে। এ ভাবেই ইবলীস দুনিয়াতে সর্বপ্রথম মূর্তি মূজার প্রচলন করেছিল।