মুসা (আঃ)-কে গ্রেফতারের নির্দেশ
কিবতী হত্যাকারী শনাক্তকরণে বনী ইসরাইলের আজকের কথায় সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। সুতরাং কিবতী বিবাদের পাট চুকিয়ে তাড়াতাড়ি কেটে পড়ে। কিবতীও বনী ইসরাইলের ঝগড়া এখানেই শেষ হল বটে, কিন্তু কিবতী ঘটনাস্থল থেকে গিয়ে পূর্বের হত্যাকারীর অন্বেষণেরত লোকদের কাছে ঘটনা সবিস্তরে বলল। সে এও বলল, স্বয়ং বনী ইসরালীই গতকালকের হত্যাকাণ্ড মূসার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বলে সুস্পষ্ট উল্লেখ করেছে। এ ঘটনা হযরত মূসা (আঃ)-এর জন্য বিরূপ আকার ধারণ করে। কিবতী হত্যাকারীর অনুসন্ধানকারী অনতিবিলম্বে ফেরাউনকে এ ঘটনা অবহিত করে। ফেরাউন তো পূর্ব থেকেই মূসা (আঃ)-এর প্রতি সন্দেহ পোষণ করে আসছিল। এ ঘটনায় তার সন্দেহ বাস্তব বলে সাব্যস্ত হয়। তাই সে কালবিলম্ব না করে মূসা (আঃ)-কে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। আজকের এ ঘটনার পর মূসা (আঃ) খুব দ্রুত আত্মগোপন করে এবং পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা খুব সতর্কতার সাথে নিরীক্ষণ করতে থাকেন। গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির সাথে সাথে কিবতীরা তাঁর খোঁজে শহরের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের ধারণা, সে এত বড় কাণ্ড ঘটিয়ে পালাবে কোথায়। শহর থেকে প্রধান সড়ক পথেই বের হতে হত। তাই তারা সেখানেই লোকজনকে পাহারায় বসায়, যাতে মূসা (আঃ) কোনভাবে পালাতে না পারে। গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হয়েছে- তা কখনও তিনি জানেন না।
মূসা (আঃ)-এর এক চাচাত ভাই ছিলেন ফেরাউনের খুব বিশ্বাসভাজন। তিনি যদিও ফেরাউনের আস্থাভাজন কিন্তু তার প্রভু উপাস্য হওয়ার দাবীর অবিশ্বাসী এক আল্লাহতে বিশ্বাসী। তাঁর এক আল্লাহর প্রতি ঈমান সম্পর্কে ফেরাউনের লোকদের কোন কারণ জানা ছিল না। দরবারী লোকদের সবাই তাঁকে ফেরাউনের বিশ্বস্ত বলে সম্মান সমীহ করত। অধিকন্তু লোকেরা তাঁকে ফেরাউনের চাচাত ভাই বলে জানত। তাই তারা নির্দ্ধিধায় মূসা (আঃ) সম্পর্কে গৃহীত সরকারী সিদ্ধান্তের কথা তাকে বলে। সে এ ঘটনা জানতে পেরে উপলব্ধি করলেন ভবিষ্যতে কঠিন বিপদে ধেয়ে আসছে। এ মুহূর্তে মূসা (আঃ)-কে সতর্ক করা না হলে সম্ভাব্য অঘটন সম্পর্কেও তিনি শংকামুক্ত ছিলেন না। ঐতিহাসিকদের অনেকে মূসা (আঃ)-এর এ চাচাত ভাইদের নাম শামআন আবার কেউ কেউ হেযকিল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি মূসার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানার কথা জানতে পেয়ে দৌড়ে শহরে আসেন। সাবধানতা অবলম্বন করে তিনি প্রধান সড়ক পথ এড়িয়ে ছোট্ট গলি পথে শহরে প্রবেশ করে মূসা (আঃ)-কে খুঁজে বের করে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানার কথা জানিয়ে বলেন, পালাতে হলে এখনই। আপনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুতরাং অবিলম্বে পালান। আমি আপনাকে হিতাকাঙ্খী। সুতরাং আমার হিতোপদেশের গুরত্ব দিতে ভুল করবেন না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন-
وَجَاءَ رَجُلٌ مِّنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ يَسْعَىٰ قَالَ يَا مُوسَىٰ إِنَّ الْمَلَأَ يَأْتَمِرُونَ بِكَ لِيَقْتُلُوكَ فَاخْرُجْ إِنِّي لَكَ مِنَ النَّاصِحِينَ
অর্থঃ আর এক লোক শহরের প্রান্ত হতে দৌড়ে এসে বলল, হে মূসা! সভাসদস্যরা আপনার সম্বন্ধে শলাপরমর্শ করছে আপনাকে হত্যা করবে, অতএব আপনি পালিয়ে যান, নিশ্চয়ই আমি আপনার হিতাকাঙ্খী।