হিম্মত আলীর পঁয়ত্রিশ-অতিক্রান্ত স্ত্রী বেরিয়ে গেলে এলাকাবাসী নাড়া খায়। গত পাঁচ বছরে কারও বউ বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম। তার আগে অবশ্য একজন কাউন্সিলরের বউও ঠিক ভর সাঁঝবেলায় বেরিয়ে গিয়েছিল। এতে অবশ্য কাউন্সিলরের লস হয়নি, শাপেবরই হয়েছিল, বউ বেরিয়ে যাওয়ায় যে বিপুল ফাউ পরিচিতি জুটেছিল, সেটাই সাক্ষাৎ কাজে দেয় পরের ইলেকশনে, রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে সে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়। এমন সমীকরণ অবশ্য হিম্মত আলীর ক্ষেত্রে খাটে না; কেননা সে সামান্য মিটাররিডার, রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ আদৌ নেই।
মিটাররিডারের বংশে চুনকালি লাগিয়ে বউ লাইলি যে একদিন বেরিয়ে যাবে, ঘুণাক্ষরেও তা বোঝা যায়নি। বোঝা যায় কী করে? দিনভর বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ইলেকট্রিকের মিটার রিড করে ঘরে ফেরার পর সমান যত্নআত্তিই পেয়েছে হিম্মত আলী; উপরি হিসেবে বউয়ের দুটো সোহাগমাখা বাক্যও, ইস, রোদে পুড়ে পুড়ে কী কালোকিষ্টি চেহারাই না তোমার হয়েছে; কত বলি কদিন ছুটি নাও, ঘরে বসে কদিন আরাম কর। বলি বয়সটাও তো খেয়াল রাখা দরকার, নইলে শরীর টিকবে কেন। অথচ ভাগ্যের কী পরিহাস দেখো, চল্লিশোর্ধ্ব সোয়ামি আর হাইস্কুলে পড়া দুই ছেলেকে অকূলে ভাসিয়ে লাইলি বেরিয়ে গিয়ে আর ফিরল না।
এমন গল্প সর্বদাই মুখরোচক, আদিরসাত্মক গপ্পের খোরাক পেয়ে ঝিমিয়ে-পড়া এলাকাবাসী সতেজ হয়, ছি ছি! লজ্জায় আমাদের মাথা কাটা যাচ্ছে। কথার সূত্র ধরে কেউ কেউ পূর্ণাঙ্গতা টানে, নরহত্যার চেয়েও আদিপাপ কিন্তু এই রাগ-অনুরাগই। যে কারণে সাহিত্যচর্চায় যতটা না রাজরাজড়াদের রাজধানী গুরুত্ব পায়, তার চেয়ে ঢের বেশি পায় প্রেয়সীর কণাপরিমাণ তিলের বন্দনা। রসের জোগান দিতে অন্যরাও পিছিয়ে থাকতে চায় না, যা-ই বলো না কেন, পৈতৃক নামটা হিম্মত বৃথাই বয়ে বেরিয়েছে, যার বউ থাকে না, অন্তত তাকে হিম্মত আলী বলতে আমার আপত্তি আছে। কানার নাম পদ্মলোচনের মতন হাস্যরসাত্মক ব্যাপার আর কী। অনেকে অবশ্য এতেও ক্ষান্ত হল না, তারা দোষারোপ করল হালফিল প্রযুক্তিকে, এসব অনাচার হবে না আবার, মিস্ড কলের যুগ বাপু, গলার মধু ঢেলে রাতভর ফুসুরফাসুর করলে এসব হবেই। আর যারা রাতজাগা ফেসবুকখোর, তারা তো আরও উঁচুদরের খেলোয়াড়। বলতে বলতে বাস্তবের সীমানা পেরিয়ে যায়। এতে অবশ্য কারও অসুবিধা নেই, চিত্তাকর্ষক জলসার দিকেই বরঞ্চ তাদের ঝোঁক।
কিন্তু অচিরেই এলাকার জনতা আশাহত হয়; রসাল গালগপ্প বন্ধ হয়ে গেল, যখন মহল্লাবাসী সবিস্ময়ে জানল যে, হিম্মতের বউ অন্য কারও বাড়িতে উঠেনি, দূরবর্তী জেলায় তার মায়ের কাছে গিয়ে উঠেছে। তাজ্জব বাতই বটে; বোঝাই যাচ্ছে, এটা মোটেই হাজী চাচার বউয়ের বেরিয়ে যাওয়ার মতো অতিসরল ঘটনা নয়; সমাচার ঘোলাটে হয়ে উঠলে এলাকার লোকজন তাদের সরলীকৃত বিশ্লেষণী ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল; কেন লাইলি আর হিম্মতের ভাত খাবে না, তা ক্রমশ দুর্বোধ্য হয়ে ওঠায় তারা ভিন্ন আঙ্গিকে অনুসন্ধিৎসু হয়ে উঠে, বুঝেছ, পুরোটাই খাপছাড়া মনে হচ্ছে। যে মেয়ে চলে যাবে সে কেন সোজা বাপের বাড়িতে উঠবে। কানাঘুষা যা শুনছি, সে নাকি স্থায়ীভাবেই চলে গেছে, কস্মিনকালেও ফিরবে না। চায়ের কাপে ঝড় তোলার মওকা হারিয়ে দু-চারজনের মন সত্যিই খারাপ, আমার কী মনে হয় জানেন, লাইলি একটা ঘোড়েল মাল; সে শুধু হিম্মতকে নিয়ে খেলছে না, আমাদেরও বোকা বানাচ্ছে। আলোচনার সুবিধার্থে চায়ের দোকানে এলাকাবাসীর ভিড় বাড়তে লাগল, তারা এখনই হাল ছেড়ে দিতে নারাজ, আপনারা যেমনটাই বলেন, এটা আমার কাছে হাজী চাচার বউয়ের গল্পই, কেবল ধরনটা আলাদা; বন্ধুর বাড়িতে ওঠার আগে মেয়েটি ইচ্ছাকৃত বিরতি দিচ্ছে; উত্তেজনা থিতিয়ে যেতে যে কে সেই, আসল জায়গায় চলে যাবে।
কিন্তু যা আশা করা গিয়েছিল, কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও এসবের কিছুই ঘটল না; লাইলি যথারীতি তার মায়ের কাছেই পাকাপাকি আছে। হিম্মত তো হিম্মত, পেটের দুই ছেলের শত অনুনয়-বিনয়েও বিন্দুমাত্র বরফ গলেনি; না লাইলি ফিরে এলো, না সে অনুমিত বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ঠাঁই নিল। পরিস্থিতি এতটাই ঘোলাটে হয়ে উঠল যে, মহল্লাবাসীর রণে ভঙ্গ দেয়ার জোগাড়। তাদের সৃজনশীলতা তেমন কাজে আসছে না, সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীই বিফলে গেলে তাদের মাথা গুলিয়ে যাওয়ার উপক্রম, আগেই বলেছিলাম, লাইলি সবাইকে নিয়ে খেলছে। তার চুলের সমান বুদ্ধিও আমরা ধরি না। তাৎক্ষণিকভাবে অনেকের সায় মেলে, ঠিকই বলেছেন। যদি মুদ্রার দুই পিঠে একই চিহ্ন থাকে, তাহলে সকল অনুমান ব্যর্থ হতে বাধ্য। টস যেভাবেই করেন, হয় শুধু হেডই পড়বে নচেৎ কেবলমাত্র টেইল। টসের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত, অতএব কর্তার ইচ্ছাতেই কর্ম। বলতে কী, এখানেও তেমনটাই ঘটছে। আলাপকারীদের মধ্যে সব সময় দুই-একজন থাকে যারা জীবনাভিজ্ঞতায় অগ্রসর, তেমন এক প্রবীণ সানন্দে আলোচনায় যোগ দিলেন, মানুষকে ছকে ফেলে দেখতে আমরা পছন্দ করি আর গলদ হয় সেখানেই; মানুষ তো কবিতা গোত্রীয়, তাকে ব্যাখ্যা করে সাধ্য কার। তাই লাইলির কাছে সবাই হাবুডুবু খাচ্ছি। আড্ডার ঝোঁক সরসতা ছেড়ে গুরুগম্ভীরতায় ঢুকতে থাকলে এক-দুয়ে জমায়েত ভাঙতে লাগল। বলতে কী কিছুদিন আড্ডাই জমল না।
তবে দিন পনেরো পার হতে আড্ডার সরস মেজাজ ফিরে আসে; সংবাদদাতাদের তথ্য যদি সঠিক হয়, তাহলে লাইলির সংসারত্যাগের একটা অভাবিত দ্বিতীয় কারণ পাওয়া যাচ্ছে; তাদের সংসার ভাঙার মূলে নাকি অন্য কিছু নয়, বরং হিম্মতের হার্নিয়া। আবার পরিবেশিত সংবাদের পরের অংশ এই, পথের কাঁটা অপসারণের লক্ষ্যে দাগাখাওয়া হিম্মত তাই কাজেও নেমে পড়েছে, এমনকি অপারেশনের দিনক্ষণও ধার্যকৃত, সামনের বুধবার সন্ধ্যা সাত ঘটিকায়। এসব গোপন খবর লিক হতে আড্ডাবাজদের উদ্যম ফেরত আসে, ভাঙাহাট জোড়া লেগে যায়, তাহলে দেখা যাচ্ছে হার্নিয়া পুষে রাখার ফল কখনও ভালো হয় না, তলে তলে তা বিভীষণের কাজ করে, ঘর ভাঙার পক্ষে তা পর্যাপ্ত। আমার মতে, এটা অন্য হার্নিয়া-রোগীদের জন্যও একটা অশনিসংকেত, যথেষ্ট দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই বাপু শিথিল কাছা সাবধান। গল্পের মজলিস জমকালো রূপ নেয়, খালি দু-একজন বাদে অর্থাৎ যারা অনুরূপ গোপনীয় রোগবালাইয়ের শিকার, কেবল তারাই গুটিগুটি পায়ে সটকে পড়ে; এই মুষ্টিমেয় লোকগুলো যে শুধু লজ্জায় লাল তা নয়, তারা হয়তো তাদের ভবিষ্যৎ বিবাহিত জীবন নিয়েও শঙ্কিত; তবে কি পরবর্তী কেলেংকারির কেচ্ছায় হিম্মতের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছে তারা? যা হোক, তাতে অবশ্য মজলিসের জৌলুস কমে না, বক্তার ভূমিকায় নামতে উপস্থিত প্রত্যেকে সচেষ্ট, এইবার যদি হিম্মতের কপাল খোলে, এইবার যদি সে গানের হিল্লোল তুলে গাইতে পারে- লাইলি তোমার এসেছে ফিরিয়া, মজনু গো আঁখি খোলো… সেই পোড়-খাওয়া প্রবীণ এবারও বাগড়া দিলেন, অত সোজা নয়। হার্নিয়ার অপারেশন সমাধা হলেই যে ঘরের লাইলি ঘরে ফিরে আসবে, অতো সোজা নয়, এ জল গড়াতেই থাকবে। মানুষ কাব্য বলে কথা, আর মেয়েমানুষ তো আরেক ধাপ উপরে : ঢাউস মহাকাব্য।
যেমনটা অনুমান করা গিয়েছিল, ঘটনাক্রম তেমনি বিস্তৃত হতে থাকে শাখা-প্রশাখায়। খবর সংগ্রহে যাদের সুনাম আছে এমন একজন বলল, জব্বর খবর শোনো তবে। কেসটা আরেক দফা টার্ন নিচ্ছে; হিম্মত মোটেও আর লাইলির অপেক্ষায় নেই, হিম্মতের বাড়িতে এখন ঘটকের আনাগোনা, অপারেশন শেষে সে নিজেই নওশা সাজতে যাচ্ছে। বলে কী! আশাতীত উৎফুল্ল রসপিপাসুরা। কনের পরিচয়ও কথায় কথায় উঠে আসে; হিম্মত মাসকাবারি যেসব বাড়িতে ইলেকট্রিক মিটার দেখে বেড়ায়, সম্ভাব্য কনে মেয়েটি এমন এক বাড়িরই বাসিন্দা; মিটার রিড করতে করতে সে নাকি মেয়েটির হৃদয়ও রিড করে ফেলেছে, মিটার রিডিংয়ের বাড়তি সুফলই এসব। বটে, যা কিছু রটে তা কিছু বটে। তাহলে ঘটক বাবাজি শুধু শো, লোক দেখানো; সামাজিকতার লেবাস পরাতে ঘটককে আনা। আলোচনার পালে জোর হাওয়া লাগলে কেউ কেউ ঈর্ষাপরায়ণও হয়, ইস, কী কপাল হিম্মতের! ভাবছি সামনের মাসে আমি রিজাইন দিয়ে মিটার রিডিংয়ে ঢুকব। মেয়েদের হৃদয়েও বিদ্যুৎ থাকে, মিটাররিডার হলেই কেবল তেমন বিদ্যুতের থই পাওয়া পায়। কথা কথাকে আমন্ত্রণ করে, তা যা বলেছেন, আমাদের এসব ম্যাড়মেড়ে চাকরিতে কোনো লাইফ নেই। সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে হিম্মতের এক বাল্যবন্ধু তাক-লাগানো অজানা গল্প বলে, জানেন, ছোটকালে হিম্মত একবার চুম্বক খেয়ে ফেলেছিল। ভাঙা রেডিওর এক টুকরো চুম্বক। মনে হচ্ছে সেই বিস্মৃত ম্যাগনেটটাই তার ওস্তাদি খেল দেখাচ্ছে। ফলে ওই মেয়েটির মনের কাঁটা হিম্মতের দিকে ঘুরে গেছে। যদিও ছোটকালে এক্স-রে জানা গিয়েছিল, ম্যাগনেটটি আর স্বস্থানে নেই, এখন মনে হচ্ছে তথ্যটি সঠিক ছিল না, এটি ওর পেটে বহাল তবিয়তেই আছে আর এটির কার্যকারিতাও ভোঁতা হয়নি, অগোচরে থেকেও কাজের কাজটি দিব্যি করে যাচ্ছে; চৌম্বক শক্তির জোরে হিম্মত অসাধ্য সাধন করেছে।
চমকপ্রদ গল্পটি শোনার পর অজান্তে অনেকেই তাদের পেটে হাত বোলায়; ভাবতে থাকে বাল্যকালে তাদের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছিল কিনা। কিন্তু এত বছর বাদে কিছুই মনে পড়ে না। তার মানে ম্যাগনেট তারা খায়নি, ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে; একটা মেয়েকেও তারা পটাতে পারেনি; এখানেই শেষ নয়, তাদের ঈর্ষাপরায়ণতা তুঙ্গে ওঠে যখন শোনে যে, হার্নিয়ার আপদ বিদায়করত হিম্মত কেবল আত্মবিশ্বাসী নয়, জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দ্বিতীয় বিবাহবন্ধনেও আবদ্ধ হয়েছে। ওধারে কনের আন্দাজও সঠিক, সেই মেয়েটিই যার হৃদয়জনিত বিদ্যুৎ আর হিম্মতের বিস্মৃতিযুক্ত ম্যাগনেটে ফলপ্রসূ বিক্রিয়া ঘটেছিল। যারা বিয়েতে আমন্ত্রিত হয়েছিল, তাদের মন্তব্য বাড়তি কিছু যোগ করে, মেয়েটির চোখেও বিদ্যুৎ আছে। আলাপচারীদের জনাকয়েকের বুক পুনরপি জ্বলে অ্যাসিডিটিতে নয়, চিরাচরিত পুরুষালি ঈর্ষায়।
ঈর্ষান্বিত ব্যক্তিবর্গের মনোবৃত্তি যেমনই থাক, এ দলে সেই প্রাজ্ঞ প্রবীণ পড়েন না, দ্বিমত পোষণ করতে দ্বিধা করেন না, আপনারা এ কথা বলছেন যে, কনে মেয়েটির চোখে বিদ্যুৎ আছে যা হিম্মত কেন, সব পুরুষকে ঘায়েল করে, চাইকি কবেকার কোন ম্যাগনেটকেও কাছে টানে; সব বোগাস, আবারও বলছি আমি একমত নই। হিতে বিপরীতও হতে পারে যদি তা ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলিং হয়ে ওঠে। মাসশেষের বিদ্যুৎ বিল যখন ৫০০ বদলে ৫ লাখে দাঁড়ায়, তখন তা ভুতুড়ে বিলিংই বটে। গোটা ব্যাপারটা শেষতক না সেদিকেই ধাবিত হয়।
তার মনে ফের অনিশ্চয়তা, এলাকাবাসীর কিংকর্তব্যবিমূঢ়তায় পাওয়া; আর তা উড়িয়ে দেয়ারও নয়। এমনও হতে পারে হিম্মতের গৃহদাহের কারণ ভিন্ন, মোটেই হার্নিয়া হয়তো ঘর-সংসার করতে করতে হিম্মত ও লাইলি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল অথবা এমন কোনো দুর্জ্ঞেয় হেতু বা এমন এক অনির্দিষ্ট দ্বিধা যা তারা নিজেরাই বুঝতে পারছিল না, রবিঠাকুরের ভাষায়- মনে কী দ্বিধা রেখে চলে গেলে সে দিন ভরা সাঁঝে/যেতে যেতে দুয়ার হতে কী ভেবে ফিরালে মুখখানি…; তখন হয়তো একটা ব্রেকের দরকার হয়ে পড়ে যা অপ্রেমকে প্রেমে ফেরাতে পারে। মানবমন তো আর জ্যামিতির সংজ্ঞা নয় যে, তা বিশেষ কিছু সংখ্যা দিয়ে প্রকাশযোগ্য। চায়ের স্টলের হালকা আলাপ ভারী হয়ে উঠলে আসর ভেঙে যায় আগাম।
কিছুদিন সাড়াশব্দ নেই, রসজ্ঞরাও স্তিমিত; কিন্তু তা নিতান্ত সাময়িক। কেননা ভাটার শেষে যেমত থাকে জোয়ারের আশ্বাস, তেমনি যেন গল্পের উপসংহারও; গৃহত্যাগী লাইলি নাকি ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন অর্থাৎ ঘরের স্ত্রী ঘরে ফিরে এসেছে; হ্যাঁ, গত সোমবার বাস থেকে নেমে সটান হাজির আপন সংসারে। আর তাতেই জাঁকালো ক্লাইম্যাক্স; ফলত আসরও চাঙ্গা, ভানুমতির খেল জমেছে বটে। এবার তবে দুই সতীনের জানবাজি লড়াই, কে হারে কে জেতে? চুলোচুলি যা-ই হোক, লড়াইটা উপভোগ্য হবে। দেখতে আর তর সইছে না।
আবারও সেই প্রজ্ঞাবান প্রবীণের বিপত্তি, লড়াইটা হয়তো উপভোগ্যই হবে, তবে ফলাফল অনিশ্চিত। চোটটা কোন দিক দিয়ে যাবে বলা মুশকিল।
দুই-একজনের এমন মতামত পছন্দসই হল না, আপনি বড্ড বেরসিক, সবকিছুতেই রসহানি খুঁজে পান।
প্রবীণতম ব্যক্তির আশংকাই সত্য হওয়ার পথে; ত্রিকোণ প্রেমের ফলাফল ভালো হয়নি। এক ময়লা রঙ-ধরা বিকেলে খবর এলো, মিটাররিডারকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, দুদিন ধরে নিরুদ্দেশ; গড়পরতা ধারণা ছিল দুই সতীনের একজনের প্রস্থান, কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে বিপ্রতীপ : খোদ হিম্মত আলী ফেরার অর্থাৎ পলাতক, এমনকি তার সিমকার্ডও বন্ধ। ভীষণ হতাশার শব্দ করল আলাপচারীরা, যা, এবার তবে হল তো। স্বয়ং হিম্মত ভাগলবা; দেখতে দেখতে বৈকালিক আড্ডা ভেঙে গেল; ভাবখানা এমন, যাকে ঘিরে গল্প সে-ই যখন নেই, তখন আর কীসের আড্ডা, সার্থকতাই-বা কোথায়!
লেখক : সাহিত্যিক
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।