লোকটার ডাক এড়াতে পারলো না করিম।
লোকটা মানে মুখোশওয়ালা। অল্প কটা মুখোশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পথের ধারে। আরো খানিকটা এগিয়ে পথটা মিশেছে মেলার মাঠে। চিতলমারি মেলা। জমজমাট বৈশাখী মেলা হচ্ছে ওখানে। কী নেই মেলায়? নাগরদোলা, পুতুল নাচ, সার্কাস, লাঠিখেলা, ষাঁড়ের লড়াই, কবুতর দৌড় এমনকি মোরগ লড়াইও হচ্ছে। আহা! মেলার সকল মানুষ কেমন হাসিখুশি। ওদের দেখে মনেই হয় না কোনো দুঃখ আছে কারো মনে। যদি কারো কোনো দুঃখ থেকেও থাকে, তবে দুঃখগুলো সব বেঁধে রেখে তবে মেলায় ঢুকেছে। মেলায় ঢোকার মুখেই একটা নয়, দুটো নয়- চার-চারটে বটগাছ। ইয়া বড়ো বড়ো।
দেখতে যেমন বড়ো, ঠিক তেমনি বড়ো বড়ো তাদের ঝুরি। ওই ঝুরিগুলোর সঙ্গেই নাকি দুঃখ বাঁধা থাকে। মন খারাপ থাকলে বটের ঝুরি ধরলেই দুঃখ চলে যায়। করিমের কখনো মন খারাপ হয় নি। যদি কখনো হয়, তবে ও ঝুরি ধরে দেখবে সত্যি সত্যি দুঃখ যায় কি না।
আজও করিম মেলায় এসেছে সেই দুপুর বেলা। স্কুল ছুটির পর ঘরে গিয়ে কোনো রকমে খেয়েছে। এর নাম নাকি নাকে-মুখে খাওয়া। তারপর এক দৌড়ে মেলায়। ওর কাছে বেশ কিছু জমানো টাকা ছিল। চিতলমারি মেলায় খরচ করার জন্য জমিয়েছিল। দুদিন ধরে ধুমসে খরচ করছে। পুতুল নাচ দেখেছে তিনবার। সার্কাস দুবার। নাগরদোলায় একবার উঠেছে কেবল। ওর নাগরদোলা ভালো লাগে না। মাথা ঘোরে। মাথা না ঘোরানোর চেষ্টা করেছিল অনেকবার। কিন্তু নাগরদোলায় উঠলেই মাথাটা ওকে কিছু না জানিয়েই ঘুরতে থাকে। দেদার খরচ করেও আরো কিছু টাকা রয়ে গেছে। টাকাটা সবসময় ওর পকেটেই থাকে। কখন কী কিনতে ইচ্ছে করে বলা তো যায় না!
মেলায় ঢোকার পথেই লোকটা ওকে ডাকলো। এর আগে কখনো লোকটাকে দেখেনি ও। মনে হয় আজই প্রথম এসেছে। ওকে ডেকে লোকটা বললো, এই খোকা, মুখোশ কিনবে?
লোকটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো করিম। ভালো মতো তাকালো। আধাপাকা চুল। পরনে লুঙ্গি। আর গায়ে জড়িয়ে রেখেছে গামছা। অল্প কিছু মুখোশ নিয়ে বসে আছে। মুখোশগুলো সামনে রাখা। একটা ঝাঁকার ভিতর। ঝাঁকাটা বাঁশের।
করিম জানতে চাইলো, কী কী মুখোশ আছে আপনার কাছে?
লোকটা বললো, কী মুখোশ চাই তোমার?
আগে দেখি!
ঝাঁকার ভিতর থাকলেও একটা গামছা দিয়ে ঢাকা মুখোশগুলো। ওই তো গামছার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে। লোকটা গামছা সরিয়ে মুখোশগুলো দেখালো। বাঘ, হরিণ, সিংহ, হাতি, কুমির আর বানরের মুখোশ। একটা করে।
করিম বললো, কিসের মুখোশ এগুলো?
লোকটা বললো, দেখতেই তো পাচ্ছো-বাঘ, হরিণ, সিংহ…
লোকটার কথা শেষ হওয়ার আগেই করিম বললো, না মানে কী দিয়ে বানানো?
লোকটা বলল, কাগজের।
এই! আর নেই?
লোকটা এবার ওর ডান কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বললো, একটা চামড়ার মুখোশ আছে। দেখবে?
করিমের চোখে মুখে এবার কৌত‚হল দেখা গেল। বললো, দেখি?
ঝাঁকার একেবারে তলায় কাগজে মোড়ানো একটা মুখোশ বের করলো লোকটা। করিমের হাতে দিয়ে বললো, দ্যাখো।
মোড়ানো কাগজ খুলে মুখোশটা বের করলো করিম। একটা পাখির মুখোশ। তবে চেনা-জানা পাখির মতো নয়। ইয়া বড় ঠোট। এত বড় ঠোটওয়ালা মুখোশ এর আগে কখনো দেখেনি ও।
করিম জানতে চাইলো, পাখির মুখোশ?
হুঁ।
উট পাখি?
না। হাতি পাখি।
হাতি পাখি!
বড্ডো অবাক হলো করিম। বললো, হাতি পাখিও আছে নাকি দুনিয়ায়?
লোকটা বললো, একসময় ছিল। মাদাগাস্কারের প্রাণী। মাদাগাস্কারের নাম শুনেছ তো?
মাদাগাস্কার! নাম শুনেছে করিম। শুনেছে মানে পড়েছে। পশু-পাখি নিয়ে পড়তে ওর দারুণ লাগে। স্কুলের পাঠাগার থেকে নিয়মিত বই নেয় ও। মাদাগাস্কারের নামটা ওখান থেকেই জেনেছে। ভারত মহাসাগরে আফ্রিকার ঊপক‚লের একটা দ্বীপ।
করিম বললো, শুনেছি। ফরাসি উপনিবেশ ছিল।
লোকটা বললো, ঠিক। তুমি দেখছি অনেক কিছুই জানো।
করিম বললো, কিন্তু যে বইয়ে পড়েছি, সেখানে তো হাতিপাখির কথা লেখা ছিল না।
লোকটা বললো, অনেক বছর আগের কথা। অনেকে ভুলেই গেছে হাতিপাখির কথা। সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৬৪০ থেকে ১৬৫০ সালের মধ্যে। দশ ফুট লম্বা। ওজন ছিল চারশো কেজি।
করিম বললো, হাতিপাখিও কি ডিম পাড়তো?
সব পাখিই ডিম পাড়ে। হাতিপাখিও ডিম পাড়তো।
নিশ্চয়ই খুব বড় ডিম পাড়তো?
সে আবার বলতে। হাতিপাখির একেকটা ডিম ছিল একশষাটটা মুরগির ডিমের সমান। সে যাই হোক, আমি তো এখানে জ্ঞান বিতরণ করতে আসিনি। মুখোশ বেচতে এসেছি। নেবে নাকি মুখোশটা। দুনিয়ায় এমন মুখোশ দ্বিতীয়টি নেই।
সত্যি!
তিন সত্যি।
মুখোশ জমানোর ইচ্ছে ওর অনেক দিনের। তবে খুব বেশি মুখোশ ও কিনতে পারে না। রাখবে কোথায়? মুখোশ কিনে ঘরে নিয়ে গেলেই মায়ের বকা-ঝকা শুনতে হয়। কেবল বাবার কাছ থেকে খানিকটা প্রশ্রয় পায়। নইলে ওর জমানো আঠারোটা মুখোশ কবেই লাপাত্তা হয়ে যেত! এই মুখোশটা তো কিনতেই হবে। জানতে চাইলো, কত?
পাঁচশ টাকা।
পাঁচশ!
দুর্লভ মুখোশ খোকা। তার ওপর চামড়া দিয়ে বানানো। কিসের চামড়া জানো?
কিসের?
আফ্রিকার সিংহের। লাখ টাকা দিলেও এমন মুখোশ পাওয়া যাবে না।
তাহলে পাঁচশ টাকায় দিচ্ছেন কেন?
তার মানে তুমি কিনবে। নিয়ে নাও।
কিন্তু এত কমে দেবেন কেন?
কারণ লাখ টাকা দিয়ে মুখোশ তুমি কিনতে পারবে না। পারবে?
তা অবশ্য পারব না।
আমি জানি পাঁচশর বেশি তুমি দিতে পারবে না।
অবাক হলো করিম। ওর পকেটে সত্যি সত্যি পাঁচশ টাকার একটা নোট আছে। আর কোনো টাকা নেই। কিন্তু লোকটা সেটা জানলো কেমন করে?
২.
মুখোশ রাখার জন্য একটা টিনের বাক্স আছে করিমের। ওর ঘরে খাটের নিচে থাকে বাক্সটা। তবে নুতন মুখোশ কিনলে সেটা কিছুদিন ঝুলিয়ে রাখে দেয়ালে। ঠিক ওর পড়ার টেবিলের সামনে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে নতুন কেনা মুখোশের দিকে তাকায় মাঝে মাঝে। সে রাতে মুখোশটার দিকে তাকানোরও সময় ছিল না ওর। তিন দিন বাদেই প্রথম পার্বিক পরীক্ষা। প্রস্তুতি খুব একটা ভালো নয় ওর। বইখাতার সঙ্গে ওর সম্পর্ক এবার যাচ্ছে তাই। অনেক সময় এমন হয়। কিন্তু পরীক্ষায় খারাপ করতে চায় না ও। পড়তে পড়তে কখন যে রাতের খাবারের সময় হয়ে গেল, টেরই পেল না। হঠাৎ ঘাড়ের কাছে মায়ের ছোঁয়া। ছোঁয়া পেলেই ও বুঝতে পারে, এটা মায়ের, ওটা বাবার। মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, খাবি না?
খাবারের সময় হয়ে গেছে?
কখন? সেই তখন থেকে ডাকছি। কিন্তু তোর কোনো সাড়া নেই। ভাবলাম নতুন মুখোশ নিয়ে পড়ে আছিস বুঝি। এসে দেখলাম, না। তুই পড়ছিস। চল। তোর বাবা বসে আছে খাবার টেবিলে।
তখনই বুঝতে পারলো করিম, ওরও খিদে পেয়েছে। পেটের ভিতর হাতি ডাকছে। হাতি! হাতির কথা মনে হতেই মুখোশটার দিকে তাকালো ও। মাকে বললো, এটা কিসের মুখোশ জানো?
মা বললেন, আমি অতো মুখোশ চিনি না বাপু। মুখোশপরা মানুষই চিনি না।
মুখোশপরা মানুষ মানে?
চারদিকে কত মানুষ কত রকমের মুখোশ পরে ঘোরাঘুরি করছে, সবাইকে কি আমরা সবাই চিনি? খারাপ মানুষ ভালো মানুষের মুখোশ পরে ঘুরছে। আবার ভালো মানুষ চুপটি করে আছে মুখোশের আড়ালে। সবাই কোনো না কোনো মুখোশ পরে আছেই।
করিম হেসে বললো, তুমিও তো মুখোশ পরে আছো মা।
মা অবাক হয়ে বললেন, কী বলছিস তুই?
সত্যি বলছি।
মায়ের মুখটা এবার রাগে লাল হয়ে গেল। মুখে কোনো কথা জোগাল না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন করিমের দিকে। করিম মুচকি হেসে বললো, স্নেহ, মায়া, মমতার মুখোশ। ঠিক বলিনি?
মা ওর পিঠে একটা চাপড় দিয়ে বললেন, দুষ্ট ছেলে।
আর বাবা কিসের মুখোশ পরে আছে জানো?
কিসের?
রাগের। রাগের আড়ালে বাবা খুব নরম মনের মানুষ।
মা অবাক হয়ে বললেন, তুই দেখছি তোর বাবাকে ভালো মতো চিনিস!
৩.
সময় মতো লেখাপড়া না করলে যা হয়, পরীক্ষার আগে ভীষণ চাপ পড়ে। রাত জেগে পড়তে হচ্ছে করিমকে। তবু পড়া শেষ করতে পারবে বলে মনে হয় না। অনেক রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করলো ও। ঘুম ঘুম পাচ্ছে। চেষ্টা করেও আর টেবিলে বসে থাকতে পারলো না। বিছানা ঠিকঠাক করে মশারি টানিয়ে নিল। তারপর শুতে যাবে, হঠাৎ চোখ পড়লো মুখোশটার দিকে। আর তখনই মনে পড়লো মুখোশটা একবার পরে দেখলে কেমন হয়।
চেয়ারের উপর উঠে নামিয়ে আনলো মুখোশটা। তারপর পরে নিল মুখে। তারপর আয়নার সামনে গেল। কিন্তু কেমন একটা বোঁটকা গন্ধ লাগলো নাকে। অবাক হলো করিম। কেনার সময় নাকের কাছে নিয়ে শুঁকে দেখেছে, তখন তো চামড়ার কোনো গন্ধ পায়নি। এখন যে গন্ধটা পাচ্ছে, এটা তো চামড়ার গন্ধ নয়। গন্ধটা ভীষণ উৎকট। মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসছে। হাত দিয়ে নাক চাপা দেয়ারও সুযোগ নেই। কারণ তখনই ও খেয়াল করল, এ মুখোশে নাকের ফুটোর ছিদ্র নেই। সাধারনত সব মুখোশেই চোখ আর নাক বরাবর ছিদ্র থাকে। কিছু কিছু মুখোশে মুখের কাছেও ছিদ্র থাকে। কিন্তু এটায় কেবল দুচোখের জায়গায় দুটো ছিদ্র। আর ছিদ্রগুলো ইয়া বড় বড়। এক চোখ বরাবর ছিদ্র ঠিক থাকলে, অন্য চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। চোখ দুটোর ছিদ্র বেশ খানিকটা দূরে। সঙ্গে সঙ্গে মুখোশটা খুলে ফেলতে চাইলো ও। হাত দিয়ে টানলো। কিন্তু উৎকট গন্ধটা আরো তীব্র হয়ে গেল। এতই তীব্র যে, এরপর কী করতে হবে, সেটাই আর বুঝতে পারলো না। হঠাৎ ও দুচোখেই ভালো মতো দেখতে পেল। অবাক হতে গিয়েও কেন যেন অবাক হলো না করিম। ওর মনে হলো, মুখোশের চোখের ছিদ্র দুটো ঠিকই আছে। এই তো ও ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছে। আশপাশে তাকালো করিম। আরে! অনেকগুলো মুখোশ পরা মুখ ওর চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে। অন্য সময় হলে ভীষণ অবাক হতো ও। কিন্তু এখন হচ্ছে না। এবারও ওর মনে হলো এটাই তো স্বাভাবিক। আরো কিছুক্ষণ পর ওর ডানপাশ থেকে একটা চিৎকার ভেসে এলো-হোল্লা হো-ও-ও…
তারপর বামপাশ থেকেও ভেসে এলো একই রকম চিৎকার। তারপর পিছন থেকে। সামনে থেকেও ভেসে আসছে একই চিৎকার-হোল্লা হো-ও-ও-ও…
খানিক পরে করিম নিজেও চেঁচাতে লাগল-হোল্লা হো-ও-ও-ও…
একসময় আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে সবাই একসাথে চেঁচাতে লাগল-হোল্লা হো-ও-ও-ও, হোল্লা হো-ও-ও-ও…
আরো অবাক করা ব্যাপারটা ঘটলো এর পরই। বিশাল একটা পাখি দেখল ওরা। এত বড় পাখি জীবনে কখনো দেখেনি ও। ও কেন, দলের কেউ-ই দেখেনি। ওদের হইচই শুনেও পাখিটা নড়ছে না। বসেই আছে। আর ওদের দিকে তাকিয়ে কিঁয়াচ কিঁয়াচ করে চেঁচাচ্ছে। কী বিশাল ঠোঁট পাখিটার। মনে হচ্ছে একটা মানুষকেই তুলে নিতে পারবে ঠোঁটে করে। ভয়ে কেউ সামনে এগুচ্ছে না। নিরাপদ দূর থেকেই পাখির গায়ে ছুঁড়ে মারছে বর্শা। ওর হাতেও একটা বর্শা। যেমন লম্বা তার ফলা, তেমনি বিশাল বর্শার লাঠি। ততক্ষণে অনেকগুলো বর্শা বিঁধে গেছে পাখিটার গায়ে। তবু পাখিটার কিছুই করতে পারলো না কেউ। সাহস করে দু’একজন এগিয়ে গেল পাখির কাছে। পাখির গা থেকে বর্শা খুলে তারপর আবার ছুঁড়ে মারবে। এগিয়ে গেল করিমও। বেশ খানিকটা সামনে এগিয়ে গিয়েছে ও। হঠাৎ লম্বা গলা বাড়িয়ে ওর মুখে একটা ঠোকর মারল পাখিটা। মনে হলো যেন হাতির ধাক্কা খেয়েছে ও। ধুপ করে পড়ে গেল মাটিতে। সুযোগ পেয়ে আরো দু’টো ঠোকর মারলো ওকে পাখিটা। সঙ্গে সঙ্গে দলের একজন ওর পা ধরে টেনে নিয়ে গেল পাখির নাগালের বাইরে। জোর বাঁচা বেঁচে গেছে ও। ভাগ্যিস পাখিটা ওকে গিলে ফেলেনি। মনে হয় এই পাখিটা নিরামিষভোজী। আমিষভোজী হলে আর রেহাই ছিল না। নইলে পাখির পেটেই যেতে হতো ওকে।
দলের কয়েকজন ততক্ষণে নিজেদের বর্শা খুলে নিয়েছে পাখির গা থেকে। তারপর উঠে বসেছে গাছে। চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে পাখিটাকে। এবার সবার লক্ষ্য একটাই- পাখির মাথা। সবাই বুঝতে পেরেছে, এতবড় পাখির গায়ে বর্শা মেরে তাকে কাবু করতে পারবে না। বলতে না বলতেই এক ঝাঁক বর্শা ছুটে এলো পাখির মাথার দিকে। মনে হলো বর্শার একটা আঘাত এসে লেগেছে করিমের পায়ে। কেমন আর্তনাদ করে ওঠলো ও। মনে হলো কেউ ওর মাথায় চাটি মেরেছে। আর তখনই হঠাৎ দুচোখ মেলে তাকালো ও। ভয়ে ভয়ে চোখ দুটো খুলেই অবাক হয়ে গেল করিম। বাবার মুখ। ওর মুখের দিকে ঝুঁকে আছেন। তাকিয়ে আছে ওর দিকে। বাবার চেহারাটা রাগে কাঁপছে। গম্ভীর গলায় বললেন, আজকাল মুখোশ পরেও ঘুমোস নাকি?
করিম নিজেও জানে না, ও যে মুখোশ পরেই ঘুমিয়েছিল। তখনই ওর মনে পড়ল গতরাতের কথা। মুখোশটা পরে ও কেবল দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু পরার পরেই যে এমন হবে, কে জানতো!
বাবা বললেন, মুখোশ পরে শুয়েছিস ভালো কথা, মুখোশটাকে নখ দিয়ে খামচে কী করেছিস?
ততক্ষণে ওর মুখ থেকে মুখোশটা টেনে খুলে ফেলেছেন বাবা। এবার মুখোশের দিকে তাকাল করিম। আর তাকিয়ে দেখল, সত্যি সত্যি তিনটে জায়গায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে মুখোশটা। কিন্তু ওটা তো খামচির ক্ষত নয়। মনে হচ্ছে কেউ ছুরি দিয়ে কেটে দিয়েছে। তবে কাটা জায়গাটা নিখুঁত নয়, কেমন দাগ দাগ। কামড়ের দাগের মতো।
অবাক হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে মুখোশের দিকে তাকিয়ে রইলো করিম।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।