পূর্বাভাস
“আব্বু, আজ রাতে আমি স্বপ্ন দেখেছি, এগারটি তারা এবং সূর্য আর চাঁদ আমাকে সাজদা করছে।” (সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ০৪)
“পুত্র আমার, এ স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের বলোনা। ওরা জানতে পারলে তোমার ক্ষতি করার চিন্তা করবে। আর শয়তান তো মানুষের ঘোরতর শত্রু আছেই।” (সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ০৫)
ছোট্ট কচি ইউসুফ যেদিন এ স্বপ্ন দেখেন, সেদিনই তাঁর বিজ্ঞ পিতা বুঝতে পারেন, মহান আল্লাহ তাঁর এই পুত্রটিকে নবুয়্যত দান করবেন। তাই তো তিনি সতর্ক করে দিলেন। সেই সাথে আরো বললেন-
“তোমাকে তোমার প্রভু তাঁর কাজের জন্যে নির্বাচিত করবেন, কথার মর্ম বুঝতে শেখাবেন আর তোমার প্রতি ও ইয়াকুবের পরিবারের প্রতি ঠিক তেমনি করে তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করবেন, যেমনটি করেছিলেন তোমার পিতামহ ইসহাক ও ইব্রাহীমের প্রতি।” (সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ৫-৬)
বংশ পরিচয়
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন- “করিম ইবনে করিম ইবনে করিম-ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম।” ‘করিম’ মানে সম্মানিত। অর্থাৎ সম্মানিত নবী হযরত ইউসুফ মহাসম্মানিত নবী ইবরাহীম (আঃ এর প্রপুত্র সম্মানিত নবী ইসহাকের পৌত্র আর সম্মানিত নবী ইয়াকুবের পুত্র।
হযরত ইউসুফ (আঃ) যেমনি ছিলেন মহান নবীদের সন্তান, তেমনি ছিলেন অত্যন্ত উন্নত চরিত্র ও পবিত্র জীবনের অধিকারী এক মহান নবী। আল্লাহ তাঁর সম্পর্কে বলেন-
“ইন্নাহু কা-না মিন ইবাদিনাল মুখলাসিন- সে ছিলো আমার একান্ত বাছাই করা দাসদের একজন। ” হযরত ইউসুফের জন্ম হয় নানার বাড়িতে। জন্মের পর পিতার সারহে দাদুর বাড়িতে চলে আসেন। দাদুর বাড়ি কোথায়? হ্যাঁ, তাঁর দাদুর বাড়ি মানে নিজের বাড়ি ছিলো ফিলিস্তিনের হেবরন শহরে। তাঁর মায়ের নাম ছিলো রাহিল। হযরত ইউসুফের পিতা ইয়াকুব (আঃ) চার বিয়ে করেছিলেন। চার ঘরে তাঁর ছিলেন মোট বারো ভাই। তবে হযরত ইউসুফের সহোদর ভাই ছিলেন মাত্র একজন, বিনয়ামিন। বারো ভাইদের মধ্যে বিনয়ামিন ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ। ইউসুফ ছিলেন সোনার ছেলে। যেমন বাপ তেমনি ছিলেন পুত্র ইউসুফ। নবীর ছেলে ঠিক নবীর মতো জ্ঞান বুদ্ধি আর চমৎকার আচার আচরন। ইবাদাত বন্দেগীতে অগ্রগামী। আল্লাহ ভীরু, আলালহ পরায়ন। বাপ দেখলেন আল্লাহর কাছে এই ছেলেই হবে তাঁর প্রকৃত উত্তরাধিকারী। বাব এমন ছেলেকে বেশি আদর করবেন না তো কাকে আদর করবেন?
দশ ভাইয়ের ষড়যন্ত্র
ইউসুফ আর বিনয়ামিনকে পিতা নিজেই দেখাশুনা করতেন। তাছাড়া অত্যন্ত সুস্বভাবের অধিকারী হবার কারনে তিনি তাঁদের নিজের কাছে কাছে রাখতেন। অপরদিকে তাঁর অন্য দশটি ছেলে ছিলো দুষ্ট প্রকৃতির। তাঁরা বাপের মতো হয়ে গড়ে উঠেনি। তাছাড়া অন্যায় স্বভাব চরিত্রের কারনে তাঁরা পিতার বিশ্বাসভাজনও হতে পারেনি। তাঁরা একজোট হয়ে একদিন ষড়যন্ত্র পাকালো। তাঁরা বলাবলি করলো-
“ইউসুফ আর তাঁর ভাই বিনয়ামিন আমাদের চেয়ে বাবার কাছে অধিক প্রিয়। অথচ আমরা দশজন একটি শক্তিশালী দল। বাবা খুব ভুল করছেন। চলো আমরা ইউসুফকে মেরে ফেলি বা কোথাও নিয়ে ফেলে আসি। তখন বাবার দৃষ্টি আমাদের দিকে ফিরে আসবে। এই অপরাধটা করার পর তোমরা আবার ভালো হয়ে যেও।” (সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ৮-৯)
যে কথা সে কাজ। তাঁরা তাঁদের পিতার কাছে এসে বললো- বাবা, আপনি ইউসুফের ব্যাপারে আমাদের উপর আস্থা রাখেননা কেন? আমরা তো সব সময় তাঁর ভালোই চাই। আগামীকাল ওকে আমাদের সাথে দিন। আমাদের সাথে গিয়ে ফলমূল খাবে আর দৌড়াদৌড়ি করে মন চাংগা করবে। আমরা তাঁর পূর্ণ হিফাজত করবো।
বাবা বললেন- তোমরা তাঁকে নিয়ে গেলে আমি চিন্তাগ্রস্ত থাকবো। আমার শংকা হয়, তোমরা ওর প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়বে আর এ ফাকে ওকে বাঘ খেয়ে ফেলবে।
দশ ভাই বললো- আমরা এতগুলো লোক থাকতে ওকে বাঘে খাবে? তবে তো আমরা বড় অকর্মণ্য বলে প্রমানিত হবো। তারপর কি হলো? ইনিয়ে বিনিয়ে বাবাকে এটা ওটা বুঝিয়ে ওরা পরদিন ইউসুফকে বনের দিকে নিয়ে গেলো। আলালহভক্ত এই ছেলেটিকে ওদের হাতে ছেড়ে দিয়ে দারুন চিন্তার মধ্যে সময় কাটাতে থাকেন ইয়াকুব।
কূপে ফেলে দিলো ইউসুফকে
সে এলাকা দিয়ে ছিলো একটি আন্তর্জাতিক পথ। এ পথে মিশর থেকে সিরিয়া আর সিরিয়া থেকে মিশরে বাণিজ্য কাফেলা যাতায়াত করতো। ব্যবসায়ীদের পানি পানের সুবিধার্থে লোকেরা পথিমধ্যে এখানে সেখানে পানির কূপ খনন করে রাখতো। ব্যবসায়ীরা কূপের কাছে বিশ্রাম নিতে আর বালতি ফেলে কূপ থেকে পানি উঠিয়ে পান করতো।
ইউসুফের দুরাচার নিষ্ঠুর ভাইয়েরা তাঁকে নিয়ে গিয়ে এমনই একটি কূপে ফেলে দিলো। আল্লাহ ছাড়া সেখানে ইউসুফকে সাহায্য করবার আর কেউই ছিলোনা। ইউসুফ সকল ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করলেন। তাঁর মহান প্রভু আল্লাহ অহীর মাধ্যমে তাঁকে শান্তনা দিলেন এবং ভবিষ্যতের সুসংবাদ জানিয়ে দিলেন।
বাপের কাছে বানোয়াট কাহিনী
এবার দশ ভাই ফন্দি আঁটলো বাপের কাছে এসে কি বলবে? যারা মিথ্যা বলতে পারে, তাঁদের জন্যে কোন একটা ফন্দি এঁটে নেয়া তো কঠিন নয়। ইউসুফকে কূপে ফেলে দেয়ার সময় তাঁরা তাঁর জামাটা রেখে দিয়েছিলো। একটা পশু যবাই করে এবার ইউসুফের জামায় সেটার রক্ত মেখে নিলো। সন্ধ্যার পর ভান করে কাঁদতে কাঁদতে দশ ভাই বাড়ি ফিরে এলো। ইউসুফের রক্তমাখা জামা বাপের সামনে রেখে দিয়ে বললো- “বাবা, আমরা দশভাই দৌড় প্রতিযোগিতা করছিলাম। এদিকে ইউসুফকে বসিয়ে রেখেছিলাম আমাদের জিনিসপত্রের কাছে। হঠাৎ এক নেকড়ে এসে ওকে খেয়ে ফেলে। আমরা সত্য কথা বলছি বাবা, জানি, আমরা যতই সত্য বলিনা কেন আপনি আমাদের কথা বিশ্বাস করবেননা।” (সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ১৭)
দেখলেন তো মিথ্যাবাদীদের সত্য বলার ধরন। তাঁদের পিতা মহান নবী হযরত ইয়াকুব এতো বড় ঘটনা ঘটে যাবার পরও কেবল আল্লাহর সাহায্য চেয়ে ধৈর্য ধারন করলেন।
রাখে আল্লাহ মারে কে?
এদিকে ইউসুফের কি হলো? ইউসুফ কি বেঁচে আছেন, না কূপে ডুবে মারা গেছেন? আল্লাহ যাকে বাচান তাঁকে মারার শক্তি কার আছে? আল্লাহ কূপের মধ্যে ইউসুফের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করেন। ইউসুফ সুস্থ শরীরে বেঁচে আছেন। ইতোমধ্যে সেখানে একটি বাণিজ্য কাফেলা এসে অবতরন করলো। তাঁরা তাঁদের একজনকে কূপ থেকে পানি উঠাতে পাঠালো। সে যখন পানির জন্যে বালতি ফেললো, ইউসুফ তাঁর বালতি ধরে উঠে এলেন। লোকটি চিৎকার করে উঠলো- কি চমৎকার, এ যে এক বালক। তাঁরা তাঁকে নিয়ে গিয়ে পণ্যদ্রব্য হিসেবে বিক্রি করে দিলো। বিক্রি করলো মাত্র সামান্য কয়েক দিরহামে।
মিশরে ইউসুফ
মিশরের ‘আযিয মিশর’ উপাধিধারী এক বড় মন্ত্রী ইউসুফকে বিনিকদের কাছ থেকে কিনে নেন। তিনি ইউসুফকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে বললেন- ‘একটি ছেলে কিনে এনেছি। ওকে যত্ন করে রেখো। ও আমাদের উপকারে আসতে পারে, আর নয়তো তাঁকে আমরাই পুত্র বানিয়ে নেবো।’
এবার দেখুন আল্লাহর ক্ষমতা। তিনি কিভাবে ইউসুফকে বাঁচিয়ে নিয়ে এলেন সেকালের শক্তিশালী রাজ্য মিশরের ক্ষমতাবানদের ঘরে। আল্লাহ বলেন-
“এভাবে আমি ইউসুফের জন্যে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত হবার পথ বের করে দিলাম। সেই সাথে আমি তাঁকে সবকিছুর মর্ম বুঝার শিক্ষাও দান করলাম।”
এ ঘরে ইউসুফ রাজপুত্রের সমাদরে বড় হতে থাকলেন। এখানেই তিনি যখন পূর্ণ যৌবনপ্রাপ্ত হলেন, তখন আল্লাহ তাঁকে নবুয়্যত দান করেন। তাঁকে নবুয়্যত দান করে আল্লাহ বলেন – “আমি নেক লোকদের এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি। ” (সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ২২)
জেলে যাবো তবু পাপ করবোনা
তখনকার মিশরের লোকদের নৈতিক চরিত্র ছিলো খুবই খারাপ। তাঁদের নারী পুরুষ সবাই নির্লজ্জের মতো পাপ কাজ করে বেড়াতো। কেউ পাপ কাজ করলে অন্যেরা সেটাকে খারাপ মনে করতোনা। ইউসুফ যেমন ছলেন জ্ঞানী, গুনী, বুদ্ধিমান, ঠিক তেমনি ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর, সুশ্রী এক বলিষ্ঠ যুবক। সেই ‘আযিয মিশরের’ স্ত্রী এবং অন্যান্য শহুরে মহিলারা ইউসুফকে চারিদিক থেকে পাপ কাজে নামাবার জন্যে ফুসলাতে থাকে। আযীয মিশরের স্ত্রী জুলেখা একপক্ষীয়ভাবে ইউসুফের সাথে পাপ কাজে লিপ্ত হবার জন্যে পাগল হয়ে যায়। একদিন সে ঘরের সব দরজা বন্ধ করে দিয়ে ইউসুফকে বলে- ‘আসো’
ইউসুফ বলেন- “এমন কর্ম থেকে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আমার প্রভু আমাকে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। যারা পাপ কাজ করে তাঁরা কখনো সাফল্য অর্জন করেনা।” (সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ২৩)
একথা বলে ইউসুফ ঘর থেকে বের হয়ে যাবার জন্যে দরজার দিকে দৌড়ালেন। মহিলাটিও তাঁকে ধরার জন্যে তাঁর পেছনে পেছনে দৌড়ালো। মহিলাটি পেছন থেকে ইউসুফের জামা টেনে ধরে। ইউসুফ দৌড়াতে থাকেন। ফলে টানাটানিতে তাঁর জামা ছিড়ে যায়। ইউসুফ দরজা পর্যন্ত চলে আসেন এবং দরজা খুলে ফেলেন। দরজা খুলতেই তাঁরা দু’জনে মহিলার স্বামী আযীয মিশরকে দরজার সামনে দাঁড়ানো দেখতে পায়। পাপিষ্ঠ মহিলাটি হন্তদন্ত হয়ে ইউসুফের প্রতি ইংগিত করে তাঁর স্বামীকে বলে উঠে- ‘যে আপনার স্ত্রীর সাথে বদ কাজ করতে চাইছে, তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করুন অথবা কঠিন শাস্তি দিন।’
ইউসুফ বললেন- আমি নই, তিনিই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। দুই ধরনের কথার প্রেক্ষিতে আযিয মিশর বেকায়দায় পড়ে যান। এমতাবস্থায় মহিলার ঘরেরই একজন সাক্ষী দিয়ে বললো- ‘দেখুন, ইউসুফের জামা যদি সামনের দিক থেকে ছেড়া হয়ে থাকে, তাহলে ইউসুফ মিথ্যাবাদী এবং আপনার স্ত্রী সত্যবাদী। আর ইউসুফের জামা যদি পেছনের দিক থেকে ছেড়া থাকে, তাহলে ইউসুফ সত্যবাদী এবং আপনার স্ত্রী মিথ্যাবাদী।’ তাঁর স্বামী যখন দেখলেন, ইউসুফের জামা পেছন দিক থেকে ছেড়া, তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে বলেন- “এটা তোমারই চক্রান্ত। নারীদের ছলনা চক্রান্ত খুবই শক্তিশালী। হে ইউসুফ, তুমি বিষয়টা উপেক্ষা করো। হে আমার স্ত্রী, তুমি ক্ষমা চাও, কারন তুমিই দোষী।”
আযীয মিশরের স্ত্রীর এই ছিনালির খবর ছরিয়ে পড়ে চারিদিকে। কানাঘুষা চলতে থাকে উপরের তলার মহিলাদের মধ্যে। তাঁদের কথা হলো- ছিনালি করবি তো কর উপরের তলার কোন পুরুষের সাথে, ক্রীতদাসের করতে গেলি ক্যান?
তাঁদের এসব কথাবার্তার খবর এসে পৌঁছে যায় আযীয মিশরের স্ত্রী জুলেখার কানেও। তাঁর কথা হলো- ওরা আমার কাংখিত যুবকটি সম্পর্কে না জেনেই ওরা আমাকে দোষারোপ করছে।
ফলে জুলেখা তাঁদের ভুল ধারনা দূর করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে উপর তলার মহিলাদের জন্যে আয়োজন করে এক ভোজ সভার। তাঁদেরকে নিমন্ত্রন জানায় নির্দিষ্ট দিন। খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখে। কেটে কেটে খাবার জন্যে তাঁদের প্রত্যেকের জন্যে সরবরাহ করে একটি করে ছুরি। সবাই ছুরি দিয়ে ফল কেটে কেটে খাচ্ছে, এমনি সময় জুলেখা ইউসুফকে তাঁদের সামনে আসতে আদেশ করে। ইউসুফ ডাইনিং হলে ঢুকতেই সবগুলো নারী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ইউসুফের দিকে। তাঁরা আত্মভোলা হয়ে কেটে ফেলে নিজেদের হাত। তাঁরা স্বগত স্বত্বস্ফ্রত বলে উঠে- ‘আল্লাহর কসম, এতো মানুষ নয়, সাক্ষাত এক সম্মানিত ফেরেশতা।’ এবার জুলেখা বলে উঠে, দেখো, তোমরা না জেনে এমন একজন যুবকের ব্যাপারেই আমাকে তিরস্কার করছিলে। আমি অবশ্যি তাঁকে নিবেদন করেছি। কিন্তু সে আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন থেকে সে যদি আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তাহলে অবশ্যি আমি তাঁকে হীন ও লাঞ্ছিত করে কারাগারে নিক্ষেপ করবো। আল্লাহর একান্ত অনুগত দাস ইউসুফ তো কিছুতেই পাপ কাজে নিমজ্জিত হতে পারেননা। এখন তাঁদের সবার জালাতনে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। উপর তলার সব মহিলার দৃষ্টি এখন ইউসুফের দিকে। নাগিনীদের চতুর্মুখী ছোবলের মুখে ইউসুফ এক মুহূর্তের জন্যেও তাঁর মহামনিব আল্লাহর অসন্তুষ্টির পথে পা বাড়াননি। ইউসুফ আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন-
“ওগো আমার প্রভু, এরা আমাকে যে কাজের দিকে ডাকছে তাঁর চাইতে কারাগারই আমার কাছে অধিকতর প্রিয়। আমার প্রভু, এদের চক্রান্ত থেকে তুমি যদি আমাকে না বাঁচাও, তাহলে তো আমি এদের ফাঁদে আঁটকে যাবো।’’ (সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ৩৩)
কারাগারে ইউসুফ
আল্লাহ ইউসুফের ফরিয়াদ কবুল করলেন। নারীদের চক্রান্ত থেকে তাঁকে রক্ষা করলেন। যাদের নারীরা ইউসুফের জন্যে উন্মাদ হয়ে পড়েছিলো, তাঁরা একটি মেয়াদের জন্যে ইউসুফকে কারাগারে পাঠিয়ে দিলো। অথচ তাঁরা জানতো ইউসুফ সম্পূর্ণ নির্দোষ। এভাবে ইউসুফ নৈতিক পরীক্ষায় মহাবীরের বেশে বিজয়ী হলেন। আর মিশরের অভিজাত মহল তাঁর চারিত্রিক আদর্শের কাছে চরমভাবে পরাজিত হলো।
দুই কয়েদীর স্বপ্ন এবং ইউসুফের দাওয়াতী কাজ
ইউসুফ জেলে এসে কৌশলের সাথে আল্লাহর দ্বীন প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর জ্ঞান, বুদ্ধি, উন্নত চরিত্র আর দাওয়াতী কাজে আকৃষ্ট হয়ে কয়েদীরা তাঁর ভক্ত হয়ে পড়ে। এক রাতে দু’জন কয়েদী স্বপ্ন দেখলো। তাঁরা ভাবলো, ইউসুফ ছাড়া আর কেউ তাঁদের স্বপ্নের মর্মার্থ বলে দিতে পারবেনা। ছুটে এলো তাঁরা ইউসুফের কাছে।
একজন বললো- ‘আমি স্বপ্ন দেখেছি, আমি মদ তৈরি করছি’।
অপরজন বললো- ‘আমি স্বপ্ন দেখেছি, আমার মাথায় রুটি রাখা আছে আর পাখি তা থেকে খাচ্ছে।’
এরা দু’জন ছিলো মিশর রাজের কর্মচারী। একজন ছিলো রাজার মদ প্রস্তুতকারক, আর অপরজন ছিলো রাজার রুটি প্রস্তুতকারক।
ইউসুফ ওদের স্বপ্নের কথা শুনে বললেন- তোমাদের খাবার আসার আগেই আমি তোমাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দেবো। এই ফাকে তোমরা আমার কিছু কথা শুনো। আমি মহান প্রভু আল্লাহর দেয়া জ্ঞানের ভিত্তিতে তোমাদের বলছি-
“আল্লাহর সাথে কাউকেও শরীক করা উচিত নয়। এটা আমাদের এবং গোটা মানবজাতির উপর আল্লাহর বিরাট অনুগ্রহ, তিনি আমাদেরকে তাঁর ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব করার জন্যে সৃষ্টি করেননি। কিন্তু অধিকাংশ লোক তাঁর শোকর আদায় করেনা।”
“হে আমার কারাসাথীরা, চিন্তা করে দেখো, ভিন্ন ভিন্ন বহু খোদা ভালো, নাকি একজন সর্বশক্তিমান আল্লাহ ভালো? তাঁকে বাদ দিয়ে তোমরা যার ইবাদাত করছো, তাঁরা তো মাত্র কতগুলো নাম। এ নামগুলো তো তোমরাই রেখেছো।”
“আসলে সকল ক্ষমতার উৎস একমাত্র মহান আল্লাহ। কৃতিত্ব শুধুমাত্র তাঁর। তিনি হুকুম দিয়েছেন তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারো দাসত্ব করবেনা। এটাই হলো সঠিক সরল জীবন পদ্ধতি। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানেনা।” (সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ৩৮-৪০)
ব্যাস, একটি মোক্ষম সময় বেছে নিলেন হজরত ইউসুফ ওদেরকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়ার জন্যে। এটি মোক্ষম সময় এ জন্যে ছিলো যে হজরত ইউসুফ দেখলেন-
১. তাঁরা তাঁর অত্যন্ত ভক্ত অনুরক্ত হয়েছে এবং
২. এ সময় তাঁরা মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথা শুনবে।
হজরত ইউসুফ তাঁদেরকে কিসের দাওয়াত দিলেন? তিনি তাঁদের যে দাওয়াত দেন, তাঁর মৌলিক কথা হলো-
১. আল্লাহ এক, তাঁর কোন শরীক নাই।
২. আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর দাসত্ব করার জন্যে। অন্য কারো দাসত্ব করার জন্যে নয়।
৩. আল্লাহ সর্বজয়ী, সর্বশক্তিমান।
৪. সমস্ত ক্ষমতা ও কৃতিত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহর।
৫. তিনি মানুষকে কেবল তাঁর হুকুম মেনে চলার নির্দেশ দিয়াছেন।
৬. এক আল্লাহর নির্দেশ মতো জীবন যাপন করাই সত্য সঠিক ও বাস্তব দ্বীন বা জীবন পদ্ধতি।
এমনি চমৎকার ভাবে দাওয়াত পেশ করার পর এবার তিনি তাঁদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিলেন। বললেন-
“তোমাদের প্রথমজন তাঁর মনিবকে মদ পান করাবার চাকুরিতে ফিরে যাবে। আর দ্বিতীয়জনকে শুলে চরিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে এবং পাখি তাঁর মাথা ঠুকে ঠুকে মগজ খাবে। এই হলো তোমাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা।” (সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ৪১)
সত্যি তাই হলো। একজন মুক্তি পেলো এবং নিজের পূর্বের চাকুরিতে ফিরে গেলো। অপরজনকে শুলে করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং পাখি তাঁর মাথায় বসে মগজ খুঁটে খুঁটে খায়।
স্বপ্ন দেখেন রাজা
কারাগারে হজরত ইউসুফের আরো কয়েকটি বছর কেটে যায়। তিনি সেখানেই দীনের কাজ করতে থাকেন। এরি মধ্যে মিশরের রাজা এক স্বপ্ন দেখেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন-
“সাতটি মতা তাজা গাভীকে সাতটি শুকনো হালকা পাতলা গাভী খেয়ে ফেলছে। আরো দেখেন সাতটি সবুজ শস্যের ছড়া আর সাতটি শুকনো ছড়া।”
রাজা তাঁর পারিষদবর্গকে এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে বললেন। কিন্তু তাঁরা কেউই এর ব্যাখ্যা করতে পারলোনা। এ সময় হঠাৎ ইউসুফের সেই কারা সাথিটির মনে পড়লো ইউসুফের কথা। সে বললো- আমাকে ইউসুফের কাছে পাঠিয়ে দিন, আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা এনে দিচ্ছি। তাই করা হলো। সে ছুটে এলো কারাগারে। ইউসুফের কাছে এসে বললো-
“হে মহাসত্যবাদী ইউসুফ, আমাদের রাজা এই স্বপ্নে দেখেছেন। আপনি এর ব্যাখ্যা বলে দিন।” ইউসুফ রাজার স্বপ্নের মর্ম বলে দিলেন। তিনি বললেন- “তোমরা সাত বছর লাগাতার চাষাবাদ করবে। এ সময় যে ফসল কাটবে, তা থেকে আহারের পরিমান ছড়া (শীষ) থেকে বের করবে, বাকিটা ছড়া সমেত রেখে দেবে। তারপর তোমাদের দেশে আসবে দুর্ভিক্ষের সাত বছর। এ সময় খুব কমই ফসলাদি হবে। এ সময় আগের সাত বছরের সংরক্ষিত ফসল খাবে। অতপর একটি বছর আসবে, তখন প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং প্রচুর ফসল উঠবে।”
(সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ৪৭-৪৯)
লোকটি এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা নিয়ে গিয়ে রাজাকে বললো। এ ব্যাখ্যা রাজার মনের মতো হলো। তিনি ব্যাখ্যাটি দারুন পছন্দ করলেন আর কারাগারে লোক পাঠিয়ে দিলেন ইউসুফকে নিয়ে আসার জন্যে। রাজার দূত যখন ইউসুফকে কারাগার থেকে বের করে নিতে এলো, ইউসুফ তাঁকে বললেন, ফিরে যাও। রাজাকে গিয়ে বলো, আগে সেই মহিলাদের বিচার করতে, যারা চক্রান্ত করে আমাকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
রাজা সেই মহিলাদের ডেকে পাঠালেন এবং তাঁদের কাছে কৈফিয়ত চাইলেন। তাঁরা বললো- “আল্লাহর কসম, ইউসুফ কোন অন্যায় করেনি, কোন পাপ করেনি। আমরাই তাঁকে ফাসাতে চেষ্টা করেছিলাম। সে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ, নির্দোষ এবং সে অত্যন্ত সৎ ও সত্যবাদী।”
এ সত্য উদঘাটিত হবার পর ইউসুফ বললেন- আমি তো চেয়েছিলাম, এ সত্য প্রকাশিত হোক আর আযীয জানতে পারুক, আমি বিশ্বাস ঘাতকতা করিনি। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।
ইউসুফের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভ
রাজা নির্দেশ দিলেন যাও, এবার ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাঁকে একান্তভাবে নিজের জন্যে নিয়োগ করবো। ইউসুফ জেল থেকে বেরিয়ে এলেন। রাজা যখন তাঁর সাথে কথা বললেন, তিনি তাঁর অগাধ জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা আর বলিষ্ঠ নৈতিক চরিত্র দেখে অভিভূত হলেন। তিনি বললেন- আপনি এখন আমাদের এখানে পূর্ণ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। আপনি অত্যন্ত বিশ্বস্ত। ইউসুফ বললেন- আপনি দেশের অর্থ ভাণ্ডারের দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করুন। আমি তা যথাযথ সংরক্ষণ করবো। এ ব্যাপারে আমি জ্ঞান রাখি। রাজা তাই করলেন। আর এভাবেই মহান আল্লাহ ইউসুফের জন্যে রাষ্ট্রীয় কৃতিত্বের পথ পরিস্কার করে দিলেন। তিনি সৎলোকদের প্রতিদান কখনো বিনষ্ট করেননা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে পৃথিবীতেও তাঁদের পুরস্কৃত করেন আর পরকালের প্রতিদান তো রয়েছেই। শেষ পর্যন্ত রাজা ইউসুফের সততা, দক্ষতা ও আন্তরিক নিষ্ঠার জন্যে গোটা দেশের শাসনভারই ছেড়ে দেন ইউসুফের উপর এবং নিজে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
ইউসুফের ভাইয়েরা এলো মিশরে
হযরত ইউসুফ (আঃ) অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবার পর সাত বছর খুব ফসল হয়। তিনি সুন্দরভাবে ফসল সংরক্ষন করেন। এরপর আসে পরবর্তী দুর্ভিক্ষের সাত বছর। এ সময় সংরক্ষিত ফসল ভাণ্ডার দিয়ে দুর্ভিক্ষের মোকাবেলা করেন। ফিলিস্তিনের দিকেও দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। মিশরে খাদ্য মজুদ থাকার খবর শুনে বিভিন্ন দেশের লোকেরা খাদ্য শস্যের জন্যে ছুটে আসে মিশরে। ইউসুফের ভাইয়েরাও খাদ্য কেনার জন্যে ছুটে আসে মিশরে। হ্যাঁ, ইউসুফের সেই দশভাই মিশরে এলো। তাঁরা অর্থকড়ি নিয়ে এসেছে খাদ্য শস্য কেনার জন্যে।
তাঁরা এসে অর্থমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলো। ফলে তাঁদেরকে নিয়ে যাওয়া হলো ইউসুফের কাছে। তাঁরা ইউসুফকে মোটেও চিনতে পারেনি। কিন্তু ইউসুফ তাঁদের চিনে ফেললেন। তাঁদের সাথে কথাবার্তা বললেন। খোঁজ খবর নিলেন। বললেন, একটি ভাইকে আবার বাড়িতে রেখে এলেন কেন? আবার আসার সময় তাকেও নিয়ে আসবেন। ছোট্টভাইটিকে অর্থাৎ বিনয়ামিনকে দেখার জন্যে ইউসুফের মন ছটফট করছিলো। তিনি তাঁদের বিদায় দেয়ার সময় বলে দিলেন, দেখুন আমি খুবই অতিথি পরায়ন। দেখছেন না আমি কি রকম পাত্র ভরে দিচ্ছি? আপনাদের ছোট ভাইটিকেও নিয়ে আসবেন। ওকে নিয়ে না এলে আপনাদের আর এখানে আসার দরকার নেই। আর আপনাদের খাদ্য শস্য দেয়া হবেনা। ইউসুফ এদিকে তাঁর কর্মচারীদের গোপনে বলে দিলেন, ওরা খাদ্য শস্যের বিনিময়ে যে অর্থ দিয়েছে সেগুলো চুপিসারে, তাঁদের শস্যের বস্তায় ঢুকিয়ে ফিরিয়ে দাও। বাড়ি ফিরে এসে তাঁরা তাঁদের পিতাকে বললো- আব্বা, বিনয়ামিনকে নিয়ে না গেলে এরপর আমাদের আর খাদ্যশস্য দেবেনা। এবার ওকে আমাদের সাথে দিন। আমরা অবশ্যি তাঁর হিফাজত করবো। বস্তা খোলার পর খাদ্যশস্যের সাথে অর্থকড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে দেখে তাঁরা খুশিতে বাগবাগ হয়ে উঠলো। তাঁরা বলল- আব্বাজান, আমাদের আর কি চাই। এই দেখুন, আমাদের অর্থকড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরা আবার যাবো। আমাদের ভাইয়ের হিফাজত করবো। তাঁদের পিতা হযরত ইয়াকুব বললেন- তোমাদের তো বিশ্বাস করা যায়না। আল্লাহই সত্যিকার হিফাজতকারী। আমি ততক্ষন পর্যন্ত ওকে তোমাদের সাথে দেবোনা, যতক্ষন না তোমরা আল্লাহর নামে ওকে ফিরিয়ে আনার শপথ না করবে। সুতরাং তাঁরা বিনয়ামিনকে ফিরিয়ে আনবে বলে আল্লাহর নামে শপথ করলো। এবার হযরত ইয়াকুব ওকে তাঁদের সাথে দিলেন। আর তাঁদের বলে দিলেন, তাঁরা যেন বিভিন্ন পথে মিশরে প্রবেশ করেন। একত্রে একই পথে যেনো না ঢুকে। এরপর কি হলো? এরপর তাঁরা মিশরে এলো। ইউসুফের কার্যালয়ে প্রবেশ করলো। ইউসুফ বিনয়ামিনকে একান্তে ডেকে নিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন। ওহ, তখন দুই সহোদর ভাইয়ের কী যে আনন্দ, কিন্তু দশভাইকে তাঁরা এটা বুঝতে দেননি। তাঁদের মালপত্র প্রস্তুত করে দেউয়া হলো। এ সময় ইউসুফ নিজ ভাইয়ের মালের সাথে একটি সোনার পেয়ালা ঢুকিয়ে দিলেন। তাঁরা মালপত্র নিয়ে রওয়ানা করলো। কিছুদূর যেতে না যেতেই পিছে থেকে ডাক পড়লো। তাঁদের বলা হলো, তোমরা চোর।
তাঁরা জিজ্ঞেস করলো- কেন, আপনাদের কি হারিয়েছে?
কর্মচারীরা বললো- বাদশাহর পানপাত্র হারিয়েছে। তাঁরা বললো- আল্লাহর কসম আমরা অনাসৃষ্টি করতে আসিনি। আর আমরা চোরও নই।
‘তোমাদের কথা মিথ্যা প্রমান হলে চোরের কি শাস্তি হবে?’
‘যার কাছে পেয়ালা পাওয়া যাবে, আপনারা তাঁকে রেখে দেবেন। আমাদের ওখানে যালিমদের শাস্তির বিধান এটাই।’
এবার তল্লাশি শুরু হলো। প্রথমেই দশভাইয়ের মাল তল্লাশি করা হলো। সবশেষে বিনয়ামিনের মালপত্র থেকে উদ্ধার করা হয় পেয়ালা।
দশভাই বললো- ‘এ যদি চুরি করে থাকে তাহলে অবাক হবার কিছু নেই। ইতিপূর্বে তাঁর সহোদর ইউসুফও চুরি করেছিলো।’ ইউসুফ তাঁদের অপবাদ নীরবে হজম করেন। সত্য তাঁদের কাছে এখনো প্রকাশ করলেননা। মনে মনে বললেন- তোমরা বড় বদ। আল্লাহ প্রকৃত সত্য অবগত আছেন। তাঁরা আবদার করলো, বিনয়ামিন ধরা পড়লেও তাঁর পরিবর্তে তাঁদের কোন একজনকে রেখে দিতে। ইউসুফ তা অন্যায় বলে অস্বীকার করলেন। ফলে তাঁরা নিরাশ হয়ে বাইরে গিয়ে ভাবতে থাকে এখন কী করবে?
তাঁদের মধ্যে যে ভাইটি সবচে বড়, সে বললো- তোমাদের কি মনে নেই তোমরা তোমাদের পিতার সাথে কি অংগীকার করে এসেছো? তোমরা বিনয়ামিনকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে বলে আল্লাহর নামে অংগীকার করে আসোনি? ইতোপূর্বে ইউসুফের ব্যাপারেও তোমরা বাড়াবাড়ি করেছো, তাও তোমাদের মনে আছে। এখন আমি এখানেই থেকে যাবো। আল্লাহর কোন ফায়সালা না হলে অথবা বাবা অনুমতি না দিলে আমি এখান থেকে ফিরে যাবোনা। তোমরা বাবার কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলোগে।
ওরা বাড়ি ফিরে এসে যখন তাঁদের পিতা হজরত ইয়াকুবের কাছে ঘটনা বললো, তখন তিনি বললেন- আমি সবর করবো। মহান আল্লাহ ওদের দুই ভাইকেই আমার কাছে ফিরিয়ে আনতে পারেন। তিনি তো সবকিছু জানেন।
এদিকে দুঃখ বেদনায় হজরত ইয়াকুব জর্জরিত হয়ে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর চোখ অন্ধ হয়ে যায়। তিনি ছেলেদের বলেন- যাও, ইউসুফ আর তাঁর ভাইকে অনুসন্ধান করো। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।
ইউসুফের সন্ধান লাভ
তাঁরা আবার ফিরে এলো মিশরে। ইউসুফের সাথে দেখা করে বললো- “হে আযীয, আমরা এবং আমাদের পরিবার পরিজন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছি। সামান্য পুঁজি নিয়ে এসেছি। আপনি দয়া করে পুরো মাত্রায় খাদ্যশস্য দিন। আমাদের দান করুন। আল্লাহ দানকারীদের অবশ্যি প্রতিদান দিয়ে থাকেন।”
ওদের বক্তব্য শুনে ইউসুফ বললেন- “তোমাদের কি মনে নেই তোমরা যখন অজ্ঞ ছিলে তখন ইউসুফ আর তাঁর ভাইয়ের সাথে কি ব্যবহারটা করেছিলে?”
একথা শুনে তাঁরা আঁতকে উঠলো। বললো- “হায়, তুমিই কি ইউসুফ?”
“হ্যাঁ, আমিই ইউসুফ আর এই বিনয়ামিন আমার ভাই। মহান আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। যারাই আল্লাহকে ভয় করবে আর সবর অবলম্বন করবে, আল্লাহ সেই সৎ লোকদের কর্মফল নষ্ট করবেন না।”
ওরা দশভাই বললো- আল্লাহর কসম, আল্লাহ তোমাকে আমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। সত্যিই আমরা বড় অপরাধ করেছি।
ইউসুফ বললো- “আজ আর তোমাদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সব দয়ালুর বড় দয়ালু।”
এরপর ইউসুফ তাঁর গায়ের জামা তাঁদের দিয়ে বললেন- এ জামাটি নিয়ে বাড়ি চলে যাও। এটি আমার আব্বাজানের মুখমণ্ডলে রেখো। এতে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। আর আমাদের আব্বা আম্মাসহ তোমাদের সমস্ত পরিবার পরিজনকে মিশরে নিয়ে এসো। দশভাই এবার মনের সুখে ফিলিস্তিন অভিমুখে যাত্রা করলো। এদিকে এরা যাত্রা করেছে আর ওদিকে হজরত ইয়াকুব বাড়ির লোকদের বললেন- আমি ইউসুফের সুবাস পাচ্ছি, তোমরা আমাকে বুড়ো বয়েসের বুদ্ধিভ্রষ্ট বলোনা।
ইতোমধ্যে ওরা ইউসুফের সুসংবাদ নিয়ে বাড়ি পৌঁছে গেলো। ঐ জামাটি হজরত ইয়াকুবের মুখমণ্ডলে স্পর্শ করার সাথে সাথে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন। আনন্দে খুশিতে হজরত ইয়াকুব আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করলেন। ওরা দশভাই বাবার কাছে ক্ষমা চাইলো। বাবাকে ওদের জন্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে বললো। তিনি তাঁদের জন্যে দোয়া করলেন।
ইয়াকুব পরিবারের হিজরত
হজরত ইয়াকুব সবাইকে হিজরতের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিলেন। সহসাই বিরাট পরিবার পরিজনের বহর নিয়ে তাঁরা মিশরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। জানা যায় এ এসময় হজরত ইয়াকুবের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিলো ৬৭ জন। তাঁরা যেদিন মিশরের রাজধানীর কাছে পৌঁছলেন, সেদিন মিশরে ছিলো একটি উৎসবের দিন। উৎসব উপলক্ষে বিপুল সংখ্যক লোক এক যায়গায় একত্রিত হয়। হজরত ইউসুফ সেনাবাহিনী ও জনগনের বিরাট এক শোভাযাত্রাসহ তাঁর পিতা মাতাকে অভ্যর্থনা জানান। ইউসুফের বাবা মা ও পরিবারবর্গের মিশরে আগমনের খবর শুনে জনগনের মাঝে খুশির জোয়ার বয়ে আসে। স্বয়ং মিশরের রাজা ইউসুফকে নির্দেশ দেন, তাঁদের বড় আকারে সংবর্ধনা জানাবার। বাবা মা ও আপনজনদের মিশর আগমনে আজ ইউসুফের মনে যে কী খুশি আর কত যে আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ইউসুফ তাঁদের মহাসমারোহে এগিয়ে আনেন। বাবা মাকে নিজের আসনে বসান। তাঁরা সবাই ইউসুফের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
সত্য হলো ইউসুফের স্বপ্ন
ভাইয়েরা সবাই ইউসুফের কাছে নত হলো। তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলো। বাবা মা ইউসুফকে পেয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলেন। এভাবেই ইউসুফ ছোট্ট বেলায় যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা সত্যে পরিনত হলো। ইউসুফ বললেন-
“আব্বাজান, আমি যা স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ হলো সেই স্বপ্নের মর্ম। আমার প্রভু, আমার স্বপ্নকে সত্যে পরিনত করেছেন। তিনি আমার প্রতি বিরাট অনুগ্রহ দেখিয়ে আমাকে কারাগার থেকে বের করে এনেছেন। আপনাদের মরু অঞ্চল থেকে বের করে এনে আমার সাথে মিলিত করেছেন। অথচ শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দিয়েছিলো। আমার প্রভু অতি সূক্ষ্ম কৌশলে তাঁর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন। তিনি অত্যন্ত জ্ঞানী ও সুকৌশলী।”(সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ১০০)
আল্লাহর শোকর আদায়
ইউসুফের আর কি চাই? মহান আল্লাহ তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছেন। কারাগার থেকে মুক্ত করেছেন। নবুয়্যত দান করেছেন। রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছেন। বিপুল জনপ্রিয়তা দান করেছেন। অবশেষে বাবা মা আর সকল আত্মীয় স্বজনকেও এনে তাঁর সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহর কত যে অনুগ্রহ তাঁর উপর। তিনি অত্যন্ত বিনীত কণ্ঠে শোকর আদায় করেন তাঁর মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে-
“আমার প্রভু, তুমি আমাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছো। কথার মর্ম বুঝতে শিখিয়েছ। হে আসমান যমীনের স্রষ্টা, দুনিয়া এবং আখিরাতে তুমিই আমার অভিভাবক। তোমার অনুগত অবস্থায় আমাকে মৃত্যু দিও আর নেক্কার লোকদের সাথে মিলিত করো।” (সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ১০১)
হযরত ইউসুফের কালের মিশর
বিভিন্ন ঐতিহাসিক গবেষণা থেকে জানা যায়, হযরত ইউসুফ যখন মিশর যান, তখন মিশরে পঞ্চদশতম রাজ পরিবারের শাসন চলছিলো। এ বংশের রাজাদের বলা হতো ‘রাখাল রাজা’ (Hyksos Kings)। এরা মিশরীয় ছিলো না। তাঁরা ফিলিস্তিন ও সিরিয়া অঞ্চল থেকে গিয়ে মিশরের রাজত্ব দখল করে। এ বংশের রাজাদের ‘আমালিক’ রাজাও বলা হয়। এরা বিদেশী হবার কারনে তাঁরা হজরত ইউসুফকে সাদরে গ্রহন করেছিলো। ইয়াকুব (আঃ) এঁর বংশধর বনী ইসরাইলকে দেশের সব চাইতে উর্বর এলাকায় বসতি স্থাপন করতে দিয়েছিলো। হযরত ইয়াকুবের বংশধরদের বনী ইসরাইল বলা হয়। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, রাখাল রাজাদের ‘আপোসিস’ নামক রাজাই ছিলেন হযরত ইউসুফের সময়কার রাজা।
এ রাজা হযরত ইউসুফকে অত্যন্ত সম্মান দান করেন। প্রথমে ইউসুফকে তিনি অর্থমন্ত্রী বানান। পড়ে দেশ শাসনের বিরাট দায়িত্ব ভার ইউসুফের উপর অর্পণ করেন। হযরত ইউসুফ যে বিরাট যোগ্যতা ও অগাধ জ্ঞানের ভিত্তিতে দেশ শাসন করেন রাজা তাতে খুব সন্তুষ্ট ছিলেন। শেষ পর্যন্ত হযরত ইয়াকুবের বংশধরেরা অর্থাৎ বনী ইসরাইলের লোকেরা ব্যাপকভাবে ক্ষমতায় অংশগ্রহন করে। বিভিন্ন স্তরে তাঁরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে।
কুরআনে হযরত ইউসুফ
কুরআনের একটি সুরাই রয়েছে হযরত ইউসুফের নামে। সুরাটির নাম ‘ইউসুফ’। এটি আল কুরআনের দ্বাদশ সূরা। মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। গোটা সুরায় হযরত ইউসুফের কাহিনীই বর্ণিত হয়েছে। কুরআন মাজীদে এ কাহিনীকে ‘আহাসানুল কাসাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর মানে ‘সর্বোত্তম কল্যাণকর কাহিনী’। সত্যিই হযরত ইউসুফের জীবনীতে রয়েছে তরুন ও যুবকদের জন্যে অএন শিক্ষণীয় বিষয়। রয়েছে আদর্শ জীবন গড়ার উপাদান। আল কুরআনে হযরত ইউসুফের নাম ২৭ বার উল্লেখ করা হয়েছে। এঁর মধ্যে ২৫ বারই উল্লেখ হয়েছে সূরা ইউসুফে। তাছাড়া সূরা আনয়ামের ৮৪ ও সূরা আল মুমিনের ৩৪ নম্বর আয়াতে একবার একবার করে উল্লেখ হয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্যে সূরা ইউসুফ পড়ে নেবেন।
হযরত ইউসুফের চারিত্রিক আদর্শ
হযরত ইউসুফ (আঃ) এর কাহিনীতে রয়েছে আমাদের জন্যে অনেক শিক্ষা। তাঁর জীবনাদর্শ থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলো আমরা এখানে লিখে দিচ্ছি। আসুন মনোযোগ দিয়ে সেগুলো পড়ে নেই-
১. তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব ছিলেন আল্লাহর নবী। ফলে ইউসুফ ছোট বেলা থেকেই নবীর অনুসারী হন। নবীর পথে চলেন।
২. তিনি ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞান পিপাসু। ফলে আল্লাহ তাঁকে অনেক জ্ঞান দান করেন। কথার মর্ম উপলব্ধি করার যোগ্যতা দেন।
৩. তিনি সব সময় পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। ফলে পিতা মাতাও তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন।
৪. তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিশ্বাসী। যে কেউ তাঁর উপর আস্থা রাখতে পারতো।
৫. তিনি ছিলেন অত্যন্ত উন্নত চরিত্রের অধিকারী।
৬. তিনি গোপনে এবং সুযোগ পেয়েও পাপ কাজ করেননি।
৭. তিনি সব সময় আল্লাহকে ভয় করতেন।
৮. তিনি কারা নির্যাতন সয়েছেন, কিন্তু কোন প্রকার অন্যায় ও পাপ কাজ করতে রাজি হন নি।
৯. তিনি ছিলেন অত্যন্ত আমানতদার। কখনো বিশ্বাস ঘাতকতা করেননি।
১০. তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল ছিলেন। কখনো ধৈর্যহারা হননি।
১১. তিনি সুযোগ পেলেই মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতেন। দাওয়াত দিতেন।
১২. সকল বিষয়ে তিনি আল্লাহর উপর ভরসা করতেন। আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতেন। তাঁর কাছেই ফরিয়াদ করতেন।
১৩. তিনি তাঁর জ্ঞান ও প্রতিভার মাধ্যমে মানুষের উপকার করতেন। তাঁদের সমস্যার সনাধান বলে দিতেন
১৪. যেসব নারী তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলো, সামাজিকভাবে তিনি তাঁদের মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন।
১৫. তিনি সামাজিকভাবে নিজের নির্দোষ, নিষ্পাপ ও বিশ্বস্ত হবার কথা প্রমান করে দেন।
১৬. তিনি সুযোগ পেয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহন করেন।
১৭. তিনি অত্যন্ত যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে তাঁর উপর অর্পিত রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন।
১৮. ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি ভাইদের অপরাধের প্রতিশোধ নেননি।
১৯. সুযোগ পেয়েও প্রতিশোধ গ্রহন না করে ভাইদের ক্ষমা করে দেন।
২০. তিনি পিতামাতা ও ভাইদেরকে সম্মানের সাথে পুনর্বাসিত করেন।
২১. তিনি সকল সৌভাজ্ঞের জন্যে কেবল মহান আল্লাহর শোকর আদায় করেন। তাঁরই কৃতজ্ঞ হয়ে থাকেন।
২২. তিনি আল্লাহর একান্ত অনুগত ও বাধ্যগত দাসের মতো অবস্থায় মৃত্যু কামনা করেন।
২৩. পরকালে তিনি নেক লোকদের সাথী হবার জন্যে মহান আল্লাহর কাছে আকুতি জানান।
আসুন, আমরা হযরত ইউসুফ (আঃ) এর এসব মহান আদর্শের অনুসরন করি। নিজেদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি।
কুরআনে ইউসুফের একটি দোয়া
ইউসুফ রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করেন। পিতা আল্লাহর নবী ইয়াকুবকে পরিবারবর্গসহ নিজের কাছে নিয়ে আসেন। আল্লাহ সকল দিক থেকে ইউসুফের প্রতি নিজের নিয়ামত পূর্ণ করেন। এ সময় ইউসুফ মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন-
“আমার প্রভু, তুমি আমাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছো, আমাকে কথার মর্ম উপলব্ধি করার শিক্ষা দিয়েছ, তুমিই আসমান যমীনের স্রষ্টা। দুনিয়া এবং আখিরাতে তুমিই আমার অলি (বন্ধু, অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক)। মুসলিম (তোমার প্রতি আত্মসমর্পিত) হিসেবে আমার ওফাত দিও আর আমাকে মিলিত করো ন্যায়পরায়ণদের সাথে।” (সূরা ১২ ইউসুফঃ আয়াত ১০১
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।