ঢাকা মেডিকেলের ছাত্ররা পরী দেখছে। পিলে চমকানো সুন্দরী পরী। পরীরা কাউকে ডাকছে (ছুটির নিমন্ত্রণে), কাউকে ‘বাল্ব’ ছুঁড়ে মারছে কিংবা কাউকে চেপে ধরছে। বকসিবাজার এলাকার পরী যে শুধু ঢাকা মেডিকেলের ছাত্ররা দেখছে ছাত্রী হলের পুরুষ দারোয়ানও। তবে ছাত্রীরা এখনো কেউ দেখেনে। ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে বিতর্ক আছে। আলোচিত দু’টি ঘটনাই বলছি। শেষ বর্ষের ছাত্রটির পরীক্ষা চলছিলো। দুপুরে শুয়েছিলো বিছানায়, চিৎ হয়ে। দু’হাত জোড় বেধে মাথার উপর রাখা। ঘুম ভাঙার পর তার মনে হলো সে উঠতে পারছে না বিছানা ছেড়ে, কে যেন তাকে চেপে রেখেছে বিছানার সঙ্গে। জোর করে উঠতে চাইলো।
ঐ সময়ে শুনতে পেলÑ একটি সুরেলা মেয়েলী কণ্ঠে বলছে- ‘থাক’, ‘থাক’, ‘শুয়ে থাক’। দ্বিতীয় ঘটনাটি অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক। জুনিয়র ছাত্রটিরও পরীক্ষা পর্ব। পড়াশোনা শেষে বেশ রাত করে ঘুমোতে গিয়েছিলো। ঘুমের ঘোরে হঠাৎ শুনলো কে যেন টোকা দিচ্ছে দরজায়। দরজা খুলেই একেবারে পরীর মুখোমুখি (বন্ধু বান্ধবদের কাছে ঐ পরীর একটি ডিটেইল বর্ণনা দেয়া হয়েছে যা লেখা সম্ভব নয়) হাত ইশারায় পরী তাকে ডাকছে। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ছাত্রটি দরজা বন্ধ করে, আবার বিছানায় শুয়ে পড়ে। পরদিন সে ঘটনাটি সবাইকে বর্ণনা করেছে। শুধু এই দু’জন নয়, পরী দেখছে, ডাক শুনছে এরকম আরো কয়েকজন ছাত্রের খোঁজ পাওয়া গেছে। শুধু ছাত্ররা নয়, ছাত্রী হলের পুরুষ দারোয়ানও নাকি অশরীরী লোকজন দেখতে পাচ্ছে। ছাত্রীরা কেউ এ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়নি, তবে তারা আতংকিত হয়েছে বেশি। ফলে, হলের ছাত্রীরা দল বেধে রাত্রি যাপন করছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ঘটনাগুলো আপাত: দৃষ্টিতে অলৌকিক মনে হলেও এ’তে অলৌকিকত্বের কোনো ছাপ নেই। পরী কিংবা ভূতের অস্তিত্বই যেখানে নেই, সেখানে তাদের দেখতে পাওয়া, ডাক শোনা অবান্তর। দু’ছাত্রের ক্ষেত্রেই হ্যালুসিনেশন হয়েছে, এটাই শুধু সত্য।
হ্যালুসিয়েশন বা অলীক কোনো বস্তুতে বিশ্বাসের ঘটনা যে কারোরই ক্ষেত্রে হতে পারে তবে মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে হ্যালুসিনেশন বেশী হয়। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের ইন্দ্রিয় যোগাযোগ পাঁচ রকমের। অতএব ইন্দ্রিয় বিভ্রান্তিও হতে পারে পাঁচ রকমের। দৃষ্টি বিভ্রম, অপটিক্যাল বা ভিজুয়াল হ্যালুসিনেশন ও শ্রবন বিভ্রম বা অডিটরি হ্যালুসিনেশনের ঘটনাবলীর কথা বেশি শোনা যায়। স্পর্শনানুভূতির, ঘ্রানেন্দ্রিয় ও স্বাদভিত্তিক বিভ্রান্তির ঘটনা তেমন বেশি বাজার পায় না, সংখ্যাস্বল্পতার কারণে। পাভলভের মতে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা এবং হ্যালুসিনেশন হচ্ছে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা। মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি, সর্বোপরি অত্যাধিক মানসিক চাপের কারণে হ্যালুসিনেশনের পরিবেশ সৃষ্টি করে। গাজা, হেরোইন কিংবা নিদেনপক্ষে ডাইল সেবীদের চাপ ছিল বেশি। প্রথম ছাত্রটির ঘুমানোর কায়দা, হাতজোড় করে রাখা, সবমিলিয়ে বোবায় ধরার একটা পরিবেশ ছিল। এবং তাই-ই হয়েছে। ক্লান্তি-শান্তির পর বেচারার নিজেরই আসলে বিছানা ত্যাগ করার ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু পরীক্ষার চাপের জন্য বিছানা ত্যাগ অপরিহার্য হয়ে পড়ছিলো। তর মন আসলে খুঁজেছিলো বিছানা ত্যাগ না করার ছুতো। অতএব অডিটরি হ্যালুসিনেশন। দ্বিতীয় ঘটনাটি খুবই সহজ। দরজায় টোকা দেবার শব্দ অন্য কেউ শোনেনি। পরীর যে শারীরিক বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তার সঙ্গে ঐ ছাত্রের চেনাজানা কারোর দেহের অবয়ব মিলে কিনা তা দেখা দরকার। পরীক্ষা মৌসুমে পরী দেখার কারণটা তখন জানা যাবে। আর, ছাত্রী হলের দারোয়ানের কোনো ইল-মোটিভ আছে এটা বলার দরকার নেই।
তবে, ছাত্রীদের মধ্যে আতংক ছড়ানোতে সে এক ধরনের আনন্দ পাচ্ছে এটা নিঃসন্দেহে। বিকৃত আনন্দ। ঠেকাবেটা কে? সমাজের অন্য যে কোনো অংশের চেয়ে ডাক্তার কিংবা মেডিকেলের ছাত্রদের এসব তথ্য জানার কথা বেশি। সে ক্ষেত্রে নিতান্তই ভিজ্যুয়াল ও অডিটরি হ্যালুসিনেশনের কয়েকটি ঘটনা মেডিকেল ক্যাম্পাসে কেন অতিরঞ্জিত হয়, তা ব্যাখ্যা করা কঠিনই। মানব শরীরের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যাদের কাছে তাদেরই তো পথ দেখানোর কথা। তাহলে?