মিউটেশন (বিজ্ঞান কল্পকাহিনী)

এক.
আকাশের কালো নিকষ অন্ধকার লিলিয়ামের কাছে মাঝে মাঝে অদ্ভুদ মনে হয় । এটা কী কারণে হয় সে নিজেও জানেনা । তবে মনে যে হয় এটা নিশ্চিত । কোনো কোনো সময় তার ভাল লাগে আবার কোনো কোনো সময় খারাপ ও লাগে । ঐ নিকষ অন্ধকারটা তার কাছে কখনও মনে হয় অনন্তকাল ধরে তার সামনে থাকবে । প্রকৃতির অদ্ভূদ নিয়মে তৈরী এই অদ্ভুদ মহাবিশ্ব । যার শুরু আর শেষ কোথায় কেউ জানেনা । জানবেও কিনা সন্দেও । তবে জানার জন্য মানুষের আগ্রহ বা চেষ্ঠার শেষ নেই ।
বিজ্ঞান আকাদেমী । এই বিজ্ঞান আকাদেমীর প্রধান শাখা পৃথিবীর কোন জায়গায় তা কেউ জানেনা । বিজ্ঞান আকাদেমীতে আসতে বা বের হতে আশ্চর্য জনক এক রাস্তা ব্যবহার করা হয় । এই রাস্তার শুরু বা শেষ কেউ জানেনা । বিজ্ঞান আকাদেমীতে যারা কাজ করছেন তারা কেউই একই রাস্তা দুইবার ব্যবহার করেননি । একই রাস্তা যেমন কেউ দুবার ব্যবহার করেননি ঠিক তদ্রুপ একই রাস্তা দিয়ে দুজনকে আনা হয়নি বা বেরিয়ে যেতে দেয়া হয়নি । একটি রাস্তা একজন একবার ব্যবহার করার পর সেই রাস্তার গতি, প্রকৃতি, দিক, আকার, আকৃতি সবকিছু পাল্টিয়ে ফেলা হয় । এটা বিজ্ঞান আকাদেমীর নিরপত্তা বিভাগের সতর্কতা শাখার প্রথম নিয়ম । বিজ্ঞান আকাদেমীর অদ্ভুত কিছু নিয়ম আছে । যেমন- বিজ্ঞান আকাদেমীর ভেতর যে কোনো রুমে ধূমপান করা যাবে । কিন্তু কেউ আজ পর্যন্ত ধূমপান করেনি । যারা ধূমপায়ী তারা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে ধূমপান করেন । বিজ্ঞান আকাদেমীর ভেতর কোন ঘড়ি নেই । অর্থাৎ সময় দেখা যাবেনা । এটা শুধু রেকর্ড রুম বা কন্ট্রোল প্যানেলে সীমাবদ্ধ, বিজ্ঞান আকাদেমীতে যারা কাজ করেন তাদের জন্যে চরম নিষ্ঠুরতম একটি নিয়ম হল আকাদেমীর ভেতর ঢুকে যাওয়ার পর বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ ।
বিজ্ঞান আকাদেমীতে কাজ করার জন্য যারা নিযুক্ত হন তারা সবচেয়ে নিচের ট্রেন ষ্টেশনে যান । সেই ষ্টেশনের সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেনের একটি নির্দিষ্ট কামরায় উঠতে হয় । অসম্ভব বেগে যখন ট্রেনটি চলতে থাকে, যাত্রীরা তখন বুঝাতেই পারেন না এটা চলন্ত নাকি স্থির । এই অবস্থায় যখন উপনিত হন ঠিক তখনই বিজ্ঞান আকাদেমীতে যাওয়ার জন্য যে বা যারা উঠেন তারা নিজেদেরকে ট্রেনের বাইরে দেখতে পান । একেক জন যাত্রী একেক বার ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় নিজেদের দেখতে পান । কেউ নিজেকে অন্ধকার গুহার মধ্যে আবিষ্কার করেন, আবার কেউ নিজেকে প্রশস্ত সুন্দর একটি বাগানে আবিষ্কার করেন । এভাবেই একেক জনের জন্য একেকটি রাস্তা নির্বাচন করা হয় । কোনো রাস্তাই আজ পর্যন্ত দুজনের জন্য ব্যবহার করা হয়নি । আশ্চর্য সেই রাস্তা বা যানবাহনগুলো । এগুলো কৃত্রিম না প্রাকৃতিক সেটাও বুঝার উপায় নেই । মাঝে মাঝে যানবাহন হিসেবে প্রাণী ব্যবহার করা হয় । অদ্ভুদ সেই প্রাণীগুলোর আকার, আকৃতি, বেগ এবং রং ।
বিজ্ঞান আকাদেমীর বিশালতা বা আকার আকৃতি সম্পর্কে কারো কোনো সম্পূর্ণ ধারণা নেই । কারণ উপরের দিকে তাকালে ছাদ দেখা যায় না । আবার চারপাশের যে দিকেই তাকানো যায় সেদিকেই মনে হয় অনন্ত ….অসীম ।
বিজ্ঞান আকাদেমীর প্রতিটি বিল্ডিং এর দেয়ালের রং আশ্চর্যজনক । এই রঙও আবার পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পাল্টানো হয় । দেয়ালগুলো ঠিক কিসের তৈরী তা কেউ জানেনা । পাথর, ইট, লোহা তামা নাকি অন্য কিছু তা কেউ বুঝতেই পারেনা । বিজ্ঞান আকাদেমীর ভেতর কোনো ধরনের ছোট খাটো ভুল-ত্রুটি আজ পর্যন্ত হয়েছে কিনা সন্দেহ । কোনো ধরনের রোগ এখানে কাউকে আক্রমণ করতে পারেনা ।
অসম্ভব জটিল বিষয়গুলো এখানে আলোচনা বা সমাধান করা হয় । কিন্তু বুঝার কোনো উপায় নেই যে, এই বিজ্ঞান আকাদেমী আসলে অসম্ভব জটিল আর কঠিন একটি জায়গা । খুব নিপুণভাবে সাজানো একটি কেন্দ্র, যার মূলমন্ত্র হল “ বিজ্ঞান আর মহাবিশ্ব ” ।
বিজ্ঞান আকাদেমীর রেকর্ড রুমের অন্তর্গত একটি রুমে ছোট্ট একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে । উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত রয়েছেন পাঁচজন বিভাগীয় প্রধান, যাদের একজন হলেন তরঙ্গ বিভাগের প্রধান। পৃথিবীর বাইরে স্থাপিত কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে যত ধরনের তরঙ্গ ধরা হবে তার আকার, আকৃতি, দূরত্ব, প্রকৃতি সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা এবং তার সম্পূর্ণ ইতিহাস রেকর্ড রুমে জমা রাখা তাঁর দায়িত্ব।
আজকের আলোচনা সভা তরঙ্গ বিভাগের প্রধান মি. কিউলিয়াক আয়োজন করেছেন । আলোচনার বিষয়বস্তু হল একটি ” তরঙ্গ ”।
যে রুমে তাঁরা পাঁচজন এই মুহূর্তে বসে আছেন সেই রুমকে সাউন্ডপ্রুফ করে দেয়া হয়েছে । সব ধরণের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
পাঁচজন প্রধান একটি গোল টেবিলকে কেন্দ্র করে বসে আছেন । অন্য চারজনকে উদ্দেশ্য করে মি. কিউলিয়াক বললেন- মহামান্যরা আপনাদের সবাইকে জানাই অভিনন্দন কষ্ট করে এখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য। আপনারা সবাই জানেন আমার কাজ কী, আর কী জন্যে আপনাদের ডাকাত পারি।
মহামান্য কিউলিয়াক একটু শ্বাস নিলেন । আবার বলতে শুরু করলেন- আমি কোনো ধরনের ভূমিকা না করে সরাসরি মূল বিষয়ে চলে আসছি । আমার অনুসন্ধানি দল গত এগারো ঘন্টা আগে একটি তরঙ্গ পেয়েছে । এটা কোনো তরঙ্গ বার্তা কিনা সেটা এখনো বুঝা যায়নি । এই তরঙ্গের সাথে রেকর্ড রুমের ফাইল করা কোনো তরঙ্গের মিল নেই । যদিও আমরা অজানা কোনো কিছু পেলেই এ রকম মন্তব্য করি । কিন্তু এটা খুবই সত্য যে এই তরঙ্গটির আকার, আকৃতি, দূরত্ব, ফ্রিকোয়েন্সি, বেগ কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা । আজ থেকে প্রায় তিনশত বছর আগে এ রকম একটি তরঙ্গ ধরা পড়েছিল । আজ পর্যন্ত জানা যায়নি সেটির রহস্য । আজও সেটি আমাদের কাছে অজানাই রয়ে গেছে । আজকেরটাও সেরকমই একটি । তবে সেটার সাথে এটার কোনো ধরনের মিল নেই ।
মহামান্য কিউলিয়াককে উদ্দেশ্য করে অন্য একজন বললেন এই তরঙ্গটা কত দূর থেকে এসেছে বলে আপনার ধারণা ?
ধারণা করা হচ্ছে সতেরতম গ্যালাক্সীর কোন নক্ষত্রের অন্তরভূক্ত গ্রহ থেকে এসেছে ।
– সতেরতম গ্যালাক্সীতে কতটি নক্ষত্র রয়েছে ?
– তা প্রায় তিন বিলিয়ন নক্ষত্র ।
– ঐ গ্যালাক্সীর কোনো নক্ষত্রের অন্তরভূক্ত কোনো গ্রহে কি প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে ?
– কোনো জৈবিক প্রাণীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি ।
– তাহলে কি সিলিকা ভিত্তিক বা অন্য কোনো ধরণের প্রার্ণীর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে ?
– না সেরকম কিছুই পাওয়া যায়নি ।
– আমাদের অনুসন্ধান চালানো হয়েছে কতটির মধ্যে ?
– হাতে গণনা করা যায় এমন কয়েকটির মধ্যে ।
– তাহলেতো আমরা কিছুই জানিনা ।
– জ্বী, তা বলতে পারেন।
– ঠিক আছে বুঝালাম । এখন মহামান্য এই তরঙ্গ নিয়ে আপনি কী চিন্তা করছেন বা কী করতে চাচ্ছেন তা বলুন ।
– আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এটি একটি বার্তা তরঙ্গ ।
এই কথা বলার সাথে সাথে মহামান্য কিউলিয়াকের স্যুটের বুক পকেটে লাগানো সিগলাল বাটনগুলোর একটি বাটন লাল আলো জ্বালিয়ে সিগনাল দিল । এই বাটনগুলো যার শরীরের পোশাকে লাগানো থাকে তিনি নিজে বাটনগুলোর সিগন্যাল দেখতে পাননা । সুতরাং মহামান্য কিউলিয়াকের বুক পকেটে লাগানো বাটন গুলোর একটি যে সিগন্যাল দিয়েছে তা তিনি নিজেও দেখতে পাননি । কিন্তু উপস্থিত সকলেই দেখতে পেলেন ।
সিগন্যাল দেয়ার প্রায় দশ সেকেন্ড পর অন্য আরেকজন মহামান্য বললেন- মহামান্য কিউলিয়াক আপনি কি জানেন আপনার লাল বাটনটা সিগন্যাল দিয়েছে । আর লাল বাটনের সিগন্যালের অর্থ নিশ্চই আপনি জানেন ।
– জ্বী আমি জানি । কারো মধ্যে যখন আবেগ কাজ করে তখনই লাল বাটন সিগন্যাল দেয় । আর এটাও সত্য যে আমার মধ্যে আবেগ কাজ করছে ।
– তাহলে এও জানেন পরবর্তী তিন ঘন্টার জন্য এই আলোচনা সভা বন্ধ হয়ে যাবে ।
– জ্বী, জানি ।
– তাহলে এখন থেকে ঠিক তিন ঘন্ট পরে আবার আমরা একই জায়গায় একই বিষয় নিয়ে উপস্থিত হব ।
বিজ্ঞান আকাদেমীর সময় অনুযায়ী ঠিক তিন ঘন্ট পরে আবার সবাই একই জায়গায় একত্রিত হলেন । এবার মহামান্য কিউলিয়াক সরাসরি কথা বললেন । তিনি বললেন উপস্থিত মহামান্যরা আমি চাচ্ছি যে ঐ তরঙ্গ যেখান থেকে এসেছে সেখানে একটি তরঙ্গ আমরাও পাঠাব ।
মহামান্য কিউলিয়াকের কথার উত্তরে যিনি কথা বললেন তিনি হলেন জীবাণু বিষয়ক বিজ্ঞানী । মহাবিশ্বের জীবাণু নিয়ে গবেষণা করাই এর কাজ । তিনি বললেন- তরঙ্গ পাঠানোর ব্যাপারে কি আপনার কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য আছে ?
– না বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নেই । শুধুমাত্র কৌতুহল ।
– হ্যাঁ কৌতুহল বা জানার জন্য আমরা তরঙ্গ বার্তা পাঠাতে পারি, কিন্তু আপনি কী বার্তা পাঠাবেন ? যেটা ধরা পড়েছে সেটারই বিষয়বস্তু কী তা আমরা বের করতে পারিনি । তাছাড়া আমরা যে তরঙ্গ পাঠাব সেটা যে তারা বুঝতে পারবে তারই বা নিশ্চয়তা কী ? আর আমরা সেখানে প্রাণীর অস্তিত্বের কথা চিন্তা করছি কেন ? প্রাণীতো নাও থাকতে পারে । এটাতো অন্য ধরণের তরঙ্গও হতে পারে । আচ্ছা ………. জীবাণু বিষয়ক বিজ্ঞানী মহামান্য ফ্রিয়াক তার কথা শেষ করতে পারেননি তার আগেই ঘরের মধ্যে গোলাপী রঙের বাতি সিগন্যাল দিতে শুরু করল । এর অর্থ হল জরুরী কিছু বলার জন্য বাইরে থেকে কেউ ভেতরে প্রবেশ করার জন্য অনুমতি চাচ্ছে । এ ধরণের মিটিং চলাকালীন সময়ে বাইরে থেকে গোলাপী বাতি জালানো নিষেধ । এটি অপরাধের আওতায় পড়ে । তবে বাতি জ্বালানোর কারণ জানার পর অনেক সময় সেই অপরাধ ক্ষমা করে দেয়া হয় ।
গোলাপী বাতির সিগন্যালের দিকে সবার দৃষ্টি চলে গেল । কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বার্তাবাহক ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ পেলেন । ভেতরে যিনি প্রবেশ করলেন তিনি মহামান্য কিউলিয়াকের দলে কাজ করেন । তার প্রধান কাজ হল মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা তরঙ্গ সংগ্রহ করা এবং সেগুলোর বিষয়বস্তু বের করা । ভেতরে প্রবেশ করে শান্তভাবে ভূমিকা ছাড়াই বলতে লাগলেন- উপস্থিত মহামান্যরা আমি অত্যন্ত দুঃখিত আপনাদের বিরক্ত করার জন্য । আমরা এইমাত্র একটি তরঙ্গ ধরতে পেরেছি যেটা এসেছে সতেরতম গ্যালাক্সী থেকে । এই তরঙ্গ এবং যেটা নিয়ে আপনারা আলোচনা করছেন দুটি তরঙ্গই মনে হয় একই গন্তব্য থেকে এসেছে ।
মহামান্য ফ্রিয়াক বললেন- আপনার কথাবার্তায় বুঝা যাচ্ছে আপনি এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি যে, দুটি তরঙ্গই একই জায়গা থেকে এসেছে । আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যখন মনে করছেন দুটি তরঙ্গই একই জায়গা থেকে এসেছে তাহলে বলুনতো এরকম মনে হওয়ার কারণ কী ?
– দুটি তরঙ্গেরই দূরত্ব একই । তাই এরকম বলছি ।
– এই তরঙ্গটাও কি পূর্বেরটার মত ? এটার বিষয়বস্তুও কি আপনারা উদ্ধার করতে পারেননি ?
– পেরেছি মহামান্য । এই তরঙ্গ থেকে শুধুমাত্র একটি শব্দ বের করা সম্ভব হয়েছে । সেটা হচ্ছে “সংযোগ” । বাকী যে শব্দগুলো রয়েছে সেগুলোও বিশ্লেষণ করলে ” সংযোগ ” কথাটাই বেরিয়ে আসে , তবে এ ব্যাপারে এখানো নিশ্চিত নই । ধারণা করছি, যে বা যারা এই তরঙ্গ পাঠিয়েছে তারা এই শব্দটাকেই বিভিন্ন রকম পরিবর্তন করে পাঠিয়েছে । যাতে আমরা যে কোনভাবে শব্দটা ধরতে পারি । তবে এই তরঙ্গের কম্পাঙ্কটা খুবই বেশী ।
– কম্পাঙ্ক বেশী না কম সেটা দিয়ে আমরা কী করব ? আমাদের ব্যাপার হল তরঙ্গের মূল বিষয়বস্তু উদ্ধার করা । আপনার কথায় মনে হচ্ছে ওরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চায় । আচ্ছা ওরা কি এই তরঙ্গটা আমাদেরকে উদ্দেশ্য করেই পাঠিয়েছে ?
– সে ব্যাপারে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত নই । তবে আমাদের রাডারে ধরা পড়েছে।
– তরঙ্গটা কতটুকু উন্নত মনে হয়?
– মহামান্য, সেটা এখনো বুঝা যাচ্ছেনা ।
কথাবার্তা চলাকালীন অবস্থায় দ্বিতীয়বারের মত রুমের গোলাপী বাতি সিগন্যাল দিল ।
বার্তাবাহককে রুমের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হল ।
রুমের ভেতরে এবারও একই গ্রুপের সদস্য প্রবেশ করলেন । বার্তাবাহককে দেখে কারো বুঝতে বাকি রইলনা যে, তিনিও তরঙ্গ সম্পর্কে কোন নতুন তথ্য নিয়ে এসেছেন ।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি যে তথ্য দিলেন তা হল আগামী তিন ঘন্টার মধ্যে একটি অনুসন্ধানী ফ্লাইং সসার আমাদের নক্ষত্রের দিকে উদ্দেশ্যে করে আসছে, ওরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চায় ।
বার্তাবাহকের কথার উপর ভিত্তি করে অনেক সময় নিয়ে এবার কথা বললেন বিজ্ঞান আকাদেমীর মহাপরিচালক বিজ্ঞানী আর্থুরাই, যিনি ইতিমধ্যে মহাবিশ্বের বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিযোগীতা “ সায়েন্স অব ইউনিভার্স ” এ তিনবার অংশগ্রহণ করে তিনবারই শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর পুরস্কার পান । তার গবেষণার বিষয় হল মহাবিশ্বের বিরাটত্ব এবং মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রত্ব । বিজ্ঞানী আর্থুরাই খুবই স্বাভাবিক গলায় নরম সুরে প্রশ্ন করলেন এটা কি তাদের সর্বশেষ তরঙ্গ বার্তা ?
– জ্বী মহামান্য এটাই তাদের সর্বশেষ তরঙ্গ বার্তা । পয়তালি¬শ মিনিট পূর্বে আমরা এই বার্তাটি পেয়েছি । এটি খুবই সাধারণ একটি তরঙ্গ বার্তা বলতে পারেন যার জন্য আমরা সহজেই এর মর্ম উদ্ধার করতে পেরেছি ।
– সতেরতম গ্যালাক্সীর অন্তর্গত নক্ষত্রের যে গ্রহ থেকে এই তরঙ্গটি এসেছে, সেই গ্রহটি আমাদের পৃথিবী থেকে কত দূরে ?
– তা কয়েক হাজার বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরেতো হবে ।
– ঐ গ্রহের সাথে “ আন্তঃগ্যালাকটিক সদস্য গ্রহের ” কারো যোগাযোগ হয়েছে নাকি ?
– জ্বী না মহামান্য, আন্তঃগ্যালাকটিক বুলেটিনের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুসারে ওদের সাথে কারো যোগাযোগ হয়নি এখন পর্যন্ত ।
কয়েক মুহূর্ত সবাই নীরব হয়ে রইলেন । পিনপতন নীরবতা । শব্দহীন সেই নীরব পরিবেশকে মনে হচ্ছিল যেন অনন্তকাল ধরে এই অবস্থায় পর্যবসিত হয়ে রুমটি তার শব্দ জগতকে হারিয়ে ফেলেছে ।
অসহনীয় সেই পরিবেশকে স্বাভাবিক করে তোলার জন্য মহামান্য আর্থুরাই নীরবতা ভঙ্গ করে আবার কথা বললেন- যেহেতু ওরা যোগাযোগ করবে বলেছে তাহলে আমাদের আর চিন্তা করার কোনো কারণ নেই । শুধু অপেক্ষা করতে হবে । মহামান্য কিউলিয়াক আপনাকে ওদের সাথে যোগাযোগের সবধরণের ব্যবস্থা করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হল । তবে অবশ্যই আপনি আপনার সাথে বিজ্ঞানী লিলিয়ামকে রাখবেন । আর ওরা যখন যোগাযোগ করবে তখন আমাদেরকেও ডাকবেন । আমরা থাকব । আজকের মত এই মিটিং এখানেই শেষ করার অনুমতি দেয়া হল ।
দুই
লিলিয়াম বয়সে যুবক । অল্প বয়সেই বিজ্ঞান জগতে সফলতা অর্জন করে বিজ্ঞান আকাদেমীর মত জায়গায় স্থান করে নিয়েছে । লিলিয়ামের গবেষণার বিষয় হল ভিন গ্রহের প্রাণীর ভাষা অর্থাৎ অন্য গ্রহের প্রাণীরা তাদের মনের ভাব কিভাবে প্রকাশ করে, তারা কিভাবে কথা বলে । এ বিষয়ের উপর লিলিয়ামের অর্জন সত্যিই সন্তোষজনক । খুব অল্প সময়ের ভেতর সে বুঝতে পারে ভিন গ্রহের কোন প্রাণী কিভাবে কথা বলছে এবং সে খুব সহজেই আমাদের ভাষাটা ওদের কাছে বোধগম্য করে তুলে । এ বিষয়ের উপর তার নিজের আবিস্কৃত কয়েকটি পদ্ধতি আছে । যে পদ্ধতিগুলো খুবই কাজে লাগছে । লিলিয়াম যে কয়েকবার ভিন গ্রহের প্রাণীর সাথে যোগাযোগের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল, প্রত্যেকবারই সে নিখুঁত ভাবে কাজ করেছে, খুব চমৎকারভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিল । এবারও নতুন এই ভিন গ্রহের প্রাণীদের সাথে যোগাযোগের অর্থাৎ কথা বলার দায়িত্ব পড়েছে ।
তরঙ্গ বার্তা অনুসারে ঠিক তিন ঘন্টা পর পৃথিবীর বাইরে বিজ্ঞান আকাদেমী কর্তৃক স্থাপিত বিশেষ রাডারে একটি সিগন্যাল ধরা পড়ল, যার অর্থ হল পৃথিবীর খুব কাছাকাছি ভিন্ন রকমের প্রাণীর আবির্ভাব হয়েছে।
এদিকে মহামান্য কিউলিয়াক এবং লিলিয়ামের দল সব ধরণের আয়োজন সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন । বিজ্ঞান আকাদেমীর ভেতর যারা রয়েছেন তারা সবাই এই ভিন গ্রহের প্রাণীর সাথে যে কথাবার্তা হবে তার সব কিছুই শুনতে পারবেন ।
তিন
সব আয়োজন আর প্রযুক্তিকে উপেক্ষা করে খুব সহজেই আর স্বাভাবিকভাবেই ঐ অচেনা দূর নক্ষত্রের প্রাণীরা পৃথিবীর মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করল । কোনো ধরনের অসুবিধা বা ব্যাঘাত ঘটেনি সেই যোগাযোগে । তাদের প্রথম কথাটি হল- ” কেমন আছ পৃথিবীর মানব জাতি ? “
লিলিয়ামের উত্তর- ভাল, আপনারা কেমন ?
– আমরা ভাল আছি । আমরা আজ কেন তোমাদের সাথে যোগাযোগ করছি তা তোমরা বলতে পার ?
– না আমরা কিভাবে জানব ? আমাদেরকে যোগাযোগের উদ্দেশ্য বলা হয়নি ।
– বলতে পার আজ আমরা এসেছি তোমাদের ধ্বংস করতে ।
– ধ্বংস করতে ! তার মানে কী ?
– তার মানে খুবই সহজ । আমরা পৃথিবীর মানব জাতি সহ প্রাণী জগতকে ধ্বংস করে ফেলব ।
– তোমরা কি আমাদেরকে যুদ্ধে আহ্বান করছ ?
– হে মানব সম্প্রদায় তোমরা আমাদের সাথে যুদ্ধে পারবেনা । সে ক্ষমতা তোমাদের নেই । কারণ তোমরা পরনির্ভরশীল । খাদ্যের জন্য তোমরা উদ্ভিদ জগতের উপর নির্ভর কর । নিজেকে রক্ষার জন্য তোমরা যন্ত্র ব্যবহার কর, তোমাদের প্রযুক্তি যন্ত্র নির্ভর, কিন্তু আমরা সেরকম চাইনি ।
– তোমরা সেরকম চাওনি মানে?
– তোমরা, অর্থাৎ মানব জাতি সহ সম্পূর্ণ প্রাণী জগৎ আমাদের পরীক্ষার একটি ফসল, আমরা যেরকম চেয়েছিলাম মিউটেশন সেরকম হয়নি ।
– মিউটেশন সেরকম হয়নি, তার অর্থ কী ?
– তার অর্থ হল আজ থেকে কোটি কোটি বছর আগে আমরা চেয়েছিলাম এই পৃথিবীতে একটা জীব জগৎ গড়ে উঠুক । তবে আমরা সেটা চেয়েছিলাম অন্য ভাবে । আর সেজন্যই আমরা পৃথিবীতে মানব জাতি গড়ে উঠার ব্যবস্থা করেছিলাম ।
– আপনার এই কথাগুলো অতীতকালের রূপ কথার মত মনে হচ্ছে ।
– তার মানে তুমি বা তোমরা আমাদের কথা বিশ্বাস করছনা ?
– বিশ্বাস করার কথাও না ।
– তোমাদের সম্পূর্ণ ইতিহাস আমাদের জানা ।
– এই মহাবিশ্বের কোনো গ্রহের ইতিহাস জানা কোনো কঠিন ব্যাপার না, মহাবিশ্বের বুলেটিন বোর্ড থেকেই জানা যায় ।
– হ্যাঁ এটা সত্য, কোনো গ্রহ বা জাতি সম্পর্কে জানতে হলে মহাবিশ্বের বুলেটিন বোর্ড যথেষ্ট । কিন্তু তোমাদের সম্পর্কে আমরা যেরকম জানি সেটা অন্য রকম।
– কীরকম ?
– আমরা চাই বা চেয়েছিলাম তোমাদের মিউটেশন অন্য রকম হোক । কিন্তু সেরকম হয়নি । আর সে জন্যই তোমাদেরকে ধ্বংস করে ফেলব । আমরা মনে করেছিলাম যন্ত্রের উপর নির্ভরতা এক সময় তোমাদের কমে যাবে । তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে তৈরী করবে ।
– আমরা যে তোমাদের পরীক্ষার ফসল তার উপযুক্ত প্রমাণ কী ?
– কোন প্রমাণ নেই ।
– তাহলে আমরা বিশ্বাস করব কেন ?
– সেটা তোমাদের ব্যাপার, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাদের ধ্বংস করব, এটাই চূড়ান্ত ।
– তোমরা আমাদের মিউটেশনটা কী রকম চেয়েছিলে ?
– আমরা চেয়েছিলাম তোমরা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে তৈরী হও । যেমন- মহাকাশ যান ছাড়াই তোমরা মহাকাশে ঘুরে বেড়াও, গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যেতে যাতে তোমাদের মহাকাশযানের উপর নির্ভর করতে না হয় । আমরা চেয়েছিলাম বেঁচে থাকার জন্য যাতে তোমরা খাদ্যের উপর নির্ভর না কর, তোমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের থাকবে অসম্ভব ক্ষমতা । যেমন- চোখ দিয়ে যখন মহাবিশ্বের দিকে তাকাবে তখন কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের গ্রহও যাতে তোমরা দেখতে পার । তোমাদের ঘ্রাণ শক্তি থাকবে প্রখর । হাজার হাজার বছর আগের পুরোনো জিনিসের ঘ্রাণ নিয়েই যাতে বলতে পার এটা কী ? তোমাদের মুখ দিয়ে যখন ইচ্ছা পানি আবার যখন ইচ্ছা আগুন বের করতে পার । শ্রবণ শক্তি থাকবে অসম্ভব প্রখর । সময় বলে তোমাদের কাছে কোন কিছু থাকবেনা । শারীরিক ক্ষমতা থাকবে অসম্ভব শক্তিশালী । চিন্তা শক্তি থাকবে অকল্পনীয় । যেমন এই মুহূর্তে চিন্তা করছ একটা প্রাণীকে অন্য প্রাণীতে রূপান্তরিত করবে, চিন্তা করার সাথে সাথে ঘটনাটি ঘটবে । প্রকৃতি থাকবে তোমাদের হাতের মুঠোয়, প্রকৃতির উপর তোমরা নির্ভর করবেনা । এরকমই চেয়েছিলাম আমরা । সূর্য রশ্মিকে তোমরা তোমাদের প্রয়োজনমত ব্যবহার করতে পারনা । আমরা চেয়েছিলাম সূর্যের আলোকে তোমরা তোমাদের প্রয়োজনমত পৃথিবীতে প্রবেশ করতে দেবে । সেটা তোমরা করেছ তবে সেখানেও যন্ত্রের ব্যবহার । এটা তোমরা মানষিক বা শারীরিক শক্তি দিয়ে করতে পারনা । বৃষ্টিপাত, বন্যা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ এগুলোকে তোমরা প্রতিরোধ করতে পারনা, প্রতিকার কর, এতে কী প্রমাণিত হয় ? প্রকৃতিকে তোমরা যন্ত্র দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছ যেটা সঠিক উপায় নয় । তোমাদের এই সভ্যতা ক্ষণস্থায়ী, যে কোন সময় এ ধরণের সভ্যতা ধ্বংসের কারণ হয় । অসুখ হলে তোমরা ঔষধ ব্যবহার কর, এতে প্রমাণিত হয় যে, তোমাদের জৈবিক শরীর রোগকে সম্পূর্ণ রূপে প্রতিরোধ করতে পারেনা । আরো অনেক ত্রুটি আছে তোমাদের মধ্যে যেগুলো আমরা চাইনি । যেমন- তোমরা তেইশ জোড়া ক্রোমোজোম ভিত্তিক প্রাণী, তোমাদের শরীরের কাঠামো বা গঠণ নির্দিষ্ট । এই কাঠামো বা গঠনকে তোমরা ইচ্ছামত পরিবর্তন করতে পারনা । তোমাদের ডি.এন.এ এর গঠন নির্দিষ্ট, সেই গঠনকে পরিবর্তন করলে খুব উন্নত বা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রাণী বা প্রজাতি পাওয়া যায় না । কোন প্রাণী বা মানুষের ডি.এন.এ এর পরিবর্তন করলে হয়ত সেই মানুষ বা প্রাণীর যে কোনো এক দিকে ক্ষমতা বেড়ে যায়, কিন্তু সবদিকে সেই ক্ষমতা বাড়েনা, তাই সবদিক চিন্তা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাদের ধ্বংস করে ফেলব ।
– তোমাদের পরীক্ষার ফলাফল তোমাদের মনমত হয়নি বলে একটা সভ্যতাকে তোমরা ধ্বংস করে ফেলবে ?
– তুমি যুক্তিহীন কথা বলছ ।
– পরীক্ষার ফলাফল ভাল হয়নি, তাই সেই পরীক্ষাসহ উদ্ভট সেই ফলাফল ধ্বংস করা হবে এটাইতো স্বাভাবিক, তোমরাও এরকম করেছ । যেমন- কোনো ছোট খাটো প্রাণীর
ডি.এন.এ এর পরিবর্তন করলে, দেখা গেল তোমাদের চাহিদামত সেই প্রাণীর পরিবর্তন হয়নি, তখন তোমরা কী করবে ? অবশ্যই সে প্রাণীকে ধ্বংস করে ফেলবে, আর এটাই স্বাভাবিক । আর যে সভ্যতার কথা বললে- এ ধরণের সভ্যতা তোমাদের ভাষায় যদি বলি তাহলে বলতে হয় এটা একটা শিশুর কাছে খেলার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়।
– এতদিন ধ্বংস করনি কেন ?
– ঐ যে বললাম আমরা তোমাদের শেষ দেখতে চেয়েছিলাম । তোমরা চূড়ান্ত সীমায় পৌছে গেছ এটা সত্য, কিন্তু যেখানে উপনীত হয়েছ, সেটাকে কোন উন্নত সভ্যতা বলে না ।
হঠাৎ করেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল, যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পর অনেক চেষ্ঠা করা হল আবার যোগাযোগ স্থাপনের জন্য, কিন্তু সব চেষ্ঠাই ব্যার্থ হল।
যখন যোগাযোগ স্থাপন করা গেলনা ঠিক তখনই সম্পূর্ণ বিজ্ঞান আকাদেমীর প্রতিটা শাখায় জানিয়ে দেয়া হল- বড় হলরুমে আগামী আধঘন্টার মধ্যে প্রত্যেক বিভাগের প্রধানদের জমায়েত হওয়ার জন্য, এ বিশেষ বার্তাটা পাঠালেন বিজ্ঞান আকাদেমীর মহা পরিচালক বিজ্ঞানী আর্থুরাই।
চার
বিজ্ঞান আকাদেমীর সবচেয়ে বড় রুম এটি । এই রুমে বসেই পৃথিবীর সব বড় বড় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । আজকের আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়েছেন একশত তের জন বিভাগীয় প্রধানের মধ্যে একাওর জন । বাকী সবাই পাঠিয়েছেন একটা করে আর-সিক্স টাইপ রোবট । আর আজকের আলোচনা সভায় বিশেষ ভূমিকায় উপস্থিত থাকবে পৃথিবীর প্রধান কম্পিউটার সি.পি.বি ।
কথা শুরু করলেন বিজ্ঞান আকাদেমীর মহা পরিচালক বিজ্ঞানী আর্থুরাই । তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন আমার মনে হয় আপনারা সবাই খবরটা জেনে গেছেন । এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে ডেকেছি । এখন আপনারাই বলুন কী করা যায় ?
বিজ্ঞানী আর্থুরাই এর পর কথা বলল পৃথিবীর প্রধান কম্পিউটার সি.পি.বি । কম্পিউটার বলল- উপস্থিত মহামান্যরা আজকে আমরা যে সমস্যায় উপস্থিত হয়েছি এরকম সমস্যায় আমরা উপস্থিত হয়েছিলাম আজ থেকে প্রায় এক লক্ষ বছর পূর্বে ।
কম্পিউটার সি.পি.বি কে থামিয়ে কথা বললেন মহাবিশ্বের পরিবেশ বিষয়ক বিজ্ঞানী সি.কার্ক । তিনি বললেন আজকের সমস্যা আর ঐ সমস্যটা একই নয় সি.পি.বি ।
– তা আমি জানি মহামান্য । কিন্তু দুটি সমস্যারই উদেশ্য ছিল এক ।
– তা এখন তুমি কী বলতে বা কী করতে চাও ? তার আগে তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি আমাদের হাতে সময় খুবই কম ।
– আমি জানি মহামান্য আমাদের হাতে সময় খুবই কম । তবে আমার মনে হয় পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে এবার রক্ষা করা যাবে না ।
– সি.পি.বি তুমি কি মানব জাতির সদস্য হয়ে গেছ ? তুমিতো মানুষের মত কথা বলছ । মনে হয়, মনে করছি , এসব শব্দ ব্যবহার করছ ।
– মহামান্য এই মুহূর্তে আমার আবেগের সুইচটা অন করা ।
কম্পিউটার সি.পি.বি. কথা শেষ করতে না করতেই রুমে অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করল লিলিয়াম । কাউকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই লিলিয়াম খুব শান্ত এবং স্বাভাবিক সুরেই বলল- উপস্থিত মহামান্যরা আগামী কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আমাদের পৃথিবী ধ্বংস হতে যাচ্ছে, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে বার্তা এসেছে পৃথিবীর প্রাণী জগৎকে ধ্বংস করার জন্য তারা পৃথিবীর বাতাসের সাথে অতি ক্ষুদ্র আর শক্তিশালী জীবাণু ছেড়ে দিচ্ছে । যে জীবাণু প্রাণীর শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে ভেতরে ঢুকে হৃদপিন্ডের কার্যকলাপ বন্ধ করে দেবে । শুধু তাই নয় অতি অল্প সময়ে কার্যক্ষমতাহীন করে দেবে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গকে । শুধু যে প্রাণী জগতকে ধ্বংস করবে তা নয় । উদ্ভিদ জগতকেও বিলীন করতে সক্ষম এই জীবাণু । আর জড় জগতকে করবে সম্পূর্ণরূপে অকেজো ।
লিলিয়ামের কথা শেষ হবার পূর্বেই পৃথিবীর প্রধান কম্পিউটার বলল- মহামান্যরা মনে হচ্ছে আমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি । আমার অনেক অঙ্গ কাজ করছেনা । তবে ধ্বংস হওয়ার আগে একটা কথাই বলতে চাই । আর তা হল- “ এই ধ্বংসের জন্য আমরাই দায়ী ” ।
শেষঃ
মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়েছিল কেন তা মহাবিশ্বের রেকর্ড বুকে এখনো পাওয়া যায়না । শুধু একটি তথ্যই পাওয়া যায় – এ মহাবিশ্বে একটি সভ্যতা ছিল, যার নাম মানব সভ্যতা, যার ধ্বংসের কারন তারা নিজেই।

দুঃখিত!