মায়ের দোয়া
দরবেশ বায়জীদ বোস্তামীর শৈশবের একটি ঘটনা। মাকে প্রচণ্ড রকম ভালবাসতেন
তিনি। কখনো মায়ের অবাধ্য হতেন না। মনপ্রাণ ঢেলে মায়ের সেবা করতেন। সবসময় ভাবতেন, কিভাবে মাকে আরো খুশি করা যায়।
এক শীতের রাতের ঘটনা। মায়ের শরীরটা ক’দিন ধরেই ভালো নেই। সারাক্ষন অসুস্থ মায়ের আশেপাশেই থাকেন বায়জীদ। মন দিয়ে মায়ের সেবা করেন। এক রাতে মায়ের পানি পিপাসা পেল। চোখ মেলে দেখলেন আদরের ছেলে পাশেই বসে আছে। বললেন, বাবা, একটু পানি খাবো।
মায়ের জন্য পানি আনতে গেল বায়জীদ। দেখলো কলসিতে কোন পানি নেই। বায়জীদ তাড়াতাড়ি কলসি নিয়ে গেল কুয়োর পাড়ে।
কলসিতে পানি ভরে ঘরে ফিরে দেখে মা ঘুমিয়ে পড়েছে। সে গ্লাসে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো মায়ের পাশে। অসুস্থ মাকে ডাকার সাহস হলো না তার, যদি মায়ের কষ্ট হয়? আবার শুনতেও যেতে পারছিল না, যদি সে ঘুমিয়ে পড়ে আর মা তখনি পানি খেতে চান? সারারাত ওভাবেই মায়ের পাশে বসে রইলো বায়জীদ। ভোর রাতে ঘুম ভাঙলো মায়ের। দেখলো, ছেলে তার পানি নিয়ে বসে আছে।
ছেলের মাতৃভক্তি দেখে মায়ের মন আনন্দে ভরে গেল। তিনি প্রণ ভরে করলেন ছেলের জন্য। বললেন, হে আল্লাহ, তুমি বায়জীদকে অনেক বড় আলেম ও বুজুর্গ বানিয়ে দাও। আল্লাহপাক মায়ের দোয়া কবুল করলেন। বায়জীদকে আল্লাহ অনেক জ্ঞান দিলেন। তাকে বানিয়ে দিলেন বিশ্ববিখ্যাত দরবেশ। আজো মানুষ তার কথা স্মরণ করে।
মহানবীর হাদিস সংগ্রহে যারা আজীবন পরিশ্রম করেছেন ইমাম বুখারী ছিলেন তাঁদের
অগ্রণী। তাঁর পুরো নাম ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বুখারী। তাঁর বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থের নাম সহীহ আল বুখারী।
সংক্ষেপে আমরা একে বলি বোখারী শরীফ।
শৈশবে তিনি কঠিন অসুখে পড়েন। অসুখ ভাল হলেও তাঁর চোখ আর ভালো হয় না, তিনি অন্ধ হয়ে পড়েন।
ছেলে চোখে দেখতে পাই না এই দুঃখে অস্থির হয়ে পড়েন বুখারীর মা। অনেক চিকিৎসা করান, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। মা দুর্ভাবনায় ছটফট করেন। সারাজীবন কি ছেলে দৃষ্টিহীন থাকবে? ছেলের চিন্তায় রাতে তার ঘুম হয় না।
একদিন গভীর রাতে মা সিজদায় গিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর দরবারে কাতরভাবে মুহাজাত শুরু করলেন। বললেন, হে পরোয়ারদিগার তুমি আমাকে একটি সুন্দর ছেলে দিয়েছিলে। সোনার টুকরো ছেলের মুখ দেখে কত যে খুশি হয়েছিলাম আমি! আজি সেই ছেলে অন্ধ। ছেলের মুখের দিকে তাকালে খলিফা ফেটে যায় আমার। হে আল্লাহ। তুমি আমার ছেলেকে ভালো করে দাও।
তাঁর চোখে আলো দাও। তার অন্ধত্ব দূর করে দাও। কাঁদতে কাঁদতে রাত প্রায় শেষ হয়ে এলো। এক সময় জায়নামাজেই ঘুমিয়ে পড়লেন মা।
ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখলেন তিনি। সেখলেন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। বলছেন, হে পূণ্যময়ী মা, আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করেছেন। আপনার ছেলে ভালো হয়ে গেছে। জেগে উঠলেন তিনি, দেখলেন তিনি ছেলেকে ডাকলেন। বললেন, এসো বাবা, অজু করবে, নামাজ পড়বে।
মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো শিশু বুখারীর। চোখ মেলে তাকিয়ে সে চিৎকার করে উঠলো, মা আমি দেখতে পাচ্ছি! সব দেখতে পাচ্ছি!
আমি ভালো হয়ে গেছি মা! আনন্দে, খুশিতে, আবেগে মা আবার সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন, চোখের পানিতে শোকর আদায় করলেন আল্লাহর।
কী অমোঘ শক্তি মায়ের দোয়ার! এক রাতের প্রার্থনায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে তাঁর আদরের দুলাল। যে মায়ের দোয়ার এত মূল্য আল্লাহর দরবারে, আমাদের উচিৎ সেই মায়ের সেবা করা, তাঁর মনে কোনো কষ্ট না দেয়া। এই গল্প থেকে আমরা শিখলাম, সন্তানের জন্য মায়ের দোয়া বৃথা যায় না।
তাই আমাদের উচিৎ মায়ের সেবায় মনপ্রাণ ঢেলে দেয়া। আমাদের ভুললে চলবে না, মায়ের পায়ের তলে সন্তানের বেহেশত’।