মাহির ও পানির দৈত্য

মাহিরের বুদ্ধি ও রূপান্তরের গল্প

অনেক দিন আগের কথা। এক দম্পতি সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করছিল, কিন্তু তাদের দুটি জিনিসের অভাব ছিল—একটি ধন-সম্পদ, অপরটি সন্তান। অনেক চেষ্টা ও প্রার্থনার পর অবশেষে তাদের কোলজুড়ে এল এক পুত্রসন্তান, যার নাম রাখা হলো মাহির

✨ নতুন শিক্ষার পথে

মাহির যখন একটু বড় হলো, তার বাবা ভাবলেন, ছেলেকে কিছু শেখানো দরকার, না হলে ভবিষ্যতে কষ্ট পেতে হবে। একদিন বাবা-ছেলে পথ ধরে রওনা হলেন। অনেক পাহাড়-পর্বত, মরুভূমি পেরিয়ে তারা এক ছোট্ট হ্রদের পাশে গিয়ে বিশ্রাম নিলেন। তখনই হঠাৎ হ্রদের পানি ফুঁড়ে এক রহস্যময় লোক বেরিয়ে এল।

লোকটি মাহিরের বাবাকে বলল, “আমার কাছে দাও তোমার ছেলেকে, আমি তাকে নানা দক্ষতায় পারদর্শী করে তুলব। তিন বছর পর ঠিক এই জায়গায় এসে তাকে নিয়ে যেয়ো।” মাহিরের বাবা সম্মতি দিলেন, আর সেই লোক মাহিরকে নিয়ে পানির নিচে হারিয়ে গেল।

🎓 তিন বছরের শিক্ষা

মাহির তার ওস্তাদের অধীনে কঠোর পরিশ্রম করতে লাগল। সেই লোকের একমাত্র কন্যাই ছিল তার সঙ্গী। মাহির এত দক্ষ হয়ে উঠল যে ওস্তাদ নিজেই তাকে হিংসা করতে লাগল। তিন বছর পর নির্ধারিত দিনে মাহিরের বাবা হ্রদের ধারে এসে অপেক্ষা করলেন। ঠিক তখনই রহস্যময় লোকটি পানির নিচ থেকে উঠে এসে মাহিরকে তার বাবার হাতে তুলে দিল।

💰 ধনী হওয়ার উপায়

বাড়ি ফিরে মাহির তার বাবাকে বলল, “আমি একটি সুদর্শন সাদা ঘোড়ায় রূপান্তরিত হবো। তুমি প্রতিদিন বাজারে গিয়ে আমাকে বিক্রি করবে, তবে মনে রেখো, আমার লাগাম অবশ্যই খুলে আনবে। যদি তা না করো, আমি চিরতরে হারিয়ে যাবো!”

বাবা রাজি হলেন, আর এভাবেই প্রতিদিন মাহিরকে ঘোড়া বানিয়ে বিক্রি করে তার বাবা বড়লোক হয়ে গেলেন।

⚠️ লোভের পরিণাম

দিন যেতে লাগল, সম্পদের লোভ বাবাকে আরও গ্রাস করল। একদিন এক ব্যক্তি দ্বিগুণ দাম দিয়ে ঘোড়া কিনতে চাইল, তবে শর্ত দিল যে লাগামসহ কিনতে হবে। বাবা লোভে পড়ে রাজি হয়ে গেলেন, ভুলে গেলেন মাহিরের সতর্কবার্তা।

ঘোড়া কেনার পরই সেই ব্যক্তি তার আসল পরিচয় প্রকাশ করল—সে আর কেউ নয়, মাহিরের পুরনো ওস্তাদ! সে বুঝতে পেরেছিল, মাহির তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে। তাই মাহিরকে চিরতরে বন্দি করতে সে লাগামকে পেরেক দিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখল।

🏃🏼‍♂️ পালানোর চেষ্টা

ওস্তাদের মেয়ে সব বুঝতে পারল। সে চুপিচুপি এসে লাগাম তুলে নিল এবং মাহিরকে মুক্ত করে দিল। সাথে সাথে মাহির আবার সাদা ঘোড়ায় রূপ নিল এবং দৌড়ে পালাতে লাগল। ওস্তাদও থেমে থাকল না—সে সাদা কবুতর হয়ে উড়ে মাহিরকে ধরতে গেল।

এদিকে মাহির ঘোড়া থেকে রূপ পাল্টে বাজপাখি হয়ে গেল, আর এবার সে কবুতরের পিছু নিল। ওস্তাদও তৎক্ষণাৎ একটি গায়ক সেজে এক রাজপ্রাসাদের অনুষ্ঠানে গিয়ে হাজির হলো।

🎭 চূড়ান্ত লড়াই

মাহির এবার সুগন্ধি ফুলের তোড়া হয়ে কনের আঁচলে গিয়ে পড়ল। কনে তোড়াটি অতিথিদের মাঝে বিলিয়ে দিলেন, আর তা একসময় ওস্তাদের হাতে গিয়ে পড়ল। সাথে সাথেই ওস্তাদ ফুলগুলো টুকরো টুকরো করে ফেলল, কিন্তু একটি অংশ হাত থেকে মাটিতে পড়ে গমের দানায় রূপান্তরিত হলো

ওস্তাদ এবার এক মোরগে রূপান্তরিত হয়ে দানাগুলো খেতে লাগল। মাহিরের একটিমাত্র দানা গড়িয়ে গর্তে পড়ে গেল, আর মুহূর্তেই সে শৃগালে (শেয়াল) রূপ নিল। এবার আর ওস্তাদ পালাতে পারল না—শৃগালের সামনে মোরগের কোনো ক্ষমতা থাকে না! মুহূর্তের মধ্যে মাহির ওস্তাদকে খেয়ে ফেলল।

ন্যাড়া ও রাজকন্যা

ফেরিওয়ালা বাহরাম-শেষ অংশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *