মায়ের উপদেশ

হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসন আমল। কাদেসিয়ার যুদ্ধে যোগদানের পূর্বে মা তার চার পূত্র সন্তানকে উপদেশ দিচ্ছেনঃ

হে আমার কলিজার টুকরা বৃন্দ, তোমরা আনন্দ চিত্তে মুসলমান হয়েছ এবং হিজরত করেছ। সেই সত্ত্বার শপথ, যে সত্ত্বা ব্যতিত অন্য কোন মা’বুদ নেই। যেভাবে তোমরা এক মায়ের গর্ভ হতে জন্মলাভ করেছ, সেই ভাবে তোমরা একই পিতার সন্তান। তোমাদের পিতা ভিন্ন অন্য কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। তোমাদের বংশ গৌরবের উপরও আমি কোন কলংক লেপন করিনি।

তোমাদের জানা আছে আল্লাহর পথে জিহাদ করার কত সাওয়াব। এ দুনিয়া তো অস্থায়ী, এবং পরকালের জীবন এরচেয়ে অনেক উত্তম। তোমাদের সকলকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। কিন্তু বীরের ন্যায় মৃত্যু বরণ করাই সবোর্ত্তম। আগামীকাল প্রত্যুষে তোমাদের যুদ্ধের ময়দানে যেতে হবে।

তোমরা অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে মুজাহিদ বেশে, বীর বিক্রমে যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হও। আল্লাহর দুশমনদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে সম্মুখে আগ্রসর হও। যুদ্ধের লেলিহান শিখা যখন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে, তোমরা তখন বীর বিক্রমে শত্রু বাহিনীর উপর পঙ্গপালের ন্যায় ঝাঁপিয়ে পড়বে।

অতঃপর দ্বিতীয় দিন যুদ্ধ শুরু হলে জোয়ানদের মধ্যে সকলেই এক এক করে সম্মুখে আগ্রসর হতে লাগলেন। যখন একজন শহীদ হয়ে যায় তখন দ্বিতীয়জন সম্মুখে আগ্রসর হয়। পুত্রগণ মায়ের উপদেশ অনুযায়ী ইসলামের জন্য নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করার নিমিত্তে যুদ্ধের অনল কুন্ডে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল।

এদিকে তাঁদের মাতা বীরত্ব মূলক কবিতা আবৃত্তি করে তাদের প্রেরণা যোগাতে লাগলেন। পরিশেষে তাঁর চার পুত্র আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে গেল।

বেলা শেষে সন্ধাকালে যুদ্ধের অবসান হলে হযরত খানসা (রা) যখন জানতে পারলেন তাঁর চার পু্ত্রই আল্লাহর রাহে শহীদ হয়ে গেছে তখন তিনি দুঃখ, শোক ও অসন্তুষ্টি প্রকাশের পরিবর্তে বললেন, আল্লাহর শোকর!

আমার স্রস্টা ও মালিকের নিকট তাঁর আমানতকে সুন্দর ভাবে পৌঁছাতে পেরেছি। হে আমার প্রভূ যদি আমার এ পুত্রগন ব্যতীত আমার আরও কোন পুত্র থাকত, তবে আমি তাদেরকেও তোমার পথে পেশ করতে কুন্ঠিত হতাম না। হে আল্লাহ! তুমি তাঁদেরকে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করিয়েছ এজন্য তোমার দরবারে লক্ষ কোটি শুকরিয়া আদায় করছি।

এই হল মুসলিম রমনীর ঈমানী শক্তি। তিনিও একজন মা। আজ বিশ্বে তাঁর মত মায়ের ভীষন প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়তে পারেন...

অপু ও ফলচুরি রহস্য

মহানগরের কোলাহলের মাঝে, ব্যস্ত জনপথের কিছুটা দূরে একফালি সবুজ ল্যান্ডস্কেপ । সদ্য গড়ে ওঠা আবাসন…

ভালুক ও কাঠবিড়ালী

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ কবিতাটি কম-বেশি সবাই পড়েছে। এ কবিতাটির কারণেই ছোট্ট…

গাজা দিবস

শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভাল ও সুস্থ আছো। তোমরা…