উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা (রাঃ)-এর পরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত মায়মূনা বিনতুল হারিস আল-হিলালিয়্যাহ (রাঃ)-কে বিয়ে করেন। ইনিই সেই মহিলা যাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশেষ বিয়ে করেন—একথা বলেছেন ইবনু সা‘দ। তাঁর পিতা হারিস ইবনু হায়ন এবং মাতা হিন্দা বিনত ‘আউফ।
হযরত মায়মূনা (রাঃ) কুরাইশ গোত্রের মেয়ে ছিলেন। আরবের অনেক নামী-দামী বংশ ও পরিবারের সঙ্গে ছিল তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্ক। তাঁর এক বোন উম্মুল ফাযল লুবাবা আল-কুবরা ছিলেন হযরত ‘আব্বাস (রাঃ)-এর স্ত্রী। তাঁদের ছয় পুত্র—ফাযল, ‘আবদুল্লাহ, ‘উবাইদুল্লাহ, মা‘বাদ, কুসাম ও আবদুর রহমান—ইসলামের প্রতিথযশা সন্তান ছিলেন।
তাঁর দ্বিতীয় বোন লুবাবা সুগরা ছিলেন হযরত খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ)-এর মা। তৃতীয় বোন বায়যাহ ছিলেন ইয়াযীদ ইবনুল আসাম-এর মা। চতুর্থ বোন উম্মু হাফিদ ছিলেন হুযায়লা নামের এক নারী।
ইমাম মালিক (রহ.) তাঁর আল-মুয়াত্তা গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে এবং বুখারী ও মুসলিম সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন যে, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর বাড়িতে যান। সেখানে হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও হযরত খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনে গুঁইসাপের মাংস উপস্থাপন করা হয়।
হযরত মায়মূনা (রাঃ) বলেন, “এই মাংস আমার বোন হুযায়লা বিনতুল হারিস পাঠিয়েছেন।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গুঁইসাপের মাংস খাননি, তবে তাঁর অনুমতিতে অন্যরা খেয়েছিলেন। ইমাম তাহাবী সংকলিত একটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) না খাওয়ার কারণে হযরত মায়মূনা (রাঃ)-ও তা খাননি।
উপরে উল্লেখিত বোনেরা সবাই ছিলেন বৈমাত্রেয়া। মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত জা‘ফর ইবনু আবী তালিব (রাঃ)-এর স্ত্রী হযরত আসমা বিনত উমাইস (রাঃ) ছিলেন হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর বৈমাত্রেয় বোন।
হযরত জা‘ফর (রাঃ)-এর ঔরসে তিন পুত্র ছিলেন—আবদুল্লাহ, মুহাম্মাদ ও আওন। হযরত জা‘ফর (রাঃ) মূতা যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করার পর হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) তাঁকে বিয়ে করেন, এবং তাঁদের ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন মুহাম্মাদ ইবনু আবী বকর।
হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর ইনতিকালের পর হযরত আসমা (রাঃ)-কে বিয়ে করেন হযরত আলী (রাঃ)। তাঁদের ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন ইয়াহইয়া ও আওন নামের দুই পুত্র।
হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর বৈমাত্রেয় আরেক বোন সালমা বিনত উমাইস (রাঃ) ছিলেন হযরত হামজা (রাঃ)-এর স্ত্রী। তাঁর বৈমাত্রেয় আরও এক বোন সালামা বিনত উমাইস (রাঃ) হাবশায় অবস্থান করেছিলেন এবং সেখানেই ছিলেন।
বিয়ে
হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর প্রথম বিয়ে হয় মাস‘উদ ইবনু ‘আমর ইবনু উমাইর আস-সাকাফী (রহ.)-এর সঙ্গে। এ বর্ণনা পাওয়া যায় তাবাকাত যুরকানী ও অন্যান্য গ্রন্থে। তবে আল-ইসাবা গ্রন্থকার ইবনু হাযর (রহ.) তাঁর প্রথম স্বামীর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেননি; শুধু এতটুকু উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পূর্বে তিনি আবু রুহম ইবনু আবদিল উযযা (রহ.)-এর স্ত্রী ছিলেন।
যা হোক, বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, মাস‘উদ ইবনু আমর (রহ.)-এর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর বিয়ে হয় আবু রুহম (রহ.)-এর সঙ্গে। হিজরির সপ্তম সনে আবু রুহম (রহ.)-এর মৃত্যু হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং তিনি উম্মুল মু’মিনীন হওয়ার মর্যাদা লাভ করেন।
তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সর্বশেষ স্ত্রী। তাঁর পর আর কোনো নারীকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিবাহ করেননি।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর বিয়ে সম্পন্ন হয় হযরত আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)-এর অভিভাবকত্বে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরির সপ্তম সনে ‘উমরাতুল কাযা’ আদায়ের উদ্দেশ্যে যখন মক্কার দিকে রওনা হন, তখন তিনি হযরত জা‘ফর ইবনু আবী তালিব (রাঃ)-কে বিয়ের প্রস্তাবসহ মক্কায় অবস্থানরত হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর কাছে পাঠান।
হযরত মায়মূনা (রাঃ) তাঁর ভগ্নিপতি হযরত আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)-কে উকিল নিযুক্ত করেন। অনেকের ধারণা, হযরত আব্বাস (রাঃ) নিজেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ বিয়েতে উৎসাহিত করেছিলেন।
ইবনু হিশামের বর্ণনা মতে, হযরত মায়মূনা (রাঃ) বিয়ের ব্যাপারটি তাঁর বোন উম্মুল ফাযল (রাঃ)-এর উপর ছেড়ে দেন, আর উম্মুল ফাযল (রাঃ) সেটি দায়িত্ব হিসেবে তাঁর স্বামী হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর হাতে তুলে দেন।
যা হোক, উমরার ইহরামের অবস্থায়, হিজরির সপ্তম সনের জিলকদ মাসে চারশত দিরহাম দেনমোহর নির্ধারণ করে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত মায়মূনা (রাঃ)-কে বিয়ে করেন।
উমরা আদায় শেষে মদীনায় ফেরার পথে, মক্কা থেকে ছয় থেকে বারো মাইল দূরে ‘সারাফ’ নামক স্থানে যাত্রাবিরতি করা হয়। এদিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খাদেম হযরত আবু রাফে (রাঃ) হযরত মায়মূনা (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন।
এই ‘সারাফ’ নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য নির্মিত তাঁবুতে হযরত মায়মূনা (রাঃ) তাঁর সঙ্গে মিলিত হন।
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর একটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর বিয়ে হয় ‘উমরা আদায়কালীন সময়ে মক্কায়। উমরার উদ্দেশ্যে তিনি তিন দিন সেখানে অবস্থান করেন।
তৃতীয় দিনে হুয়াইতিব ইবনু আবদিল উযযা কয়েকজন কুরাইশ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন,
“হুদায়বিয়ার চুক্তি অনুযায়ী আপনার অবস্থানের মেয়াদ আজ শেষ হয়ে গেছে। আপনি মক্কা ছেড়ে চলে যান।”
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
“আমাকে যদি আরও কিছু সময় দাও, তাহলে তোমাদের কী ক্ষতি হবে? আমি তোমাদের মধ্যে মায়মূনার সঙ্গে মিলিত হতাম এবং তোমাদের জন্য ওলীমার আয়োজন করতাম।”
তারা বলল,
“আমাদের আপনার ওই খাবারের প্রয়োজন নেই, আপনি মক্কা ত্যাগ করুন।”
এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তড়িঘড়ি করে মক্কা থেকে বের হয়ে ‘সারাফ’ নামক স্থানে এসে অবস্থান গ্রহণ করেন, এবং সেখানেই হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর সঙ্গে তাঁর বাসর সম্পন্ন হয়।
হযরত রাসূলুল কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমরাতুল কাযা’-এর সময় হযরত মায়মূনা (রাঃ)-কে বিয়ে করেন—এ বিষয়ে সকল সীরাত বিশেষজ্ঞ একমত। তবে ফকীহদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে এই বিষয়ে যে, বিয়ের সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরামের অবস্থায় ছিলেন, না হালাল অবস্থায় ছিলেন।
ইবনু হাযর (রহ.) এই মতপার্থক্যের সমন্বয় করতে গিয়ে বলেন যে, বিয়ে সম্পন্ন হয় ইহরামের অবস্থায়, আর দাম্পত্য সম্পর্ক সম্পন্ন হয় ‘উমরা আদায় শেষে হালাল অবস্থায়।
হযরত আয়িশা (রাঃ) হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেনঃ
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ:
“كَانَتْ مَيْمُونَةُ أَتْقَانَا لِلَّهِ، وَأَوْصَلَنَا لِلرَّحِمِ”
অর্থাৎ — “আমাদের মধ্যে মায়মূনা (রাঃ) ছিলেন আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করা ব্যক্তি এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় সবচেয়ে যত্নশীলা।”
তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন বিশ্বাস ও শুদ্ধ ধ্যান-ধারণার অধিকারিণী। বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে তাঁর স্বচ্ছ চিন্তা ও গভীর ঈমানের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
যেমন, একবার এক মহিলা অসুস্থ অবস্থায় মান্নত করেছিলেন যে, আল্লাহ তাঁকে সুস্থ করলে তিনি বায়তুল মাকদাসে গিয়ে নামায আদায় করবেন। আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং মান্নত পূর্ণ করতে বায়তুল মাকদাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। বিদায় নিতে এসে তিনি হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর কাছে আসেন।
হযরত মায়মূনা (রাঃ) তাঁকে উপদেশ দেনঃ
“মসজিদে নববীতে নামায আদায়ের সওয়াব অন্য যে কোনো মসজিদের চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি। সুতরাং তুমি সেখানে না গিয়ে এখানেই থেকে নামায আদায় করো।”
তিনি মাঝে মাঝে ধার-করজ করতেন। একবার কিছুটা বেশি ধার হয়ে গেলে কেউ একজন বলল, “এত ধার শোধের উপায় কী হবে?”
তিনি উত্তরে বললেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন —
‘যে ব্যক্তি পরিশোধ করার আন্তরিক ইচ্ছা রাখে, আল্লাহ তায়ালা নিজেই তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন।’”
হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর মধ্যে দাস-দাসী মুক্ত করার প্রবল আগ্রহ ছিল। একবার তিনি একটি দাসীকে মুক্তি দিলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন,
“তুমি এতে অনেক সওয়াব অর্জন করেছো।”
তিনি শরীয়তের আদেশ-নিষেধের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন এবং কোনো প্রকার নমনীয়তা দেখাতেন না। একবার তাঁর এক নিকট আত্মীয় দেখা করতে এলে তাঁর মুখে মদের গন্ধ পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি লোকটিকে কঠিনভাবে ধমক দেন এবং বলেন,
“তুমি আর কখনও আমার কাছে আসবে না।”
হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর এক দাসী একবার হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখলেন, স্বামী-স্ত্রীর বিছানা আলাদা রাখা হয়েছে। দাসী মনে করলেন, সম্ভবত তাঁদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য হয়েছে।
জিজ্ঞেস করলে জানা গেল, তা নয় — বরং স্ত্রীর মাসিক অবস্থায় হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) আলাদা বিছানায় থাকেন।
দাসী ফিরে এসে বিষয়টি উম্মুল মু’মিনীন হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর কাছে জানালে তিনি বললেন,
“যাও, তাকে বলো — রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহকে এত অবহেলা কেন? তিনি তো আমাদের মাসিক অবস্থাতেও একই বিছানায় আরাম করতেন।”
একবার হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) খালা হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর কাছে দেখা করতে আসেন। হযরত মায়মূনা (রাঃ) তাঁর চুল ও দাড়ি কিছুটা অবিন্যস্ত দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
“বেটা, তোমার এই অবস্থা কেন?”
ইবনু আব্বাস (রাঃ) উত্তর দিলেন,
“উম্মু আম্মার বর্তমানে মাসিক অবস্থায় আছেন। তাই আমি আমার চুল ও দাড়ি পরিপাটি রাখি।”
হযরত মায়মূনা (রাঃ) বললেন,
“বাহ, খুব ভালো! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতেন এবং কুরআন তিলাওয়াত করতেন, যখন আমরা সেই বিশেষ অবস্থায় থাকতাম। সে অবস্থায় মাদুর তুলে আমরা মসজিদে রেখে আসতাম। বেটা, হাতে কি কিছু আছে?”
হযরত মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৪৬টি, মতান্তরে ৭৬টি। এর মধ্যে সাতটি মুত্তাফাক আলাইহি। একটি বুখারী এবং পাঁচটি মুসলিম স্বতন্ত্রভাবে বর্ণনা করেছেন। বাকি হাদীস বিভিন্ন গ্রন্থে সংকরিতভাবে পাওয়া যায়।
তিনি থেকে বর্ণিত কিছু হাদীসের মাধ্যমে শরীয়াতের গভীর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়।
হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর নিকট থেকে যাঁরা হাদীস শুনেছেন এবং বর্ণনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন:
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে হযরত মায়মূনা (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন আবদুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ ইবনুল হাদ, আবদুর রহমান ইবনু সায়িব, ইয়াযীদ ইবনু আসাম (তাঁরা সবাই তাঁর ভগ্নিপতি), ‘উবায়দুল্লাহ আল-খাওলানী, নাদবা (দাসী), আতা ইবনু ইয়াসার, মুসায়মান ইবনু ইয়াসার, ইব্রাহীম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু মা‘বাদ ইবনু আব্বাস কুরাইব, উবায়দা ইবনু সিবাক, উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা, আলীয়া বিনত সুবায় প্রমুখ।
হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর মৃত্যুসন নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। বিভিন্ন বর্ণনায় হিজরী ৫১, ৬১, ৬৩ ও ৬৬ সনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ইবনু হাযরসহ অধিকাংশ সীরাত বিশেষজ্ঞ হিজরী ৫১ সনের মতটি সঠিক বলে মত প্রকাশ করেছেন।
তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, যে সারাফ’ নামক স্থানে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীর মর্যাদা পেয়ে প্রথমবার মিলিত হন, প্রায় ৪৪ বছর পর তিনি ঠিক সেখানেই ইন্তিকাল করেন। সেই স্থানেই, যেখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বাসর করেছিলেন, তাঁকে সমাহিত করা হয়।
এ কথাও বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মায়মূনা (রাঃ) হজ্জ আদায়ের জন্য মক্কায় গিয়েছিলেন। হজ্জ শেষে সেখানেই তিনি ইন্তিকাল করেন। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নির্দেশে মরদেহ কাঁধে করে সারাফে’ আনা হয় এবং সেখানেই দাফন করা হয়।
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) জানাজার নামাজ পড়ান। এরপর হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ), আবদুর রহমান ইবনু খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ, আবদুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ ইবনুল হাদ, আবদুল্লাহ ইবনু খাওলানী ও ইয়াযীদ ইবনু আসাম লাশ কবরে নামান।
যখন লাশটি খাটিয়ায় করে উত্তোলন করা হয়, হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,
“সাবধান! তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বেগম। বেশি ঝাঁকি দেবেন না। আদবের সাথে নিয়ে যাও, কারণ তিনি তোমাদের মা।”
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।