মামার বাড়ি —– আবদুল মজিদ নাদিম

‘এই আপু, তুমি নেমে যাও। আমি জাম পেড়ে দেব।’

‘কেন, জাম কি শুধু তুই পাড়তে জানিস?’

জাম গাছের উপর থেকে আরাফাতের উদ্দেশ্যে জবাব দেয় সুস্মিতা। সুস্মিতা ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ে। বাবা মাসহ ঢাকায় থাকে। স্কুলে এখন গীষ্মের ছুটি চলছে। বেড়াতে এসেছে মামার বাড়ি। মামার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়ায়। আরাফাত সম্পর্কে তার মামাতো ভাই। কলাউজান স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ে।

সুস্মিতারা বেড়াতে এসেছে দু’দিন হল। শহরে বড় বড় দালান। রাস্তায় জ্যাম। একটু সবুজ দেখতে চাইলে কত কষ্ট করতে হয়। পার্কে যেতে হয়। রাস্তার পাশে যে গাছ গুলো মাঝে মাঝে দেখা যায়, তাতে সবুজ থাকে না। ধূলিকণা মেখে মেখে হলুদ হয়ে যায়। সে তুলনায় এ গ্রাম অনেক সুন্দর।

এই গরমে লোডশেডিংয়ের উৎপাত বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ এই আছে, এই নেই অবস্থা। শহরে গরমে অতিষ্ট হয়ে যেতে হয়। অথচ এই গ্রামে সবুজের সমারোহ বাড়ির পাশে গাছ গাছালিতে ভরা। প্রচুর বাতাস। বিদ্যুৎ না থাকলেও গরম ঝামেলা করে না।

এ বাড়িতে অনেক রকম ফল গাছ আছে। আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, সফেদা, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা, গাব, তাল, বেল, পেয়ারা, জলপাই, আনারসসহ করেক রকম ফল।

গতকাল আরাফাত তাকে গাছ দেখিয়ে দেখিয়ে চিনিয়েছে।

এতগুলো নামের সাথে গাছের বর্ণনা ভুলে যাবে বলে মোবাইলে গাছের ছবি তুলে নাম দিয়ে সংরক্ষণ করেছে।

আজ সকাল থেকে আরাফাতকে এত করে বলেছে যে, আমাকে কয়েকটি জাম পেড়ে দাও। কিন্তু সে শুনেনি। এখন নয় একটু পরে। এভাবে বলতে বলতে দুপুর হয়ে গেছে অথচ জাম পেড়ে দেয়ার নাম গন্ধ নেই।

তাই সে নিজে জিদ করে গাছে উঠেছে, উঠার আগে একটু ভয় করেছিল। আগে কখনো গাছে উঠেনি। গতকাল সে আরাফাতকে গাছে উঠতে দেখেছে। কিভাবে গাছ ধরে, ডাল ধরে কায়দা কানুন করে গাছে উঠতে হয়, তা খেয়াল করেছে। তাছাড়া সে পিচ্চি গাছটাতে উঠছে। বেশিক্ষণ লাগবে না।

জাম গাছের ডাল নরম। বেশি ভর সইতে পারে না। সে গাছের একটি ডালের মাঝামাঝি যায়। আরেকটু গেলে জাম পাওয়া যাবে। রসে ভরা কালো কালো জাম।

হঠাৎ করে টনটন আওয়াজ। সুস্মিতা গাছের ডাল ভেঙ্গে নিচে পড়ে যায়। মা….. চিৎকার দিয়ে উঠে বসে সে।

কি হয়েছে মা? তার চিৎকার শুনে সুস্মিতার মা জিজ্ঞেস করল। ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসে সুস্মিতা। শরীর ঘেমে একাকার হচ্ছে দেখে তার বাবা জিজ্ঞেস করল, ‘দুঃস্বপ্ন দেখছিলে?’

ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলে সে।

তার আম্মু ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসলে সে জিজ্ঞেস করল, ‘মা, আমরা মামার বাড়ি কবে যাব?’

প্রশ্ন শুনে তার আম্মা হেসে বলে, ‘লক্ষ্মী মেয়ে, দুঃস্বপ্ন দেখলেও মামার বাড়ির কথা ভুলেনি। আগামীকাল রাতে আমরা বাসে উঠব।’

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!