‘-‘পৃথিবীতে গিয়ে তোমাদের আসল কর্তব্য কী?’
-‘শুধুমাত্র মহান আল্লাহকে সর্বাবস্থায় স্মরণ করা, তাঁর পবিত্রতা, তাঁর গুণগানে সদা সর্বদা নিরত থাকা।’
-‘বলো কী! তো তোমাদের রুজি-রোজগার, সংসার, কর্তব্য, দায়বদ্ধতা-মানুষের প্রতি, সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি … এসবের, এসবের কী হবে?’
-‘হা হা হা! হাসালে তুমি। রুজি-রোজগারের কথা বলছ, ওটার আমাদের কোনই প্রয়োজন নেই। মহান আল্লাহর মহিমা বলে আমি শেষ করতে পারব না। তোমার নীল তিমি সম্বন্ধে কোন ধারণা আছে?’
-‘না।’
-‘নীল তিমি হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ সত্মন্যপায়ী জীব। এদের বসবাস গভীর সাগরে। একটা বাচচা তিমি প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৫০০ লিটার দুধ পান করে মা তিমির নিকট হতে …’
-‘বলো কী! তাহলে একটা তিমি প্রতিদিন কী পরিমাণ খাবার খায়?’
-‘একটা পূর্ণবয়স্ক তিমি প্রতিদিন প্রায় ৩৬০০ কেজি খাবার খায় যা রাখতে তিন তিনটি বড় ট্রাক লাগবে আর তারা মূলত খায় ক্রীল নামক চিংড়ী সদৃশ এক প্রকার ছোট মাছ।’
-‘শুনে খুব অবাক হলাম।’
-‘এবার তুমিই চিমত্মা কর, মহান আল্লাহ যদি প্রতিদিন একটা তিমিকে এ পরিমাণ খাবার খাওয়াতে পারেন তবে আমাদের মত চুনোপুঁটিদের নিয়ে ওঁনার তো মাথাই ঘামাতে হবে না। তবুও তিনি কত মহান। আমাদের সবার জীবিকার দায়িতব তিনিই নিয়েছেন। সকাল বেলা আমরা তাঁর পবিত্র নাম আর তাঁর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মদ (সা.) এর নাম নিয়ে বের হই এবং সন্ধ্যা বেলা পেট ভর্তি করে ঘরে ফিরি। এ নিয়ে আমাদের কোন চিমত্মাই করতে হয় না। আমরা জগৎ সংসারের বাসিন্দা। আর তুমি যে দায়বদ্ধতার কথা বলছ ওটারও আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে আমরা জিজ্ঞাসিতও হব না। আমাদের মূল কাজই হল সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহকে স্মরণ করা।’
-‘আহা! তোমাদের কতই না সুখের জীবন।’
-‘কেন, তোমাদের দুঃখ কোনদিকে? তোমাদেরকে তো সমগ্র সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়েছে। এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কী আছে?’
-‘সেরা উপাধি কি এমনি এমনি দেয়া হবে? তোমার কর্মের মাধ্যমে, তোমার উপর অর্পিত দায়িতব যথাযথ ভাবে পালনের মাধ্যমেই সেরা উপাধি তোমাকে অর্জন করে নিতে হবে। এবং সেরা উপাধি অর্জন করতে পারলে পরবর্তীতে আছে সম্মান, নইলে অসম্মান। তারচেয়ে তোমাদের জীবন দেখছি নিশ্চিমেত্মর।’
-‘নিশ্চিমেত্মর জীবন হলেও পরবর্তীতে আমাদের কোন সম্মানও নেই অসম্মানও নেই। অথচ তোমাদের আছে। পৃথিবীর জীবন তুমি যদি সৎ ভাবে কাটাতে পার তবে তো তোমার আর কোন চিমত্মা নেই।’
-‘তুমি তো বিপরীতটা বললে না। আমি তো অসৎও হতে পারি। পৃথিবীর এখন যে অবস্থা তাতে সৎ থাকা খুব কষ্টকর বরঞ্চ অসৎ হওয়াটা খুব সোজা।’
-‘এটা তুমি কী বললে? তোমাকে সৃজন করেছেন মহান আল্লাহ, আবার সৃজন করে বসে থাকেননি, তোমার জীবিকার দায়িত্বও তিনি নিয়েছেন, তোমার মৃত্যুও হবে তাঁর দিকেই, তাঁকে ছাড়া তোমার কোন উপায়ও নেই আর সেখানে তুমি বলছ তুমি অসৎও হতে পার! কীভাবে তুমি অসৎ হবে? এ তো চিমত্মাও করতে পারছি না। আমি যার খাচ্ছি, যার দয়ায় আছি কীভাবে আবার তাঁর সাথে বেঈমানি করি? তুমি খুব অদ্ভুত কথা বললে।’
-‘তাহলে ব্যাপারটা তোমাকে খুলে বলি। শয়তান নামক একটা দুষ্টু অদৃশ্য জীন লোক পৃথিবীতে আছে। তার কাজই হচ্ছে মানুষকে মহান আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে রাখা, অন্যায় কাজে মানুষকে প্রলুব্ধ করা, মানুষকে বিপদে ফেলা …’
-‘তো সমস্যা কী? খারাপ না থাকলে ভাল কে তো ভালো ভাবে উপলব্ধি করা যায় না, অন্যায় না থাকলে তো ন্যায় বুঝা যাবে না। পৃথিবীতে ভাল-খারাপ দুটোই থাকবে নইলে তো পৃথিবী স্বর্গ হয়ে যেত। আসল কথা হচ্ছে ভাল-খারাপের মূল নিয়ন্ত্রক তুমিই। তুমি ভাল তো জগৎ ভাল, তুমি খারাপ তো জগৎ খারাপ।’
-‘তুমি তো দেখছি অনেক কিছু জানো। আমি মানুষ হয়ে পৃথিবীতে যাব, ভাল-খারাপও আমার সাথে থাকবে অথচ আমি এত কিছু জানি না আর তুমি সামান্য একটি পাখি হয়ে এত কিছু কীভাবে জানলে?’
-‘তোমার প্রশ্নের মধ্যেই তোমার উত্তর নিহিত। তুমিও অনেক কিছু জানো কিন্তু পারিপাশির্বক অবস্থার কারণে এবং তোমাদের অমত্মরস্থ কিছু দোষের জন্য তোমরা অনেক কিছু জানা থেকে বঞ্চিত থেকে যাও। আমাদের সবাইকে পৃথিবীতে পাঠানোর উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই আর তা হল সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর আরাধনা যা তোমরা মানুষরা এবং আগুন জাতিরা ছাড়া আর সবাই করছে। তবে কিছু ব্যতিক্রমও আছে কিন্তু তা খুব নগন্য যেমন তোমাদের পৃথিবীতে একজন খলীফা ছিল যিনি যয়তুন তেল দিয়ে শুকনো রুটি খেয়ে অর্ধ পৃথিবী শাসন করে গেছেন। সেসব মানুষদের জন্য আমরা সমসত্ম সৃষ্টিকুল পর্যমত্ম দোয়া করি।’
-‘আচ্ছা, তুমি যে বললে পারিপাশির্বক অবস্থা এবং অমত্মরস্থ কিছু দোষের জন্য আমরা অনেক কিছু জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি, এর কোন উদাহরণ কি দিতে পারবে?’
-‘উদাহরণ তো তোমার কথার মধ্যেই আছে। এই যে তুমি বললে সামান্য একটি পাখি হয়ে এত কিছু আমি কীভাবে জানলাম, ’সামান্য একটি পাখি’ বলে তুমি কি আমাকে হেয় জ্ঞান করলে না …’
-‘না না, আসলে আমি …’
-‘বুঝেছি, তুমি আমাকে সেভাবে বলতে চাওনি, সূক্ষ্মভাবে একটু চিন্তা করে দেখ তোমার অবচেতন মন কিন্তু আমাকে সামান্য বলেই বিবেচনা করে আর তোমাদের সমস্যা এখানেই। তোমাদের মানতে কষ্ট হয় যে একটা ছোট পাখি কীভাবে আমার চেয়ে বেশি জেনে ফেলল যেখানে আমি সৃষ্টির মধ্যে সেরা অথচ মহান আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে জ্ঞান দান করেন। এ অহংকারের কারণেই শয়তান মহান আল্লাহর আদেশ সত্ত্বেও আদমের বশ্যতা মেনে নেয়নি আর যার ফলে সে অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হয়। এখন তোমার মধ্যেও যদি শয়তানের এ গুণটি থাকে তবে তো তোমার মানুষ হয়ে উঠা সুদূরপরাহত হয়ে যাবে।’
-‘আমি খুবই লজ্জিত ও অনুতপ্ত। আমি এখন চিন্তা করছি আমি মানুষ হব না।’
-‘তো কী হবে?’
-‘তোমার মত পাখি হব। এত এত দায়িত্ব আমি নিতে পারব না, তারচেয়ে একটি পাখির জীবন অনেক ভাল।’
-‘তুমি এখন এসব বললে তো হবে না। কে কী হবে না হবে সবকিছু অনেক আগে থেকেই নির্ধারণ হয়ে আছে।’
-‘তাও অবশ্য ঠিক। আচ্ছা, একটা কাজ করলে হয় না?’
-‘কী কাজ?’
-‘চলো, আমরা আমাদের জাতিসত্বা পরিবর্তন করে ফেলি।’
-‘মানে?’
-‘খুব সোজা। আমি হব পাখি আর তুমি হবে মানুষ।’
না ভাই তা হয় না …মহান আল্লাহ যাকে যা বানিয়েছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকা জরুরী…
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।