মানব রুপি

মানব রুপি

কে? কে ওখানে?… কিছুটা কাঁপা কাঁপা গলাই, চিৎকার নয় বরং অনেকটা আর্তনাদ করে উঠলেন সাবিনা খাতুন, তিনি বাথরুমে যাওয়ার পথে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছেন কিচেনের সামনে কেও একটা দাড়িয়ে ছিল কিন্তু চোখের পলকেই উধাও, রাত তখন আড়াইটা কি দুটো হবে, পাশের ঝপ থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার বিরক্তিকর ডাক ভেসে আসছে।
সাবিনা খাতুন ঠাই দাড়িয়ে রইলেন বাথরুমের সামনে, কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না, যতটুকু মনে পরছে শোয়ার সময় নিচের কেঁচি গেটে ডাবল তালা লাগিয়েছেন, আর ছাদের দরজায় তো সব সময় তালা লাগিয়েই রাখেন।
তবে কে আসবে??
স্বামী জামিল হাসান গতকাল অফিসের কাজে কাজে কুমিল্লা গেছেন আসবেন তিন চারদিন পরে, ঘরে পুরুষ মানুষ কেও নেই, একমাত্র ৮ বছরের ছেলে নাহিদ আছে ওও ঘুমাচ্ছে।
হয়ত হেলুন্সিয়েসন, মন থেকে সব চিন্তা দূর করে বাথরুম সেরে বিছানাই গিয়ে সুয়ে পড়লেন তিনি,
মোহাম্মাদ পুরে সদ্য গরে ওঠা বছিলা গার্ডেন সিটিতে একটা দোতালা বাড়ি বানিয়েছেন জামিল সাহেব, আসে পাসে খালি প্লট ছাড়া তেমন একটা ঘর বাড়ি নেই বললেই চলে, যাও দু একটা আছে ত্তাও আবার ২০-৩০ গজ দূরে দূরে, মোট কথা সন্ধ্যার পরেই এলাকাটা কেমন একটা মৃত্যু পুরী তে রূপ নেয়, জায়গাটা তেমন একটা ভাল না, এই তো কিছুদিন আগেই একটা খুনের ঘটনা ঘতে গেল দিন দুপুরে, কে বা কারা একজন কে মেরে মাটিতে পুতে রেখে পালিয়েছে, পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে, যদিও জামিল সাহেব ঘটনাটা তার স্ত্রীকে জানানি, হয়ত ভয় পেয়ে সাহস হারিয়ে ফেলবে।

সকাল সাতটাই ঘুম ভাঙল মিসেস জামিলের, ঘরের টুকিটাকি কাজ সেরে নাহিদ কে স্কুলে দিয়ে আসলেন, স্কুল থেকে ফিরে ঘরে ঢুকতেই গত রাতের ঘটনাটা মনে পরে গেল…কালো আলখেল্লা পরা একজন কেও…কিচেনের সামনে……তারপর উধাও, ব্যাপারটা কেমন একটা উদ্ভট ঠেকছে তার কাছে, ছোট বেলা থেকেই তিনি জীন ভুতে একদম বিশ্বাসী নন, তবে কালকের ঘটনাটাই তার ভিতর কিছুটা ভীতির সঞ্চার হয়েছে।
রান্না বান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন মিসেস জামিল, আজ আর কাজের মেয়েটা এলনা, সপ্তাই দুদিন কাজ কামায় দেওয়া ওর অনেকটা রুটিন পর্যায়ে পোঁছে গেছে, জামিল সাহেব যখন প্রথম এই বাসাই এসে ওঠেন তার দুদিন পরেই কাজের মেয়েটা নিজ ইচ্ছাই এসে কাজ নেয়, মেয়েটার নাম মনীষা, মিসেস জামিল আজো জানেন না মেয়েটার বাসা কোথাও? তিনি অবশ্য একবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন মেয়েটা বলেছিল এইতো আসে পাশেই। জামিল হাসান কয়েক বার বলেছিলেন তাকে, মেয়েটা যেন এখান থেকে কাজ ছেড়ে দেয়, ওর আড় চোখের চাহুনি তার একদমই ভাল লাগেনা,
আস্তে আস্তে বেলা গড়িয়ে গেল কাজের মেয়েটা এলনাত আর এলইনা।
মিসেস জামিল দুপুরে খেয়ে সবে মাত্র একটু ছোট ছেলেটাকে নিয়ে শুয়েছিলেন, এমন সময় অপ্রত্যাশিত ভাবে কলিং বেলটা বেজে উঠল কিছুটা বিরক্তি ভাব ফুটে উঠল তার চেহারায়, অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে গিয়ে গেটটা খুললেন, দরজাটা খুলতেই বিস্ময়ে হা হয়ে গেলেন তিনি, নাহিদের আব্বু দাড়িয়ে রয়েছে গেটে।
তোমার না দুদিন পরে আসার কথা? মিসেস জামিলের প্রশ্ন।
অফিসের কাজ সেস তাই চলে এলাম, জামিল সাহেব বললেন।
তাহলেত ভালই হল, ভেতরে এসে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বস, মিসেস জামিল রান্না ঘরের উদ্দেশে পা বাড়ালেন।
নাহিদ আব্বু আব্বু বলে জামিল সাহেবের কোলে উঠে পরল, তিনি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন, দেখছনা আমি ক্লান্ত? বাবার মুখে এমন কথা শুনে নাহিদ কল থেকে নেমে খাটে গিয়ে রাগ করে শুয়ে পরল মিসেস জামিল কিছুটা অবাক হলেন জামিল সাহেবের এমন আচারন দেখে, তিনি অফিস থেকে এসেই প্রথমে নাহিদ কে কোলে নিয়ে আদর করে তারপর খাওয়ার টেবিলে বসেন, কিন্তু আজ তার ব্যতিক্রম ঘটল কেন? মিসেস জামিল আরও একটা জিনিষ টের পেয়েছেন তা হল, নাহিদের আব্বু ঘরে ঢুকার পরে থেকেই বাতাসে একটা উৎকট ঝাঁঝাল গন্ধ ছড়িয়ে পরেছে, তিনি অনেকটাই অনুধাবন করতে পারছেন গন্ধটা ওর গা থেকেই আসছে।
তবে কি মদ খেয়েছে? তাই বা হয় কি করে, ওত কোনদিন সিগারেট পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখিনি।

রাত তখন ১ টা, চারিদিকে নিকষ কালো অন্ধকার, থেকে থেকে দুরের কথা থেকে পেঁচার ডাক ভেসে আসছে, নগরীর সবাই গভীর ঘুমে অচেতন, হঠাৎ
ঘুম ভেঙ্গে যায় মিসেস জামিলের, পাশ ফিরে স্বামীকে দেখতে না পেয়ে উঠে বসে পড়লেন তিনি, আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে ডাইনিং রুমের দিকে এগুলেন, ডাইনিং রুমে বাতি জ্বলছে, তিনি ভাবলেন হইত ও টয়লেটে গেছে, তাই বাতি জ্বালিয়েছে, তারপর রুমে ঢুকে তিনি যা দেখলেন তাতে তার শরীরের সমস্ত পশম দাড়িয়ে গেল, রুমের মাঝখানে একটা দুধের হাড়ি রাখা, যেটা তিনি শোয়ার সময় গরম করে চুলার ওপর রেখে দিয়েছিলেন, তা থেকে একটা কালো বিষধর সাপ চুক…চুক করে দুধ খাচ্ছে, সাপটা তাকে দেখেই ফণা তুলে ছুটে এলো মিসেস জামিল আর দাড়াতে পারলেন না, সংজ্ঞা হারিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লেন।
তারপর যখন তার জ্ঞান ফিরল তখন নিজেকে ফ্লোরেই আবিস্কার করলেন, রাত প্রাই তখন শেষের দিকে একটু, পরেই হয়ত মিনার থেকে মুয়াজ্জিনের আজান ভেসে আসবে, মিসেস জামিল উঠে দারাবার চেষ্টা করেও দারাতে পারলেন না, মনে হল শরীরের সমস্ত শক্তি চুসে নিয়েছে কোন আসুভ শক্তি, যাইহোক করে তিনি টলতে টলতে বিছানাই গিয়ে শুয়ে পড়লেন, তারপর আর কিছুই মনে নেই।
নাহিদের আম্মু আম্মু ডাকে ঘুম ভাঙল তার, ঘরির কাঁটা তখন সকাল ৮ টার ঘর ছুই ছুই করছে, এমন সময় টুং-টাং শব্দে কলিং বেলটা বেজে উঠল, মিসেস জামিল কিছুটা চমকে উঠলেন, ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন দরজার কাছে, দরজাটা খুলেই দু হাত পিছিয়ে গেলেন তিনি, ঠোট দুটো ফ্যাকাসে হয়ে গেল, গেটের সামনে জামিল হাসান দাড়িয়ে রয়েছে, তিনি স্ত্রীর এই অবস্থা দেখে কিছুটা ভ্যবাচ্যকা খেয়ে গেলেন , তার হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেল।
তিনি স্ত্রীর দিকে সরাসরি প্রশ্ন ছুরে দিলেন, কি হয়েছে তোমার? এমন করছ কেন?
মিসেস জামিল তোতলাতে শুরু করলেন, তু…তুমি কো…কোথায় গেছিলে কাল রাতে?
জামিল হাসান এবার স্ত্রীর মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভাল করে একবার পরখ করে নিলেন, তারপর স্ত্রীর হাত ধরে, সোফায় এনে বসালেন।
সরাসরি তাকে প্রশ্ন করলেন জামিল হাসান, ঘটনা কি বলতো? মিসেস জামিল কালকে রাতের ঘটনা পুরাপুরি বর্ণনা করলেন, এবার জামিল হাসানের কপালে সত্যিই চিন্তার ভাজ পরে গেল, তিনি স্পষ্টই বুঝতে পারলেন, এই দুদিনে ঘরটার ভেতর অসাবাভিক কোন ঘটনা ঘটে গেছে, তিনি স্ত্রীর কাছ থেকে আসল ব্যাপারটা চেপে গেলেন, দুদিনের ভেতর ঘরের অবস্থাটা আবার স্বাভাবিক করে ফেললেন তিনি, এই জন্য অবশ্য তাকে অফিস ছেরে ঘরেই থাকতে হয়েছে।।
তার কিছুদিন পরে এক সকালে কাজের মেয়েটা কাজ করতে আসে, ও ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই মিসেস জামিলের মেরুদণ্ড বেয়ে ভয়ের একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল, সেই ঝাঁঝাল উৎকট গন্ধতা তিনি আবার পাচ্ছেন, এবং এটাও বুঝতে পারছেন যে গন্ধটা ওর গা থেকেই আসছে, আজ ওর চোখের চাহুনিটাও ভাল লাগছেনা, তিনি তারাতারি স্বামীর কাছে ফোন করে বাসাই আসতে বললেন,
জামিল হাসান তাকে না বললেও তিনি ঠিকই বুঝতে পেড়েছেন, সেদিনের নকল জামিল আর এই কাজের মেয়ের ভেতর কোন সুক্ষ মিল আছে যা তার এই ক্ষুদ্র চোখে ধরা পরছেনা,
জামিল হাসান তারাতারি বাসাই চলে আসলেন, স্ত্রীর কাছে আজকের ঘটনা শুনে তার এতদিনের সন্দেহটা সত্য হয়েই ধরা দিল।
কোথায় ও? জামিল হাসান প্রশ্ন করলেন স্ত্রীকে।
বাথরুমের দরজা লাগানর শব্দ পেলাম তো বাথরুমে দেখ।
জামিল হাসান হন্তদন্ত হয়ে বাথরুমের দিকে ছুটে গেলেন, বাথরুমের দরজাটা ভেতর দিক দিয়ে লাগানো, প্রথমে ণাম ধরে জোড়ে জোড়ে কয়েক বার ডাক দিলেন, কিন্তু কোন সারা শব্দ পেলেন না, জরে জরে কয়েক বার ধাক্কাও দিলেন, ১০ মিনিট অপেক্ষার পর দরজা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি, প্লাস্টিকের দরজা বিধাই ভাংতে বেশিক্ষণ লাগনা।
দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে দুজনেই বড় অবাক হলেন, ভেতরে কেও নেই! মেয়েটা যেন একেবারেই বাতাসে মিলিয়ে গেছে, জামিল হাসান এবং মিসেস জামিল এবার পুরাপুরিই নিশ্চিত হয়ে গেলেন, এই মেয়ে কোন রক্তে মাংশে গড়া মানুষ নয়, বরং মানুষের রুপ ধারন কারি কোন প্রেতাত্মা।
কিন্তু তারা যদি একটু খেয়াল করত তাহলেই দেখতে পেত বাথরুমের কোনে বড় বালতিটার পাশে একটা কালো সাপ কুণ্ডুলী পাকিয়ে শুয়ে রয়েছে………।

-পরিশিষ্ট-
আজ জানুয়ারির দু তারিখ, জামিল হাসানের বাসাই গতকাল থেকে একটা নতুন মেয়ে কাজ নিয়েছে, মেয়েটার নাম মিশু প্রথম দিন এসেই অনেক কাজ করে দিয়ে গেছে, এবার মিসেস জামিল একদমই ভুল করেননি, সব ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে তারপর কাজে নিয়েছেন, তবে মেয়েটার ভিতর কিছুটা আধুনিকতা আছে, কড়া কড়া পারফিউম ব্যাবহার করে, জদিও তিনি প্রথম দিন এই কড়া পারফিউমের পেছনে একবার তার সু-পরিচিত বাজে গন্ধটা পেয়েছিলেন………।

 

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!