হযরত ইউনুস (আঃ) -এর বংশ পরিচয় ও নবুয়তী-৩য় পর্ব
হযরত ইউনুস (আঃ)-এর বংশ পরিচয় ও নবুয়তী-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নবী তাঁদেরকে আজাব আসার কথা বললেন। তারা উত্তরে বলল, আজাব আসবে পরকালে। সেখানে দোজখে নাকি আজাব দেয়া হবে। এখানে কোন আজাব আসবে না। ফালতু কথা বলে আমাদেরকে বিভ্রান্ত কর না। আমরা তোমার চেয়ে আল্লাহ্র খবর বেশি জানি। নবী সাধারণ মানুষের কথা ও ব্যবহারে খুবই যাতনা ভোগ করছিলেন। তাই তিনি আল্লাহ্র দরবারে কেঁদে কেঁদে তাঁর সাহায্য কামনা করলেন। আল্লাহ্ তা’য়ালার পক্ষ থেকে জানান হল, এক সপ্তাহ পরে কওমের উপর আসমানি আজাব আসবে। নবী এ কথা শুনে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেন। তিনি কওমকে জানিয়ে দিলেন আগামী সপ্তাহে তোমাদের উপর আজাব আসবে। অতএব, তোমরা আল্লাহ্র নিকট তওবা করে সকলে ঈমান আনো না হয় কারো রক্ষার উপায় নেই।
নবীর কথা সকলে বিশ্বাস করল না। যারা বিশ্বাস করল, তারা নবীর নিকট এসে গজব থেকে রক্ষা পাবার পদ্ধতি সম্বন্ধে অবগত হল বটে কিন্তু কেউ নবীর নিকট ঈমান আনার প্রতিশ্রুতি দিল না। নবী ঘরে ঘরে গিয়ে আজাবের খবর জানিয়ে দিলেন। দিন এক এক করে পার হল। গজব আসার নির্দিষ্ট তারিখের দুদিন পূর্বে নবী শহরের বাইরে চলে গেলেন।
এদিকে কওমের লোকেরা গজব প্রতিরোধের যে পদ্ধতি নবীর নিকট থেকে শিখে নিয়েছিল সে পদ্ধতি অনুসারে সকলে খালী গায়ে মন্দিরে গিয়ে সকল মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলল। অতপর তারা জঙ্গলে গিয়ে তওবা করল, কলেমা মুখে উচ্চরণ করল এবং সেজদায় পড়ে আল্লাহ্র দরবারে কান্নাকাটি আরম্ভ করল। আল্লাহ্ তা’য়ালার গজবের ফেরেস্তা পাহাড় এনে কওমের মাথার উপরে আকাশে ঝুলিয়ে রাখলেন। চতুর্দিক ভীষণ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল। আকাশে পাহাড়ে পাহাড়ে আঘাত লেগে এক ভীষণ শব্দের সৃষ্টি হল, এতে শহরের অধিবাসীরা অধিক আতঙ্কিত হল। তারা এ দৃশ্য দেখে চিৎকার দিয়ে আল্লাহ্র দরবারে কান্নাকাটি আরম্ভ করল।
আজাবের ফেরেস্তা আল্লাহ্র দরবারে ফিরে গিয়ে বললেন, হে আহকামুল হাকেমীন! নিনোয়া শহরে একজন বে-ঈমান নেই। সকলে আপনার উপর ও নবীর উপর ঈমান এনে গজব থেকে মুক্তির জন্য ছেজদায় পড়ে কান্নাকাটি করছে। এখন এ অবস্থায় সেখানে পাহাড় চাপা দিলে সমস্ত ঈমানদার লোকেরা শেষ হয়ে যাবে।
তারা যে আপনার দরবারে আরজ জানাল তাঁর কোন ফল তারা ভোগ করতে সক্ষম হবে না। এসব পৃথিবীর ইতিহাসে চিরিদিন ঈমানের উপর এক কলঙ্কজনিত কথিকা হয়ে থাকবে। এখন আমরা এ মুহুর্তে কি করব ? আল্লাহ্ তা’য়ালার পক্ষ থেকে হুকুম হল। আপাতত আজাব বন্ধ করে দাও। ফেরেস্তাগণ গজবের পাহাড় উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। মানুষ যখন দেখল আকাশ থেকে পাহাড় সড়ে গিয়েছে তখন তারা ছেজদা থেকে মাথা উত্তোলন করল এবং আনন্দ করতে করতে নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেল।
নবী দুদিন পরে শহরে এসে দেখলেন আল্লাহ্ তা’য়ালার ঘোষণা সত্ত্বেও শহরে গজব আসে নি। তখন তিনি খুবই নিরুৎসাহ হলেন। তাঁর বলার কিছু ছিলনা। তাই তিনি কওমের নিকট গিয়ে তাঁদের ঈমানদারী বহাল রাখার জন্য অনুরোধ জানালেন। মানুষ তাঁকে উপহাস করল এবং বলল, তোমার ন্যায় নবীর কোন প্রয়োজন আমাদের নাই। তুমি এ শহর থেকে আমাদিগকে বার বার বিরক্ত করছ। তোমার ঘোষিত আজাব গজব কিভাবে দূর করতে হয় তা আমরা জানি। এ ব্যাপারে তুমি আমাদিগকে কোন শিক্ষা দিতে আসবে না। তোমার কি ক্ষমতা আছে তা আর আমাদের দেখতে বাকি নাই। তুমি দু এক দিনের মধ্যে শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে। না হয় তোমাকে শহর থেকে বের করে দেয়া হবে। এখানে তোমার আর থাকার কোন অধিকার নেই। নবীর প্রতি তারা খুবই দুর্ব্যবহার করল। নবী কওমের আচার আচারণে মনে ভীষণ কষ্ট পেলেন। তখন প্রতিজ্ঞা করলেন এ শহরে তিনি আর থাকবেন না।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত ইউনুস (আঃ)-এর বংশ পরিচয় ও নবুয়তী-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন