হযরত ইউনুস (আঃ)-এর বংশ পরিচয় ও নবুয়তী-১ম পর্ব

হযরত ইউনুস (আঃ) ছিলেন হযরত হুদ (আঃ)-এর বংশধর। তিনি নবী হিসেবে নিনোয়া শহরের অধিবাসীদের হেদায়েতের দায়িত্ব লাভ করেন। নিনোয়া শহরের বর্তমান নাম দামেস্কাস। সেখানে তখন সামুদ নামের এক জাতি বসবাস করত। সামুদ জাতি মূর্তিপূজা করত। অন্যায়, অবিচার, জুলুম ও সন্ত্রাস ছিল তাঁদের পেশা। মানবীয় গুণাবলী তাঁদের থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবার পরে তাঁদেরকে হেদায়েতের লক্ষ্যে আল্লাহ্‌ তা’য়ালা হযরত ইউনুস (আঃ) কে নবী করে তাঁদের মাঝে প্রেরণ করেন।

নবী তাঁদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিলেন, অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করে সৎ জীবনযাপনের জন্য অনুরোধ করলেন। কিন্তু সামুদ জাতি নবীর কথার প্রতি আদৌ ভ্রূক্ষেপ না করে দিন দিন আরো স্বেচ্ছাচারী হতে আরম্ভ করে। তারা নবীর সাথে দুর্ব্যবহার করত, গালাগালি এবং শারীরিক নির্যাতন করতেও দ্বিধাবোধ করত না।

একদা নবী এক নতুন অঞ্চলে গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত দিতে আরম্ভ করেন। তখন সেখানের ছেলেমেয়েরা একত্রিত হয়ে নবীকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ আরম্ভ করে। নবী তাঁদের ঠাট্টা-বিদ্রুপ উপেক্ষা করে বার বার একই কথা বলতে থাকেন। তখন ছেলেরা একত্রিত হয়ে একটি ঘরে তাঁকে বন্দী করে এবং বলে তুমি যদি আল্লাহ্‌র নবী হও তবে তোমার আল্লাহ্‌র সাহায্যে এখান থেকে বের হয়ে যাও।

 নবীকে দুদিন অনাহারে আবদ্ধ রাখার পরে এক দল বৃদ্ধ মানুষ এসে তাঁকে মুক্তি দেয়। নবী ছেলেদের যাতনার এক পর্যায়ে আল্লাহ্‌ দরবারে আজাব প্রেরণের আরজ জানান। আল্লাহ্‌ উত্তরে জানান যখন সময় হবে তখন আজাব প্রেরণ করা হবে। নবী সেখান থেকে সম্মুখে অগ্রসর হলে একদল ধর্মদ্রোহী নবীর দাওয়াত শুনে বলল, “তুমি যদি নবী হও তবে আমাদেরকে দু একটি মোজেযা দেখাও।” নবী বললেন, মোজেযা দেখার জিনিষ নয় এবং কোন নবী এটা ইচ্ছা করে দেখাতে পারেন না। যার দ্বারা আল্লাহ্‌ এটা ইচ্ছা করেন তাঁর দ্বারা প্রকাশ করেন। তখন তারা নবীর উপর শারীরিক নির্যাতন করে মুহুর্তের মধ্যে এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয়।

নবী ধর্মদ্রোহীদের আচারণে মনে খুবই কষ্ট পেলেন। তিনি আল্লাহ্‌র দরবারে হাত তুলে বললেন, “হে খোদা ! তোমার একজন নবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে যদি কোন পার্থক্য না থাকে তবে পৃথিবীতে নবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা বড়ই কঠিন ব্যাপার। তুমি যদি আমার আরজ আদৌ গ্রাহ্য না কর তাহলে তুমি আমাকে নবুয়াতীর দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছ তাঁর কি প্রমান আমি মানুষ কে দিব? অতএব আমার উপর নির্যাতনের অপরাধে তাঁদের উপর হাল্কা কিছু আজাব দাও।” নবীর দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মদ্রোহীদের ঘরে ভীষণ ভাবে কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিল। এক দিনে কয়েক শত মানুষ মৃত্যুবরণ করল।

 সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইউনুস (আঃ)-এর বংশ পরিচয় ও নবুয়তী-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।