মাছের গল্প

একটি পুকুরে সুন্দর এক বড়োসড়ো তিনটি মাছ বাস করতো। একদিন ক’জন মাছ শিকারী ঐ পুকুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। তাদের নজর পড়লো সুন্দর ঐ মাছগুলোর ওপর। কিন্তু শিকার করার মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তাদের কাছে তখন ছিলো না। তাই তারা শিকারের সরঞ্জাম নিয়ে পরে আসবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো। মাছগুলো কিন্তু শিকারীদের কথাবার্তা শুনে ফেলেছিলো। তাই ভাবলো গড়িমসি করলে শিকারীদের ফাঁদে পড়তে হবে। অতএব একটি বুদ্ধি খুঁজে বের করতেই হবে।

তিনটি মাছের মধ্যে একটি ছিল বুদ্ধিমান এবং দূরদর্শী চিন্তার অধিকারী। একটি ছিল মোটামুটি বুদ্ধিমান আর তৃতীয়টি ছিল মূর্খ, বোকা, সময়ক্ষেপণকারী এবং অলস প্রকৃতির। বুদ্ধিমান মাছটি মনে মনে বললো সময় থাকতে থাকতেই এই বিপদ থেকে প্রাণটা নিয়ে বিশাল সমুদ্রে পালাতে হবে। সে তার এই সিদ্ধান্তটি অপর দুই মাছের কাছ থেকে গোপন রাখতে চাইলো। কেননা তারা যদি জানতে পারে তাহলে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় তারা তাকে ছেড়ে যেতে পারে। তাই সে অন্যদেরকে কিছু না বলেই পাড়ি জমালো এবং বিপদ-সঙ্কুল সূক্ষ্ম পথ ধরে মুক্ত সমুদ্রে গিয়ে পৌঁছালো। নিজের বিপদের আঁধারকে আলোকের সমুদ্রে নিয়ে গেল।

দ্বিতীয় যে মাছটি অর্ধ বুদ্ধিমান বা মোটামুটি বুদ্ধিমান ছিল, সে যখন শিকারীদের দেখতে পেলো, বুঝলো যে সে অলসতা করেছে এবং শিকারীদের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে। তাই নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিলো এইজন্যে যে কেন বুদ্ধিমান মাছটির সাথে পাড়ি জমালো না। ভাবতে ভাবতে দেখলো এখনো যেটুকু সুযোগ রয়েছে তা-ও ভেবে ভেবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অতএব এখন রাগের সময় নয়। বরং মুক্তির একটা উপায় খুঁজে বের করতে হবে। যা হাতছাড়া হয়ে গেছে, তা তো গেছেই, পুনরায় তা ফিরে আসবে না। এইবলে সে ভাবলো, মরার ভান করে নিঃসাড়ভাবে চিৎ হয়ে যাবে এবং শ্রোতের মাঝে নিজেকে ভাসিয়ে দেবে, যাতে শিকারীরা ভাববে সে মরে গেছে, ফলে তাকে শিকার করবে না।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। শিকারীরা মাছটিকে মৃত মনে করে পানি থেকে তুলে নিয়ে পুকুর পাড়ে ফেলে রাখলো। শিকারীরা দূরে সরে যাবার পর মাছটি পুনরায় পুকুরে নেমে প্রাণ বাঁচালো। তবে তৃতীয় মাছটি যে কিনা বোকা, অলস এবং সময় ক্ষেপণকারী ছিল, সে তার সামনে বিপদ দেখতে পেয়ে অস্থির হয়ে গেল। ভয়ে সে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে প্রাণে বাঁচতে চাইলো। কিন্তু কাজ হলো না, শিকারীর ফাঁদে তাকে পড়তেই হলো। ফাঁদে পড়ে সে মুক্তির আশায় জালের এ ফোঁড় ও ফোঁড়ে দৌড়ালো। কিন্তু যতই সে দৌড়ালো ততোই আহত হলো, ততোই ক্লান্ত হলো, ততোই ফাঁদে বেশি করে আটকা পড়লো। শিকারীরা তাকে ধরে নিয়ে কাবাব বানিয়ে খেলো। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মাছটি মনে মনে বললো এইবার যদি এই ফাঁদ থেকে কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে যাই তাহলে আর ভুল করবো না, সোজা সমুদ্রে গিয়ে নিরাপদ জীবন যাপন করবো। নিজে যদি নাও পারি তাহলে বুদ্ধিমানদের হাত ধরে এবং তাদের নির্দেশনায় বিপদ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজবে। কিন্তু সেই সুযোগ তার আর হলো কই!

এই গল্পে মৌলাভি আমাদের শিখিয়েছেন পুকুরের মতো ছোট্ট এবং বিপদ সঙ্কুল এই পৃথিবীতে অলসতা করা যাবে না। সচেতন হতে হবে। আল্লাহকে ভয় করতে হবে। কর্মতৎপর হতে হবে। চোখ বুজে ঘুমালে চলবে না। দ্রুত পায়ে দৌড়তে হবে সমুদ্রের দিকে, প্রেমের কুল-কিনারাহীন সমুদ্রের দিকে, ভালোবাসা ও মানবতার দিকে, মুক্তির দিকে। এই পথে যা কিছু চলে গেছে বা হারিয়ে গেছে তার জন্যে ভাবলে চলবে না, কেননা যা কিছু চলে গেছে তা আর ফিরে আসবে না।

মসনবীর গল্প

লোভ-লালসা সংক্রান্ত অসাধারণ একটি শিক্ষণীয় ঘটনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *