
গোড়াতেই বলে রাখি কোনও ভালুক শিকারের গল্প নয়।বিশেষত মাকুমামার সেই নিদারুণ ব্যাঘ্র কান্ডের পর তিনি যে বন্দুক কাঁধে ফের শিকারে বের হবেন এমন ধারনা করাটাই অন্যায়।সেবার পালামৌ থেকে ফিরে সেই যে মুটে ডেকে তাঁর শিকারের বই পওর ,মায় সাধের নোট খাতা সের দরে বিদেয় করেছিলেন,তারপর ও সব আর মুখেও আনেননি ।তবু তাঁর ভালুক কান্ডটিও হয়ে গেল ।আর ঘটনাচক্রে এবার ও সেই পালামৌ জঙ্গল । তবে সেবার মামা একাই ছিলেন মুখ্য চরিএ । এবার জুড়ে নিলেন আমাকেও।
সেদিন মাকুমামা এসেই বললেন , ‘চল্ রে ফুচে , একটা ট্যুর মেরে আসি ।দারুন জায়গা ‘।পরীক্ষার পরে আমার তখন অখন্ড অবসর ।লাফিয়ে উঠে বললাম, ‘কোথায় তোর মামা?’একগাল হেসে মাকুমামা বললেন, ‘নেতারহাটের নাম শুনেছিস তো? সাহেবরা যার নাম দিয়ে গেছে ‘কুইন অব ছোটনপুর’।দারুন এক বাংলো ম্যনেজ করে ফেলেছি ।সপ্তা দুই বেড়িয়ে আসতে পারলে শরীর ফিরে যাবে।‘সুতরাং দিন কয়েকের ভিতর জিনিসপওর গুছিয়ে আমরা একদিন রাঁচি পৌঁছে নেতারহাটের বাসে চেপে বসলাম ।পুরো ব্যাপারটা শোনা হল বাসে বসেই ।মামার শরীরটা ইদানিং ভালো যাচ্ছিল না । ডাক্তার চেঞ্জে যাওয়ার পরার্মশ দিয়েছেন।কিন্তু সস্তায় তেমন জায়গা আর কোথায় ?শেষটা খোঁজখবর নিয়ে শুনলেন ,অফিসের বড় সাহেবের নাকি নেতারহাটে একটা বাংলো রয়েছে ।জায়গাটা চেঞ্জের পক্ষেও দারুন ।এরপর সাহেবকে ম্যানেজ করে ফেলতে আর বিশেষ দেরি হয়নি তাঁর ।তার উপর খবর নিয়ে জেনেছেন ,বাংলোর মালি ঝগড়ুর নাকি রান্নার হাতও দারুন ।মুরগিয়াও বেস সস্তা ।সুতরাং দু বেলা খাও আর ঘরে বসে শুধু সানরাইজ, সানসেট দেখ।লোহারদাগা থেকেই শুরু হয়ে গেল ছোটনাগপুরের লাল মাটি আর আদিবাসিদের গ্রাম ।তারপর বাস এক সময় নেতারহাটের পাহাড় বেয়ে উঠতে শুরু করল ।পথের দু’পাশে জঙ্গল ঘন হয়ে উঠল ক্রমশ ।বাসে মাকুমামা সেই থেকে দারুন মেজাজে বোঝাছিলেন আমাকে ।হটাৎ জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে কেমন ভুত দেখার মতো চমকে উটলেন ।ঠোঁট ইঞি দুয়েক ঝুলে পড়লো ।ঘাড় ঘুরিয়ে বললেন, ‘এটা কী রকম ব্যাপার হল!এ যে পালামৌ জঙ্গল রে ফুচে !সেই পাহাড় !বন জঙ্গল !’আমি মামাবললাম ,নেতারহাট তো পালামৌ জেলার মধ্যৈই মামা!’ বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে মাকুমামা বললেন, ‘তবে যে সবাই বললে কুইন অব ছোটনপুর !ফুচেরে , ভালোয়-ভালোয় এক্ষুনি ফিরে চল বাবা।এ বড় ডেঞ্জারাস জায়গা’।বলেই ‘রোখকে-রোখকে’বলে চ্যাঁচ্যাতে-চ্যাঁচাতে মালপএ নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিলেন।চোখমুখ দেখে বুঝলাম,ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়েছেন।কিন্তু ফিরে যাই বললেই তো আর হয় না। বললাম, ‘খেপেছ মামা!এই জঙ্গলের মধ্যে বাস থেকে নেমে যাবে কোথায়?’ পরিস্থিরিটা এবার খানিকটা যেন বুঝলেন তিনি ।মালপএ টানাটনি থামিয়ে কাঁদো-কাঁদো গলায় বললেন, ‘ফুচেরে, তুই জানিসনে, এ কী ভয়ানক জয়গা ।
সেবার প্রায় জানটাই খেয়ে ফেয়েছিল! এবার কী হবে বল দেখি? ‘এখন আর ভেবে লাভ নাই মামা।শুনলে না, এই বাসটাই রাঁচি ফিরবে আগামীকাল সকালে। তার আগে আর ফেরার উপায় নাই। বাংলোয় পৌঁছে দেখি , সাহেব ইতিমধ্যে খবর পাঠিয়ে দিয়েছেন ।সব একদম রেডি। সুতারাং মালপএ নামিয়ে রেখেই ছুটলাম স্নানের ঘরের দিকে। ঝগড়ু সিং-এর হাতের রান্নার সত্যই জবাব নাই! লোকটা লোকাটা দেখতে অবশ্য জুতের নয় তেমন । তাগড়াই শরীর ভরতি কিম্ভূত বড় বড় লোম ।আর গায়ে রং ? তিন পোঁচ আলকাতরা মাখালে ও অমন খোলতাই হবে না ।নিশ্বাসের সময় ঘোঁত-ঘোঁত শব্দ হয় সমানে। দেখে গোড়ায় দেখে একটু দমেই গিয়েছিলাম । যাই হোক , দেহাতি মুরগির ঠাং দিয়ে প্লেট পাঁচেক করে ভাত মেরে বিকেলে বাংলোর । হাতায় চেয়ার টেনে বসলাম । তাকিয়ে জুড়িয়ে গেল চোখ । চার পাশে শুধু শাল-পলাশ আর বুলবুলির মিঠে শিস । সামনে অনেক নীচে মাইলের পর মাইল সমতলভূমি। ছড়ানো খেলাঘরের মতো দেহাতি গ্রাম । দূরে কোয়েল নদী বাঁকা এক টুকরা রূপোর পাতের মতো চকচক করছে। সেই সাথে মাইলের পর মাইল পাহাড়ের টেউ খেলানো রেঞ্জ। হাঁ করে দেখছিলাম । পাশে বসে আরামে ঢেকুর তুলতে –তুলতে পান চিবোচ্ছিলেন মাকুমামা। হঠৎ বললেন , ‘হাঁ রে ফুচে , ঝগড়ুর রান্নাটা কিন্তু দারুন । দিন কয়েক এমন চালাতে পারলে আর দেখতে হবে না ‘। আমি নেচে উঠে বললাম , ‘যা বলেছ মামা। তারপর চারপাশের সিনারিটা ও একবার দ্যাখো!’ কিন্তু সে সব বোধ হয় কানেই গেল না ওঁর । কতকটা স্বগতোক্তির মতো বললেন , ‘ঝগড়ুর চেহারাটাও একবার দেখেছিস ? কেমন কিং কং টাইপের ।তেমন বেকায়দায় পড়লে ম্যানেজ করে নিতে পারবে । তাই না রে ?’ বুঝতে বাকি রইল না , ঝগড়ুর এক বেলার মুরগির অ্যাকশনেই কাত হয়ে গিয়েছেন মাকুমামা ।উৎসাহ দিয়ে বললাম , ‘খুব পারবে ।
তা ছাড়া বাংলোর একটা বন্দুক তো রয়েছে দেখলাম । হাতের কাছে রাখলে ভাবনা কী?’ আমার কথাগুলো দেখলাম বেশ পছন্দ হয়েছে মাকুমামার। এক গাল হেসে বললেন , ‘কালকে ফেরার ব্যাপারটা তাহলে বাতিল করে দেই । কি বলিস ? তুই বরং ঝগড়ুটাকে বলে আয় এবেলাও যেন কচি দেখে গোটা দুই মুরগির ব্যবস্থা করে রাখে । দিন কয়েক যে কীভাবে কেটে গেল কী বলব ! যাকে বলে বাদশাহি হাল । মাকুমামার মতো নিতান্ত নীরস মানুষের পেট থেকে ও দেখি রীতিমতো কবিতা বের হতে শুরু করেছে । সারা দিন শুধু খাওয়া আর ঘুম । এ ছাড়া সকাল সন্ধে বাংলোর হাতায় বলে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ । বলা বাহুল্য ,দু’জনের কেউই ইতিমধ্যে বাংলোর বাহিরে পা বাড়াইনি । ঝগড়ুর রোজই অভয়বাক্য শোনায় , নেতারহাটের জঙ্গলে দু-চারটে বাঘ থাকলেও তারা মোটেও মানুষের ধারের কাছে ঘেঁষে না । এখানে ওই ভালুক ই বিপজ্জনক । তবে সেও সেই ফাল্গুন –চৈএ মাসে ফুলের সময় । সুতরাং আমরা নির্ভয়ে সকাল বিকাল চারপাশটা একটু বেড়িয়ে আসতে পারি ।মাকুমামা অবশ্য ঝগড়ুর কথায় একেবারেই কর্ণপাত করেননি । আমাকেও হুশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন , ‘খবরদার ফুচে , নাবালক ছেলে তুই। ওসব একদম কান দিসনি।‘ সত্যি বলতে কী ,মামার অবাধ্য হইনি আমিও । কিন্তু তবু ব্যাপারটা ঘটে গেল । সেদিন দুপুরে ঝগড়ু বাংলোয় নেই । রাত্রিতে বুনো মুরগির ঝোলের বরাত দিয়েছেন মাকুমামা । সেই খোঁজেই বের হয়েছে ।দুপুরে ভূরিভোজের পর বাংলোর হাতায় বসে চারপাশের দৃশ্য সেখছি । মাকুমামার চেয়ারের পাশে যথারীতি বন্দুক টা মজুত । আমার সেদিনের পরামর্শ টা বেশ মনে ধরেছে ওঁর । বাইরে এসে বসলেই সর্বক্ষণ পাশে রাখেন । দিব্যি ফুরফুরে হাওয়া । হাতার বাইরে মস্ত এক মহুয়া গাছ । জাঁদরেল আকারের ঝুটি ওয়ালা এক বুনো মোরগ অনেকক্ষণ ধরে তার ডগায় বসে কক্ –কক্ শব্দে সমানে ডেকে চলেছে ।জুলজুল চোখে তাকিয়ে মেজাজে মামা সবে একটু গুন গুনিয়ে উঠেছেন। আয় রে আমার কাছে আয় , মুরগি ওরে ভাই । ঝগড়ুবাবার হাতে আয় , মনের সুখে খাই । এদিকে দূরে চকচকে কোয়েল নদীর দিকে তাকিয়ে আমার মগজের ভিতরও কেমন কবি-কবি ভাব এসে যাচ্ছে । আমাদের ডানদিকে বাংলোর হাতায় বাইরে গাছপালার ফাঁকে ঘন ঝোপ ঝাড়ে ভরা এক টুকরো জঙ্গল । ভিতরটা প্রায় অন্ধকার । হঠাৎ সেখান থেকে খচমচ করে আওয়াজ ভেসে আসতেই দারুন চমকে ঘাড় ফেরালেন মাকুমামা । তারপর ‘খেয়ে ফেললে ’ বলে মুহূর্তে এক তুড়ুক লাফ । চমৎকার একটা কবিতার আইডিয়া তখন আমার ভিতরে ও এসে গেছে । মুহুর্তে সব কোথায় হাওয়া হয়ে গেল ! তাকিয়ে দেখি ,ভূসো কালোমতো কী একটা প্রাণী ঘোঁৎ- ঘোঁৎ আওয়াজে সেই গাছপালার ফাঁকে এগিয়ে আসছে । মাকুমামার ওই ভয়ানক লাফে পিলে –টিলে আগেই চমকে গিয়েছিল। গলা দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে এল , ‘মামাগো , ভালুক! ’ কিন্তু কোথায় মাকুমামা ! তাকিয়ে দেখি ততক্ষণে তিনি বাংলোর চৌহদ্দি টপকে সামনে ঢালু জমির ঝোপঝাড় ভেঙে ঊদ্ধশ্বাসে ছুটছেন ।হাতে সেই বন্দুক টা । অগত্যা দেরি না করে আমিও ছুটলাম পিছনে ।এবড়োখেবড়ো ঢালু জমি আরও গভীর জঙ্গলের দিকে নেমে গেছে ।হোঁচট খেতে-খেতে কোনওমতে তাকে ধরে ফেলে বললাম , ‘মামাগো ,এ যে জঙ্গলের দিকে চলেছে ! ‘এতটা পথ দৌড়ে মামা হাপরের মতো হাঁ পাচ্ছেন ।ছুটতে ছুটতে ই খেঁকিয়ে উঠলেন , ‘মেলা ফ্যাচ-ফ্যাচ করিসনি ফুচে । তোকে তখনই বলেছিলাম , ফিরে যাই ।এবার বাঁচতে চাস তো শিগগির ঢুকে পড় ওর ভিতর ।’ বেশি বলতে হল না ।
সামনেই ঢালু পাহাড়ের গায়ে মস্ত এক গুহার মুখ । তিন লাফে মাকুমামাকে টপকে গোড়ায় আমিই ঢুকে পড়লাম সেখানে । ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার । পিছনে মাকুমামাও ততক্ষণে ঢুকে পড়েছেন ভিতরে , ‘ফুচে রে , এগিয়ে যা ভিতরে । কুইক । ’ কিন্তু এগোব কী ! আলো থেকে আসার জন্য চোখ তখন এমন ধাঁধিয়ে গেছে যে , এক আঙুল দূরের জিনিস ও দেখতে পাচ্ছি না । প্রায় হাতড়াতেই সামান্য এগিয়েছি ,, হঠাৎ ফোঁৎ করে খানিক টা গরম বাতাস গায়ে এসে লাগল । সেই সাথে একটা বিশ্রী বুনো গন্ধ । এদিকে মাকু মামা সমানে পিছন থেকে খোঁচাছচ্ছেন । আমি বললাম , ‘মামাগো , বিচ্ছিরি গন্ধ । ’ শুনে প্রায় খেঁকিয়ে উঠলেন উনি , জঙ্গলে গুহার ভিতরে তোর জন্য গোলাপজল ছড়ানো থাকবে নাকি হতভাগা ! ’ বলতে বলতে ঠেলে পাঁশ কাটিয়ে মামা নিজেই এগিয়ে গেলেন এবার । আর সেই মুহূর্তেই , ঘুঁক –ঘুঁ-র-র । গাড় অন্ধকারের ভিতর এক রাশ মুলোর মতো দাঁত ক্যামেরার ফ্লাসগানের মতো ঝলসে উঠল যেন। মাকুমামা ততক্ষণে এগিয়ে গিয়েছেন আরো । নিমেষে ঘুরে দাঁড়িয়ে এক ধাক্কায় আমাকে প্রায় ছিটকে ফেলে হুড়মুড় করে ছুটে বের হলেন ।ওফ ! মাকুমামার ওই নাড়ুগোপাল মার্কা শরীরে এত শক্তি কে জানতো ! এক ধাক্কায় প্রায় চিতপ্টাং হবার জোগাড় । কোনক্রমে উঠে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে বাইরে বের হতেই ঘোঁৎ- ঘোঁৎ করে গুহার ভিতর থেকে দাঁত খিঁচিয়ে তাড়া করে এল মস্ত এক ভালুক । কী সর্বনাশ ! এক ভালুকের তাড়ায় পালিয়ে এসে আর একটার প্রায় কোলে গিয়ে উঠেছিলাম ! ওদিকে মাকুমামা ততক্ষণে বনবাদাড় ফুঁড়ে ঊর্ধবশ্বাসে দৌড়াচ্ছেন । পড়ি কী মরি করে আমিও ছুটলাম পিছনে । কিন্তু ঝোপঝাড় ফুঁড়ে ওইভাবে আর দৌড়ানো যায়। পিছনে ভালুক টা সমানে তাড়া করে আসছে । ব্যাপার বুঝে মাকুমামা হঠাৎ সামনে একটা গাছ পেয়ে তরতরিয়ে উঠতে শুরু করলেন। ‘ফুচে , তুই ও উঠে পড় শিগগির । কুইক ।’ ততক্ষণে প্রায় মগডালে উঠে পড়েছেন তিনি । প্রায় পোস্টের মতো লম্বা ইউক্যালিপ্টাস গাছ । তার মসৃণ গুঁড়ি বেয়ে মাকুমামা প্রায় কাঠবেড়ালির মতো নিমেষে মগডালে পৌছে গেলেও আমার গাছে ওঠা অভ্যাস নাই । গুঁড়ির অর্ধেক উঠতেই হেদিয়ে গেলাম । হাত পায়ে খিল ধরে এল । ছাল টাল উঠে একাকার । এমন সময় মাকুমামা উপর থেকে কোঁ-কোঁ করে উঠলেন , ‘ফুচেরে ,তাড়াতাড়ি এসে আমায় একটু চেপে ধর বাবা । আমার হাত পা কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছে । ’ মামার গলা প্রায় মৃগী রোগীর মতো শোনাল । উপরে তাকিয়ে দেখি মাকুমামার হাতে তখন ও বন্দুক টা সেই ভাবেই ধরা । চেঁচিয়ে বললাম , ‘মামা । গুলি ,গুলি চালাও এখুনি ।’ খেপেছিস ! কোঁকাতে- কোঁকাতে বললেন তিনি , ‘হেভি বোরের বিলিতি জিনিস এসব ।
মাটিতে দাড়িয়ে ছুঁড়লেই শরীরের হাড়গোয়াড় সব আলাদা করে ফেলতে চায় , আর গাছে বসে ! বাঁটের এক গুঁতোয় কোথায় ছিটকে ফেলবে ঠিক আছে ! হতচ্ছাড়াটাকে সেই থেকে ফেলতে পারছি না রে । আঙুল গুলো কেমন এঁটে গেছে দ্যাখ !’ আমি হেঁচড়ে –পেঁচড়ে ফের উঠবার চেষ্টা করতে গিয়ে উলটে খানিক পিছলে গিয়ে খাবি খেয়ে বললাম , ‘মামাগো আমি উঠতে পারছি না । ’ উপর থেকে মাকুমামা হঠাৎ ভেউ –ভেউ করে কেঁদে উঠলেন ওই সময় , ‘ফুচে রে , ওটা যে গাছ বেয়ে উঠতে লেগেছে । তাড়াতাড়ি এসে আমার একটু চেপে ধর বাবা । নির্ঘাত আমার সাথে কোলাকুলিটা সেরেই ফেলবে এবার । অন্ধকারে তখনই নুলো বের করেছিল । আমি পালিয়ে এলুম ।’ এরপর আর শুধু মাকুমামাই নয় , সত্যিকারের হাহাকার আমার গলা দিয়ে ও বেরিয়ে এল । ভালুক টা গাছ বেয়ে উঠছে মানেই মামা নয় ,তার আগে আমারই ক্যাওড়াতলা যাবার টিকিট হয়ে গেছে । মাথাটা ভোঁ- ভোঁ করে উঠল । বোধ হয় পড়েই যেতাম এরপর । হটাৎ দূর থেকে পরিচিত গলায় চিৎকার শুনে ধড়ে প্রান ফিরে এল , ঝগড়ু মালি । তাকিয়ে দেখি হাতে মস্ত এক লাঠি নিয়ে আর একটা ভালুকের মতোই ছুটে আসছে সে । হাতের লাঠিখানা বনবন করে ঘোরেতে – ঘোরেতে বিকট শব্দে চিৎকার করছে , ‘হা –লে –লে –হু-র-র-হা । ’চিৎকার তো নয় ,যেন গোটা কয়েক জেট ইঞ্জিনের গর্জন ঝগড়ুর সেই চিৎকারের গুনেই হোক , অথবা লাঠির দৌলাতে , হঠাৎ দেখি ভালুকটা গাছ থেকে নেমে পালাচ্ছে । সাহস বটে লোকটার ! স্রেফ লাঠি হাতেই এবার সে তাড়া করল জানোয়ারটাকে ।
ততক্ষণে গাছ পালা ভাঙে ভালুকটা ভোঁ দৌড় । আপদটাকে বিদেয় করে একটু বাদেই ফিরে এল ঝগড়ু । তারপর হাত বাড়িয়ে প্রায় চ্যাংদোলা করে নামিয়ে আনল আমাকে , ‘বহুৎ বাঁচিয়ে গেছেন বাবু । লেকিন আপনেরা হামাকে দেখিয়ে ভাগলেন কেনো ? হামি মোর্গা লিয়ে আসতেছিলাম তো । ’ আমি কিছু বলার আগেই উপর থেকে মাকুমামার গলা শোনা গেল , ‘অ্যা! জঙ্গলের ভিতর দিয়ে তুই আসছিলি তখন ? খইনি টেপা দাঁতে একগাল হাসল ঝগড়ু ,জি হা সাহাব । বহুত বঁড়িয়া চিজ মিলিয়েছে আজ ।বিলকুল জংলি মোর্গা । নামিয়ে আসেন ঝটপ্ট ।’ কিন্তু গাছ থেকে নেমে আসার কোন ও লক্ষণই দেখালেন না মাকুমামা । কাঁপা গলায় খালি বললেন , ‘ঝগড়ুরে লক্ষী বাপ আমার ।স্ট্যান্ডে গিয়ে একবার খোঁজ নিয়ে আয় তো বিকেলে রাঁচি ফেরবার কোনোও গাড়ি টাড়ি আছে কিনা ।