
বানর বললেই কেমন একটা দুষ্ট, চঞ্চল প্রাণীর কথা মনে পড়ে যায়, তাই না? তোমরাও যখন কোনো দুষ্টুমি করো ,তখন কানটা মলে মা বলেন, বানর। কিন্তু বানরদের মধ্যেও যে দুষ্টর শিরোমণি সে হচ্ছে মাকড়শা বানর।
নামটা খুব অদ্ভুত, তাই না? এখন তো জানতেই হবে, বানর আবার মাকড়সা হয় কীভাবে? চলো জেনে নেই দুষ্ট-চঞ্চল বানরটির কথা। মাকড়শা বানর বা spider monkey এর নাম কোথা থেকে এলো তাই আগে বলি, এই বানরের প্রতিটি বাহু খুব শক্তিশালী, তার চেয়েও শক্তিশালী এদের লেজ। লেজ আর বাহু মিলিয়ে বানরটিকে অনেকটা পাঁচ বাহুর প্রাণীর মতো দেখায়। যদিও ওদের প্রতি বাহুতে চারটি করে আঙ্গুল আছে, কিন্তু ওদের কোনো বুড়ো আঙ্গুল নেই।
তাই যখন গাছের শাখায় শাখায় ঝুলে তখন চারটি আঙ্গুল দিয়েই হুকের মতো করে শাখাটি আঁকড়ে ধরে। চারটি আঙ্গুল দিয়ে যদিও ঝুলতে খুব সহজ হয় কিন্তু বুড়ো আঙ্গুল না থাকায় মাকড়শা বানরেরা কিন্তু হাত মুঠো করতে পারে না। তবে শুধু হাতের বা পায়ের আঙ্গুলই নয়, এরা লেজ ও বাহু গাছের ডালে পেঁচিয়ে স্বাধীনভাবে উপর থেকে ঝুলতে পারে।
যখন ওরা এভাবে ঝুলে থাকে তখন দেখতে অনেকটা মাকড়শার মতো দেখায়। এখান থেকেই ওদের নাম দেয়া হয়েছে মাকড়শা বানর। তবে দেখতে মতো মাকড়শার হলেও এরা এতো ছোট নয়। এদের ওজন গড়ে ১৩.২৫ পাউন্ড এবং উচ্চতা প্রজাতি ভেদে ২ থেকে৫ ফুট। তোমরা তো জানোই প্রতিটি জীবের একটি শ্রেণিবিন্যাস থাকে। এই শ্রেণিবিন্যাসের বিভিন্ন ধাপের নাম থেকে জীবের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একটা ধারণা করা যায়।
আমাদের এই মাকড়শা বানরের গোত্রের নাম Ateles, যার অর্থ অসম্পূর্ণ। এদের বুড়ো আঙ্গুল না থাকায় এদেরকে এই গোত্রে স্থান দেয়া হয়েছে। এদেরকে দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার মধ্যের বনে পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ateles fusciceps। মাকড়শা বানরের লম্বা, চিকন এবং আংটার মতো হাত আছে যা দিয়ে এরা গাছের ডালে দোল খেতে পারে।
মাকড়শা বাননের লেজ খুবই দৃঢ়। গাছে ঝুলে থাকার জন্য এরা এদের লেজকে পঞ্চম বাহুর মতো ব্যবহার করে। এ প্রজাতির বানরেরা প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ উভয় প্রকার খাবার খেয়ে থাকে। এদের প্রধান খাদ্য ফল। দিনের বেলায় মাকড়শা বানর ফলের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। শুকনা মৌসুমে যখন ফল পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে তখন এরা ফুল, বীজ, গাছের বাকল, পাতা, পাখির ডিম এবং ছোট পোকামাকড় খেয়ে বাঁচে।
এরা দিনের অধিকাংশ সময় গাছে উঠতে ও গাছের উঁচু ডালে ঝুলায় ব্যস্ত থাকে। রাতে গাছের ডালেই দলবেঁধে ঘুমায়। মাকড়শা বানর দুই প্রজাতির হয়। বাদামী মাথার বানর আর কালো মাথার বানর। কালো মাথার মাকড়শা বানরেরা আকারে তুলনামূলক বড় হয়। এ বানরেরা স্বাভাবিকভাবে ২৪ থেকে ২৭ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
বাদামী মাথার মাকড়শা বানরেরা ২০ থেকে ১০০ টি পুরুষ ও মহিলা বানরের একটি বড় গ্রুপে থাকে। কিন্তু খাবার খোঁজার সময় তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়। মেয়ে মাকড়শা বানরেরা এক থেকে চার বছর পর পর একটি করে বাচ্চার জন্ম দেয়। সব বাদামী রঙের মাকড়শা বানরেরই জন্মের সময় মুখ ও কান গোলাপি রংয়ের হয়ে থাকে। জন্মের পর পর ছানাদেরকে পুরুষ মাকড়শা বানরেরা প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করে এবং মেরে ফেলতে চায়।
এ কারণে সদ্য জন্মানো মাকড়সা বানরের ছানাদেরকে শক্ত হবার আগ পর্যন্ত মায়েরা নিজের কাছেই রাখে। কীভাবে তারা সন্তানকে রক্ষা করে জানো? প্রথম সপ্তাহে তারা বাচ্চাকে পেটে এবং ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত তার পিঠের সাথে লেজ দিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে রাখে। বাচ্চাদের পিঠে পেঁচিয়ে রেখেই এরা এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে চলে। এরপর এরা মায়ের পিঠে চড়ার মতো শক্ত সামর্থ্য হয়।
সাধারণত জাগুয়ার, পুমা কিংবা বড় সাপ মাকড়শা বানরদের শিকার করে খায়। তবে কিছু মানুষও এদের মাংস খাবার জন্য শত শত বছর ধরে এদেরকে মেরে আসছে। বর্তমানে এদের সংরক্ষণের জন্য ইকুয়েডর সহ কিছু দেশে এদের শিকার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মাকড়সা বানরেরা খুবই বুদ্ধিমান ও প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। এরা অনেক সামাজিক হয়ে থাকে। নিজেদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রেখে চলে।
সবচে দারুণ ব্যাপার হল কারো সাথে দেখা হলে এরা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে এবং লেজ দিয়ে একে অপরকে পেঁচিয়ে ধরে।