মাইন্ড রিডার — সাইন্স ফিকশান

যন্ত্র টা মোটামুটি বানিয়ে ফেলেছে গিনি । আজ রাত্রেই বাকি কাজ টুকু শেষ করে ভোর রাত্রে মহড়া । বিজ্ঞানের অসম্ভব কে সম্ভব করার অদম্য ইচ্ছা তার ভিতরের মেয়েটাকে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়ায়। আজ সে প্রথমবার তার কাল্পনিক চিন্তাকে যন্ত্রের আকার দিতে চলেছে। গিনির ফর্মুলা যদি ঠিকমত কাজ করে তাহলে তার বানানো আঙুরের মত ছোট্ট যন্ত্রটা ভোর রাতের দিকে আয়ত্ব করে ফেলবে অন্যের মনের ভাবনা মুহুর্তে পড়ে ফেলার অলৌকিক কৌশল।
গিনির মা তার অনেক ছোটবেলায় গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন , সেই একই গাড়িতে থাকা সত্তেও অলৌকিক ভাবে একটা ঝোপের ধার থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে, ২ বছরের গিনি কে পুলিশ তার বাবা র হাতে তুলে দিয়েছিল। তার ৩ বছরের মাথায় একাকীত্বের বোঝা সামলাতে না পেরে তার বাবার নিয়ে আসা এ বাড়ির স্থায়ী সদস্য কে, গিনি তার বাবার স্ত্রী বলেই মনে করে এসেছে বরাবর ,নিজের মা য়ের জায়গা চেষ্টা করেও তাকে সে কখনো দিতে পারেনি। গিনির সাথে সে মহিলার বিশেষ কথাবার্তা হয় না ,সেই প্রথম দিন থেকেই পারস্পরিক বোঝাপড়ায় তারা একে ওপরকে এড়িয়ে চলে, গিনির বাবাই তাদের দুজনের মধ্যে একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম, গিনির জীবনে ভালো খারাপের প্রভাব যে সেই অজ্ঞাত মহিলার উপরে পড়বে না , সেটাই গিনির কাছে খুব স্বাভাবিক বলে মনে হয়।গিনির মায়ের প্রতি তার বাবার ভালাবাসার গভীরতা নিয়ে তার মনে প্রশ্ন থাকলেও,নিজের মেয়ের প্রতি সেই মানুষটার আন্তরিকতা বা দায়িত্ব বোধ নিয়ে গিনি কখনো সন্দেহ প্রকাশ করেনি। বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার ইচ্ছা ,খামখেয়ালী পনা , যন্ত্রের সাথে ভালবাসা , যেমনি ভাবা তেমনি কাজ করার অবাধ স্বাধীনতা, এ সবকিছু গিনির বাবার অর্থ ব্যয় আর সমর্থন ছাড়া কিছুতেই সম্ভব ছিল না।নিজের বয়সের তুলনায় গিনির মেধার মাত্রা অন্যের কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হওয়ার অস্বস্তি থেকে দূরে থাকার জন্যেই বোধহয় তার ১৬ বছরের জীবনে বন্ধু বলতে মাত্র একটি নাম ,সীমা। যদিও গিনির আরো একটি বন্ধু আছে কিন্তু সে মানুষ নয় , তার পোষা ল্যাব্রেডর কুকুর ,’লজেন্স ‘ যে দিবারাত্রি গিনির ছায়াসঙ্গী।
ভোর ৪ টে ৫৫ । যন্ত্রটা গলার হারের মধ্যে লকেটের মত ঢুকিয়ে যন্ত্রের ‘ON’ বোতাম টা টিপে দিল গিনি। কই কিছু শুনতে পাচ্ছে না তো ! এত চেষ্টার পরও তাহলে কি তার যন্ত্র টা কাজ করছে না ? কিন্তু তাই বা সে বলে কি করে ? আশেপাশে তো কেউ কোথাও নেই।সকাল হবার আগে যন্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার কোনো উপায়ও তো আর নেই । হঠাৎ রাস্তার কুকুর গুলো ডেকে উঠলো। লজেন্স চমকে ঘুম থেকে উঠে পড়ে বারান্দার দিকে যাবার জন্য প্রস্তুত ,ইতিমধ্যে গিনি পরিস্কার শুনতে পেল কে যেন বলছে , “ধ্যুর তেরি ! রোজ রাতে একই ব্যাপার ! শান্তিতে নিজেরাও ঘুমাবে না আর আমাকেও ঘুমোতে দেবে না ! যাই দেখি গিয়ে সত্যিই কিছু ঘটলো ,নাকি বাতিকগ্রস্ত লালুর অকারণ খ্যাক খ্যাক ! ওই ব্যাটার জন্য কুকুর সমাজের উপর মানুষের বিশ্বাসই উঠে যাবে এবার !” লজেন্স দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতেই আবার চারিদিকে সব চুপচাপ। গিনি আনন্দে লাফিয়ে উঠলো , “কাজ করছে ! কাজ করছে ! ” এ যে আর কারো নয়, , যা সে একটু আগে শুনলো তা যে তার লজেন্সের মনের কথা ! লজেন্স ঘরে ফিরে এসে আবার বিছানায় উঠে পড়ল ,গিনি কান পেতে শুনলো এবারের কথাগুলো, “কালকে কালুদা কে বলে লালু ব্যাটার শায়েস্তা না করে আমি ছাড়ব না, রাত বিরেতে এভাবে অকারণে জ্বালানো ,লজেন্স চৌধুরী আর কিছুতেই সহ্য করবে না , একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আবার ঘুম আসা যে কি মুশকিল সে আর ওই নিশাচর হতচ্ছাড়া লালু বুঝবে কি করে !”
পরদিন সকালবেলা গিনির ঘুম ভাঙ্গলো মালতীদির ডাকে , “দিদিমনি ওঠো ! চা নিয়ে এসেছি ,আজ একেবারে আদা দিয়ে তোমার প্রিয় চা বানিয়েছি ,কত রাত অব্দি তুমি পড়াশোনা করো রোজ ,সকালের দিকে মাথাটা নিশ্চই ধরে থাকে তোমার !” গিনি চোখ কচলে বিছানায় উঠে বলল, “Good Morning মালতী দি ! Thanks ! কাপ টা রেখে দাও টেবিলের ওপর!” গিনি শুনলো মালতী দি বলছে ,”মরে যাই! মরে যাই! সূর্য ডুবতে যায় ,এতক্ষণে সকাল হল ইংলিশ ইস্কুলে পড়া বড়লোকের মেয়ের ! এত বড় ধিঙ্গি মেয়ের নিজের জিনিসের কোনো তালের ঠিক নেইকো ! তবে আমার তো ভালোই ! ঘুম ভাঙ্গার আগে ড্রয়ার থেকে জিনিস গুলো না সরাতে পারলে আমার যে এ মাসে কত খরচা বেড়ে যেত ! বাপ্পার জন্য পেন্সিল ,পেন,রবার সব ই প্রায় পেয়ে গেছি , শুধু কয়েকটা খাতা আরো লাগবে, কালকে অন্য ড্রয়ার টা ঘেটে নিশ্চই পেয়ে যাবো!” চমকে উঠে মালতী দির দিকে তাকালো গিনি , মালতী দির ঠোঁট নড়ছে না তবুও গিনি শুনতে পেল , “এভাবে তাকাচ্ছে কেন রে বাবা ! আঁচল টা আবার খুলে যায়নি তো! ” গিনি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে নিল। মুখ ধুয়ে এসে চা টা চটপট খেয়ে নিল গিনি। নিজের ভুলোমন কে বিশ্বাস না করে তখনি তাক থেকে কয়েকটা নতুন খাতা বার করে সামনের ড্রয়ারে রেখে দিল সে! তারপর দ্রুত স্নান সেরে তৈরী হয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল গিনি!
সীমার বাড়ি পৌঁছে দরজার বেল বাজাতেই সীমার মা দরজা খুললেন । গিনি হেসে বলল , “কাকীমা! সীমা বাড়িতে আছে ? খুব জরুরি একটা দরকার আছে তাই এত সকালে এভাবে আসতে হল !” সীমার মা হাসি মুখে বললেন ,”ওমা !তাতে কি হয়েছে ?তুমি তো আমার ঘরের মেয়ে ! নিজের বাড়িতে কি ঘড়ি দেখে আসতে আছে! ভিতরে চলে এসো তাড়াতাড়ি ! আমার কপাল কি তোমার মায়ের মত ওত ভালো গিনি ! দেখো গিয়ে আমার মেয়েটা এখনো ঠিক নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে হবে !” গিনি হেসে ভিতরে ঢুকে সিড়িতে পা রাখতেই শুনতে পেল কথাগুলো “বলা নেই কওয়া নেই, রবিবার কাক ভোরে এসে হাজির বৈজ্ঞানিক ,এখন আবার অতিথি সেবার ঝক্কি ! মরণ হয় না আমার ! সীমা টারও বলিহারি !বন্ধুত্ব করার জন্য এই আধ পাগল তাল জ্ঞান হীন মেয়েটাই চোখে পড়ল তোর ! কোন দুনিয়ায় থাকে কে জানে ,দু পায়ে দুরঙের চটি গলিয়ে চলে এলো সকাল সকাল আমার গতরের হাড়মাস জ্বালাতে !”
গিনির ইচ্ছা করছিল এই মুহুর্তে সীমার বাড়ি থেকে ছুটে বেরিয়ে যেতে , সেই ছোট্টবেলা থেকে কারণে অকারণে যখন তখন সে চলে আসে সীমার বাড়ি , তা কি শুধুই সীমার জন্য? সীমা তার একমাত্র বন্ধু ঠিকই কিন্তু গিনির এ বাড়িতে ছুটে ছুটে আসার পিছনে আরো একটা অনেক গভীর কারণ ছিল যা সে সীমাকেও কখনো বলতে পারেনি ,আজকের পর আর সে কারণ টার কোনো অস্তিত্বই থাকবে না ! নিজের মরা মায়ের ছবি দেখতো সে যার মধ্যে, আজ তার মনের কথা শুনে, গিনির ভিতরে সবকিছু যেন টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে, উফ!কি অসহ্য যন্ত্রণা ! চোখের জল মুছে ,কোনরকমে অসহায় পায়ে গিনি সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল !
সীমার ঘরে ঢোকার মুহুর্তে আচমকা একটা হাতের হ্যাঁচকা টান গিনিকে অন্য একটা ঘরে টেনে নিয়ে গেল ! গিনি হাত টা ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বলল ,”সৈকত দা ! কী করছ ! ছাড়ো আমাকে !” ছেলেটি দেওয়ালে ঠেস দেওয়া গিনির খুব কাছে এসে বলল, “কালকে আমার ফোন ওঠালি না যে বড়! রাতে ঘুম হয়নি আমার জানিস ! আমার রাগ ভাঙ্গাতেই বুঝি এত সকাল সকাল রাজকন্যার আগমন ? ” গিনি বলল ,”একটা দরকারী কাজ করছিলাম , ফোন টা সাইলেন্ট করা ছিল !” ছেলেটি গিনির আরো কাছে এসে বলল ,”আর তোর মন টা ? সেটাও সাইলেন্ট করা ছিল ? তুই কি এতদিনেও আমাকে একটুও ভালোবাসিস নি গিনি?” গিনি কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো ! ছেলেটি তার ঠোঁটের কাছে মুখ আনতেই গিনি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল , “আমার সীমার সাথে দরকার আছে সৈকত দা ,প্লিস ! যেতে দাও আমাকে !” দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরোনোর আগে গিনি কথাটা শুনে ভয়ে শিউরে উঠলো ,”আর কতদিন পালাবি গিনি ! আমার বিছানায় একদিন তোর ওই গুমোর না ভাঙলে লজেন্সের নাম বদলে সৈকত বিশ্বাস রাখিস !” গিনি দরজার মুখে দাড়িয়ে পিছনে ফিরতেই দেখলো ,ছেলেটি মায়া ভরা মুখে তখনো তার দিকে একই ভাবে তাকিয়ে আছে,এতদিনের ভালাবাসার মুখোশের পিছনে একটা ক্ষুধার্ত সিংহের চেহারা আজ আর গিনির দৃষ্টি এড়াতে পারল না । সময়ে অসময়ে গিনি অনেকবার ভেবেছে সৈকত দা তাকে সত্যি ভালোবাসে ,নাহলে এত বছর ধরে গিনির থেকে কোনো উত্তর না পেয়েও ,নিজের ভালোবাসাকে অপরিবর্তিত রেখে কেন করে সে এই নিরন্তর প্রতীক্ষা ! গিনির নির্বিকার মন ,সৈকত দার এই একপেশে ভালাবাসার ওপর বছরের পর বছর নিষ্ঠুর অবিচার করে এসেছে বলেই সে বিশ্বাস করত কিন্তু আজ সেই বিশ্বাসের পরিনতি দেখে তার ভিতরে কে যেন বিদ্রুপের অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে !
সীমার ঘরে ঢুকে গিনি দেখল সীমা আয়নার সামনে দাড়িয়ে তৈরী হচ্ছে । গিনি বলল ,”কোথাও বেরোবি সীমা? তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিল !” সীমা গিনির দিকে তাকিয়ে হেসে বলল ,”গিনি! তুই এত সকালে ? আরে সোহম কি একটা কথা বলবে বলে আজকে আমাকে দেখা করতে ডেকেছে ,তুইও চল না আমার সাথে , আমার একা যেতে কেমন যেন ভয় করছে ,যাবি ?” গিনি একটু ভেবে তারপর এগিয়ে গিয়ে সীমার পাশে দাড়িয়ে বলল,”আচ্ছা চল ! তোর তো এখন আমার কথা শোনার সময় নেই কিন্তু কথাটা তোকে বলাটা যে খুব জরুরি, তাই রাস্তায় যেতে যেতেই বলে দেব না হয়!” গিনি আয়নায় দেখতে পেল সীমা হাসি মুখে চুল টা খুলে আরেকবার আঁচড়াচ্ছে ,সীমার মুখের ভাবটা একটুও পরিবর্তন হলো না কিন্তু গিনি স্পষ্ট শুনতে পেল কথা গুলো ,”অন্যদিন কত বলি কোথাও যায় না ! আজ ওমনি একবার বলতেই রাজী হয়ে গেল ! এত সাজলাম তবু গিনির এলমেলো চুল আর যত্নহীন মুখটাই বেশী সুন্দর লাগছে । যা একটা মেয়ের চোখকে অস্বস্তি দিচ্ছে সেটা কি সোহমের মত ছেলের চোখে পড়বে না? আর তাহলে তো আমার এতদিনের অপেক্ষার অবসান হয়েও হবে না । গিনি তো যন্ত্রপাতি ছাড়া কিছুই বোঝে না! নিশ্চই যন্ত্র নিয়ে কিছু বলবে বলেই সাত সকালে ছুটতে ছুটতে এসেছে আমার বাড়ি ,সময়ও বেশী হাতে নেই যে ওর ইতিহাস বাড়িতে বসেই শুনবো ,এখন আমি যে কি করি ! ”
গিনি আর দাড়িয়ে থাকতে পারছে না , সবকিছু চারিদিকে যেন ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে তার। কোনরকমে সে সীমাকে বলল “সীমা একটা জরুরি কাজ মনে পড়ে গেছে রে ,এখনি যেতে হবে আমাকে !” সীমার ঘর থেকে উদ্ভ্রান্তের মত বেরোনোর আগে ‘বাঁচা গেছে উফ!’ কথাটা গিনির কানে গিয়ে প্রচন্ড গতিবেগে ধাক্কা মারলো। এক নিঃশ্বাসে গিনি বাড়ি পৌঁছে, নিজের ঘরে ঢুকে ,বিছানার ওপর ভীষণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল । এতদিন সে যা সত্যি ভেবে এসেছে ,তার সবটাই তো মিথ্যা, তার উজার করে ভালাবাসার বদলে তার জন্য এক ফোঁটা সহনাভূতিও নেই সেই ভালাবাসার মানুষ গুলোর মধ্যে , এ সত্যির যন্ত্রণা যে অসহ্য , এর থেকে তো অনেক ভালো হত যদি সে সারাজীবন মিথ্যে আঁকড়ে কাটিয়ে দিত । গিনির সব রাগ গিয়ে পড়ল গলায় ঝোলানো যন্ত্র টার ওপর ,ওটা টেনে ভেঙ্গে ফেলার আগের মুহুর্তে সে শুনতে পেল , “একি ! গিনি কখন এলো ? আমি তো সেই কখন থেকে ঠায় সামনের বারান্দায় বসে ছিলাম ,পিছনের দরজা দিয়ে এসেছে কি তাহলে ! আজ সীমার বাড়ি থেকে এত তাড়াতাড়ি কেন চলে এলো ও ? আর এভাবে বিছানার ওপর অসময়ে শুয়েই বা আছে কেন ? যাই দেখি শরীর খারাপ হল না তো আবার ! না না ,আমি গেলে এই শরীর নিয়ে আবার যদি রেগে বেরিয়ে যায়, আমাকে তো একেবারে সহ্যই করতে পারে না ,মালতী ও তো চলে গেছে আর ওর বাবাও তো একটু আগে কাজে বেরোলেন ! আমি যে এখন কি করি! আমাকে জিজ্ঞাসা করতেই হবে , অপমানই করুক না হয়, পেটে ধরিনি বলে মা নই জানি কিন্তু তাই বলে কি ক্ষনিকের গালাগালিও হজম করতে পারব না !”
ভদ্রমহিলা বিছানায় বসে গিনির পিঠে হাত দিয়ে আরষ্ট স্বরে বললেন ,”গিনি! কী হয়েছে তোমার ?শরীর খারাপ ?”গিনি কোনো উত্তর না দিয়ে তার কোলের উপর মুখ গুঁজে বলল , ” মানুষ চেনা বড় কঠিন ,তাই না মা ? ” ভদ্রমহিলার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো ,মুখ থেকে কোনো শব্দ বেরোলো না , গিনি শুনতে পেল ,”মা ? আমি গিনির মা ? না না , এ নিশ্চই আমার শোনার ভুল ! নাকি জ্বরের ঘোরে মায়ের স্বপ্ন দেখছিল আর আমি আসাতে ….” গিনি বলল , “মা র কোলে শুয়ে ,জেগে জেগে, কেউ মায়ের স্বপ্ন দেখে বুঝি ? আর আমার জ্বর কোথায় ! তোমার গায়ের থেকে আমার গা অনেক ঠান্ডা ! একটা কথা বলছি তোমাকে ,কাউকে বোলো না কখনো ,তোমার গিনি মাইন্ড রিডার । জানো মা ! বিজ্ঞান বোধহয় ইচ্ছা করেই কিছু জিনিসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে না , মানুষ যা বিজ্ঞানের অক্ষমতা বলে ভুল করছে সে ক্ষমতা বিজ্ঞান সর্বসমক্ষে কোনদিন প্রকাশ করলে ,পৃথিবীর মানুষ যে তার ভার সইতে পারবে না ,সে সত্যি আমার থেকে ভালো আজ আর কেউ জানে না!”
মায়ের কোল গিনির চোখের জলে আর মায়ের চোখের জলে গিনির হাতের পাতা নিঃশব্দে ভিজে যেতে লাগলো ,হঠাৎ বিছানায় লাফিয়ে ওঠা লজেন্সের জিভের আদরে গিনি ভেজা চোখেই হেসে উঠলো ,গিনি শুনতে পেল লজেন্স বলছে ,”আমার গিনি ! আমার গিনি ! আমার গিনি! আদর করে ভিজিয়ে দেব তোকে !”
ধন্যবাদ,

দুঃখিত!