মহানবী (সাঃ) – এর আগমনকালে আরব, অনারব-এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকাসহ সমগ্র পৃথিবীর অবস্থা নিতান্তই খারাপ ছিল। তখন সারাবিশ্বে চলেছিল মানুষে মানুষে হানাহানি-কাটাকাটি, জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচার, অনাচার, অবিচার আর অন্যের অধিকার হরণ, সম্পদ লুন্ঠন ইত্যাদি নানাবিধ গর্হিত কর্ম। দুর্বলের প্রতি সবলের জুলুম ছিল শক্তিমত্তা ও যোগ্যতার নিদর্শন। এ সময় মানব জীবন যে কিরুপ অভিশপ্ত আর কলুষিত হয়েছিল তা ইতিহাসে সবিস্তর বর্ণিত রয়েছে। জগদ্ব্যাপী চলছিল অভিশপ্ত ইবলীসের জয় জয়াকার।
খ্রীষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে দুনিয়ার মানব ধর্ম, মনুষ্যত্বের যাবতীয় মহৎ গুণাবলী পাপাচার আর অনাচারের অন্ধকারে সম্পূর্ণ আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছিল। পাপাচার, দুর্নীতি, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার প্রভৃতির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টির সেরা মানুষ তাদের ন্যায় অন্যায় বিচার বোধ হারিয়ে ফেলেছিল।
পৃথিবীর মানুষের এত অধপতনের পরও হযরত ঈসা (আঃ)- এর পৃথিবী থেকে আসমানে উত্থিত হয়ে যাওয়ার পর হতে ৫৭০ বছর পর্যন্ত কোন নবী রাসূলের আবির্ভাব ঘটেনি। এ সময় সৃষ্টির সেরা মানুষ আল্লাহকে ভুলে কুফর ও শিরকে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল। ফলে মানুষ তার মনুষত্ব হারিয়ে পশুরও অধম হয়ে গিয়েছিল। তখনকার অবস্থা এমন লাজুক হয়ে পড়েছিল যে চতুর্দিকে পশুর যে রকম কোন ভালমন্দ, ন্যায় অন্যায়ের জবাবদিহি করতে হয় না, প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না, মানুষের চালচলন, আচার আচরণ দেখলেও তাই মনে হত।
এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকরা সকলেই ঐকমত্য পৌঁছেন যে, খ্রীষ্টীয় ষষ্ঠ শতকের শেষ প্রান্তে মহা নবী (সাঃ)- এর আবির্ভাবের সময় দুনিয়া সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং অবনতির কাল। এ অন্ধকার আর অবনতির যুগেই মানুষ গ্রহ-নক্ষত্র, চন্দ্র-সূর্য, পাহাড়-পর্বত, পশু-পক্ষী, দেব-দেবী, গাছ-পাথর ইত্যাদির উপাসনায় আত্ননিয়োগ করে।
এভাবে মানুষ এক আল্লাহর স্থলে বহু প্রভুর উপাসনার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় আরব ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলসমূহে খ্রীষ্ট এবং ইহুদী ধর্মের বেশ প্রভাব ছিল। ভারতে হিন্দু ধর্ম প্রভাব বিস্তার করেছিল। ভারতীয়দের ধারণা, দেহকে যত বেশী কষ্ট দেয়া যায় আধ্যাত্নিক উন্নতি তত অধিক হয়ে অন্তরের পবিত্রতা সাধিত হয়। এ চিন্তার ফলশ্রুতিতেই হিন্দুদের মাঝে যোগবাদ এবং খ্রীষ্টানদের মাঝে সন্ন্যাসবাদের উদ্ভব ঘটে।
এখন দেখা যাক, তৎকালীন পৃথিবীর, বিভিন্ন দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বৈষয়িক ও আধ্যাত্নিক অবস্থা এবং যে আরবে রাহমাতুল লিল আলামীন আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) – এর আবির্ভাব ঘটে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।