মস্ত বড় জ্ঞানী

সোভিয়েট রাশিয়া। বর্তমান বিশ্বের এক নাম করা দেশ। সেই দেশের একটি মুসলিম প্রদেশ উজবেকিস্তান।

অনেক অনেকদিন আগে উজবেকিস্তানকে বুখারা বলা হতো। বুখারা দেশটি ভারি সুন্দর। চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঘরবাড়ী। খালি গায়ে লোকেরা চলাফেরা করতে পারে না। কারণ বার মাসেই সেখানে শীত থাকে। বুখারার পাশেই ইরান দেশ। সেই ইরান দেশের এক লোক, নাম তাঁর মুগীরা। তিনি ইরান ছেড়ে এসে বুখারা শহরে বসবাস করছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষগণ আগুনের পুজো করতো। এক আল্লাহর প্রতি তাঁদের বিশ্বাস ছিলো না। মুসলমানরা এক আল্লাহর ইবাদত করে। আগুন পানি বাতাসসহ দুনিয়ার সকল কিছুই তো এক আল্লাহর সৃষ্টি! মুগীরা তার পূর্বপুরুষদের মতো অগ্নি পুজো করতো। কিন্তু তিনি অগ্নি পুজো করলে কি হবে, এতে তাঁর বিশ্বাস ছিলো না। তিনি সৃষ্টিকর্তা নিয়ে ভাবতে লাগলেন। ভাবতে ভাবতে তিনি মুসলমানদের ধর্মকে ঠিক মনে করলেন। সেই সময় বুখারার গভর্ণর ছিলেন মুসলমান। খুব ভালো লোক ছিলেন তিনি। ব্যবহার ছিলো তাঁর সুন্দর। মুগীরা গভর্ণরের কাছে গেলেন। গভর্ণরের ব্যবহারে তিনি উৎসাহ পেয়ে বললেনঃ জনাব, আমি মুসলমান হবো। গভর্ণর এতে খুব খুশী হলেন। তাঁকে পাক পবিত্র করে ‘কালেমা’ পাঠ করালেন। গভর্ণরের নাম ছিলো য়ামানুল জুফী। এভাবে কাটলো অনেক দিন। তারপর একদিন মুগীরা স্ত্রীর কোল জুড়ে আসলো একটি ফুটফুটে ছেলে। ছেলেটি খুবই সুন্দর। মাতাপিতা আদর করে নাম রাখলেন ইবরাহীম। খাঁটি মুসলমান রূপে বড় হয়ে উঠলেন তিনি। সৎভাবে ব্যবসা করতেন। লোকদেরকে ঠকাতেন না। খারাপ বা ভেজাল মাল বিক্রয় করতেন না। সৎভাবে ব্যবসা করে অনেক টাকা হলো তাঁর। এই ইবরাহীমের পুত্র ইসমাঈল নিজের সাধনায় জ্ঞানের শিখড়ে আরোহন করলেন, হলেন বিজ্ঞ মুহাদ্দিস ও একজন সৎ ব্যবসায়ী।

১৯৪ হিজরী সাল। ইসমাঈলের এক ছেলে জন্ম নিলো। নাম মুহাম্মদ। সুন্দর ফুটফুটে চাঁদের মতো তাঁর মুখ। এই ছেলেটিই বড়ো হয়ে মুসলিম জাহানে ইমাম বুখারী (রঃ) হিসেবে পরিচিত হন।

তাঁর জ্ঞান গুণ ছিলো অসাধারণ। হাদীস সংকলক হিসেবে তাঁর নাম দুনিয়াজোড়া। তিনি প্রায় ছয় লক্ষ হাদীস সংগ্রহ করেন। ছয় লক্ষ হাদীসের মধ্যে দু’লক্ষ হাদীস ছিলো তাঁর মুখস্ত। এমন ছেলের সুনাম কে না করে বলো।

বুখারী (রঃ) যখন হাদীস সংগ্রহ করছিলেন সেই সময় আরও কয়েকজন মনীষী এ কাজে আত্মনিয়োগ করেন। হাদীস-শাস্ত্রের কথা বলতে গেলে তাঁদের কথাও বলতে হয়। তাঁরা হলেন ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম নাসাঈ, ইমাম ইবনে মাজা, ইমাম তিরমিযি (রঃ)। হাদীস সংগ্রহকারীদের মধ্যে ইমাম বুখারী (রঃ) এবং এঁর পর পাঁচ জন হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ। ইমাম বুখারী (রঃ) ও এই পাঁচজন মুহাদ্দিসের পর সংকলিত হাদীস গ্রন্থ ‘সিহাহ সিত্তা’ নামে পরিচিত।

ইমাম বুখারী (রঃ)-এর হাদীস গ্রন্থখানি সকলের কাছে সহীহ বুখারী নামে পরিচিত। এ গ্রন্থ সংকলন করার সময় তিনি যে নিয়ম পালন করেন তা শুনতেও অবাক লাগে। এ সম্পর্কে বুখারী (রঃ) নিজেই বলেনঃ এক একটি হাদীস লেখার আগে আমি দু’রাকাত নফল নামায পড়ে মুনাজাত করেছিঃ হে আল্লাহ আমি অজ্ঞ। আমার হৃদয়ে জ্ঞানের আলো জ্বেলে দাও। হাদীস লেখায় আমি যেনো ভুল না করি।

এভাবে মুনাজাত করে তিনি মদীনায় অবস্থান কালে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর কবরের পাশে বসে এক একটি হাদীস লিখতেন এবং লেখার পূর্বে গোসল করে নামায আদায় করতেন।

ইমাম বুখারী (রঃ) তখন খুব ছোট। তাঁর আব্বা মারা গেলেন। মা তাঁকে আদর দিয়ে লালন পালন করতে লাগলেন। দৈবক্রমে তাঁর চোখের জ্যোতি কমে যাচ্ছিলো। তা দেখে মায়ের দুঃখের অন্ত ছিলো না। মা ভাবে, হায়! সারাটা জীবন ছেলেটির কতই না কষ্ট হবে! অনেক বড়ো বড়ো হেকিম দেখানো হলো। কিন্তু কোন হেকিম তাঁকে ভালো করতে পারলেন না।

 

মা ছিলেন পরহেজগার মহিলা। নামায পড়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করলেন। আর ধৈর্য ধরে দোয়া করতে লাগলেনঃ আল্লাহ যেনো ছেলেকে ভালো করে দেয়। আল্লাহ, বড়ো দয়ালু। দুঃখিনী মায়ের দোয়া কবুল করলেন। এভাবে তাঁর মা একদিন ছেলের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন ইবরাহীম (আঃ) স্বপ্নে দেখা দিয়ে তাঁকে বললেনঃ হে পরহেজগার মহিলা, আপনার দুঃখ দূর হলো। আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করে তাঁর চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দিয়েছেন।

ভোরে ঘুম ভাঙার পর তিনি দেখলেন বুখারী (রঃ)-এর চোখের সমস্ত অন্ধত্ব দূর হয়ে গেছে। তিনি আল্লাহর শোকার আদায় করলেন।

দশ বছর তাঁর বয়স। বুখারী (রঃ) নিকটস্থ মক্তবে লেখাপড়া করতেন। সেই সময় হতে তিনি আলিমদের মুখে যে সব হাদীস শুনতেন সেসব মুখস্থ করে ফেলতেন।

তখনকার সময়ে শিক্ষার বিষয় ছিলো কুরআন ও হাদীস। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) যেভাবে যা বলছেন, তা হুবহু গ্রহণ করতে হবে। এটাই নিয়ম। কিন্তু তখন কোনো বই ছিলো না। কারণ বর্তমানের মতো কাগজ তখন ছিলো না। হাড়, চামড়া ও পাথরের উপর লিখে রাখতে হতো। তখন হাদীস বা নবী (সঃ)-র বাণী লিখে রাখা সম্ভব হতো না। যাঁরা শুনতেন তাঁরা মনে রাখতেন। এঁদেরকে সাহাবী বলা হয়। নবী (সঃ) ইনতিকালের পর ধীরে ধীরে সাহাবীরা বয়োবৃদ্ধ হলেন। আবার অনেকে শহীদ হলেন। মুসলমানরা তখন কুরআন ও হাদীসকে চিরকালের জন্য হিফাজত করতে চাইলেন, এ প্রয়োজনে কুরআন হাদীস সংগ্রহ শুরু হয়। কুরআন নির্ভুলভাবে সংগৃহীত হলো। কারণ অনেক সাহাবী কুরআনে হাফিজ ছিলেন। কিন্তু হাদীস সংগ্রহের বেলায় সমস্যা দেখা দিলো। নবী (স) কোন সময় কার কাছে কি বলেছেন তা একত্রে জড়ো করা এবং নির্ভুলভাবে সেগুলো হুবহু বর্ণনা করা সহজ ছিলো না।

জ্ঞানী লোকেরা হাদীস পড়াশোনা করতো। তাঁরা শুধুমাত্র লোকদের মুখে হাদীস শুনতেন না, লোকটি কেমন করে খোঁজও নিতেন। বুখারী (রঃ) সে জ্ঞানীদের মধ্যে নাম করা একজন ছিলেন। হাদীস পড়াশোনায় তাঁর জ্ঞান ছিলো অগাধ। কিছু দিনের মধ্যে বুখারী (রঃ) মক্তবের পড়া শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

অল্প সময়ের মধ্যেই এই বালকের সে সাধ পুরো হতে চললো। আল্লামা দাখেলী তখন বুখারার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। মায়ের অনুমতি নিয়ে বুখারী (রঃ) আল্লামা দাখেলীর খিদমতে শাগরিদ হওয়ার জন্য আরজি পেশ করলেন। আল্লামা দাখেলী এ জ্ঞানী বালককে আনন্দের সাথে শাগরিদভুক্ত করে নিলেণ। এর মধ্যে একদিন একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেলো। ক্লাশে পড়াবার সময় আল্লামা দাখেলী একটি হাদীসের সনদে ভুল করে বসলেন। বুখারী (রঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, “জনাব, ওখানে আপনার ভুল হয়েছে”। কথা শুনে শিক্ষকের রাগ হচ্ছিল। পরে হাদীস গ্রন্থ বের করে দেখলেন বুখারী (রঃ) ঠিকই বলেছেন। আসলে তিনিই ভুল বলেছেন। এতে দাখেলী খুশী হলেন। বালক বুখারী (রঃ)-এর মেধাশক্তির প্রশংসা করে তাঁর ভবিষ্যত সম্বন্ধে খোশখবরী দিলেন। মক্কা, মদীনাসহ মুসলিম দুনিয়ার বড়ো বড়ো শহর ঘুরে এসে বুখারী (রঃ) ষোল বছর বয়সেই হাদীসের সকল কেতাব মুখস্ত করে ফেললেণ।

 

একদিনের একটি সুন্দর ঘটনা। বালক বুখারী (রঃ)-র সহপাঠী হামিদন বিন ইসমাইল বললেনঃ বুখারী, তুমি কাগজ কলম নিয়ে ক্লাসে আসো না। উস্তাদের শিক্ষণীয় বিষয় কি করে তুমি মনে রাখবে? তখন বুখারী (রঃ) উত্তর দিলেনঃ তবে শোনো বন্ধুগণ,  তোমাদের লেখার সাথে আমার স্মরণ শক্তির প্রতিযোগিতা হোক। বন্ধুরা বুখারী (রঃ)-র কথায় রাজী হলো। বন্ধুরা তাদের বহু দিনের লেখা পনের হাজার হাদীসের খাতা সামনে রাখলো। বালক বুখারী (রঃ) এক এক করে পনেরা হাজার হাদীস অনর্গল মুখস্থ বলে দিলেন। এ স্মরণ শক্তি দেখে বন্ধুরা আশ্চর্য হলো! বুখারী (রঃ)-র ব্যক্তিত্বের নিকট বন্ধুদের মস্তক ভক্তিতে নত হয়ে পড়লো।

বালক বুখারী (রঃ) অনেক গুণের অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন মানব দরদী। মানুষকে তিনি মনে প্রাণে ভালোবাসতেন। তাদের সুখ-দুঃখে তাঁর হৃদয় ব্যথিত হতো। মানুষের কল্যাণ সাধনে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। তাঁর জন্য নিজকে অশেষ কষ্ট স্বীকার করতে হলেও তিনি কিছুমাত্র কুণ্ঠা বোধ করতেন না।

শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন আল্লাহ ভক্ত এক মহান বালক। আল্লাহর ধ্যান ছিলো তাঁর জীবনের পরম সাধনা।

বুখারী (রঃ) চিরকালের এক বিরল প্রতিভা। যুগে যুগে তাঁর মতো এমন প্রতিভাবান ব্যক্তি খুব কমই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। বেঁচে থাকবেন মস্ত বড়ো জ্ঞানী হিসেবে।

বুখারী (রঃ)-র আব্বা অনেক অনেক ধনসম্পদ রেখে ইনতিকাল করেছিরেন। তিনি এসব ধনসম্পদ ব্যবসায়ে লাগাতেন। কিন্তু জ্ঞান সাধনায় ডুবে থাকতেন বলে তিনি বিভিন্ন লোকদের মারফতে ব্যবসা চালাতেন। তবে তিনি কর্মচারীদের কাজকর্মের দিকে খুব খেয়াল রাখতেন। তাঁর দ্বারা যেনো কোনো লোক না ঠকে সেদিকেও নজর রাখতেন। বেশী দাবমের জিনিসের সাথে কম দামের জিনিস মিশিয়ে বেশী দামে বিক্রি করা বা খারাপ জিনিসকে ভালো বলে চালানো এসব কাজ যাতে কর্মচারীরা না করতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতেন তিনি।

বুখারী (রঃ)-র মন ছিলো খুবই উদার। কোন লোক তাঁর ক্ষতি করলেও তার বদলা তিনি নিতে চাইতেন না।

একদিন তাঁর ব্যবসায়ের এক অংশীদার তাঁর পঁচিশ হাজার দেরহাম নিয়ে পালিয়ে গেলো। লোকটি কোন জায়গায় লুকিয়ে আছে ইমাম বুখারী (রঃ)-কে তা জানানো হলো এবং লোকটিকে পাকড়াও করার জন্য বলা হলো। কিন্তু ইমাম বুখারী (রঃ) এতে রাজি হলেন না। এজন্য সেখানকার গভর্ণরকে অনুরোধ জানাতে হবে। হয়তো তাঁর কাজ হাসিল হবে। কিন্তু গভর্ণর এই উপকারের বদলায় তাঁর দ্বারা কোন অন্যায় কাজও করিয়ে নেবার সুযোগ খুঁজতে পারেন। বুখারী (রঃ)-র বন্ধুরা তাঁর অগোচরেই পলাতক লোকটিকে ধরার ব্যবস্থা করলেন। একথা জানতে পেরে বুখারী (রঃ) খুব রেগে গেলেন। তিনি দেরী না করে বন্ধুদেরকে জানিয়ে দিলেন তারা যেনো লোকটির সাথে কোনরূপ খারাপ ব্যবহার না করে।

 

ঘটনাক্রমে সেখানকার গভর্ণর ঘটনাটি জানতে পারলেন। গভর্ণর লোকটিকে ধরে আটকিয়ে রাখলেন আর পঁচিশ হাজার দেরহাম জরিমান করলেন। ইমাম বুখারী (রঃ) খবর পেয়ে দুঃখিত হলেন। তিনি লোকটিকে বাঁচানোর কথা ভাবলেন। গভর্ণরের কাছে গিয়ে একটি শর্তে তিনি তা মীমাংসা করলেন। লোকটির জরিমানা পঁচিশ হাজার দেরহামের বছর বছর মাত্র দশ দেরহাম করে পরিশোধ করার ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু দুষ্ট লোকটি বুখারী (রঃ)-র একটি দেরহামও আর ফেরত দিলো না। এভাবে বুখারী (রঃ) নিজের ক্ষতি করেও পরের উপকার করতেন।

বুখারী (রঃ) ব্যবসা করে যে টাকা আয় করতেন তা শুধু নিজের কাজে খরচ করতেন না বরং আয়ের বেশীর ভাগ টাকা তিনি গরীব, ফকির ও দুঃখীদের মধ্যে দান করে দিতেন। সাধারণ খাওয়া-দাওয়া করে বুখারী (রঃ) খুশী থাকতেন। কোন রকম বিলাসিতা করা তিনি পছন্দ করতেন না। বুখারী (রঃ) আমাদেরপ্রিয় নবী (সঃ) ও তাঁর সাহাবীদের মত পাক পবিত্র জীবন যাপন করতে ভালোবাসতেন।

আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) মানুষকে বলেছেন চাকরবাকরদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে। বুখারী (রঃ)-র বাড়ীতেও চাকরবাকর ছিলো। একদিন বুখারী (রঃ) ঘরে বসে আছেন। তাঁর পাশেই ছিলো একটি কালির দোয়াত। ঘরের এক দাসী তাঁর কাছে দিয়ে যাচ্ছিল, অসাবধানে চলাতে তার পা লেগে কালির দোয়াত উল্টে পড়ে গেলো। পড়া মাত্রই কালি চারদিকে ছিটিয়ে পড়লো। এতে কার না রাগ হয়। কিন্তু বুখারী (রঃ) রাগ সংযত করে বললেনঃ তুমি ঠিকমত হাঁটতে পারো না? দাসী বেআদবের মত জবাব দিলোঃ পথ না থাকলে আমি কি করে চলবো?

অন্য কেউ হলে হয়ত রাগে দাসীকে মারধর করতো। কিন্তু বুখারী (রঃ) তাতেও রাগ না করে দাসীকে বললেনঃ যাও, তোমাকে আযাদ করে দিলাম। অথচ তাঁর দাসীকে তিনি মারধর করলেও কেউ কিছু বতে পারতো না। বুখারী (রঃ) দাসীর সাথে এত সুন্দর ব্যবহার করতে দেখে তাঁর পাশে বসা এক ভদ্রলোক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ দাসী অন্যায় করলো, তাকে শাস্তি না দিয়ে আপনি তাকে মুক্তি দিলেন, এটা  কি রকম ব্যাপার? বুখারী (রঃ) জবাব দিলেনঃ আমি আমার মনকে এ ব্যাপারে রাজী করালাম।

কারো আড়ালে কারো দোষের কথা বলার নাম গীবত। গীবত করা ইসলামে নিষেধ। একজন খাঁটি মুসলমান হিসেবে বুখারী (রঃ) কখনো কারো গীবত করতেন না। এরূপ সামান্য অন্যায় হলেও তিনি অনুতপ্ত হতেন।

একদিন এক অন্ধ লোকের কাছে তিনি মাফ চাইলেন। অন্ধ লোকটি কিছুই বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে জানতে চাইলো ব্যাপারটি কি! তখন বুখারী (রঃ) বললেনঃ একদিন আপনি খুব খুশী মনে হাত ও মাথা দুলিয়ে কথা বলছিলেন। আপনার হাত ও মাথা নাড়ার ভংগ দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছিলো। এজন্যই আমি অনুতপ্ত হয়ে আপনার কাছে মাফ চাচ্ছি। অন্ধ লোকটি খুশি হয়ে বললোঃ না এ তেমন কিছু নয়। আমি মাফ করে দিলাম।

নিজের কাজ নিজে করলে সম্মান কমে না। বুখারী (রঃ) নিজের কাজ নিজেই করতেন। সে সব কাজ নিজের পক্ষে করা সম্ভব তা করতে অন্য কারো সাহায্য নিতে চাইতেন না।

 

সারা বিশ্বের মধ্যে যে ক’জন জ্ঞানী-গুণী লোক কাজ কর্মে খাঁটি মানুষ হিসেবে পরিচিত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে  বুখারী (রঃ) ছিলেন অন্যতম। প্রিয় নবী (সঃ)-র কথাগুলো তিনি যেমন মুখস্থ রাখতেন তেমনি সেই কথামত চলতেন। ইসলামের নিয়ম-নীতির বাইরে তিনি কিছুই করতেন না। কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান সাধনার জন্যই তিনি জীবনে মস্ত বড়ো জ্ঞানীর সম্মান লাভ করেছেন। মুসলিম জাহানে তিনি বেঁচে থাকবেন মস্ত বড়ো জ্ঞানী হিসেবে। ২৫৬ হিজরী ঈদুল ফিতরের দিন তিনি ইনতিকাল করেন। ঈদের দিন যোহরের সময় সমরকন্দের খরতংগ গ্রামে তাঁকে দাফন করা হয়। দুনিয়ার বুকে প্রায় বাষট্টি বছর বেঁচে ছিলেন এই জ্ঞানবীর। কোটি কোটি মানুষ এই মহাজ্ঞানীর জন্য চোখের পানি ফেলে। পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ এই জ্ঞানীর নাম ইমাম বুখারী (রঃ)। যার লেখা বোখারী শরীফ আজ পৃথিবী বিখ্যাত।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!