এক ছিল গভীর জঙ্গল আর পাশে একটি নদী। সেখানে রাজা ছিল, জলে কুমির আর ডাঙায় বাঘ। দুই রাজ্যের প্রজারা খুব সুখে শান্তিতে বাস করতো। ডাঙার প্রজাদের অনেকেই জল রাজ্যে যেত, তার মধ্যে বেশি যেত সাপ। আর জলের প্রজাদের মধ্যে বেশি ডাঙায় আসতো ব্যাঙ আর কচ্ছপ। তাদের মধ্যে যত না সুখ-দুঃখের কথা হতো, তার চেয়ে বেশি হতো নিজ রাজ্যের রাজাকে নিয়ে গর্ববোধের লড়াই।
সাপ বলতো, “আমাদের রাজা খুব শক্তিশালী, অনেক বড় যোদ্ধা।”
ব্যাঙ ও কচ্ছপ এরাও কম যায় না। তারা তাদের রাজাকে নিয়ে গর্ববোধ করতো, তাদের রাজা মহাশক্তিশালী, অকুতোভয় বীর। এক কথায়, দু’কথায় দুই রাজ্যের প্রজারা তাদের রাজাকে নিয়ে শক্তির মর্যাদায় মেতে উঠলো।
জলরাজ্যে রাজা কুমিরের কানে এ খবর গেল। সে রেগে বলল, “কে আসে? আজই দূত পাঠাও, আমি ডাঙার রাজা বাঘের সাথে যুদ্ধ করতে চাই।” কচ্ছপ গেল প্রস্তাব নিয়ে। সেদিনই বনের প্রজাদের মধ্যে আক্রোশ ছড়িয়ে পড়লো। “কি! সামান্য জলরাজ্যের প্রজারা আমাদের লড়াইয়ের প্রস্তাব দেয়! এত বড় সাহস?”—এমন চিৎকার আর রোষে বন ভরে গেল।
সবাই বসে মিটিং করলো। এরপর শিয়াল পন্ডিত, হাতি, বানর, হরিণ, ভাল্লুক সহ সবাই বাঘের কাছে গেল।
শিয়াল বলল, “মহারাজ, কচ্ছপ যে প্রস্তাব দিয়ে গেছে, তার উচিত জবাব দেওয়া। কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে আপনি দেখিয়ে দিন যে আপনার সমকক্ষ কেউ নেই।”
বাঘ বলল, “বাদ দাও ওসব। কে কি বলল আর কি মনে করলো, ওসব নিয়ে ভাবলে নিজেদেরই ক্ষতি হয়। কুমির নিজেকে বড় মনে করুক না। এতে আমাদের কি আসে যায়? আমরা সুখে শান্তিতে আছি, অযথা কলহ করে লাভ কি?”
শিয়াল বলল, “মহারাজ, আপনি যদি এইভাবেই চুপ করে থাকেন এবং কুমিরের সঙ্গে লড়াই না করেন, তাহলে আপনার রাজ্যের প্রজারা মনে করবে আপনি দুর্বল। তারা আপনার শাসন মানবে না। একদিন আপনাকে রাজা মানতে অস্বীকার করবে। এমনকি তারা নিজেরাও রাজা হওয়ার লড়াইয়ে নামবে।”
হাতি বলল, “পন্ডিত মহাশয় কাটি কথা বলেছেন।”
ভাল্লুক বলল, “ঠিক কথা।”
বানর বলল, “রাজি হয়ে যান, মহারাজ!”
বাঘ বলল, “ঠিক আছে। তোমরা যখন বলছ, আমি লড়াই করবো।”
মহারাজের জয় হোক—বলেই সবাই চলে গেল।
বাঘ পড়লো মহাচিন্তায়। সে জানে, কুমিরের সঙ্গে লড়াই করলে জেতা সম্ভব নয়। কারণ কুমিরের চামড়া খুব শক্ত, এবং শরীর সূচের মতো কাটা। এমনকি দাঁতও খুব মারাত্মক।
বন আর নদীর মাঝে ফাঁকা যে মাঠটা ছিল, সেখানে লড়াইয়ের আয়োজন করা হল। নিদিষ্ট দিনে জল ও স্থলের প্রজারা হৈ-হৈ, রৈ-রৈ করে মাঠে হাজির হলো। টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে শুরু হলো বাঘ-কুমিরের লড়াই।
বাঘ ভীষণ গর্জন করতে করতে কুমিরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। কুমির একটু ভয় পেল বটে, কিন্ত দমে গেল না। বাঘ কুমিরকে থাবা মারে আর কুমির লেজ দিয়ে ঝাপটা মারে। এভাবে অনেকক্ষণ লড়াই হলো, কিন্তু কুমিরের কিছুই হল না। বরং কুমিরের শরীরের ধূলা-বালি পরিস্কার হলো মাত্র। এদিকে কুমিরের কামড় আর ঝাপটায় বাঘের কাহিল অবস্থা। শরীরও ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে।
বাঘ দেখলো, কোন অবস্থাতেই কুমিরের সঙ্গে জেতা যাবে না। তখন সে মনোযোগ দিয়ে সূর্যের কাছে প্রার্থনা করলো। প্রার্থনায় সূর্য সন্তুষ্ট হলেন। আর তখন এমন প্রখর রোদ দিলেন যে কুমির সেই রোদের তাপ আর গরমে দিশেহারা হয়ে গেল। সে মনের অজান্তেই শরীর ঠান্ডা করার জন্য নদীর পানির দিকে দৌড় দিল।
এ অবস্থা দেখে বনের প্রজা আর পানির প্রজারা ভাবলো, “কুমির ভয় পেয়েছে।”
বনের প্রজারা জয়ধ্বনি দিতে দিতে বাঘকে কাঁদা করে নিয়ে বনের দিকে চলে গেল। আর জলের প্রজারা হার মেনে নিয়ে কুমিরের পিছু নিয়ে জলের দিকে ফিরে গেল।
পাঠিয়েছেন– মোবারক হোসেন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।