মনে আল্লাহ তায়ালার ভয় – পর্ব ১
শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত জুন্নুন মিশরী (রহঃ) বলেন, ইয়ামেনে একজন প্রখ্যাত বুজুর্গ ছিলেন। একবার হজ্জ শেষে আমি তার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সফরে রওয়ানা হলাম। আমার সাথে আরো কয়েক ব্যক্তি যাত্রা করল। সহযাত্রীদের মধ্যে একজন ছিল বয়সে যুবক। প্রথম দর্শনেই আমি তার মধ্যে আল্লাহ ওয়ালাদের অনেক গুনের সমাবেশ দেখতে পেলাম।
আল্লাহর ভয়ে সে এতটা ভীত সন্ত্রস্ত ছি যে, তার চোখ হতে অনবরত অশ্রু ঝরছিল। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন এ মুহুর্তে তার উপর কোন ভয়াবহ মুসিবত পতিত হয়েছে। আমরা তাকে তিরস্কার করে বললাম, ভাই! তুমি নিজের নফসের উপর এত কঠোরতা আরোপ করছ এটা ঠিক নয়। দেহের প্রতি যত্ন নাও। কিন্তু সে আমাদের কথায় কোন কর্ণপাত না করে যথারীতি নিজের নফসের উপর নানাবিধ কঠোরতা আরোপপূর্বক মোজাহাদায় নীরব রইল। যাই হোক, অবশেষে সে আমাদের সাথে ইয়ামেন পর্যন্ত সফর করল।
ইয়ামেনে উপস্থিতির পর আমরা সন্ধান করে বুজুর্গের বাড়িতে উপস্থিত হলাম। দরজায় শব্দ করার পর বুজুর্গ স্বয়ং এসে দরজা খুলে দিলেন। তার চেহারা দেখে মনে হল, যেন এই মাত্র তিনি কোন কবর হতে উঠে এসেছেন। আমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সেই যুবক এগিয়ে এসে তাকে সালাম করে মোসাফাহা করল। বুজুর্গ মারহাবা বলে যুবককে স্বাগত জানালেন।
অতঃপর একে একে আমরা সকলে তাকে সালাম করলাম। এবার যুবক বুজুর্গের সাথে কথা বলতে আরম্ভ করল। সে বলল, হে আল্লাহর ওলী! আল্লাহ পাক আপনাদেরকে মানুষের রূহানী ফয়েজ ও আত্মার ব্যাধির চিকিৎসক বানিয়েছেন। আমার আত্মায় একটি ভয়াবহ ব্যাধি শিকড় গেড়ে বসেছে। অনুগ্রহ পূর্বক আপনি যদি এর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, তবে আমি উপকৃত হব। শায়েখ বললেন, তুমি কি জানতে চাও বল। যুবক জিজ্ঞেস করল, খোদাভীতির আলামত কি? তিনি বললেন, দুনিয়ার সকল বস্তুর ভয় অন্তর থেকে দূরীভূত করে একমাত্র আল্লাহ পাকের ভয় অন্তরে বিরাজ করা, এটাই খোদাভীতির আলামত। এ কথা শুনামাত্র যুবক বিচলিত হয়ে জ্ঞান হারাল। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে এলে সে আবার জিজ্ঞেস করল, হযরত! বান্দা কীভাবে এটা অনুভব করবে যে, তার অন্তরে খোদাভীতির সৃষ্টি হয়েছে।
বললেন, দুনিয়ার মোহ এমনভাবে ত্যাগ করা, যেমন কোন অসুস্থ ব্যক্তি রোগবৃদ্ধির আশঙ্কায় মজাদার খানাপিনা ত্যাগ করে তিক্ত ঔষদের উপর সবর করে থাকে। তদ্রূপ আল্লাহর ভয়ে ভীত ব্যক্তিও দুনিয়ার মোহ ও স্বাদ ত্যাগ করে থাকেন। শায়েখের এ জবাব শুনামাত্র যুবক এমন বিকট স্বরে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল যে, আমরা মনে করলাম যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘ সময় পর জ্ঞান ফিরে এলে সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর ওলী! বলুন, আল্লাহ পাকের মুহাব্বতের আলামত কি? উত্তরে তিনি বললেন, হে বন্ধু! এটা অনেক উচ্চাঙ্গের বিষয়। যুবক জিজ্ঞাস করল আমাকে সামান্য বলুন।