মক্কা এবং তায়েফে চরম সংকট-২য় পর্ব

মক্কা এবং তায়েফে চরম সংকট-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আকাশের দিকে হাত উঠিয়ে মহান স্রষ্টার দরবারে মুনাজাত করলেন। হে বিশ্ব জাহানের মাবুদ! আমার দুর্বলতার অভিযোগ তুমি ব্যতিত কার নিকট করব? তুমি আমাকে কার হাতে সোপর্দ করছ? তুমি আমাকে শত্রুর শিকার বানিয়েও না। তুমি যদি আমার উপর অসুন্তষ্ট না হও তাহলে আমার কোন ভয় নেই। তোমার হেফাজত আমার জন্য যথেষ্ট। আমি তোমার জাতের নূরের আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেই নূরের দ্বারা যাবতীয় অন্ধকার রৌশনীতে পরিবর্তন হয়ে যায়। তুমি ব্যতিত আমার কোন শক্তি বা কোন সাহায্যকারী নেই।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর ক্রন্দনে আকাশ জমীনের ফেরেশতাকুল কাঁদতে লাগল। তাঁর প্রতি অবিশ্রান্ত প্রস্তরঘাতে তাঁর চলার ক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছিল। অথচ তিনি আরবের মধ্যে সবচেয়ে অধিক শক্তিশালী ছিলেন। আরবের শ্রেষ্ঠ পালোয়ান রোকানার মত বীরও তাঁর নিকট হার মানতে হয়েছিল। আজ নরপিচাশগণ তাঁকে নৃশংসভাবে প্রস্তরঘাতের দ্বারা এতই দুর্বল করে ফেলে যার ফলে অবসন্ন দেহে তিনি কাকর-ধুলির মধ্যে বসে পড়েন। তাঁর করুন দৃশ্য দেখে আল্লাহর মাকলুকাতের স্তরে স্তরে ক্রন্দনের সঞ্চার হল না। বাগানের মালিক শায়বা তাঁর শোণিতাপ্লুত কদম মোবারক ও অবসন্ন দেহ দেখে তার পাষাণ হৃদয় কেঁদে উঠল। সে স্বীয় গোলাম আদ্দাছকে আদেশ করল এক থোকা আঙ্গুর তাঁকে প্রদান কর। গোলামটি খৃষ্টান ছিল। সে আঙ্গুর ছড়া নিয়ে যখন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হাতে দিলেন তখন তিনি বিসমিল্লাহ বলে খেতে আরম্ভ করেন। আদ্দাছ বিসমিল্লাহ শুনে বিস্মিত হল। কারণ আরবদেশের লোকেরা এ কথা বলে না। তাই তিনি রাসূল (সাঃ)-এর পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। রাসূল (সাঃ)তাঁকে প্রশ্ন করলেন, তোমার বাড়ী কোথায়? সে বলল, নিনুয়া দেশে এবং আমি খৃষ্টান ধর্মের একজন লোক। রাসূল (সাঃ) বললেন, নিনুয়া হযরত ইউনুস (আঃ)-এর বস্তি। গোলাম জিজ্ঞেস করল, আপনি কি করে তাঁকে চিনেন? আল্লাহর রাসূল বললেন, তিনি আমার ভ্রাতা। আমিও নবী তিনিও নবী।

তা শুনে গোলামটি নবীজীর হাত চুম্বন করেন এবং পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। গোলামটি বলল, আমি তওরাত শরীফে শেষ নবীর যেই পরিচয় পেয়েছি ঐ সমস্ত গুনাগুণ আপনার মধ্যে নিঃসন্দেহে পাওয়া যাচ্ছে। আমি বহুদিন যাবৎ আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ পাক আমাকে সে দৌলত নসীব করেছেন।

এদিকে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আহাজারী করছিলেন অপরদিকে আল্লাহর আরশ জোশ মেরে উঠল। দুশমনের নৃশংস ব্যবহারে আল্লাহর গজব তাদের অতি নিকটে পৌঁছিয়ে গেল। হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেন এক খণ্ড মেঘমালা প্রকাশ হয়েছে। ঐ মেঘখণ্ড তাঁর দিকে ঘনিয়ে আসছে। তাতে হযরত জিব্রাইল (আঃ) ও পর্বতের জিম্মাদার ফেরেশতা উপবিষ্ট ছিলেন। জিব্রাইল (আঃ) এসে রহমাতুল্লিল আলামীনের খেদমতে সালাম করে বললেন, আল্লাহ পাক আপনার প্রতি এ অনাচার আর সহ্য করছেন না। আমার সঙ্গে মালাকে জাবাল অর্থাৎ পাহাড়ের ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। আপনি আদেশ করলেই তায়েফের উভয় পার্শ্বের পাহাড় দুটি তাদের উপর এসে তাদেরকে পিষে দেয়া হবে।

মক্কা এবং তায়েফে চরম সংকট-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আরো পড়তে পারেন...

ছোটগল্প: কেনাবেচা দরদাম — মাহবুব আলী

১. পোড়া চোখ, সে কিছু দেখেনি। দেখেও কিছু দেখেনি। বুঝেও কিছু বোঝেনি। বুড়ি মানুষ। সবকিছুতে…

রোমান সেনাপতি মাহানের তাঁবুতে খালিদ বিন ওয়ালিদ—আমরা সেই সে জাতি –– আবুল আসাদ

ইয়ারমুকের যুদ্ধ তখনও শুরু হয়নি। সম্রাট হেরাক্লিয়াসের প্রধান সেনাপতি মাহানের অধীনে কয়েক লক্ষ সৈন্য সম্পূর্ণ…

উবাদা ইবনে সামিতের শপথ রক্ষা—আমরা সেই সে জাতি –– আবুল আসাদ

খলীফা উমার (লা) শাসনকাল। মুয়াবিয়া তখন সিরিয়অর শাসনকর্তা। মদীনার খাযরাজ গোত্রের হযরত উবাদা ইবন সামিত…

মক্কা এবং তায়েফে চরম সংকট-২য় পর্ব

মক্কা এবং তায়েফে চরম সংকট-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আকাশের দিকে হাত উঠিয়ে মহান স্রষ্টার দরবারে মুনাজাত করলেন। হে বিশ্ব জাহানের মাবুদ! আমার দুর্বলতার অভিযোগ তুমি ব্যতিত কার নিকট করব? তুমি আমাকে কার হাতে সোপর্দ করছ? তুমি আমাকে শত্রুর শিকার বানিয়েও না। তুমি যদি আমার উপর অসুন্তষ্ট না হও তাহলে আমার কোন ভয় নেই। তোমার হেফাজত আমার জন্য যথেষ্ট। আমি তোমার জাতের নূরের আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেই নূরের দ্বারা যাবতীয় অন্ধকার রৌশনীতে পরিবর্তন হয়ে যায়। তুমি ব্যতিত আমার কোন শক্তি বা কোন সাহায্যকারী নেই।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর ক্রন্দনে আকাশ জমীনের ফেরেশতাকুল কাঁদতে লাগল। তাঁর প্রতি অবিশ্রান্ত প্রস্তরঘাতে তাঁর চলার ক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছিল। অথচ তিনি আরবের মধ্যে সবচেয়ে অধিক শক্তিশালী ছিলেন। আরবের শ্রেষ্ঠ পালোয়ান রোকানার মত বীরও তাঁর নিকট হার মানতে হয়েছিল। আজ নরপিচাশগণ তাঁকে নৃশংসভাবে প্রস্তরঘাতের দ্বারা এতই দুর্বল করে ফেলে যার ফলে অবসন্ন দেহে তিনি কাকর-ধুলির মধ্যে বসে পড়েন। তাঁর করুন দৃশ্য দেখে আল্লাহর মাকলুকাতের স্তরে স্তরে ক্রন্দনের সঞ্চার হল না। বাগানের মালিক শায়বা তাঁর শোণিতাপ্লুত কদম মোবারক ও অবসন্ন দেহ দেখে তার পাষাণ হৃদয় কেঁদে উঠল। সে স্বীয় গোলাম আদ্দাছকে আদেশ করল এক থোকা আঙ্গুর তাঁকে প্রদান কর। গোলামটি খৃষ্টান ছিল। সে আঙ্গুর ছড়া নিয়ে যখন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হাতে দিলেন তখন তিনি বিসমিল্লাহ বলে খেতে আরম্ভ করেন। আদ্দাছ বিসমিল্লাহ শুনে বিস্মিত হল। কারণ আরবদেশের লোকেরা এ কথা বলে না। তাই তিনি রাসূল (সাঃ)-এর পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। রাসূল (সাঃ)তাঁকে প্রশ্ন করলেন, তোমার বাড়ী কোথায়? সে বলল, নিনুয়া দেশে এবং আমি খৃষ্টান ধর্মের একজন লোক। রাসূল (সাঃ) বললেন, নিনুয়া হযরত ইউনুস (আঃ)-এর বস্তি। গোলাম জিজ্ঞেস করল, আপনি কি করে তাঁকে চিনেন? আল্লাহর রাসূল বললেন, তিনি আমার ভ্রাতা। আমিও নবী তিনিও নবী।

তা শুনে গোলামটি নবীজীর হাত চুম্বন করেন এবং পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। গোলামটি বলল, আমি তওরাত শরীফে শেষ নবীর যেই পরিচয় পেয়েছি ঐ সমস্ত গুনাগুণ আপনার মধ্যে নিঃসন্দেহে পাওয়া যাচ্ছে। আমি বহুদিন যাবৎ আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ পাক আমাকে সে দৌলত নসীব করেছেন।

এদিকে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আহাজারী করছিলেন অপরদিকে আল্লাহর আরশ জোশ মেরে উঠল। দুশমনের নৃশংস ব্যবহারে আল্লাহর গজব তাদের অতি নিকটে পৌঁছিয়ে গেল। হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেন এক খণ্ড মেঘমালা প্রকাশ হয়েছে। ঐ মেঘখণ্ড তাঁর দিকে ঘনিয়ে আসছে। তাতে হযরত জিব্রাইল (আঃ) ও পর্বতের জিম্মাদার ফেরেশতা উপবিষ্ট ছিলেন। জিব্রাইল (আঃ) এসে রহমাতুল্লিল আলামীনের খেদমতে সালাম করে বললেন, আল্লাহ পাক আপনার প্রতি এ অনাচার আর সহ্য করছেন না। আমার সঙ্গে মালাকে জাবাল অর্থাৎ পাহাড়ের ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। আপনি আদেশ করলেই তায়েফের উভয় পার্শ্বের পাহাড় দুটি তাদের উপর এসে তাদেরকে পিষে দেয়া হবে।

মক্কা এবং তায়েফে চরম সংকট-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আরো পড়তে পারেন...

মুগীরা ইবন শু’বা (রা)

নাম আবু আবদিল্লাহ মুগীরা, পিতা শু’বা ইবন আবী আমের। আবু আবদিল্লাহ ছাড়াও আবু মুহাম্মাদ ও…

সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে…

আবদুল্লাহ ইবন হুজাফাহ আস-সাহমী-(রা)

আবু হুজাফাহ আবদুল্লাহ নাম। পিতার নাম হুজাফাহ। কুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। ইসলামী দাওয়াতের…