এক সময় খলীফা হারুনুর রশীদের মনোবিকলন শুরু হয়। কিছুই তাঁর ভালো লাগে না। মনে দারুণ অশান্তি। ফজল বারমাকীকে ডেকে বললেন, আমাকে কোন আল্লাহ্র ওলীর কাছে নিয়ে চলুন। হয়ত তাঁর কাছে গিয়ে আমি শান্তি পাব। বারমাকী তাঁকে নিয়ে গেলেন হযরত সুফিয়ান সওরীর (রঃ)-র বাড়ীতে। খলীফার আগমনবার্তা পেয়ে সুফিয়ান সওরী (রঃ) বললেন, তাঁকে তলব করলে তিনি নিজেই খলীফার দরবারে গিয়ে হাজির হতেন।
স্বয়ং খলীফার আসার কোন প্রয়োজন ছিল না। হারুনুর রশীদ এ কথা শুনে ফজল বারমাকীকে বললেন, আমি যাকে চাই ইনি সে ব্যক্তি নন। তখন ফজলের মনে হল, হয়ত ফোজায়েল ইবনে ইয়াজ (রঃ)-ই তাঁর কাঙ্খিত পুরূষ। অতএব তারা সেখানে গেলেন।
ইবনে ইয়াজের (রঃ) বাড়ীর দরজায় দাঁড়িয়ে দুজনে শুনলেন, ভেতরে কোরআন শরীফ পাঠ হচ্ছে। তিনি পাঠ করছেন, অপকর্মকারীরা কি মনে করে যে, আমি তাঁদেরকে ঈমানদার ও পুণ্যবানদের মধ্যে গন্য করব।
আয়াতটি শুনে খলীফা বলেন, উপদেশপ্রার্থী হিসাবে আমার জন্য এই আয়াতটিই যথেষ্ট। এবার দরজায় করাঘাত করা হল। ভেতর থেকে আওয়াজ এল, কে? জবাবে বলা হল, আমীরুল মুমেনীন।
এখানে তাঁর কী প্রয়োজন? আমারই বা তাঁর কাছে কী প্রয়োজন? আপনারা আমাকে সংসারের দিকে টেনে নেবেন না।
ফজল বারমাকী বললেন, দেশের খলীফার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সকলেরই কর্তব্য।
ফোজায়েল (রঃ) বললেন, আমাকে কেন এত জ্বালাতন করছেন? তাঁর বিরক্তি সত্ত্বেও ভেতরে ঢোকার অনুমতি চাওয়া হল। তিনি বললেন, আমি অনুমতি দিচ্ছি না। তবে খলীফা যদি একান্তই ভেতরে আসতে চান তো সেটি তাঁর ইচ্ছা। যাই হোক, খলীফা ভেতরে ঢোকা মাত্র ইবনে ইয়াজ (রঃ) ঘরের প্রদীপ নিভিয়ে দিলেন- বাদশাহ যেন তাঁর মুখ দেখতে না পান। বাদশাহ অবশ্য ঐ আঁধারেই হাত বাড়িয়ে দিলেন ফোজায়েল (রঃ)-এর দিকে। হাতে হাত মিলল। ফোজায়েল (রঃ) হায়! কী নরম হাত! এ হাত জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পেলে হয়। বলেই তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন।
খলীফা হারুনুর রশীদ কান্নায় ভেঙে পড়লেন। বললেন, আমাকে কিছু বলুন। নামাজ শেষ করে ফোজায়েল (রঃ) বললেন, আপনার পিতামহ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পিতৃব্য ছিলেন। তিনি ভ্রাতুষ্পুত্রের কাছে খলীফা পদের প্রার্থনা করেন। কিন্তু রাসূলে কারীম বললেন, চাচাজী, আপনাকে দেশধিপত্য না দিয়ে আপনার নিজের ওপর শাসন-কর্তৃত্ব দিলাম। মনে রাখবেন, হাজার বছর ধরে খলীফা হয়ে জনসেবার চেয়ে আল্লাহ্র এবাদাতে নিজেকে নিয়োজিত রাখা অনেক গুণে শ্রেয়। বিচার দিবসে নেতৃত্ব লজ্জা পায়, অপদস্থতার কারণ হয়।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া