চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি সড়ক। গহিরা ও রাউজান সদরের মাঝামাঝি স্থানে একটি কালভার্ট রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ সেখানে একটি বেইলী ব্রীজ আছে। এই মাসের শুরুতে গিয়ে সেখানে একটি নির্মাণ প্রক্রিয়ার সন্ধান পাওয়া গেল। সে সঙ্গে এও জানা গেল যে, নির্মিতব্য কালভার্টটি যাতে স্থায়ী হয়, সেজন্য উক্ত স্থানে ইতিমধ্যেই গরু/ছাগল ‘বলি’ দেয়া হয়েছে। বর্ষাকাল, পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের পানির ঢল, ঐ নালা দিয়ে দ্রুতবেগে নেমে আসে। পানির প্রবল তোড়ে ঐ স্থানের কালভার্টটি ভেঙ্গে পড়ে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি কালভার্টের এই অবস্থা হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, ঐ জায়গায় এমন কিছু আছে, যা ঐ কালভার্টকে ‘সহ্য’ করতে পারে না। তাই, প্রতিবারই ভেঙ্গে ফেলে।
বড় বড় ব্রীজ বা কাঠামো নির্মাণের পূর্বে ‘বলি’ দেয়ার ঘটনা মোটেই নতুন নয়। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এমন ধারা গালগল্প প্রচলিত। এমনকি কোন কোন স্থানে মানব শিশু বলি দেয়া হয়েছে বলে অনেকেরই ধারণা। অবশ্য, এই ধরনের অনেক লোক বিশ্বাসের পেছনে, বিশেষ করে মানব শিশু বলি দেবার প্রত্যক্ষ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। লোক বিশ্বাসের প্রাবল্য থেকে এ কথা অনমুান করা যায় যে, মানব শিশু না হোক, অন্যান্য প্রাণী বলি দেবার ঘটনা অতি অবশ্যই ঘটেছে এবং এখনো ঘটছে।
ব্রীজ বা বড় কোন ভবন নির্মাণের সঙ্গে প্রাণী বলি দেবার কোন সম্পর্কে খোঁজার আগে একটি কথা বলে নেয়া ভাল। মানব সৃষ্টির প্রথমদিকে, মানুষ যখন প্রকৃতির কাছে নেহায়েতই অসহায় ছিল, তখন থেকেই বলি প্রথার উৎপত্তি। বড় কোন বৃক্ষ কিংবা পাথরের উদ্দেশ্যে বলি দেবার ঘটনাবলী খুব ঘটেছে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এ জাতীয় ঘটনার সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। আবার এই ধরনের আদিম প্রথাগুলোর কতক পরিবর্তিত রূপ নিয়ে পিছিয়ে পড়া মানব গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। বানের পানিতে কালভার্ট ধসে পড়া থেকে একদল লোক শুধু বানের পানির শক্তিমত্তাকেই দেখে, এদের একচোখা দৃষ্টিতে কখনোই ঐ কালভার্টের কাঠামোগত দুর্বলতা ধরা পড়ে না। আমাদের দেশে এই দলটির সংখ্যা ভারী। এদের এই অজ্ঞতাকে পুঁজি করে আর একদল মানুষ ঠিকই কাঁঠাল ভেঙ্গে খেতে থাকে। ব্রীজ কালভার্টের ক্ষেত্রে এই দ্বিতীয় দলের লোকগুলো হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের, কর্তাব্যক্তিরা। যে কোন ফিজিক্যাল কাঠামো নির্মাণের পূর্বে তার একটি নকশা প্রণীত হয়। এই নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়, যেমন কাঠামোর অবস্থান, প্রকৃতি ইত্যাদি হিসাবে থাকে। ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণের সময়, তাই, আবশ্যিকভাবে ঐ স্থানে জলস্রোতের তীব্রতাও হিসেবে থাকার কথা। আর, তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে রাউজানের ঐ কালভার্ট বার বার ভেঙ্গে পড়ার কথা নয়। অবশ্য, সঠিক নকশা প্রণয়নই যথেষ্ট নয়, কারণ নির্মাণ কাজের গাফিলতিতেও এমনটি ঘটতে পারে। কিন্তু নির্মাণ কাজের তদারকী ঐ একই কর্তৃপক্ষের আওতায় রয়েছে।
নকশা যদি সঠিকভাবে প্রণীত হয় এবং নির্মাণ কাজে কোন গাফিলতি না থাকে তাহলে রাউজানের পাহাড়ী ঢলের এমন শক্তি নেই যা ঐ কালভার্টকে ধ্বংস করতে পারে। কাজেই ঐ কালভার্টটি যদি আবার ভেঙ্গে, তাহলে বলি দেবার জন্য অন্য কিছুর কথা ভাবতে হবে! গরু-ছাগলের বদলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ঐ কালভার্টের নিচে বলি দেবার ব্যবস্থা করলে হয়তো এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
পরবর্তী পাতা→ |
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।