গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
ক’দিন আগেই তো, রান্নাঘরে খুটুর-খুটুর শব্দ শুনে বড় মাসিমা উঁকি দিয়ে দেখেন, কালোমতো কেউ একটা উবু হয়ে বসে মাছভাজা খাচ্ছে। চোরছাঁচড় হবে ভেবে বড় মাসিমা ‘চোর-চোর চিৎকার করে উঠলেন। সেই চিৎকার শুনে ভূতটা এত ঘাবড়ে গেল যে, বলার নয়। সোজা বড় মাসিমার পা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল, আমি চোর নই কর্তামা, ভূত! বিশ্বাস করুন, ভূত। ভ্যানিশ হওয়ার মন্ত্রটা একদম ভুলে গিয়েছি।”
‘প্রথমে বড় মাসিমা বিশ্বাস করেননি। তিনি চুলের মুঠি ধরে লোকটাকে টেনে তুলতে গেলেন। আর অমনি কী আশ্চর্য ব্যাপার, মুণ্ডুটা ধড় থেকে খুলে এল বড় মাসিমার হাতে। সে এক সাংঘাতিক দৃশ্য। মুণ্ডহীন ধড়টা জোড় হাত করছে, আর ধড়হীন মুন্ডুটা ভেউভেউ করে কাঁদছে। এবার একটু ভয় পেয়ে গেলেন বড় মাসিমা। মুন্ডুটা ছুড়ে ফেলে দিলেন হাত থেকে।
অমনি তাড়াহুড়ো করে সেই ধড় মুন্ডুটা হাতে নিয়েই পাইপাই ছুট লাগাল।”
সব শুনে বিনোদবিহারী গোবিন্দলালের হাত দুটি চেপে চেপে ধরে বললেন, ভাই, প্লিজ! একটু নিয়ে চলুন আপনার মামার বাড়ি। বড় উপকার হয়।’
‘সে তো যাওয়া যেতেই পারে, বিনোদবিহারী ব্যস্তভাবে বলে উঠলেন, তবে চলুন, আজই যাই, দেরি করা ঠিক হবে না।’ একটু চিন্তা করে গোবিন্দলাল বললেন, কিন্তু আজ তো ইডেনে ফাইভ-ফাইভ ক্রিকেটের ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল। ইন্ডিয়ার সঙ্গে হন্ডুরাসের খেলা। একটু মাঠে যাব ভেবেছিলাম।”
বিনোদবিহারী চুপ করে গেলেন। এই এফ-ফাইভ ক্রিকেটটাকে তিনি একদম দেখতে পারেন না। এটা খেলা নয়, সার্কাস, শুধু ধুমধাড়াক্কা চালানো। তিনি টি-টোয়িন্টির মতো ধ্রুপদী ক্রিকেটের ভক্ত। কিন্তু এখন টি-টোয়েন্টির বাজার নেই। টি-টোয়েন্টির দেখতে বসলে লোকের নাকি হাই ওঠে।
বিনোদবিহারী বললেন, “আপনার ম্যাচ শেষ কটায় ?
“ন’টায়।’
‘তা হলে চলুন, তারপর যাই। বনগা আর কতক্ষণ লাগবে? ধর্মতলা থেকে মেট্রো ধরে সোজা বনগা চলে যাব।’
রাতের খাওয়াদাওয়া বেশ ভারী হয়ে গেল বিনোদবিহারীর। গোবিন্দলালের দুশোতিন বছর বয়সি দিদিমা চমৎকার কিছু পদ রান্না করেছিলেন।
নারকোল দেওয়া লাউঘণ্ট, ছোলা দেওয়া কুমড়োর ছক্কা, বনফুল ভাজা দিয়ে অনেক ভাত খেয়ে ফেললেন বিনোদবিহারী। সিন্থেটিক ফুড খেয়ে-খেয়ে পেটে চড়া পড়ে গিয়েছে। এমন সুস্বাদু খাওয়ার বহুদিন খাওয়া হয় না।
এদের ছাদের উপর একটা কিচেন গার্ডেন আছে। পালা-পার্বণে কিংবা অতিথি-অভ্যাগত এলে দিদিমা রান্না করেন এসব।
খাওয়াদাওয়ার পর বেরিয়ে পড়লেন দুজন। একটু এগিয়েই দেখা গেল সেই বাড়ি। অবছা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে, বড়সড় দোতলা বাড়িটা। পলেস্তরা-খসা দেওয়াল।
কোথাও ছাদ ভাঙা, কোথাও দেওয়ালে ধস। বহুদিন শরিকি মোকদ্দমা চলেছে বলেই বাড়ি এমন জরাজীর্ণ দশা। সাবধানে ভিতরে ঢুকলেন দুজন। ভিতরে বড়-বড় গাছের জঙ্গল।
ট্যা-ট্যা করে কিছু একটা ডেকে উঠল কোথাও। বিনোদবিহারী জি ডি ডি সিনাল দিতে শুরু করলেন। একটা গাছে ঝুপঝাপ করে নড়ে উঠল কিছু।
সঙ্গে-সঙ্গে ব্যাগ থেকে ম্যাজিক-টর্চটা বের করলেন বিনোদবিহারী। বিশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি এই টর্চের আলো এমনই যে, ভূতের চোখে পড়লে তাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায়, কিছুক্ষণ নড়াচড়া করার ক্ষমতা থাকে না।
সামনের সেই বাকড়া গাছটায় টর্চের আলো ফেললেন বিনোদবিহার এবং ভারি অবাক হয়ে গেলে। দুটো বাচ্চা ভূত গাছের ডালে দোল খাচ্ছে। রোগা পিঙপিঙে চেহারা। গায়ে পাটকিলে রঙের বড়-বড় লোম।
অনেকটা হনুমানের বাচ্চার মতো দেখতে। শুধু মুখ আর হাত-পায়ের চেটোগুলো সাদা। ম্যাজিক-টর্চের আলো চোখে পড়তেই টুপটুপ করে গাছ থেকে মাটিতে পড়ে গেল ভূত দুটো।