গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
প্রোফেসার বিনোদবিহারী টেনশন শুরু হল। টেনশন হলেই তার হার্টবিট বেড়ে যায়, প্রবল ঘাম হয় এবং বঁই-বঁই করে মাথা ঘুরতে থাকে। মোটের ওপর, কাজকর্ম ভণ্ডুল। অথচ সময়টা এমনই যে, কাজ না করলে সব গুবলেট হয়ে যাবে। নিজের সুনাম যাবে, সরকার আর দেশের পাঁচজনের কাছে মুখ দেখাবার উপায় থাকবে না।
বিনোদবিহারী ঠিক করলেন, হার্টটা বদলে নেবেন। যদিও র্তার হার্টটা এক্সপায়ারি ডেট ফেল করেনি, কিন্তু একটু আগেভাগেই বদলে নেওয়া ভালো।
বেশ কিছুদিন হল বড্ড ধকল যাচ্ছে এটার উপর। কারণটা আর কিছুই নয়, একজোড়া ভূত। একজোড়া ভূত জোগাড় করতে গিয়ে প্রোফেসর বিনোদবিহারী একেবারে নাজেহাল।
এই একুশশো তিপ্লান্ন সালে সরকার থেকে ঠিক করা হয়েছে, বাংলাদেশের কিছু লুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যশালী জিনিসের একটা মিউজিয়াম বানাবে। যেমন, রয়াল বেঙ্গল টাইগার।
একসময় ওয়েস্ট বেঙ্গলের দক্ষিণ দিকে সুন্দরবন নামে অতি বিশাল এক ম্যানগ্রোভ অরণ্য ছিল। সেখানেই দেখা যেত অনিন্দ্যসুন্দর রাজকীয় শৌর্যের এই প্রাণীটিকে।
কিন্তু গ্লোবাল ওয়ামিংয়ের জন্য সুন্দরবন এখন জলের তলায়। আর রয়াল বেঙ্গল টাইগারও বিলুপ্তির পথে।
একজোড়া রয়াল বেঙ্গল রাখা হচ্ছে মিউজিয়ামে। তেমনই ন্যাদোস মাছ।
অতি সুস্বাদু এই মাছ একসময় বাংলার খালবিলে কিলবিল করত। কিন্তু এখন গোটা দেশ ঢুঁড়ে ফেললেও চোখে পড়ে না। বহু কষ্টে কয়েকটা মাত্র জোগাড় করে রাখা হচ্ছে মিউজিয়ামের অ্যাকোয়ারিয়ামে। টিকিট কেটে জনসাধারণকে দেখতে হচ্ছে ন্যাদোস মাছ।
প্রোফেসর বিনোদবিহারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভূতের। বাংলার ভূতের সুনাম একসময় ছড়িয়ে ছিল সারা দুনিয়ায়। কতরকম ভূত যে ছিল এখানে তাদের আচার-ব্যবহার, স্বভাবচরিত্রও কতরকমের।
ব্রহ্মদৈত্যের মেজাজের সঙ্গে মেছো ভূতের মেজাজ একেবারেই খাপ খায় না। মামদোর ভাবগতিক আবার সম্পূর্ণ আলাদা। শাকচুন্নি আর পেতনির মধ্যেও বিস্তর ফারাক।
কিন্তু সেসব দিন গিয়েছে। চারদিকে এত গিজগিজে লোক, থাম্বাথাম্বা অট্টালিকা, ঝকঝকে আলো যে, ভূতেরা একটু-একটু করে কমতে-কমতে এখন একেবারে তলানিতে। তাই সরকার থেকে প্রোফেসরকে বলা হয়েছে, ‘খুঁজে পেতে একজোড়া জোগাড় করে আনুন, এনি টাইপ অফ গোস্ট, অফ এনি স্পিসিস।
বিনোদবিহারী কয়েকজন সহকারীকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। অতি সংবেদশীল জিডিডি (গোস্ট ডিটেক্টর ডিভাইস) নিয়ে তারা ঢুঁড়ে ফেলছে গোটা দেশ। এই জিডিডি এমন যন্ত্র, যেটা কাছাকাছি ভূত থাকলে তার অস্তিত্ব নিখুঁতভাবে জানিয়ে দেয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। রোজ ব্যর্থ সংবাদ আসছে, ‘না স্যার, ভূতের গন্ধটুকুও নেই কোথাও।
প্রোফেসার বিনোদবিহারী ঠিক করলেন অ্যাসিস্ট্যান্টদের ওপর ভরসা না করে নিজেই মাঠে নামবেন।
কিন্তু তার আগে হার্টটা বদলে নেওয়া দরকার। ওয়েস্ট বেঙ্গলের হার্ট-ব্যাঙ্কের ওপর খুব একটা আস্থা নেই তার।
এখানকার হার্টগুলো একটু পলকা ধরনের, খুব একটা চাপ সহ্য করতে পারে না। সম্প্রতি পাঞ্জাবে ভালো একটা হার্ট-ব্যাঙ্ক হয়েছে, যে-কোনও হার্টের উপর একশো বছরের ওয়ারান্টি দেওয়া হচ্ছে।
নিজের সৌরচালিত ছোট্ট গাড়িটা বের করলেন বিনোদবিহারী।
এখন দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে সেভেন-টাওয়ার ফ্লাইওভার, অর্থাৎ একটা ফ্লাইওভারের ওপর আর-একটা, এইভাবে পরপর সাতটা। গাড়ি চালিয়ে সবচেয়ে উপরেরটায় চলে এলেন বিনোদবিহারী।