ভূতের বাড়ির ডাইনি

জয়ারা তখন পুরান ঢাকার লালবাগের এক বাড়িতে মা, ছোট ভাই, এক বোন, কাকা-কাকি আর দাদা-দাদিকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতো। তিন মাস পরপর দশ-পনের দিনের ছুটিতে জয়ার বাবা বাসায় আসতেন। জয়ার বাবা জয়ার জন্মের পর থেকেই ব্যবসার কাজে ব্যাংককে থাকতেন। সেবার জয়ার বাবা যখন এলেন তখন নিজেদের জন্য একটা অ্যাপার্টমেন্ট কিনবেন বলেবিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে খোঁজ করতে লাগলেন। কিন্তু বাদ সাধলেন জয়ার মা। তার কাছে অ্যাপার্টমেন্ট পছন্দ নয়। তার পছন্দ জায়গাসহ রেডিমেড বাড়ি । যেখানে কিছু গাছপালা থাকবে। তাছাড়া বাগান করার মতো কিছু জায়গাও থাকবে। দেখাদেখির এক পর্যায়ে একটা বাড়ি জয়ার মার খুব পছন্দ হলো। বাড়িটা ছিলো গোপীবাগে। মায়ের পছন্দের সেই বাড়িটা ছিলো দু’তলা। জয়ার মা-বাবা খুব খুশি হয়েছিলেন বাড়িটা দেখার পর। অনুরাধাও খুব পছন্দ করেছিলো বাড়িটা। অনুরাধা জয়ার ছোট বোন। ক্লাস এইটে পড়তো সে। জয়ার ছোট্ট ভাইয়ের নাম তুষারআদিত্য। ডাকনাম আদিত্য। ওর বয়স তখন দুই বছর। পরিবারের সবার কাছেবাড়িটা ভালো লাগলেও শুধু জয়ার কাছে কেমন যেন অন্য রকম লাগছিলো।মনে হচ্ছিলো বাড়িটা তন্ময় হয়ে ঘুমাচ্ছে। চারদিকে কী যেন একটা নিস্তব্ধতার আভাস। বাড়ির টাকা পরিশোধের বেশ কিছুদিন পর জয়ারা নতুন বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলো।
কয়েকদিন পর এক রাতে জয়ার মা রান্না করছিলেন। অনুরাধা নানুর বাসায় বেড়াতে গেছে। মা আদিত্যকে খাটের ওপর শুইয়ে রেখেছিলেন। জয়া রুমে শুয়ে গল্পের বই পড়ছিলো। হঠাত্ আদিত্যের কান্না শোনা গেলো। এক দৌড়ে জয়া আদিত্যের কাছেগিয়ে দেখতে পেলো আদিত্য খাটের ওপর থেকে চার ফুট উপরে ভাসছে। তখন ভয়ে জয়া চিত্কার দিয়ে কেঁদে উঠলো। চিত্কার দিয়ে কান্নার শব্দ পেয়ে মা রান্নাঘর থেকে এসে জয়াকে জিজ্ঞাসা করলেন। জয়া মাকে কিছু বললো না। মা দেখতে পলেন আদিত্য খাটে শুয়ে ঘুমোচ্ছে।
পরের দিন গভীর রাতে জয়া শুনতে পেলো তার রুমের সামনে পায়ে নূপুরপরে কে যেন যাচ্ছে। তার নূপুরের ঝুমুর ঝুমুর শব্দে জয়ার ঘুম ভেঙেগেলো। জয়া ভাবলো অনুরাধা হয়তো। কারণ ও ছাড়া আর কে এই রাতে এমন করে হেঁটে যাবে। পরের দিন খুব সকালে অনুরাধাকে জিজ্ঞেস করলে সে বললো, কই না তো, আমি কেন এতো রাতে তোমার রুমের সামনে দিয়ে যাবো?
মাসখানেক পরের কথা। দিনটি ছিলো শুক্রবার। সেদিন বাড়িতে জয়া একা ছিল। জয়ার মা-অনুরাধা সবাই দাদু বাড়িতে গিয়েছিলো, রাতে ফিরবে। যখন সন্ধ্যা নামলো তখন শুধু জয়াদের বাড়িতেই ইলেকট্রিসিটি ছিলো না।জয়ার কাছে এ ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছিলো। তারপর জায়গাটা ছিলো ওর কাছে নতুন। এই এলাকার কাউকেই চিনতো না ও। আশপাশে কারো বাড়িতে যাবে তারও কোনো সুযোগ ছিলো না। কিছুক্ষণ পরহঠাত্ কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলো। নারকেল গাছ, সুপারি গাছগুলো আছড়েপড়তে লাগলো বাড়ির ওপর। এমন সময় জয়া দেখলো এক মহিলা সাদা শাড়ি পরা, চুলগুলো মাথা থেকে পা পর্যন্ত। চুলের রঙ সোনালি। নূপুরের ঝুমুর ঝুমুর শব্দ করে সারা বাড়ি হাঁটাহাঁটি করছে। আর বার বার অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছিলো। আর বলছিলো, আমাকে ছেড়েদাও…, আমাকে মুক্তি দাও…, আমাকে মুক্তি দাও…। ঘটনা এতো ভীতিকর ছিলো যে জয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
রাত ৯টার দিকে সবাই বাসায় ফিরলো।জয়ার মা এসে দরজায় খুব জোরে কড়া নেড়েছিলেন। দরজা খুলেই মাকে জড়িয়ে ধরে জয়া কাঁদতে লাগলো। মা জয়ার কাছে জানতে চাইলেন কী হয়েছে? সবকিছু জয়া বলার পর মা কিছুই বিশ্বাস করলেন না। তিনি সবহেসে উড়িয়ে দিলেন। কথাটা বাড়ির কেউ বিশ্বাস করলো না।
এক গ্রীষ্মের রাতে প্রচুর গরম পড়েছিলো। হঠাত্ ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। এমনভাবে জয়া ঘামতে শুরুকরলো যে, মনে হচ্ছিলো ঘাম দিয়ে গোসল করে ফেলবে। তখন জয়া ভাবলো, একটু ছাদে যাই। ছাদে গিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর হঠাত্ চিলেকোঠার দিকে চোখ পড়তেই জয়া দেখলো সেই সাদা শাড়ি পরা মহিলা চিলেকোঠার ভেতর থেকে জয়ার দিকেই আসছিলো। মহিলার চোখ থেকে যেন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। মুখ দিয়ে রক্ত ঝরে পড়ছিলো। জয়া ভয়ে চিত্কার দিয়ে দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে মাকে সব কথা বললো। মা তো হেসেই খুন। মা বললেন, জয়া তুমি কিপাগল হয়ে গেলে?
সেই রাতে জয়া একটা দুঃস্বপ্ন দেখলো। স্বপ্ন দেখার পর ঘুমের ঘোরেই জয়া কেঁদে উঠলো। ওর কান্নার আওয়াজে মার ঘুম ভেঙে গেলো। মা জয়ার কাছে কান্নার কারণজানতে চাইলে জয়া বললো, আমাদের আদিত্যের গলা কে যেন চেপে ধরেছে।মা এ কথাটাও বিশ্বাস করলেন না। খুব রেগে গেলেন। বললেন, এসব পাগলামি ভালো লাগে না। তারপর মা জয়াকে তার রুমে নিয়ে গেলেন। রুমেগিয়ে জয়া ও তার মা যা দেখলেন, তা বলার মতো নয়। আদিত্যের গলাসহ সারা শরীরে ছিল মানুষের আঙুলের ছাপ।
সেদিনই প্রথম সবাই জয়ার কথা বিশ্বাস করেছিলো। এই ঘটনার পর বাড়ির সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এই বাড়িতে আর থাকবেন না।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!