ভূতের পরাজয়— মোবারক হোসেন

বাজারে আড্ডা মারতে মারতে কখন যে রাত দশটা বেজে গেল টেরই পেল না রাজন। যখন খেয়াল হল তখন সে চিন্তায় পড়ে গেল। বাড়ি যাবে কিভাবে । প্রথম সে বাজার ঘুরে ঘুরে পরিচিত কাউকে খুজতে লাগলো ।না কাউকে পেল না । বাজার থেকে বাড়ি প্রায় তিন মাইলের পথ ।তিন মাইল সমস্য নয় । সমস্যা হল কিছুদূর যাওয়ার পর থেকেই মাঠের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।তাও আবার ফাকা মাঠের মাঝ খানে স্মশান।যাই হোক কি আর করা আল্লার নাম নিয়ে বাড়ির পথে হাটতে শুরু করলো রাজন । বাজারের রাস্তা থেকে মাঠের মধ্যে দিয়ে আকা বাকা পথ ধরে হাটছে রাজন ।কোন লোকজন নেই। গ্রামের মানষ এমনিতে সকাল সকাল খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।

এখনতো রাত দশটার বেশি বাজে তাই রাস্তা ঘাট একদম ফাকা।রাজন স্মশান পযর্ন্ত এসেছে কোন ভয়ও হয়নি কোন সমস্যাও হয়নি ।যেই স্মশান পাড় হয়ে হাটতে শুরু করেছে ওমনি একটি শব্দ ভেসে এল, তোর হাতের ব্যাগে রাখা মাছগুলি আমাকে দিয়ে যা । রাজন মাথাতুলে তাকিয়ে দেখল সামনে মস্ত এক দানব আকৃতি ভূত ।আকাশে মাথা ঠেকিয়ে দুই পা ফাক করে দাড়িয়ে আছে ।রাজনের শরীর সিউরে উঠলো ।তবুও সে স্থির দাড়িয়ে গেল আর নিজের ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে তার চার পাশের মাঠিতে বৃত্ত তৈরী করে ঠাই দাড়িয়ে রইলো । সে দাদুর কাছে শুনেছিল বৃত্তের মধ্যে দাড়িয়ে থাকলে নাকি ভূত সেখনে প্রবেশ করতে পারেনা ।

আজ সেই কথা সে কাজে লাগালো । সে আরোও শুনেছিল পড়নের কাপড় উল্টো করে পড়লে নাকি ভুতেরা কাছে আসে না ।সে পড়নের লুঙ্গিটা খুলে উল্টো করে পড়লো ।ভুত বলল মাছগুলো আমায় দে । রাজন বলল টাকা দিয়ে মাছ কিনেছি তোকে দেব কেন? ভুত বলল আজ তোকে দেখে নেব । হয় তোকে সায়েস্থা করবো নয়তো আজ তোর কাছে মাথা নত করবো ।রাজন বলল যাই করিসনা কেন আমি মাছ তোকে দেবনা ।তোকে মাছ দিয়ে গেলে মা আমাকে মেরে ফেলবে । ভূত দেখলো ভয় দেখিয়ে রাজনকে শায়েস্তা করা যাবেনা ।তাছাড়া সে বৃত্তের মধ্যে দাড়িয়ে আছে । সেখানে সে রাজনের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা ।

তাই সে রাজনে সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে শুরু করলো। ।ভুত বলল, যা তুই বাড়ি চলে যা । আমি তোর সাথে ঠাট্টা করেছিলাম । যা বাড়ি চলে যা । রাজন বলল আগে তুই সরে যা ।তার পর আমি যাব।ভূত দুই পা আরোও ফাক করে বলল যা তোকে আরো জায়গা করে দিলাম ।রাজন বলল তোর মতলব আমি বুঝি । যেই তোর গায়ের নিচ দিয়ে আমি যাব ,অমনি দুই পা দিয়ে আমাকে পিষে মারবি ।এরকম কথা কাটা কাটির মধ্যে দিয়ে রাত ভোর হয়ে এল ।দূরে কৃষকদের গরু মহিষ মাঠে নিয়ে আসার হুট হাট শব্দ ভেসে এল ।ভূত বুঝতে পারলো কিছুক্ষণের মধ্যে মানুষ মাঠে কাজ করার জন্য চলে আসবে ।

তাই সে রাজনকে বলল ,দেখ তুই বড় চালাক আর সাহসী মানব ।আজ তোর কাছে হেরে গেলাম আর কোন দিন তোর সামনে পড়বো না,এবার আমার একটা উপকার কর।তোর পা দুটি একটু ফাক করে দাড়া ।রাজন ভাবলো দেখিনা কি হয়!সে পা দুটি ফাক করে দাড়ালো আর ভূতটা মস্ত বড় আকৃতি থেকে বিড়ালে রূপ নিল ।বিড়ালে রূপ নিয়েই চোখের পলকে রাজনের দু পায়ের ফাক দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল ।যেতে যেতে বলে গেল তোর মায়ে মানুষকে লাউ এর পাতা বিলিয়ে ছিল বলেই আজ আমার হাত থেকে বেচে গেলি ।

গল্পটি পাঠিয়েছেন–

মোবারক হোসেন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!