[ভূতের গল্প] চুড়েল পিশাচ গল্প

আমি তখন সিলেট বিভাগের জেলা ছাতকের খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকতা। ওসি এল এস ডি ।আমাদের অফিসটা ছিল সুরমা নদী কোল ঘেষে। গাছগাছালী ঘেরা ছায়া মনোরম এক পরিবেশ । আমার অফিস থেকে একটু হেটে কিছুদুর গেলেই সুরমা নদীর পাড় ঘেষে একটা শশ্মান। ঐ শশ্মানে একটা মানুষ প্রমান কালীর মূর্তি ছিল । কালীর মূর্তিটার সারা শরীর ছিল কালো রংয়ের ছিল । পরনেও ছিল কালো রংয়ের একটা শাড়ি। পিছনে কালো এলোমেলো চুল গুলো নিতম্ব ছেড়ে নিচে নেমেছে।

এক হাতে ত্রিশুল, আরেক হাতে একটা সাপ । মুখ থেকে অনেকটা বেরিয়ে থাকা লাল রংয়ের জিব্হাটা মুখ থেকে ভয়ংকর ভাবে বের হয়ে বুক ছুয়েছে।

চোখ দুটি টকটকে লাল। ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে আছে । হঠাৎ দেখলে চমকে উঠতে হয়। দিনের বেলা মুর্তিটাকে দেখলে তেমন একটা ভয় লাগত না, কিন্তু সন্ধ্যা বেলা পড়ন্ত সূর্যের আলোয় দেখলে বুকের ভিতর অজানা এক ভয়ের শিহরন জাগত। তখন মনে হত ওটা মুর্তি নয়, সত্যি জীবন্ত ভয়ংকর এক মানবী । আমি শিহরীত হওয়ার জন্য প্রায় সন্ধ্যা বেলায় যেতাম। আমার এভাবে ওই সময় প্রায় যেতে দেখে অফিসের দারোয়ান একদিন বললঃ স্যার শশ্মান জায়গাটা তেমন ভাল না আপনি সন্ধ্যার সময় ওদিকটা না গেলেই ভাল হয়।

আমি দারোয়ানের কথা শুনে মনে মনে হাসলাম। এই পৃথিবীতে যা নাই তা নিয়ে কেউ ভয় পেলে যে কোন বুদ্ধিমান লোক হাসতে বাধ্য । কিন্তু দারোয়ান বয়ষ্ক মানুষ আমাকে হাসতে দেখে মনে কষ্ট পেতে পারে তাই মনে মনেই হাসতে হল। আমি ওকে প্রশ্ন করলাম ঃ কেন ওখানে তেমন কিছু হয়েছে নাকি ?

আমার কথা শুনে দারোয়ান দুই চোখ বড় বড় করে বললঃ স্যার এই গত কয়েকদিন আগের ঘটনা এক পরিবার নতুন বউ নিয়ে সুরমা নদীর পাড় দিয়ে কোথায় যেন যাছ্ছিল । আছরের নামাযের পর এসেছিল। ঘরে ফিরতে ফিরতে তাই সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। ফেরার সময় শশ্মানটা যখন পাড় হছ্ছিল তখনই শান্ত লাজুক বৌটা হঠাৎ দৌড়ে শশ্মানের ভিতর ঢুকে গেল। পরিবারের লোকেরা কিছু বুঝে উঠার আগেই বউটি দৌড়ে কালীর মূর্তির কাছে যেয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলঃ দে আমায় ফিরিয়ে দে।

স্যার বিশ্বাস করবেন না তখন কি-যে এক অবস্থা। শেষে আমি যেয়ে দোয়া পড়ে ফু দেওয়ার পর বৌটি বেহুশ হয়ে কালী মূর্তির পায়ের কাছে পড়ে গেল। তখন পরিবারের লোকদের বললাম নিয়ে যেতে।

আমি ঘটনা শুনে কোন মন্তব্য করলাম না । করে কি হবে । ওরা শত শত বছর ধরে যে বিশ্বাস বংশ পরষ্পরায় বুকে ধারন করে চলছে তা আমি এক লহমায় ওদের অন্তর থেকেত মুছে দিতে পারব না। তাই চুপ করে থাকলাম। আমার চুপ করে থাকাকে দারোয়ান কি বুঝল জানিনা । হয়ত সে ভেবেছে আমি তার কথা বিশ্বাস করেছি কিংবা ভয় পেয়েছি । সে এবার বললঃ স্যার এখানে এসেছেন একটু সাবধানে চলা ফেরা করবেন ।

আমি ওর কথা শুনে কৌতুহলী হয়ে উঠলামঃ কেন ? সাবধানে চলাফেরা করতে হবে কেন ? এখানে কি দিন দুপুরে ছিনতাই ডাকাতি হয় নাকি ?

ঃ না স্যার তার চেয়েও ভয়ংকর ঘটনা ঘটে।

ঃ কেমন ?

ঃ তাহলে শুনুন ।

দারোয়ান এক কদম এগিয়ে আমার কানের কাছে তার মুখটা নামিয়ে ( আমি চেয়ারে বসা ছিলাম । ও দাড়ানো ছিল।) বললঃ স্যার এখান থেকে শ দুইশ গজ সামনে গেলেই বাম দিকে একটা মাটির রাস্তা গেছে । রাস্তাটা এখন কেউ ব্যাবহার করে না তাই ঘাসে ছেযে গেছে । রাস্তাটা ধরে কিছুদুর গেলেই দেখবেন বিশাল এক জমিদারী ধরনের বাড়ি।

ঃ জমিদার বাড়ি না হয়ে জমিদারী ধরনের বাড়ি কেন ?

ঃ কারন বাড়িটা কোন জমিদার তৈরী করেনি । এক লন্ডনী ধনী ব্যাক্তি তৈরী করেছে । ঐ জায়গাটা আগে একটা দীঘি ছিল। দীঘিটা প্রায় দশ বিঘা জায়গার উপর ছিল। ঐ লোক দশ বিঘার মধ্য দুই বিঘা ভরাট করেছে বাড়ি করেছে । আর আট বিঘা দীঘি হিসেবে রেখে দিয়েছে। বাড়িটা খুব সুন্দর জমিদারী নকশায় এরকম বাড়ি আমাদের সিলেটে আর কোথাও নাই। এই এত সুন্দর বাড়িতে কিন্তু কেউ থাকে না । সম্পূর্ন নির্জন বাড়িটা ওভাবেই খালি পড়ে আছে আজ অনেক বছর।

ঃ কারন কি ? খালি পড়ে আছে কেন ?

ঃ তা জানিনা, তবে শুনি অনেক কথা ।

আমি বুঝতে পারলাম ব্যাটা দারোয়ান এখনি আজব আজব গল্প শুরু করে দিবে । তাই তাড়াতাড়ি তাকে কাজের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরিয়ে দিলাম।

এরপর বেশ কদিন খুব ব্যাস্ততায় কাটল প্রায় রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে । সরকারি কাবিখা প্রকল্পের কিছু গম এসেছিল ওগুলো বুঝে নেওয়া, আবার স্থানিয় নেতাদের মাঝে বিলি করা এই সবে কেটে গেল কয়েকটা দিন। ব্যাস্ততা কেটে যাওয়ার পর দিন আবার আগের মত । বিকালের পর প্রতিদিন অবসর । একদিন বিকালে অফিসের হিসাব-কিতাব মিলিয়ে অনেকটা অবসর পেয়ে গেলাম । অফিস থেকে বের হয়ে সুরমা নদীর পার ধরে হাটতে লাগলাম । রোদ আছে তবে তার আলোটা তেমন তির্যক না । যেটুকু তাপ আছে সুরমার স্রোত ভেজা বাতাসে তা অনেকটা হিমেল হয়ে আছে। আমি অলস পায়ে হাটতে হাটতে শশ্মান পার হয়ে অনেকটা সামনে এগিয়ে গেলাম । এদিকটা অনেকটা নির্জন সুরমা নদী এখানে অনেকটা দুরে। আমি আস্তে আস্তে হাটছি আর দুপাশে তাকাছ্ছি । এই সময় দেখতে পেলাম জমিদার বাড়িটা । ভেংগে চুড়ে যাওয়া লোহার গেটটা দিয়ে ভিতরে পুরাটাই দেখা যাছ্ছে ।বিশাল ঘেরাওয়ের মাঝে বাড়িটা । জমকালো দোতলা বাড়ি। সামনে বাগান । যদিও ওখানে এখন বুনো দুই একটা ফুল গাছ ছাড়া আর কোন গাছ নাই। বাগানটার পরেই বাড়িটার সামনে অনেক উচু উচু দেবদারু গাছ । সুরমা নদী বেয়ে আসা বাতাসে দুলছে । এত সুন্দর বাড়িটা বাইরে থেকে দেখে ভিতরে যাওয়ার লোভটা আর সামলাতে পারলাম না । আমি আস্তে আস্তে গেট পেরিয়ে ক্ষয়ে যাওয়া ইটের রাস্তা দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। বাড়িটার সামনে কয়েক ধাপ সিড়ি । সিড়ি ডান দিকে কয়েকটা কবুতর ঘর । এককালে হয়ত কবুতর ছিল । এখন শূণ্য । সামনে সেগুন গাছের অনেকগুলো দরজা । বেশ কয়েক ধাপ সিড়ি বেয়ে উঠার পর, দরজার সামনে যাওয়া যায়। মাঝখানের দরজা সবগুলো প্রায় দশ ফুট উচু । দরজাগুলোতে প্রচুর নকশা কাটা । ঝড়-বাদলে দরজাগুলোর রং কিছুটা ম্লান হলেও দেখতে বুঝা যায় দরজা গুলো এখনো মঝবুত। দরজা পেরোলেই লম্বা কাছারি ঘর । বিশাল বিশাল আটটা জানালা । এগুলো বন্ধ। দোতালায়ও বারান্দা আছে সেখানে কাঠের নকশাদার রেলিং। রেলিং গুলো কালো রঙের বোঝাই যায় ওগুলো গর্জন গাছের। এগুলো ও শক্ত । বাড়ির ছাদটা লাল রঙের সিরামিক ইটের টালী দিয়ে ছাওয়া । ইটের লাল রঙের জৌলুসটা এখন আর নাই ।

আমি একমনে দেখছি আর ভাবছি কি সুন্দর [miss]

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!