লালমনিরহাট সদর থেকে প্রকাশিত মাসিক রোদ্দুর পত্রিকার সম্পাদক বাদল শাহা শোভন আগামী সংখ্যার জন্য আমার কাছে একটা ভূঁতের গল্প চাইলো। আমি একজন অতি নগন্য লেখক। সাহিত্য জগতের যে ক’জন ব্যক্তি আমাকে চেনেন তারা আমাকে নিম্নমানের একজন ছড়াকার হিসাবেই জানেন। একজন ছড়াকারের পক্ষে গল্প লেখা বড়ই কঠিন বিষয়। তাও আবার যে সে গল্প নয় ভূঁতের গল্প! নিজে তো কখনো ভূঁত দেখিনি আর ভূঁত বলে কিছু একটা আছে সেটাও বিশ্বাস করিনা। তবু যদি কারো কাছ থেকে কোন কাহিনী-টাহিনী শুনে একটা গল্প কোনমতো বানানো যায় সেই চেষ্টায় এর ওর সাথে ভূত বিষয়ে আলোচনা করতে শুরু করলাম।কিন্তু একটা গল্প লিখতে পারি এমন কাহিনী কেউ আমাকে শোনাতে পারলো না। এ অবস্থায় আমার প্রাইমারী স্কুলের সহপাঠী সুমন নারায়ন একদিন এসে উপস্থিত। সে আবার আমার লেখাজোখার এক নাম্বার ভক্ত। ছড়াটড়া যাই লিখি পড়ে বলে দারুণ……..। চালিয়ে যা………. একদিন তুই অনেক বড় কবি হবি………। শোভনের আব্দারটা সংক্ষেপে ওকে বললাম। সুমন বললো-
-ভূঁত বিষয়ে গল্প? কোন চিন্তা করিসনা! আমি রংপুর যাচ্ছি, ফিরে এসে তোর সমস্যা সমাধান করে দিবো।
-তাই নাকি?
-তাই! চমৎকার একটা ভূঁতের কাহিনী। পছন্দ হবে তোর।
-কোন ঠাকুরমার ঝুলির গল্প?
-আরে না! আমার জীবনে ঘটে যাওয়া টাটকা এবং ইন্টারেষ্টিং একটা কাহিনী!
-সত্যি বলছিস?
-সত্যি সত্যি।
-তাহলে তুইও ভূঁত দেখছিস?
-ঠিত তা নয়, তবে ঘটনাটা ছিল সেরকমই! ভয়ংকর! আর একটু হলে আমার হার্ট এ্যাটাক হয়ে যেতো।
-বলিস কি?
-অবস্থাটা তাই হয়েছিলো। আজ যাই এসে ঘটনাটা বলবো!
-রংপুর ট্রেনে না বাসে যাবি?
-মোটর সাইকেলে যাবো!
-ফিরবি কখন?
-আগামী রোববার!
-সেকিরে, আজ তো শুক্রবার! দুইদিন………….!
– রোববার ঠিক রাত ন’টায় আমি তোর বাসায় পৌছে যাবো। কথা দিলাম!
-মনে থাকবে তো? তোর যেই মন! মিস করিসনা দোস্ত!
সুমন ওর হাতঘড়িটা টিপে বললো-
-নে এলার্ম দিয়ে রাখলাম। চললামরে!
সুমন নারায়ন চলে গেলো। আমি ওর উপর ভরসা করে অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়ে রইলাম।
রোববার সাহিত্য পরিষদের মিটিং ফেলে বাসাই রইলাম সুমনের অপেক্ষায়। অপেক্ষর প্রহর শেষ হতেই চায়না। তবুও ঘড়ির কাটা চলতে চলতে নয়টা বাজলো, প্রেরিয়ে গেলো। দশটা বাজলো, প্রেরিয়ে গেলো। ঘড়ির কাটা এগারোটা দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ সুমনের আসার আশা ফিকে হতে থাকলো আমার কাছে। বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমার একটা তন্দ্রা ভাব চলে এলো আর তখনই বাইরে থেকে সুমনের কন্ঠ মুনতে পেলাম-
-কিরে শম ঘুমিয়ে পড়েছিস নাকি রে…….।
আমাকে সুমন নারায়ন শ.ম. শহীদ না বলে শুধু ‘শম’ বলে ডাকে। বললাম-
-তোর ন’টা বুঝি এখন বাজলো?
-ন’টার সময়ইতো ন’টা বাজবে! নাকি এগারোটায় ন’টা বাজবে?
-শালা! এখন তো এগারোটাই বাজে!
-তোর ঘড়িটা দেখে বল।
আমি দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হলাম। ঠিক নয়টাই বাজে। টেবিল ঘড়িটাতেও তাই।
-তাইতো ! তবে যে………..এতোক্ষণ……….
– বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকবো?
-না । ভিতরে আয়!
-আরে শালা দরজা না খুললে ভিতরে আসবো কি করে?
অনেকটা খাবি খাওয়ার মতো অবস্থা আমার। দরজা যে বন্ধ সেটা খেয়ালই নেই। উঠে গিয়ে দরজার খিলে হাত দিতেই বিদ্যুৎ চলে গেল। দরজা খুলতে খুলতে বললাম-
-এই দেশের এই হলো অবস্থা! স্বাধীন দেশ, স্বাধীন কারেন্ট, ইচ্ছে হলো আর গেল! কখন যে আবার আসবে কেউ জানেনা।
সুমন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো-
-ভালোই হয়েছে। ‘ভূঁতের গল্প’ অন্ধকারেই জমে ভালো্ কি বলিস?
-দেখি ড্রয়ারে মোমটোম আছে নাকি!
-দরকার নেই মোম জ্বালাবার। অন্ধকারই ভালো।
খুব একটা সমস্যা হলোনা। খিরকি দিয়ে এক ফালি চাদেঁর কিরণ এসে দেয়ালে পড়েছ্ সেটুকুর প্রভায় হালকা দেখা যাচ্ছে সবকিছু। সুমন খাটের উপরে উঠে বসলো আমি বসলাম টেবিলের সাথে চেয়ারটা ঘুরিয়ে ওর মুখোমুখি হয়ে। কিন্তু সুমনের মুখটা ভালো করে দেখা যাচ্ছিলোনা।
-তুই রংপুর থেকে কখন এসেছিস?
-এই মাত্র।
-তাহলে খাওয়া দাওয়া? চল কিছু খেয়ে আসি হোটেল থেকে।
-নাহ। আমার এতো সময় নেই। গল্পটা বলেই তাড়াতাড়ি যেতে হবে। কাজ আছে আমার।
-তাহলে শুরু কর।
-তুই রবার্ট ক্লাইভকে তো জানিস!
কাকে?
-রবার্ট ক্লাইভ! আরে…ঐ যে ইংরেজ বণিক্ বানিজ্য করতে এসে-মীর জাফর আলী খাঁ, রায় দূর্লভ, ইয়ার লতিফ, আহমদ শাহ আবদালী, ঘসেটি বেগম,শওকত জং, রাজা রাজ ভল্লব প্রভৃতি দুষ্ট লোকের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে যে হত্যা করেছিলো। তারপর ভারতবর্ষ শাসন করেছে বংশ পরম্পরায় দু’শ বছর!
-হ্যাঁ জানি। কে না জানে ঐ হারামজাদার কথা!
-সেই রবার্ট ক্লাইভের একজন গুপ্তচরের নাম ছিল-নাসরুদ্দিন। সিপাহী মোহাম্মদ নাসরুদ্দিন!
আমি হতাশ হয়ে বললাম-
-তুই শালা ইতিহাস শুরু করেছিস। আমার দরকার একটা ভূঁতের গল্প।
-আরে সেটাই তো বলছি।
-তুই না বললি তোর নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা।
-মনে কর আমি সেই নবাবের বিশ্বাসঘাতক সিপাহী মোহাম্মদ নাসরুদ্দিন! ১৭৬১ সালে মুর্শিদাবাদ কারাগারে জহর পান করে আত্মহত্যা করে ভূঁত হয়ে এখন আছি মহা-মুষ্কিলে। আমার দুঃখের অন্ত নাই, কষ্টেরও শেষ নাই।
-তুই সেই ভুঁত? কি যেন নাম বললি….?
-নাসরুদ্দিন। সিপাহী মোহাম্মদ নাসরুদ্দিন!
-নবাবের ইতিহাসে এতন নাম তো কোথাও পাইনি।
-কি করে পাবি! সব নামতো আর ইতিহাসবেত্তার কলমে উঠে আসেনা। এই তো সেদিন এদেশে মুক্তিযুদ্ধ হলো। স্বাধীনতার জন্য সঠিক কতো লোক জীবন দিয়েছে জানিস? কতোজন বীরাঙ্গনা হয়েছে, তাদেঁর সবার নাম কি ইতিহাসে আছে?
-তা নেই বটে!
-কতোজন রাজাকার, আল-বদর, আল-সামস্ এদেশে আছে, জানিস তাদের ইতিহাস? দেশদ্রোহীদের পরিসংখ্যান কতো? আছে ওসব ইতিহাসে লেখা?
-তা তো নেই!
-থাকাটা দরকার ছিল!
-কেন? কি হতো?
-তাদের চিহ্নিত করে একটা তালিকা তৈরী করা থাকলে এবং একাত্তরে তারা কিকি কুকর্ম করেছে তার ফিরিস্তি সেখানে দেয়া থাকলে সমাজের জন্য বিশেষ উপকার হতো। এমন র্দুদিন এদেশবাসীকে দেখতে হতোনা।
-কি রকম?
-দেশবাসী তাদের সহজেই চিনতে পারতো, কেই লাই দিয়ে মাথায় ওঠাতে পারতো না। দ্যাখ, একজন মুক্তিযোদ্ধা, যিনি দেশের দুর্দিনে অস্ত্র ধরেছে, জাতিকে এনে দিয়েছেন একটি সর্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র আজ তাদের কেউ কেউ ভিক্ষে করে, রিকসা চালায়,দিন-মজুরী করে আরো কতো কি করে জীবিকা নির্বাহ করে। বিশেষ কোন দিন ছাড়া তাঁদের মূল্যায়নে কেউই করেনা। এমন কি সরকারও না!
-কেন? মু্তিযোদ্ধারা সরকারী ভাতা পাচ্ছেন।
-খুবই সামান্য! যা বর্তমান বাজারে দু’দিনের বেশী চলেনা। তবএকটি বিষয় তারা প্রত্যেকেই জানেন মৃত্যুর পর তাদের রাষ্টীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।
-হচ্ছেইতো!
-এটা কি? এটা এক ধরনের প্রহসন নয় কি? যে বীর জীবদ্দশায় পরিবারের লোকজন নিয়ে দৈন্যদশায় অর্ধাহারে অনাহারে রোগ-শোকে ভুগে মারা গেলেন মৃত্যু পর রাষ্ট্র তাঁকে যোগ্য সম্মানে সম্মানীত করলো! এটা কি? আচ্ছা স্বাধীনতার এতো বছর পর দেশে আর কতোজন মু্ক্তিযোদ্ধা জীবিত রয়েছেন? তাদের মধ্যে যারা নিত্যান্তই গরীব, অসহায় তাঁদের পুনঃবাসন করতে সরকারের কতো টাকা খরচ হবে বল? একজন মুক্তিযোদ্ধার তুলনায় একজন রাজাকার, একজন আল-বদর কতো সান-শওকতের জীবণ যাপন করছে! এদেশে এমপি হচ্ছে, মন্ত্রী হচ্ছে।একজন দেশদ্রোহীর গাড়িতে-বাড়িত উড়ছে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে রঞ্জিত লাল-সবুজের পতাকা! কি র্দুভাগ্য ভাবা যায়? আজ যদি তাদের একটা তালিকা থাকতো………..দুনিয়াতেই তারা স্বয়ী কু-কর্মের সাজাটা ভোগ করে যাবার সুযোগ পেতো, আমি সিপাহী নাসরুদ্দিনের মতো মরার পরে ভূঁত হয়ে এমন র্দূভোগ পোহাতে হতোনা।
-তুই ভূঁত হয়ে খুব র্দুভোগ পোহাচ্ছিস? ভূঁতদের আবার র্দুভোগ পোহাতে হয় নাকি?
-তবে আর বলছি কি? মনোযোগ দিয়ে শোন- ছিলাম নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সামান্য একজন সিপাহী্। সেনাপতি মীর জাফর আলী খাঁ একদিন আমাকে নির্জনে ডেকে নিয়ে একটি চিঠি হাতে দিয়ে বললেন-
-নাসরুদ্দিন, আমি তোমাকে অত্যাধিক পছন্দ করি। বিশ্বাসও করি সব সিপাহীদের চেয়ে বেশী। তাই তোমাকে একটি কাজ দিবো। কাজটা খুবই সহজ কিন্তু করতে হবে অতি গোপনে, কাক পক্ষীও যাতে টের না পায়। এই চিঠিটা পৌছে দিতে হবে রবার্ট ক্লাইভের হাতে!
-কি বিষয় হুজুর?
-বিষয় খুব শীঘ্রই টের পাবে! আর এই কাজের জন্য তুমি নগদ পুরষ্কার তো পাবেই। আরো কথা দিচ্ছি- আমি নবাব হলে তোমাকে বানাবো আমার প্রধান সেনাপতি ইনশাল্লাহ!
আমি দুর্জয় সাহসে ভর করে বললাম-
-অতি অবশ্যই পারবো হুজুর!
-সাবাস! তাহলে এখনই ছোটো………যাও।
ক্লাইভ চিঠি পড়ে খুশী হলেন। আমাকে তার অন্দর মহলে ডেকে নিয়ে খুব আদোর-যত্ন করলেন। বোতল থেকে লাল রঙের শরবত পান করতে দিয়ে বললেন-
-টুমি খোউব ভালো লোক আছো। মীর জাফর আলীর কাছে আমি সোব শুনেছি, টোমার বিষয়! আমার হোয়ে কাজ করলে জীবনে বহুত কুছু পাইবে। নবাব টোমাকে কতো টাকা মাইনে ডেয়, আমি ডিবো বহুত বেশী। হাট পাটো, এইখানে পাচটা গোল্ড মোহর আছে। এটা আজকের কাজের জন্য টোমার বকশিস আছে!
সত্যি সত্যি ক্লাইভ আমাকে পাঁচটি সোনার মোহর দিলেন। আবার বললেন-
-ঈশ্বর সাক্ষী রেখে টোমাকে কঠা ডিলাম, আমাডের মাকসুড পুরা হলে, টোমাকে বানাবো প্ররধার সেনাপটি।
প্রধান সেনাপতি! আমার চোখের সামনে যেনো মীর জাফর আলী খার সৌর্যবীর্য আর পোশাকটা ঝলমল করে উঠলো । আমি বললাম-
-আমাকে কি করতে হবে হুজুর ?
-খোব সোজা। টোমার কাজ শুডু নবাবের খবোর আমাকে জানানো। হামি যখোন যটোটুকু জনেটে চাবো টটটুকু! প্রটিটা খবোরে টোমি পাচ মোহোর পাইবে।
সেই থেকে আমি নবাব সিরাজ উদ দৌলার মহলের প্রতিটি গোপন খবর রবার্ট ক্লাইভকে পৌছে দিয়েছি। নবাবের অস্ত্রের ধরণ, সৈন্য-সামন্তের সংখ্যা, যুদ্ধের পরিকল্পনা, কাল-পাত্র সব। নবাব পলাশী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুর্শিদাবাদে পালিয়ে যাওয়ার খবরটাও আমি ক্লাইভকে দিয়েছিলাম। তাইতো তাঁকে পাকরাও করে হত্যা করা সহজ হয়েছিল।
নাসরুদ্দিন একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো।
-তারপর!
-তারপর যা হবার তাই হলো । ইংরেজের সুতায় বাধা পুতুল হয়ে মীর জাফর আলী খা নবাব হলেন। ১৭৫৮ সালের ২ নভেম্বর আমি রবার্ট ক্লাইভের সাথে স্বাক্ষাত করে আমাকে দেয়া ওয়াদার কথা স্মরণ করাতেই সে সিপাহীদের ডাকলেন-
-এই কে আছিস! শালাকে বনডি করে অন্ডকার কারাগারে পাঠা!
-তার মানে?
-টুমি শালা বহুট বেইমান আছো! টোমার জাটি ভাইয়ের সাটে বেইমানী করেছো। আমার সাটে করবেনা টার কি গ্যারান্টি?
আমাকে বন্ধি করে মুর্শিদাবাদ কারাগারে পাঠিয়ে দিল। সেখানে আমি নিঃসঙ্গ একাকী অন্ধকার কারাগারে বসে নিজের কুকর্মের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হতে থাকলাম। নিজের উপর ঘেন্না এসে গেল। শেষে ১৭৬১ সালের ১৪ এপ্রিল জহর খেয়ে আত্মহত্যা করলাম। আর আত্মহত্যা করে ভূঁত হয়ে এখন পড়েছি মহা-মুশকিলে!
-মুশকিলে কেন?
-মুর্শিদাবাদ কারাগার থেকেই আমার নিঃসংগ জীবন-যাপন শুরু, ভূঁত হয়েও আছি নিঃসংগ! মানুষ যেমন সমাজ ছাড়া চলতে পারেনা তেমন ভূঁতদেরও সমাজ আছে। সেই সমাজ আমার ভাগ্যে জোটেনি।
একটা পেত্নীটেত্নি জোগার করে নিলেই তো পারিস।
আবারও দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নাসরুদ্দিন বললো-
-আর পেত্নী! ভূঁত সমাজের কেউ আমাকে দেখলেই ঠ্যাংগাতে আসে!
-কেনো?
-কেনো আবার? ভারতবর্ষের যতো ভূঁত-পেত্নী আছে সবাই নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার একনিষ্ঠ ভক্ত। তারা নবাবকে অত্যান্ত ভালোবাসে। আমি নবাবের নুন খেয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করায়, তারা আমাকে কিছুতেই মেনেনিতে পারছেনা। আমাকে দেখলেই লাঠি নিয়ে পেটাবার জন্য তাড়া করে। ভূঁত হয়ে জন্মাবার পর থেকেই আছি দৌড়ের উপর। কতোবার যে ভুঁতুরে জীবন থেকে আর একবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি।
-কেনো?
-ভূঁত-পেত্নীরা আত্মহত্যা করতে পারেনা! তোর এখানে এসে গল্প করছি, ভূঁতদের কেউ দেখে ফেললে আমার খবর আছে!
আমি চোখ বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে সুমন নারায়নের গল্প শুনছিলাম। হঠাৎ আলোর ঝলক অনুভব হওয়ায় চোখ মেলে তাকালাম। বিদ্যুৎ চলে এসেছে। সুমন বিছানায় নেই। দরজা খোলা। ভাবলাম বাইরে গেছে হয়তো হিসুটিসু করতে। ঘড়িতে আড়াইটা বাজে। পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট, পনের মিনিট ফেরার নাম নেই। অগ্যতা নিজেই বেরুলাম, টয়লেটে কেউ নেই, আশেপাশেও নেই। গলা ছেড়ে ডাকলাম-
সুমন ! এই সুমন! কই গেলিরে।
কোন সাড়া নেই। বুঝলাম শালা চলে গেছে। ওর নিজের কাহিনীটা তো বললোই না, যেটা বলছিলো সেটাও শেষ করে গেলোনা। আগামীকাল ওর বাসায় যেতে হবে। আমি খাতা-কলম নিয়ে বসে একটি ছড়া লেখার চেষ্টা করলাম-
ভূঁতের মাসি ভূঁতের পিসি
খুঁজতে গিয়ে তেলের শিশি-
খুঁজে পেলো দৈয়ের ঘটি
দৈ খেতেই কাঁটলো নিশি!
পরদিন সকাল ১০টার দিকে সুমন নারায়নের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলাম। বাড়িতে ঢোকামাত্র মাসিমার সাথে দেখা। জানতে চাইলাম-
-সুমন কোথায় মাসিমা?
-ওর ঘরে।
-ঘুমোচ্ছে নাকি?
-না, জেগেই আছে।
আমি সুমন নারায়নের ঘরের দরজায় পা রেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। ওর মাথাসহ শরীরের কয়েকটি স্থানে ব্যান্ডেজ । ডান পায়ের হাটুর নিচ থেকে পুরোটা পলেস্তার করা একটি বালিশের উপর রাখা। আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম-
-কিরে এই অবস্থা কেন? কখন হলো?
-গত শুক্রবার। যাওয়ার আগে তোকে না বলে গেলাম।
-বলিস কি?
-মোটর সাইকেলটা নিজেই ড্রাইভ করছিলাম। শালা কোত্থেকে যে একটা কুকুর এসে…… ডান পায়ের হাটুর নিচে হাড়টা দু’টুকরো হয়ে গেছে।
-না, মানে গত রাতে………।
-তোর বাসায় যাবার কথা ছিলো। ভালো থাকলে অবশ্যই যেতাম, মনে ছিলো।
-তাহলে…..ভূঁত….নাস….রুদ্দি…ন।
-কি বলছিস? নাসির উদ্দিন…!
-না কিছু না। রাতে একবার আসবো। চলিরে।
বিলম্ব না করে সুমন নারায়নের বাসা থেকে বেড়িয়ে নিজের বাড়ির দিকে হাটতে শুরু করলাম আর ভাবতে লাগলাম গত রাতের বিষয়টা নিশ্চয়ই স্বপ্ন ছিলো! সেটাইবা কেমন করে মেনে নেই! গতরাতে সুমন চলে আসার পর আমি যে ছড়াটা লিখেছিলাম সেটা তো সকালেও পড়েছি। তবে কি নাসরুদ্দিন…..সত্যিকারেই ভূঁত ছিল!
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।