ভীতুর ডিম

ছুটি পড়ে গেছে। পূজোর ছুটি। ঘরে বসে থাকতে নীলুর একটুও ইচ্ছে করছে না। ইস্কুলটাই ওর বেশি ভাল লাগে। কত বন্ধু বান্ধব। কত হইচই করার জায়গা। কত মাঠ। গাছপালা। লুকনোর জায়গা। কি নেই? মাঝেমধ্যে বেরিয়ে টুকটাক খাওয়া। বাড়িতে সে মজা আর কোথায়। সারাদিন তো আর মা বাড়ি থেকে বেরোতে দেবে না। তারপরে একে তো গাদাখানেক ছুটির কাজ আর ইস্কুল খুললেই পরীক্ষা। পরীক্ষাটরীক্ষার কথা এমনিতে তার বড় একটা মনে থাকে না। কিন্তু আজকাল ইস্কুলে ঘড়ি ঘড়ি পরীক্ষা হচ্ছে। আর কপালে জুটেছে এক মাস্টারমশাই। রোজ একবার করে পরীক্ষার কথা মনে না করিয়ে দিলে আর তার চলছে না। কালকে ভুল করে একবার জিজ্ঞেস করে ফেলেছিল, ‘মাস্টারমশাই আপনি কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন না?’
‘বেড়াতে? না। খামোকা বেড়াতেই যাবো কেন?’
আমতা আমতা করে নীলু বলেছিল, ‘না মানে ঐ পূজোর ছুটি আসছে কিনা। তাই’
মাস্টারমশাই আচ্ছা করে কানটা মুলে বললেন, ‘ও, আমি বেড়াতে গেলে ফাঁকি দেওয়ার খুব সুবিধে হয় তাই না?’
নীলু যত না না করে, মাস্টারমশাই তত হাসেন। অবশেষে নীলু যখন ছাড়া পেল মাস্টারমশাইয়ের খপ্পর থেকে তখন কান টনটন করছে। বোধহয় কানের লতিটুকুও ফুটফুটে লাল হয়ে গেছিল মনে হয়।
‘সাত প্রশ্নমালার সবকটা অঙ্ক করে রাখবে। আর হ্যাঁ ভুল যেন না হয়’
নীলু ভাল ছেলের মত ঘাড় নেড়েছিল, ‘হ্যাঁ মাস্টারমশাই। করে রাখব’
‘আর শোন, আমি যদি কোথাও যাইও। তাহলে তুমি পাহারায় থাকবে। বিকেলে একঘন্টা ছাড়া বাড়ি থেকে খেলতে বেরোন যাবে না’
নীলুর একবার ইচ্ছে হল জিজ্ঞেস করে, ‘কে পাহারা দেবে স্যার?’
কিন্তু পারল না। গলা শুকিয়ে এল। জিজ্ঞেস করতে গিয়ে পাছে আবার একটা কানমলা খায়। নিশ্চয়ই মাস্টারমশাই বাবাকে কিছু বলে যাবেন। তবে বাবা তো আর সারাদিন বাড়িতে থেকে পাহারা দিতে পারবে না। নিশ্চয়ই মাকেই বলে যাবে। মাকে ফাঁকি দিয়ে পালানো সম্ভব। আর একবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লে মা আর কি করবে। মাঠ থেকে তো আর ধরে আনতে পারবে না। এই ভেবে মনে মনে নিশ্চিন্ত হয়ে ট্রান্সলেশনটা করতে যাচ্ছিল।
মাস্টারমশাই আবার গুরুগম্ভীর গলায় বললেন, ‘আর হ্যাঁ, মনে কর না যে তোমার বাড়ির লোক তোমায় পাহারা দেবে। তোমার মত বিচ্ছু ছেলে কি করে বাড়ি থেকে পালায় তা আমি খুব ভালো করে জানি’
নীলু ভয়ে ভয়ে মাস্টারমশাইয়ের মুখের দিকে তাকাল। ভাবটা এমন যে সে কিছুই বুঝতে পারেনি। অবশ্য অবাক যে হয়নি তাও না। মা পাহারা দেবে না তো আর কেই বা আছে তার ওপর নজর রাখার জন্য।
‘তাদের তুমি দেখতে পাবে না। দেখতে পাওয়াও যায় না। যদি কথা শুনে চল, তাহলে কিচ্ছুটি হবে না। কিন্তু যদি সে দেখে পড়া ফেলে পালাচ্ছ, তাহলে পটাপট মাথার গাঁট্টা পড়বে। বুঝলে?’
মাথা নাড়ল নীল। কিন্তু তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, ‘স্যার, ভূত টুত নয়তো?’
মাস্টারমশাই হাসলেন। তাঁর পান খাওয়া ছোপ ছোপ দাঁতগুলো দেখা গেল। হাসতে হাসতে তাঁর মুখ বেঁকে গেল। বললেন, ‘ওরা আমার পোষা। বুঝলি? হা হা হা। ওরা ভাল করে কানও মুলতে পারে’। হাসি চলতেই থাকল। নীলুর আর দশটা ব্যাপারে সাহস থাকলে কি হবে, এই একটা জায়গায় সাহসটা কেমন চুপসে আসে। সকালবেলায় অঙ্ক খাতাটা খুলে সে এইসবই ভাবছিল। মা এসে একবার দেখেও গেল। মাথায় হাতবুলিয়ে বলে গেল, ‘বাহ পড়ায় বেশ মন বসেছে দেখছি। এই তো আমার লক্ষী ছেলে’
ভাগ্যিস মা খাতাটা দেখেনি। দেখলেই বুঝতে পারত অঙ্ক সেভাবে এগুচ্ছে না। এই প্রশ্নমালায় আছে ভগ্নাংশ। ভগ্নাংশটা মাস্টারমশাই বুঝিয়েছেন বটে। কিন্তু সে খুব একটা ভাল বুঝতে পারেনি। কারন সেটা মাস্টারমশাই বলেছেন ভূতের ভয় দেখানোর পর। সব মিলিয়ে সাতচল্লিশটা অঙ্ক আছে। কি করে শেষ হবে কে জানে? মনে হচ্ছে কপালে নাচছে ছপটি। না না, অতদূর যেতে হবে কেন? এই কানমলা আর  গাঁট্টা পড়ল বলে। নীলু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। হাত পা আরও একবার ভয়ে কেঁপে উঠল। ভয় এতটাই যে সেভাবে জানলার বাইরেই সে তাকাচ্ছে না। কোথা থেকে নজর রাখছে কে জানে?
প্রথম পাঁচটা ছোটখাট অঙ্ক ছিল। বিস্তর কাটাকুটির পর সেগুলো নেমেছে। এর পর থেকেই প্রশ্নের অঙ্ক।
তিন নম্বর অঙ্কটা বলছে – একটা ঝুড়িতে কিছু আম ছিল। তার চারভাগের একভাগ পচে গেল। বাকীগুলোর মধ্যে তিনভাগের একভাগ ছোটদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার পরেও পাঁচটা আম পড়ে রইল। তাহলে প্রথমে ঝুড়িতে কতগুলো আম ছিল?

 

অঙ্কটা নয় নয় করে বার পাঁচেক অন্ততঃ পড়েছে নীলু। কিছু লাভ হয়নি। আরো মিনিট দশেক চুপচাপ বসে থাকার পরেও অঙ্কটা নামল না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। আজকে আর কপালের মারটা কেউ আটকাতে পারছে না। বাইরে কি সুন্দর আবহাওয়া। মিঠেকড়া রোদ। পূজো আসছে বলে হালকা শীত শীতও পড়ে যাচ্ছে। ইস্কুল ছুটি। খেলাধূলোর পক্ষে এই তো আদর্শ। এগারটা নাগাদ ডাকতে এসেছিল পচা, কম্বল আর চুটকিরা। ওদের ফিরিয়ে দিয়েছে নীলু। ওরা এখন কোথায় গেছে কে জানে। সদ্য সদ্য সাইকেল চালাতে শিখেছে সবাই। নীলুকেও ওর বাবা একটা ছোট দুচাকার লাল সাইকেল কিনে দিয়েছেন দু মাস হল। সাইকেল নিয়েই কি দূরে কোথাও গেল ওরা?
অঙ্কখাতাটা বন্ধই করে ফেলল নীলু। অন্ততঃ কয়েকটা ট্রান্সলেশন করে ফেলা যাক। কালকে বারোটার মধ্যে তিনটে কাটা গেছে। পড়াশুনোয় সে কোনদিনই খুব ভাল একটা না। আর সত্যি কথা বলতে ইচ্ছেও করে না। দিনরাত বসে বসে পড়ার কথা সে ভাবতেও ইচ্ছে করে না। ট্রান্সলেশনের খাতাটা খুলে প্রথমটা দেখেই চমকে গেল সে। পলাশ ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। ট্রান্সলেশন পড়ে রইল, ঘুড়িটাই বরং বেশী করে ডাকতে লাগল তাকে। কিন্তু এটা একটু ভুল দিয়েছেন মনে হয় মাস্টারমশাই। ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে কেউ হোঁচট খায় নাকি আবার? ধুস। তাহলে নেহাতই আনাড়ি হবে। কত ঘুড়ি উড়িয়েছে সে, কতগুলো কেটেছে। কিন্তু কই হোঁচট তো কোনদিনও খায়নি। নাহ এটা ভুলই করেছেন মাস্টারমশাই। তারপরেই খেয়াল হল সমস্যাটা। হোঁচট খাওয়া ইংরাজীটা আবার কি রে? অনেক মাথা চুলকেও কিছুতেই মনে পড়ল না। ওয়ার্ডবুকটা তার কিছুতেই মুখস্থ হতে চায় না। কোথায় ছুটিটা চুটিয়ে মজা করে কাটাবে তা না ভূতের ভয়ে পড়তে বসেছে। বন্ধুদের কাউকে বলাও যাবে না। কেউ তো আর বিশ্বাস করবে না এইসব। হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলবে, ‘দূর বোকা, ভূত বলে কি আবার সত্যিই কিছু আছে নাকি?’
‘আছে হে আছে’, কে যেন একটা খসখস করে বলে উঠল।
‘কে, কে কথা বললে?’, নীলু একটু ভয়ে ভয়েই চারদিকে তাকাল।
‘কেন আমি’
‘কে, কে তুমি?’, নীলুর গলাটা কেঁপে কেঁপে উঠল।
‘আহ মেলা ফ্যাচফ্যাচ করো না তো। এই তো এতক্ষন আমার কথাই ভাবছিলে। আর এলেই দোষ’
‘তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?’
‘দেখতে পেলে কি হত শুনি? এমনিতেই তো ভয়ে আধমরা হয়ে আছো’
‘আমি কিন্তু ঠিক করেই পড়াশুনো করছি’
সেই আওয়াজটা খেঁকিয়ে উঠল, ‘কেমন করছ তা দেখতেই পারছি। বই নিয়ে শুধু বসেই আছো সকাল থেকে। কাজের কাজ কিছু করনি। তোমার মাস্টার ঠিকই বলেছে সে। তোমার কপালে গাঁট্টাই লেখা আছে’
‘আমায় গাঁট্টা মারতে এসেছ বুঝি? কই খেলতে তো যাইনি। অনেক চেষ্টা করলাম। আমি যে সত্যিই অঙ্কগুলো পারছি না-’
তাকে থামিয়ে দিয়ে সে বলে উঠল, ‘থাক থাক আর আমার কাছে কাঁদুনি গাইতে হবে না। মাথার মধ্যে জট পাকিয়ে আছে অঙ্ক হবে কোথা থেকে শুনি? আর আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছোট ছোট পুঁচকে ছেলেদের মাথায় গাঁট্টা মেরে বেড়াই আর কি!’
‘তবে?’
‘তবে কি?’
‘না মানে, আমাকে গাঁট্টা মারতে আসনি। তাহলে এলে কেন তাই জিজ্ঞেস করছি-’
‘বলি প্রশ্ন না করলে তোমার চলে না, না?’
নীলু চুপ করে রইল। ভূতটা যেই হোক, তাকে গাঁট্টা মারতে যখন আসেনি তখন তাকে এত প্রশ্ন না করাই বোধহয় ভাল। ট্রান্সলেশনের খাতাটার দিকে আরেকবার তাকাল সে। হাতে নিল পেন্সিল্টা। কিন্তু আসেপাশে যখন একটা ভূত উড়ে বেড়াচ্ছে, তখন কি আর ট্রান্সলেশন করা যায়?
‘তোমার যে দেখি আঠেরো মাসে বছর। বলি ঐ কটা অঙ্ক আর ট্রান্সলেশন করতে কি তিন ঘন্টা লাগে নাকি হে? আমি হলে দশ মিনিটে শেষ করে খেলতে চলে যেতুম’
‘তুমি খুব ভাল অঙ্ক আর ট্রান্সলেশন জানো বুঝি?’
‘ভূগোল, ইতিহাস, অঙ্ক, বিজ্ঞান সব জানি। এমন সব জিনিস জানি যা তোমাদের মাস্টাররাও জানে না। বুঝলে?’
নীলু সাহস পেয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘এতই যদি সব জানো তাহলে আমাকে একটু দেখি দাও না?’
সেই আওয়াজটা আবার খিঁচিয়ে উঠল, ‘বলি ফরমায়েশ করতে পেলে বুঝি আর কিছু চাও না? আমি এখন অঙ্ক কষে দিলে, ট্রান্সলেশন করে দিলে পরীক্ষার খাতায় কি লিখে আসবে? তখন তো গাড্ডু পাবে আর আবার ঐ মাস্টারের কাছে কানমলা খাবে’
নীলু প্রথমে খুব আশা পেয়েছিল কথাগুলো শুনে। আবার সে দমে গেল। ঠিকই তো। এমনিতে যতটুকু সে পড়ে তাইই পরীক্ষার খাতায় লিখে আসতে পারে না। পরীক্ষার হলে ঢুকে সব কেমন মাথা থেকে উড়ে যায়। অঙ্ক পরীক্ষার দিন তো কেউ যেন হাতুড়ি পিটতে থাকে বুকের ভেতর। হাতের গোনা ভুল হয়ে যায়, বিয়োগ করতে গেলে তালগোল পাকিয়ে যায়। একপাতায় পাঁচ পরের পাতায় গিয়ে সাত হয়ে যায়। যে যেরকম পরীক্ষা দেবে, তার রেজাল্ট তো সেরকমই হবে – কারো কানমোলা, কারো বেতের বাড়ি, কারো বা মন্ডা মিঠাই। দূর দূর, পরীক্ষার কথা মনে পড়তেই সে একটু মুষড়ে পড়ল। চোখে একফোঁটা জলও এসে গেল তার। সে বলল, ‘আমায় সবাই বড্ড মারে’
‘ঠিক আছে ঠিক আছে। আমার কাছে আর কাঁদুনি গাইতে হবে না। তোমার কি অবস্থা আমি খুব ভালো করে জানি। এখন যা বলছি তা মন দিয়ে শোন-’
নীলু চোখের জল মুছে ঘাড় নাড়ল।
‘তোমার বুদ্ধিশুদ্ধি নেহাত কম নয়। কিন্তু মারের চোটে আর ভয়ে সব তালগোল পাকিয়ে গেছে। বুঝলে? কিন্তু পুরোটা গন্ডগোল হয়নি। আমি এখন চাইলে ঠিক করে দিতে পারি। তোমাকে পরখ করতেই এসেছিলাম আমি। তুমি এখনো অবধি সব সত্যি কথা বলেছ। সেই জন্যেই তুমি পুরষ্কার পাবে। আর তোমার মাস্টারমশাই পাবেন গাঁট্টা’
নীলু চোখ বড় বড় করে বলল, ‘তার মানে?’
‘তার মানে আর কিছুই না। আমাদের নামে কেউই উল্টোপাল্টা বলে বেড়াক আমরা পছন্দ করি না। কালকে তোমাদের লেবুগাছে গন্ধ শুঁকতে এসেছিলুম। দেখি মাস্টারটা যা নয় তাই বলছে। আমরা মাঝে মধ্যে লোকজনকে ভয় দেখাই বটে, তবে ঐসব আমাদের কাজ না। দেখাতে হয় বলে। আর আমাদের পোষ মানিয়ে কেউ ঘরের কাজ করিয়ে নেবে, তেমন জিনিস আমরা নই। বুঝলে?’
‘এখন কি হবে?’
‘কি আবার হবে, তোমার মাস্টারমশাই আর তোমাকে পড়াতে আসতে পারবেন না দুমাস’
‘কেন উনি বেড়াতে যাচ্ছেন বুঝি?’
‘না না বেড়াতে যাবেন কেন? একটু শক পেয়েছেন। কালকে বড়বাগানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন চুপিচুপি বললুম গিয়ে – ভূতের গাঁট্টা খেয়েছেন কখনো। ব্যস তাতেই কাজ হয়ে গেছে। যাইহোক, যাবার আগে তোমাকে একটা কথা বলে যাই। কক্ষনো মিথ্যে বলবে না। আর মন দিয়ে পড়াশুনো করবে। ঠিক আছে? নইলে কিন্তু আমি এসে সত্যি সতিই গাঁট্টা লাগিয়ে যাবো। এপাড়ার বেল, লেবুগাছগুলোয় আমি প্রায়ই আসি’
নীলু খুশি হয়ে বলল, ‘তোমায় কি বলে ডাকবো?’
‘খাসনবিশ দাদা’, এই বলে একটা হুশ করে আওয়াজ হল। নীলু একটু থ্যাঙ্ক ইউ বলতে যাবে তার আগেই। ওদিকে শুনতে পেল মা ডাকছে চান করার জন্য। নীলু খুশি মনে উঠে পড়ল।
মা বললেন, ‘হ্যাঁরে নীলু, তোকে সকালবেলা বলা হয়নি। কাল রাত্তিরে নাকি তোর মাস্টারমশাই পড়ে গিয়ে পা ভেঙেছেন। এখন পুরো বিছানায় শোয়া। অনেকদিন নাকি পড়াতে আসতে পারবেন না। হ্যাঁ রে, তুই কটা দিন নিজে নিজে পড়তে পারবি তো?’
মাকে জড়িয়ে ধরে নীলু বলল, ‘হ্যাঁ মা, খুব পারবো। আমি এখন থেকে ঠিক নিজে নিজেই পড়তে পারবো’
মাও একটু মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘ভালো করে পড়িস বাবা। এত কম নম্বর পাস প্রত্যেকবার বলেই তো আমাদের চিন্তা-’

দুমাস পরে যখন পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোল তখন দেখা গেল নীলু ক্লাসে ফার্স্ট। অঙ্কে পঞ্চাশে পঞ্চাশ। ইংরাজীতে তেতাল্লিশ। ভূগোলে চল্লিশ। ক্লাসের নবীনস্যার পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘সাবাশ ব্যাটা। কি করেছিস রে তুই নীলু?’
নীলু কিছু জবাব দিল না। আর কেউ না জানুক, সে নিজে তো জানে। সেদিন সন্ধ্যেবেলায় পড়তে বসেই টের পেয়েছিল ব্যাপারটা। অঙ্কগুলো দেখা মাত্র জলের মত নেমে যাচ্ছিল। খাতায় অঙ্ক না করেও সে বলে দিতে পারছিল উত্তরটা। তেমনি ট্রান্সলেশনগুলোও। পুরোন পড়াগুলোও ছবির মত মনে পড়ে যাচ্ছিল।
আজ মার্কশিটটা হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সে ফিসসিস করে বলল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ খাসনবিশ দাদা।’
মাথায় কে যেন হালকা করে গাঁট্টা মেরে চলে গেল। ফাঁসফ্যাঁসে গলায় বলে উঠল, ‘ভীতুর ডিম কোথাকার-’

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!